নিউইয়র্ক ০৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ঘরে ঘরে যাচ্ছে খাবার : ব্যতিক্রমী পরিবেশে রমজান-ইফতার : করোনায় বদলে গেছে লাইফ স্টাইল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:২৭:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ এপ্রিল ২০২০
  • / ১৬১ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউ। ছবি: ইউএনএ

বিশেষ প্রতিনিধি: মরণঘাতি করোনাভাইরাসের আক্রমণে একের পর এক প্রাণহাণীর পাশাপাশি রাত-দিন সর্বক্ষণ অজানা এক আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে। শুধু নিউইয়র্ক বা যুক্তরাষ্ট্র নয়, সমগ্র বিশ্ববাসী আজ পর্যদুস্ত করোনার আঘাতে। বেঁচে থাকার জন্য চলছে অজানা এক ঘাতকের সাথে বিশ্ববাসীর লড়াই-সংগ্রম। এতে চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ব্যক্তিগত আর পারিবারিক সুসম্পর্ক, বাড়ছে দূরত্ব, ভেঙ্গে পড়েছে অর্থনীতি, বন্ধ হয়ে গেছে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, প্রার্থনাস্থল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে চলছে জরুরী অবস্থা/লক ডাউন। সবমিলিয়ে করোনায় বদলে গেছে মানুষের লাইফ স্টাইল। করোনাকালে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটির জীবনযাত্রা কেমন চলছে, কেমন কাটছে- এসব নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন।
চীনে প্রথম করেনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় ২০১৯ এর নভেম্বরের মাঝামাঝি। আর চলতি বছরের শুরুতেই অর্থাৎ জানুয়ারী মাসের মধ্যেই বিশ্বের ২১টি দেশে করোনায় আক্রান্ত হয় সহ¯্রাধিক মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনার রোগী সনাক্ত হয় গত ২০ জানুয়ারী ওয়াশিংটন রাজ্যের সিয়াটলের শহরতলীতে। সিডিসি ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি। ১৫ জানুয়ারী যিনি চীনের উহান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। আর এই উহানের হুনান শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত ৫৪ বছরের এক রোগী প্রথম মারা যান সিয়াটলে ১ মার্চ। এরপরই টনক নড়ে হোয়াইট হাউস প্রশাসনের। সিডিসি-কে ৩ মার্চ অনুমতি দেয়া হয় করোনা টেস্টের। এ সময়ে বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত হয় ৮৭ হাজার মানুষ। নিউইয়র্কে ইরান ফেরত ৩৯ বছর বয়সী এক মহিলা করোনায় মারা যান ম্যানহাটানের একটি হাসপাতালে গত ১৩ মার্চ। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
করোনা পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেমন আছেন? এই প্রশ্ন এখন অবান্তর। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কতজন মৃত্যুবরণ করেছেন বা কতজন আক্রান্ত হয়েছেন সেসব নিয়েও মাথাব্যথা কম। এখন সবার একটাই চাওয়া-পাওয়া করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি। কিন্তু এই মুক্তি কবে কিভাবে হবে বা আসবে তা কারো জানা নেই। ফলে অনিশ্চিত জীবনের দিকে মানুষের ভবিষ্যত। তারপরও চলছে নানা প্রস্তুতি, নানা চিন্তা ভাবনা, চলছে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক ভ্যাকসিন বা ঔষুধ আবিস্কারের গবেষণা।
প্রস্তুত ছিলো না কেউ: অজ্ঞাত করোনাভাইরাস সম্পর্কে কোন পূর্ব ধারনাই ছিলোনা কারো। করোনার ভয়াবহতাও বুঝতে পারেনি কেউ। খোদ বিশ্বের নাম্বার ওয়ান দাবীদার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও এই ধারণার বাইরে ছিলেন। ফলে শুধু নিউইয়র্ক নয়, বিশ্বের দেশে দেশে ব্যাপক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে। করোনার আক্রমণে আজ নিউইয়র্ক মৃত্যুপূরীতে পরিণত হয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ ট্রাম্প প্রশাসন চীন দেশে করোনার প্রাদর্ভাবে সাথে সাথেই যদি যুক্তরাষ্ট্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানী ঘটতো না।
গৃহবন্দী মানুষ: করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় ষ্টেট আর সিটি প্রশাসনের সিদ্ধান্তে নিউইয়র্কে চলছে জরুরী অবস্থা, চলছে লক ডাউন। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত চলবে এই লক ডাইন। ফলে গৃহবন্দী অবস্থায় মানুষ অস্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। দু’মাস আগেই এই জীবনযাপন সবার কাছে ছিলো অকল্পনীয়। এখন অনেকের কাছে দিন রাত হয়ে গেছে, আবার অনেকের কাছে রাত দিন হয়ে গেছে। অধিকাংশ মানুষের সময় কাটছে- বাসায় ধর্ম-কর্ম করে, লেখা-লেখি বা বই পড়ে, টিভি দেখে, ফোনালাপ করে আর পরিবার-পরিজনদের সময় দিয়ে।
খুলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান: প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর ধীরে ধীরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুরেঅ বিশেষ করে রেষ্টুরেন্টগুলো খুলতে শুরু করেছেন। অনেক গ্রোসারী স্টোর আগ থেকেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা রাখা হচ্ছে। তবে নানা কারণেই এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজের লোকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ঘরে ঘরে যাচ্ছে খাবার: করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় বিশেষ করে নিউইয়র্কবাস কে যাতে না খেয়ে থাকতে হয় সেজন্য সিটি প্রশাসন সহ বিভিন্ন সংগঠন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া হচ্ছে খাবার। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে মুসলমানদের জন্য নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি বøাজিও প্রতিদিন ৫ লাখ মানুষের জন্য হালাল খাবার পরিবেশেনের ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নামে-বেনামে ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দিচ্ছে। ব্যক্তি উদোগেও এই মহত কাজ চলছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও মানুষদের মধ্যে খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করে চলেছে। করোনায় মৃত মানুষদের ফিউনারেল সাভির্সে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক। সোসাইটির উদ্যোগে এপর্যন্ত ৯৫জনকে ফিউনেরাল সার্ভিস/কবর দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতি, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা, মুনা, ফোবানা, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব জ্যামাইকা প্রভৃতি সংগঠন কমিউনিটির সেবায় কাজ করে চলেছে।
ব্যতিক্রমী পরিবেশে রমজান-ইফতার: করোনাভাইরাসের কারণে এবছর ব্যতিক্রমী পরিবেশে পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে। মসজিদগুলো বন্ধ থাকায় ঘরে ঘরে চলছে মুসলমানদের ধর্মীয় কর্মকান্ড বিশেষ করে ৫ ওয়াক্ত নমাজের পাশাপাশি তারাবির নামাজ আর ইফতার। এতে পরিবারের সবাই অংশ নিচ্ছেন। ফলে প্রতিটি মুসলিম ঘরে ঘরে অন্যরকম ধর্মীয় আবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে। অপরদিকে নেই চিরাচরিত ইফতার পার্টি।
ঘরে বসেই চলছে কাজ: এই করোনাকালে অফিস/আদালত/প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আবার অনেকেই ঘরে বসেই ইন্টারনেটের সাহায্যে তাদের কাজ করছেন। পাশাপাশি ঘরে বসেই চলছে স্কুলের শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়া।
লক ডাউনে অতিষ্ঠ অনেকেই: আবার লখ ডাউনে ঘরে বন্দি থাকায় অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বেশী অস্থিও হয়ে উঠেছে। অস্থি হয়ে পড়ছেন গৃহবধুরাও। তাদের কথা এখন সামার (গ্রীষ্মকাল)। এই সময়ে ঘুরে-বেড়ানোর সময়, অথচ আমরা গৃহে বন্দী। তবে জরুরী প্রয়োজনে অনেককেই ঘরের বাইওে যেতে হচ্ছে।
দেখা-সাক্ষাৎ নেই কারো: করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিেিত নিউইয়র্কে চলছে জরুরী আবস্থার পাশাপাশি লক ডাউন। এই সময়ে অধিকাংশ মানুষই ঘরে গৃহবন্দী অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। একই বাড়ী বা এপার্টমেন্টে একাধিক ফ্যামিলি বসবাস করলেও দেখা-সাক্ষাৎ নেই অপর পরিবারের সাথে। পাশাপাশি এপার্টমেন্ট থাকলেও কেউ জানে না পাশের এপার্টমেন্টর খবর।
ফোনই ভরসা: চলমান ক্রান্তিকালে ফোনই এখন একমাত্র যোগাযোগের ভরসা হয়ে উঠেছে। সকল প্রকার যোগাযোগ চলছে ফোনের মাধ্যমে। তবে এক্ষেত্রে মোবাইল ফোনে নতুন প্রযুক্তির বিস্কার ঘটনায় কথার পাশাপাশি দেখার বিষয়টি অনেকটা স্বস্তির পরম বিলিয়ে দিচ্ছে অনেককে। (বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

ঘরে ঘরে যাচ্ছে খাবার : ব্যতিক্রমী পরিবেশে রমজান-ইফতার : করোনায় বদলে গেছে লাইফ স্টাইল

প্রকাশের সময় : ১২:২৭:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ এপ্রিল ২০২০

নিউইয়র্ক: জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউ। ছবি: ইউএনএ

বিশেষ প্রতিনিধি: মরণঘাতি করোনাভাইরাসের আক্রমণে একের পর এক প্রাণহাণীর পাশাপাশি রাত-দিন সর্বক্ষণ অজানা এক আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে। শুধু নিউইয়র্ক বা যুক্তরাষ্ট্র নয়, সমগ্র বিশ্ববাসী আজ পর্যদুস্ত করোনার আঘাতে। বেঁচে থাকার জন্য চলছে অজানা এক ঘাতকের সাথে বিশ্ববাসীর লড়াই-সংগ্রম। এতে চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ব্যক্তিগত আর পারিবারিক সুসম্পর্ক, বাড়ছে দূরত্ব, ভেঙ্গে পড়েছে অর্থনীতি, বন্ধ হয়ে গেছে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, প্রার্থনাস্থল মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে চলছে জরুরী অবস্থা/লক ডাউন। সবমিলিয়ে করোনায় বদলে গেছে মানুষের লাইফ স্টাইল। করোনাকালে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটির জীবনযাত্রা কেমন চলছে, কেমন কাটছে- এসব নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন।
চীনে প্রথম করেনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় ২০১৯ এর নভেম্বরের মাঝামাঝি। আর চলতি বছরের শুরুতেই অর্থাৎ জানুয়ারী মাসের মধ্যেই বিশ্বের ২১টি দেশে করোনায় আক্রান্ত হয় সহ¯্রাধিক মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনার রোগী সনাক্ত হয় গত ২০ জানুয়ারী ওয়াশিংটন রাজ্যের সিয়াটলের শহরতলীতে। সিডিসি ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি। ১৫ জানুয়ারী যিনি চীনের উহান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। আর এই উহানের হুনান শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত ৫৪ বছরের এক রোগী প্রথম মারা যান সিয়াটলে ১ মার্চ। এরপরই টনক নড়ে হোয়াইট হাউস প্রশাসনের। সিডিসি-কে ৩ মার্চ অনুমতি দেয়া হয় করোনা টেস্টের। এ সময়ে বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত হয় ৮৭ হাজার মানুষ। নিউইয়র্কে ইরান ফেরত ৩৯ বছর বয়সী এক মহিলা করোনায় মারা যান ম্যানহাটানের একটি হাসপাতালে গত ১৩ মার্চ। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
করোনা পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেমন আছেন? এই প্রশ্ন এখন অবান্তর। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কতজন মৃত্যুবরণ করেছেন বা কতজন আক্রান্ত হয়েছেন সেসব নিয়েও মাথাব্যথা কম। এখন সবার একটাই চাওয়া-পাওয়া করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি। কিন্তু এই মুক্তি কবে কিভাবে হবে বা আসবে তা কারো জানা নেই। ফলে অনিশ্চিত জীবনের দিকে মানুষের ভবিষ্যত। তারপরও চলছে নানা প্রস্তুতি, নানা চিন্তা ভাবনা, চলছে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক ভ্যাকসিন বা ঔষুধ আবিস্কারের গবেষণা।
প্রস্তুত ছিলো না কেউ: অজ্ঞাত করোনাভাইরাস সম্পর্কে কোন পূর্ব ধারনাই ছিলোনা কারো। করোনার ভয়াবহতাও বুঝতে পারেনি কেউ। খোদ বিশ্বের নাম্বার ওয়ান দাবীদার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও এই ধারণার বাইরে ছিলেন। ফলে শুধু নিউইয়র্ক নয়, বিশ্বের দেশে দেশে ব্যাপক প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে। করোনার আক্রমণে আজ নিউইয়র্ক মৃত্যুপূরীতে পরিণত হয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ ট্রাম্প প্রশাসন চীন দেশে করোনার প্রাদর্ভাবে সাথে সাথেই যদি যুক্তরাষ্ট্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানী ঘটতো না।
গৃহবন্দী মানুষ: করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় ষ্টেট আর সিটি প্রশাসনের সিদ্ধান্তে নিউইয়র্কে চলছে জরুরী অবস্থা, চলছে লক ডাউন। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত চলবে এই লক ডাইন। ফলে গৃহবন্দী অবস্থায় মানুষ অস্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। দু’মাস আগেই এই জীবনযাপন সবার কাছে ছিলো অকল্পনীয়। এখন অনেকের কাছে দিন রাত হয়ে গেছে, আবার অনেকের কাছে রাত দিন হয়ে গেছে। অধিকাংশ মানুষের সময় কাটছে- বাসায় ধর্ম-কর্ম করে, লেখা-লেখি বা বই পড়ে, টিভি দেখে, ফোনালাপ করে আর পরিবার-পরিজনদের সময় দিয়ে।
খুলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান: প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর ধীরে ধীরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুরেঅ বিশেষ করে রেষ্টুরেন্টগুলো খুলতে শুরু করেছেন। অনেক গ্রোসারী স্টোর আগ থেকেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা রাখা হচ্ছে। তবে নানা কারণেই এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজের লোকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ঘরে ঘরে যাচ্ছে খাবার: করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় বিশেষ করে নিউইয়র্কবাস কে যাতে না খেয়ে থাকতে হয় সেজন্য সিটি প্রশাসন সহ বিভিন্ন সংগঠন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া হচ্ছে খাবার। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে মুসলমানদের জন্য নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি বøাজিও প্রতিদিন ৫ লাখ মানুষের জন্য হালাল খাবার পরিবেশেনের ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নামে-বেনামে ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দিচ্ছে। ব্যক্তি উদোগেও এই মহত কাজ চলছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও মানুষদের মধ্যে খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করে চলেছে। করোনায় মৃত মানুষদের ফিউনারেল সাভির্সে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক। সোসাইটির উদ্যোগে এপর্যন্ত ৯৫জনকে ফিউনেরাল সার্ভিস/কবর দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতি, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা, মুনা, ফোবানা, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব জ্যামাইকা প্রভৃতি সংগঠন কমিউনিটির সেবায় কাজ করে চলেছে।
ব্যতিক্রমী পরিবেশে রমজান-ইফতার: করোনাভাইরাসের কারণে এবছর ব্যতিক্রমী পরিবেশে পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে। মসজিদগুলো বন্ধ থাকায় ঘরে ঘরে চলছে মুসলমানদের ধর্মীয় কর্মকান্ড বিশেষ করে ৫ ওয়াক্ত নমাজের পাশাপাশি তারাবির নামাজ আর ইফতার। এতে পরিবারের সবাই অংশ নিচ্ছেন। ফলে প্রতিটি মুসলিম ঘরে ঘরে অন্যরকম ধর্মীয় আবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে। অপরদিকে নেই চিরাচরিত ইফতার পার্টি।
ঘরে বসেই চলছে কাজ: এই করোনাকালে অফিস/আদালত/প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আবার অনেকেই ঘরে বসেই ইন্টারনেটের সাহায্যে তাদের কাজ করছেন। পাশাপাশি ঘরে বসেই চলছে স্কুলের শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়া।
লক ডাউনে অতিষ্ঠ অনেকেই: আবার লখ ডাউনে ঘরে বন্দি থাকায় অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বেশী অস্থিও হয়ে উঠেছে। অস্থি হয়ে পড়ছেন গৃহবধুরাও। তাদের কথা এখন সামার (গ্রীষ্মকাল)। এই সময়ে ঘুরে-বেড়ানোর সময়, অথচ আমরা গৃহে বন্দী। তবে জরুরী প্রয়োজনে অনেককেই ঘরের বাইওে যেতে হচ্ছে।
দেখা-সাক্ষাৎ নেই কারো: করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিেিত নিউইয়র্কে চলছে জরুরী আবস্থার পাশাপাশি লক ডাউন। এই সময়ে অধিকাংশ মানুষই ঘরে গৃহবন্দী অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। একই বাড়ী বা এপার্টমেন্টে একাধিক ফ্যামিলি বসবাস করলেও দেখা-সাক্ষাৎ নেই অপর পরিবারের সাথে। পাশাপাশি এপার্টমেন্ট থাকলেও কেউ জানে না পাশের এপার্টমেন্টর খবর।
ফোনই ভরসা: চলমান ক্রান্তিকালে ফোনই এখন একমাত্র যোগাযোগের ভরসা হয়ে উঠেছে। সকল প্রকার যোগাযোগ চলছে ফোনের মাধ্যমে। তবে এক্ষেত্রে মোবাইল ফোনে নতুন প্রযুক্তির বিস্কার ঘটনায় কথার পাশাপাশি দেখার বিষয়টি অনেকটা স্বস্তির পরম বিলিয়ে দিচ্ছে অনেককে। (বাংলা পত্রিকা)