চট্টগ্রাম সমিতি, উত্তরবঙ্গ ফাউন্ডেশন, টাঙ্গাইল সোসাইটি, শেরপুর সমিতি, জেবিবিএ………….: নেতৃত্বের কোন্দল আর অর্থই সংগঠনে বিভক্তির মূল কারণ

- প্রকাশের সময় : ০২:২০:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
- / ৯৩৯ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি: নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনের সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে। ইউনিয়র আর উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে সংগঠন গড়ে উঠেছে এই প্রবাসে। সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগঠনেরও অভাব নেই কমিউনিটিতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তর আমেরিকায় বিভিন্ন নামে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে সামাজিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ১০০০। এরমধ্যে বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কেই রয়েছে প্রায় ৫০০ সংগঠন। আবার বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশীন অর্গানাইজেসন্স ইন আমেরিকা (ফোবানা)। এই ফোবানা সহ একাধিক সংগঠনে রয়েছে দ্বিধা-বিভক্তি। মূলত: নেতৃত্বের কোন্দল আর অর্থনৈতিক অনিয়ম-দূর্নীতির কারণেই সংগঠনে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আবার অনেক সংগঠন মামলা-মোকদ্দামায় জড়িয়ে পড়েছে। এতে হাজার হাজার ডলার লোকশান গুনতে হচ্ছে সংগঠনগুলোকে। এসব বিভক্তিতে কমিউনিটির সচেতন মানুষ দারুন বিব্রত। অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন নিজ নিজ এলাকার সামাজিক সংগঠনগুলো থেকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বিধা-বিভক্ত সংগঠনগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিককালে চট্টগ্রাম সমিতি, উত্তরবঙ্গ ফাউন্ডেশন, টাঙ্গাইল সোসাইটি, শেরপুর সমিতি, জেবিবিএ প্রভৃতি সংগঠনের নাম প্রবাসীদের মুখে মুখে।
জানা গেছে, প্রবাসের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতি নর্থ আমেরিকা’র অভ্যন্তরীন কোন্দল আবার চরম আকার ধারণ করেছে। নেতৃত্বের কোন্দল আর অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন সমিতির নেতৃবৃন্দ সহ সদস্যবৃন্দ। উদ্ভুত পরিস্থিতে ‘সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগে’ বহিষ্কার পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। এক পক্ষের বিরুদ্ধে ৪৪,৬২২ ডলার সমিতি ফান্ড থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। যা আতœসাতের শামিল। সমিতির গত নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই মূলত: চট্টগ্রাম সমিতিতে বিরোধ-বিভক্তি আর নেতৃত্বের কোন্দল শুরু হয়। সেই সময় সমিতির নিজস্ব ভবন দখল, পাল্টা দখলের ঘটনাও ঘটে। বিভক্তির কারণে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। সমিতির এসব কর্মকান্ডে বিব্রত সাধারণ প্রবাসী চট্টগ্রামবাসী। সংশ্লিষ্টদের মতে সমিতির বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার মধ্যকার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, নেতৃত্বের কোন্দল, মত পার্থক্য প্রভৃতি কারণে ‘চরম খেসারত’ দিতে হচ্ছে প্রবাসের এক সময়ের সুনামধন্য সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতিকে। সর্বশেষ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহুত সাংবাদিক সম্মেলনে সভাপতির নেতৃত্বে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলা সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনেও বিভক্ত রয়েছে। এখানেও নেতৃত্বের কোন্দল আর অর্থনৈতি অনিয়মই সংগঠনে বিভক্তির মূল কারণ বলে জানা গেছে। তবে সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ঐক্যের ব্যাপারে নড়েচড়ে বসেছেন বলে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে।
নেতৃত্বের কোন্দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীও। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসীরা প্রথমে ‘প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ইউএসএ’ নামে সামাজিক সংগঠন গড়ে তুললেও পরবর্তীতে নেতৃত্বের কোন্দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন তারা। পাল্টা গড়ে উঠে টাঙ্গাইল জেলা সমিতি ইউএসএ। পরবর্তীতে টাঙ্গাইলবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগ নেয়ার ফলে বৃহত্তর স্বার্থে তার ঐক্যবদ্ধ হন এবং ‘টাঙ্গাইল জেলা সোসাইটি ইউএসএ’ নামে নতুন সংগঠন গড়ে তোলেন। কিন্তু সোসাইটির বয়স এক বছর হতে না হতেই আবার বিভক্ত হয়ে পড়েন প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী। বর্তমানে প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী ও টাঙ্গাইল সোসাইটি নামে প্রবাসী টাঙ্গাইলবাসী দুটি সংগঠন পরিচালনা করে আসছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই পক্ষের হাতে গোনা ৫/১০জনের মধ্যকার নেতৃত্বের বিরোধকে কেন্দ্র করেই টাঙ্গাইলবাসী বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
অতি সম্প্রতি বিভক্ত হয়ে পড়েছে শেরপুর জেলা সমিতি ইউএসএ। দুই সপ্তাহে আগে গঠিত হয়েছে এই সমিতির পৃথক দুটি কমিটি। গেলো সপ্তাহে অভিষিক্তও হয়েছেন বিভক্ত দুই কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সামাজিক সংগঠনগুলোর বাইরেও বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সংগঠন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন অব নিউইয়র্ক (জেবিবিএ)-এর বিভক্তি কমিউনিটির অন্যততম আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মূলত: জেবিবিএ’র গত নির্বাচন ঘিরে জেবিবিএ’র নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর এই বিভক্তির ফলে মামলা-মোকদ্দায়ও জড়িয়ে পড়েছে সংগঠনগুলো।
অপরদিকে সামাজিক সংগঠনগুলোর ফেডারেশন ‘ফোবানা’ও নেতৃত্বের কোন্দলের শিকার হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফোবানার বিভক্তি দূর করতে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডা ভিত্তিক রেজিষ্ট্রেশন পর্যন্ত হয়েছে। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)