নিউইয়র্ক ০৮:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

চক্রান্ত, প্রতারণা : জ্যামাইকায়  প্রতারক মোস্তাউর গ্রেফতার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:০৩:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০১৯
  • / ৩১৫ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: এটর্নী সহ বিভিন্ন পরিচয়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর অর্থ আতœসাত ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কম্পিউটার চুরির মামলায় পুলিশ মোস্তাউর রহমান (৪৯) নামে এক বাংলাদেশী প্রতারককে নিউইয়র্কের জ্যামাইকা থেকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত প্রতারকের গ্রেফতারীতে কমিউনিটিতে স্বস্তি প্রকাশ করে তার বিচার দাবী করেছেন ভুক্তভোগিরা।

জানা যায়, গত ৫ জুলাই শুক্রবার জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর একটি দোকানে চুরি করা কম্পিউটার বিক্রির সময় ১০৭ পুলিশ প্রিসিঙ্ক কর্মকর্তারা তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেন। ‘সাউথ এশিয়ান ফান্ড ফর এডুকেশন, স্কলারশিপ এ্যান্ড ট্রেনিং’ (সেইফেস্ট) নামের স্বেচ্ছাসেবী একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মাজেদা এ উদ্দিন ছিলেন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির প্রতারণার অন্যতম শিকার। এছাড়া বাংলাদেশী কমিউনিটির অন্যতম পরিচিত মুখ, জ্যামাইকার বাংলাদেশ ফ্রেন্ড সোসাইটির কর্মকর্তা এবং আমেরিকান বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন (এবিবিএ)-এর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা বেলাল চৌধুরীর কাছ থেকে ব্যবসার নামে সে প্রায় ২৫ হাজার ডলার আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মাজেদা উদ্দীনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, জ্যামাইকার ১৬৯ ষ্ট্রীটে দোতালায় অভিযুক্ত মোস্তাউর রহমানের মালিকানাধীন এমআরটি গ্রুপ এলএলসি’র অফিসের একটি রুম গত জানুয়ারী মাসে আমি ভাড়া নেই। চলতি বছরের ৬ মে উদ্বোধন হয় সেইফেস্টের অফিস। যেখানে উদ্যমী প্রবাসীদের কম্পিউটার শেখানোর পাশাপাশি ইংরেজী ভাষা প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। আমরা তাকে ভাড়া পরিশোধ করলেও ঐ ভবনের মালিক মোস্তাউরের বিরুদ্ধে কুইন্স কোর্টে মামলা করেন ৮/৯ মাসের বকেয়া ভাড়া আদায়ের জন্যে। এই পর্যায়ে ১৭ জুন আদালতের নির্দেশে নিউইয়র্ক সিটি মার্শাল রোনাল্ড ডব্লিউ পেজান্ট ভবনে এসে তালা লাগিয়ে দেন। অর্থাৎ ভবনের মালিক ছাড়া আর কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না। অভিযোগ ছিল তার অফিসে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি।
এমন অবস্থায় মাজেদা উদ্দীন জানতে পারেন যে, মার্শাল কর্তৃক ঐ ভবনে তালা লাগানোর আগেই মোস্তাউর প্রায় ১৭টি কম্পিউটার সরিয়ে ফেলেছেন। গত ১ জুলাই মাজেদা নিশ্চিত হন যে, অন্তত: ৪টি কম্পিউটার জ্যামাইকার একটি দোকানে বিক্রির পাঁয়তারা চলছে। ঘটনাটি পুলিশের দৃষ্টিতে দেয়ার পর ৫ জুলাই অপরাহ্নে ঐ দোকানে অভিযানের সময় পুলিশ মোস্তাউর-কে প্রকাশ্যে গ্রেফতার করে। ঐ দোকানদার মোহাম্মদ নাসের পুলিশকে জানিয়েছেন যে, মোস্তাউর কম্পিউটারগুলো বিক্রির জন্যে এনেছেন। ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার গ্রেফতারের নম্বর কিউ-১৯৬২৫২৮৩ (ছ ১৯৬২৫২৮৩)। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে, মোস্তাউর রহমান কর্তৃক প্রতারণার শিকার একাধিক জ্যামাইকাবাসী অভিযোগ করেছেন যে, তার প্রকৃত নাম হচ্ছে মোহাম্মদ মুস্তাকুর রহমান। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের কাছে নাম পাল্টিয়ে প্রতারণা করতো সে। প্রতারণার শিকার স্থানীয় প্রবাসী শামসুল হকের ওয়ার্ক পারমিট ও সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর সংগ্রহ করে দেয়ার কথা বলে সে ৫ হাজার ডলার নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অর্থ নিয়েও তাকে ওয়ার্ক পারমিট পাননি শামসুল। এছাড়া তিনি অন্য একজনের কছ থেকে কন্সট্রাকশন-ঠিকাদারের লাইসেন্স করে দেয়ার নামে ৯ হাজার হাতিয়ে নেন।
মুস্তাকুরের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর নিয়ে হেলথ ইন্স্যুরেন্সের কার্ড করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন শামসুল হক। কারণ, সেটি ছিলো ভূয়া নম্বর। এছাড়াও মুস্তাকুর নিজেকে ইমিগ্রেশনের এটর্নী পরিচয় দিয়ে শামসুল হককে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনে সহায়তা করার অঙ্গিকার করে প্রতারণা করেছেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে নিজাম নামক আরেক এক প্রবাসী বাংলাদেশীকে নিজ অফিসে কাজ দেবেন বলে তার কাছে থেকে এক হাজার ডলার নিয়েছেন। অ্যাসাইলামের গ্যারন্টি দিয়ে ফরিদা বেগম নামের আরেক জনের কাছ থেকে নিয়েছেন কয়েক হাজার ডলার। নিজেকে এটর্নী পরিচয় দিয়ে তিনি এসব প্রতারণা করতেন।
জ্যামাইকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বি চৌধুরীর কাছ থেকে নেয়া অর্থের ২৫ হাজার ডলারের চেক (নং ১৪৩, তারিখ: ০৮/২০/২০১৮) বাউন্স হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আর বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় এব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি বি. চৌধুরী। তবে তিনি চরমভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে এই প্রতিনিধিকে জানান।
জানা গেছে, মুস্তাকুরের দেশের বাড়ী কুমিল্লা জেলার বুড়িচং। সে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। ইতিপূর্বে ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ড সিটিতে ১৪৬০ ব্রডওয়ে ঠিকানায় তার একটি অফিস ছিল। সেখানকার ভিজিটিং কার্ডে তাকে এমআরটি গ্রুপের এমডি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তার শিক্ষাগত যোগ্যতার মধ্যে লেখা রয়েছে, কানাডা থেকে এমবিএ এবং এমএসএস করেছেন। ব্যবসা প্রশাসনে পিএইচডির ছাত্র ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ক্যাম্পাসে। এসবই ভুয়া, মিথ্যা বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিজাম নামক প্রবীণ এক বাংলাদেশী-কে নিজ অফিসে কাজ দেবেন বলে তার কাছে থেকে এক হাজার ডলার নিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ কাজও করিয়েছে। কিন্তু পারিশ্রমিক দূরের কথা, হাওলাত নেয়া এক হাজার ডলারও ফেরত দেননি। ফরিদা বেগম নামে অরেকজনের কাছ থেকেও নিয়েছে কয়েক হাজার ডলার এসাইলামের গ্যারান্টি দিয়ে। অন্য এক নারীর কাছেও ৫ হাজার ডলার নিয়েছেন নিজেকে এটর্নী পরিচয় দিয়ে। তিনি এখন অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন যে, লোকটি তার সাথে প্রতারণা করেছেন। অথচ আশায় বুক বেধেছিলেন যে, এসাইলাম মঞ্জুর হলে সন্তানসহ স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে সক্ষম হবেন।
নাম গোপন রাখার শর্তে এই মহিলা বলেছেন, ‘আমার ছেলেটি যাচ্ছে কুইন্স কলেজে। সে স্কলারশিপ পেয়েছে। কিন্তু সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর না থাকায় স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এর পরিবর্তে আমাকে ৫ হাজার ডলার দিতে হবে। যা ছিল তা তো ঐ মুস্তাকুরকে দিয়েছি ওয়ার্ক পারমিটসহ সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বরের জন্যে। আসলে লোকটি আমার সাথেও প্রতারণা করলো।’
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, জ্যামাইকার মত ম্যানহাটানেও একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন মোস্তাউর। সেটির ভাড়া বাবদ দুটি চেক দেন। একটিও ভাঙাতে পারেননি ঐ কক্ষের মালিক। এধরনের বেশ কটি চেক দিয়েছেন নিউইয়র্কে বাংলা ভাষার পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপণের বিল বাবদ। প্রত্যেকেরই চেক বাউন্স হয়েছে একাউন্টে কোন অর্থ না থাকায় অর্থাৎ পত্রিকাগুলোকে উল্টো জরিমানা দিতে হয়েছে।
সত্যিকার অর্থে তিনি ইমিগ্রেশনের এটর্নী কিনা জানতে চাইলে মোস্তাউর তথা মুস্তাকুর বলেন, ‘আমি এটর্নীশিপ করেছি কানাডায়।’ যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে আইনজীবী হিসেবে ব্যবসা করছেন-এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নেটওয়ার্ক’-এ এটর্নীশিপ করেছি।’ অর্থাৎ উভয় তথ্যই সন্দেহের উর্দ্ধে নয়। নেটওয়ার্কে কোন ডিগ্রি অর্জনের বিধি নেই যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া, আইনজীবীর ব্যবসা করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন অঙ্গরাজ্যে বার কাউন্সিলের মেম্বার হতে হবে। লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে। (বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

চক্রান্ত, প্রতারণা : জ্যামাইকায়  প্রতারক মোস্তাউর গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ০৭:০৩:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০১৯

হককথা ডেস্ক: এটর্নী সহ বিভিন্ন পরিচয়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর অর্থ আতœসাত ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কম্পিউটার চুরির মামলায় পুলিশ মোস্তাউর রহমান (৪৯) নামে এক বাংলাদেশী প্রতারককে নিউইয়র্কের জ্যামাইকা থেকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত প্রতারকের গ্রেফতারীতে কমিউনিটিতে স্বস্তি প্রকাশ করে তার বিচার দাবী করেছেন ভুক্তভোগিরা।

জানা যায়, গত ৫ জুলাই শুক্রবার জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউর একটি দোকানে চুরি করা কম্পিউটার বিক্রির সময় ১০৭ পুলিশ প্রিসিঙ্ক কর্মকর্তারা তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেন। ‘সাউথ এশিয়ান ফান্ড ফর এডুকেশন, স্কলারশিপ এ্যান্ড ট্রেনিং’ (সেইফেস্ট) নামের স্বেচ্ছাসেবী একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মাজেদা এ উদ্দিন ছিলেন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির প্রতারণার অন্যতম শিকার। এছাড়া বাংলাদেশী কমিউনিটির অন্যতম পরিচিত মুখ, জ্যামাইকার বাংলাদেশ ফ্রেন্ড সোসাইটির কর্মকর্তা এবং আমেরিকান বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন (এবিবিএ)-এর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা বেলাল চৌধুরীর কাছ থেকে ব্যবসার নামে সে প্রায় ২৫ হাজার ডলার আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মাজেদা উদ্দীনের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, জ্যামাইকার ১৬৯ ষ্ট্রীটে দোতালায় অভিযুক্ত মোস্তাউর রহমানের মালিকানাধীন এমআরটি গ্রুপ এলএলসি’র অফিসের একটি রুম গত জানুয়ারী মাসে আমি ভাড়া নেই। চলতি বছরের ৬ মে উদ্বোধন হয় সেইফেস্টের অফিস। যেখানে উদ্যমী প্রবাসীদের কম্পিউটার শেখানোর পাশাপাশি ইংরেজী ভাষা প্রশিক্ষণের সুযোগ রয়েছে। আমরা তাকে ভাড়া পরিশোধ করলেও ঐ ভবনের মালিক মোস্তাউরের বিরুদ্ধে কুইন্স কোর্টে মামলা করেন ৮/৯ মাসের বকেয়া ভাড়া আদায়ের জন্যে। এই পর্যায়ে ১৭ জুন আদালতের নির্দেশে নিউইয়র্ক সিটি মার্শাল রোনাল্ড ডব্লিউ পেজান্ট ভবনে এসে তালা লাগিয়ে দেন। অর্থাৎ ভবনের মালিক ছাড়া আর কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না। অভিযোগ ছিল তার অফিসে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি।
এমন অবস্থায় মাজেদা উদ্দীন জানতে পারেন যে, মার্শাল কর্তৃক ঐ ভবনে তালা লাগানোর আগেই মোস্তাউর প্রায় ১৭টি কম্পিউটার সরিয়ে ফেলেছেন। গত ১ জুলাই মাজেদা নিশ্চিত হন যে, অন্তত: ৪টি কম্পিউটার জ্যামাইকার একটি দোকানে বিক্রির পাঁয়তারা চলছে। ঘটনাটি পুলিশের দৃষ্টিতে দেয়ার পর ৫ জুলাই অপরাহ্নে ঐ দোকানে অভিযানের সময় পুলিশ মোস্তাউর-কে প্রকাশ্যে গ্রেফতার করে। ঐ দোকানদার মোহাম্মদ নাসের পুলিশকে জানিয়েছেন যে, মোস্তাউর কম্পিউটারগুলো বিক্রির জন্যে এনেছেন। ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার গ্রেফতারের নম্বর কিউ-১৯৬২৫২৮৩ (ছ ১৯৬২৫২৮৩)। তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে, মোস্তাউর রহমান কর্তৃক প্রতারণার শিকার একাধিক জ্যামাইকাবাসী অভিযোগ করেছেন যে, তার প্রকৃত নাম হচ্ছে মোহাম্মদ মুস্তাকুর রহমান। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের কাছে নাম পাল্টিয়ে প্রতারণা করতো সে। প্রতারণার শিকার স্থানীয় প্রবাসী শামসুল হকের ওয়ার্ক পারমিট ও সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর সংগ্রহ করে দেয়ার কথা বলে সে ৫ হাজার ডলার নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অর্থ নিয়েও তাকে ওয়ার্ক পারমিট পাননি শামসুল। এছাড়া তিনি অন্য একজনের কছ থেকে কন্সট্রাকশন-ঠিকাদারের লাইসেন্স করে দেয়ার নামে ৯ হাজার হাতিয়ে নেন।
মুস্তাকুরের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর নিয়ে হেলথ ইন্স্যুরেন্সের কার্ড করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন শামসুল হক। কারণ, সেটি ছিলো ভূয়া নম্বর। এছাড়াও মুস্তাকুর নিজেকে ইমিগ্রেশনের এটর্নী পরিচয় দিয়ে শামসুল হককে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনে সহায়তা করার অঙ্গিকার করে প্রতারণা করেছেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে নিজাম নামক আরেক এক প্রবাসী বাংলাদেশীকে নিজ অফিসে কাজ দেবেন বলে তার কাছে থেকে এক হাজার ডলার নিয়েছেন। অ্যাসাইলামের গ্যারন্টি দিয়ে ফরিদা বেগম নামের আরেক জনের কাছ থেকে নিয়েছেন কয়েক হাজার ডলার। নিজেকে এটর্নী পরিচয় দিয়ে তিনি এসব প্রতারণা করতেন।
জ্যামাইকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ বি চৌধুরীর কাছ থেকে নেয়া অর্থের ২৫ হাজার ডলারের চেক (নং ১৪৩, তারিখ: ০৮/২০/২০১৮) বাউন্স হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আর বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় এব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে চাননি বি. চৌধুরী। তবে তিনি চরমভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে এই প্রতিনিধিকে জানান।
জানা গেছে, মুস্তাকুরের দেশের বাড়ী কুমিল্লা জেলার বুড়িচং। সে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। ইতিপূর্বে ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ড সিটিতে ১৪৬০ ব্রডওয়ে ঠিকানায় তার একটি অফিস ছিল। সেখানকার ভিজিটিং কার্ডে তাকে এমআরটি গ্রুপের এমডি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তার শিক্ষাগত যোগ্যতার মধ্যে লেখা রয়েছে, কানাডা থেকে এমবিএ এবং এমএসএস করেছেন। ব্যবসা প্রশাসনে পিএইচডির ছাত্র ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ক্যাম্পাসে। এসবই ভুয়া, মিথ্যা বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিজাম নামক প্রবীণ এক বাংলাদেশী-কে নিজ অফিসে কাজ দেবেন বলে তার কাছে থেকে এক হাজার ডলার নিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ কাজও করিয়েছে। কিন্তু পারিশ্রমিক দূরের কথা, হাওলাত নেয়া এক হাজার ডলারও ফেরত দেননি। ফরিদা বেগম নামে অরেকজনের কাছ থেকেও নিয়েছে কয়েক হাজার ডলার এসাইলামের গ্যারান্টি দিয়ে। অন্য এক নারীর কাছেও ৫ হাজার ডলার নিয়েছেন নিজেকে এটর্নী পরিচয় দিয়ে। তিনি এখন অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন যে, লোকটি তার সাথে প্রতারণা করেছেন। অথচ আশায় বুক বেধেছিলেন যে, এসাইলাম মঞ্জুর হলে সন্তানসহ স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে সক্ষম হবেন।
নাম গোপন রাখার শর্তে এই মহিলা বলেছেন, ‘আমার ছেলেটি যাচ্ছে কুইন্স কলেজে। সে স্কলারশিপ পেয়েছে। কিন্তু সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর না থাকায় স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এর পরিবর্তে আমাকে ৫ হাজার ডলার দিতে হবে। যা ছিল তা তো ঐ মুস্তাকুরকে দিয়েছি ওয়ার্ক পারমিটসহ সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বরের জন্যে। আসলে লোকটি আমার সাথেও প্রতারণা করলো।’
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, জ্যামাইকার মত ম্যানহাটানেও একটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছিলেন মোস্তাউর। সেটির ভাড়া বাবদ দুটি চেক দেন। একটিও ভাঙাতে পারেননি ঐ কক্ষের মালিক। এধরনের বেশ কটি চেক দিয়েছেন নিউইয়র্কে বাংলা ভাষার পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপণের বিল বাবদ। প্রত্যেকেরই চেক বাউন্স হয়েছে একাউন্টে কোন অর্থ না থাকায় অর্থাৎ পত্রিকাগুলোকে উল্টো জরিমানা দিতে হয়েছে।
সত্যিকার অর্থে তিনি ইমিগ্রেশনের এটর্নী কিনা জানতে চাইলে মোস্তাউর তথা মুস্তাকুর বলেন, ‘আমি এটর্নীশিপ করেছি কানাডায়।’ যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে আইনজীবী হিসেবে ব্যবসা করছেন-এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নেটওয়ার্ক’-এ এটর্নীশিপ করেছি।’ অর্থাৎ উভয় তথ্যই সন্দেহের উর্দ্ধে নয়। নেটওয়ার্কে কোন ডিগ্রি অর্জনের বিধি নেই যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়া, আইনজীবীর ব্যবসা করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন অঙ্গরাজ্যে বার কাউন্সিলের মেম্বার হতে হবে। লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে। (বাংলা পত্রিকা)