নিউইয়র্ক ০২:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার শুভেচ্ছা ॥ ‘অবিলম্বে আওয়ামী লীগের সম্মেলন দাবী’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:১৯:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মে ২০১৭
  • / ১১০১ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: মহান মে দিবস পালন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা মে দিবসের আলোকে সমাজের সকল স্তরে অধিকার আদায়ের প্রত্যয়ের পাশাপাশি অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দাবী জানিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তিন বছরের কমিটি ছয় বছর ধরে চলছে। এটা অগঠনতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিক। বক্তারা দল পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা ব্যর্থতা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, বহি:র্বিশ্বে যদি কোন সংগঠন থাকে তাহলে শ্রমিক লীগই থাকবে। কেননা, প্রবাসে আমরা সবাই শ্রমিক। যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ কোন অনিয়ম বরদাস্ত করবে না। দলের সকল অনিয়ম সাংগঠনিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত মুজিবনগর দিবস পালন অনুষ্ঠানের অপ্রীতিকর ঘটনা এবং দলের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটও বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসায় দৃশ্যত: সভাটি প্রতিবাদ সভায় পরিণত হয়।
এদিকে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ শুকুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ঢাকা থেকে ফোনে শুভেচ্ছা জানান এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তারা সাংগঠনিক নিয়মনীতি মেনে চলার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগকে আরো শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। খবর ইউএনএ’র।
সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ পালকি পার্টি সেন্টারে ১ মে সোমবার রাতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় জাতীয় শ্রমিক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এবং যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুর রহীম বাদশা। সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সহকারী এটর্নী জেনারেল, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন-এর নব মনোনীত সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কার্যকরী পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য অ্যাডকেট আব্দুর রকীব মন্টু। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া (হাজী এনাম), আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ বখতিয়ার, জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী ও হাকিকুল ইসলাম খোকন, কার্যকরী সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা ও যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিরাজউদ্দিন আহমেদ সোহাগ।
যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আব্দুল মমিন। এরপর ১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগোর হে মার্কেটে নিহত শ্রমিকসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মঞ্জুর চৌধুরী। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ।
সভায় সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সহ সভাপতি মুহাম্মদ ফজলুর রহমান ও অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম সহ অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহাদৎ হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য শরীফ কামরুল আলম হিরা, শ্রমিক লীগের সহ সভাপতি হোসেন সোহেল রানা, হাসনাত হাসন, আব্দুর রকিব উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন নান্নু, ইলিয়ার রহমান ইলিয়াস, টি মোল্লা, আশ্রাব উদ্দিন, মওলানা বজলুর রহমান ও এম এ আলম বিপ্লব, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুবল দেবনাথ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাফিকুর রহমান তোরণ প্রমুখ।
সভায় কেন্দ্রীয় জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আলহাজ শুকুর মাহমুদ তার বক্তব্যের শুরুতেই মে দিবসে নিহতদের স্মরণ আর যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেন। পরবর্তীতে স্বাধীনতা বিরোধীতা চক্র তাকে হত্যা করে। আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হাটি হাটি পা পা করে বাংলাদেশ স্বনির্ভর হচ্ছে। প্রবাসীদের অর্থে দেশ শক্তিশালী হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের শ্রমিকরা ন্যায্য মুজুরী পাচ্ছে, সরকার শ্রমিকদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ রোল মডেল। ফলে জাতিসংঘের নানা পুরষ্কার পাচ্ছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সরকার শ্রমিক বান্ধব সরকার। দেশের শ্রমিকরাও তার পাশে রয়েছেন। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগকে আরো শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সিরাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে হে মার্কেটের ঘটনা স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ যুক্তরাষ্ট্রে মে দিবস পালন করেছে। এজন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শেখ মুজিব আর শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে প্রবাসেও শ্রমিক লীগ করছেন। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, দলের অঙ্গ-সংগঠন সম্পর্কে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সঠিক নয়। জাতীয় শ্রমিক লীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। বিশ্বের যেখানেই বাংলার শ্রমিক থাকবে সেখানেই শ্রমিক লীগ থাকবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ শ্রমিক লীগের দেখার বিষয় নয়। শ্রমিক লীগকে তার স্বকিয়তা আর সাংগঠনিক শালিনতা বজায় রেখেই কাজ করতে হবে।
মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, মে দিবস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দাবী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিনা জানিনা, তবে শ্রমিকদের অধিকারের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মে দিবসের মধ্য দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিকতা রূপ পেয়েছে। এই দিবসের চেতানা মনে প্রাণে আশ্বস্ত আর ধারণ করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকায় দেশে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চেতনাকে ধারণ করেই আমাদেরকে আজীবন বেঁচে থাকবে হবে। তিনি শিকাগোর হে মার্কেটে মহান মে দিবস পালন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের প্রতি প্রস্তাব করেন।
অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম বলেন, অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে নারী শ্রমিকদেরও যথেষ্ট ত্যাগ সহ অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নর-নারীর সমতায় বিশ্বাসী ছিলেন। শ্রমিক লীগে নারী সমাজকে সম মর্যাদা আর অধিকার দেয়া উচিৎ।
আব্দুর রহীম বাদশা বলেন, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে রাজনীতি করি। শ্রমিক লীগ কখনোই কোন অন্যায়, অসাংগঠনিক আর অগঠনতান্ত্রিক কর্মকান্ড মেনে নেবে না। যারা দলবে ব্যবসার স্বার্থে ব্যবহার করেন তাদের ব্যাপারে তিনি সবার প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদয়ের
প্রসঙ্গত তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদী একটি চক্র গত ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস পালন অনুষ্ঠানের ঘটনা ভিন্নঘাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ঐদিন আমরা কোন সভা-সমাবেশ প্রতিহত করতে যাইনি। আমরা ঐ ঘটনার নিন্দা জানাই।
অ্যাডকেট আব্দুর রকীব মন্টু মুজিব সৈনিকদের ঐক্যবদ্ধ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে দল আর দেশের স্বার্থ বড়। ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভের কারণে দল যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দলের গঠনতন্ত্র আর অভিভাবকদের মেনে চলতে হবে। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে করে নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি না করে কারো প্রতি যদি কারো কনো অভিযোগ থাকে তা লিখিতভাবে দায়িত্বশীলদের জানিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, আমরা সকল প্রবাসীই শ্রমিক। আর আমরা যারা মুজিব সৈনিকরা বুলেট প্রুফ। আমারা লোভ, পদ-পদবীর কাছে বিক্রি হবো না। আমরা সুবিধাবাদী নেই। হুমকী-ধুমকী দিয়ে রাজপথের লড়াকু সৈনিকদের স্তব্ধ করা যাবে না। তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ করে বলেন, তারা সুবিধাবাদী লোক, ষড়যন্ত্রকারী। ড. সিদ্দিক কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ এমনকি মুক্তিযুদ্ধও করেননি। তার কাছে দল নিরাপদ নয়। আর নিজাম চৌধুরী রাজাকার পরিবারের সদস্য। তারা দুজন দলকে ব্যবসায়ীক স্বার্থে ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, দলের কেউ কেউ বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র নেই। তাহলে দলের সভা-সমাবেশ আর আবিষ্কার-বহিষ্কার কিভাবে হয়? তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কারো লীজ দেয়া হয়নি। তিন বছরের কমিটির ছয় বছর হলো। আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে দলের নতুন কমিটি চাই। তিনি দলের ষড়যন্ত্রকারী, সুবিধাবাদীদের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
হাজী এনাম বলেন, আমরা ২৫/৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী করছি। আমরা উড়ে এসে জুড়ে বসিনি। দলের ৪/৫জন সিনিয়র নেতার মধ্যে আমিও একজন। আমরা কি হাসিনা-জয়কে মানি না? তিনি বলেন, আমরা দল বা দলের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিপক্ষে নই, আমরা দলের নেতাদের অন্যায়, অনিয়ম, অবিচার আর সুবিধাবাধীদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক লীগের সরকার না থাকলে সভাপতি শ্রমিক লীগকে ভেঙ্গে দিতে পারেন। তিনি বলেন, যারা বেশীরভাগ সময় দেশে থাকেন তাদের দিয়ে সঠিকভাবে দল পরিচালিত হতে পারে না।
অ্যাডভোকেট শাহ বখতিয়ার বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করিেছ। বিগত ২২ বছর ধরেই আমি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। অথচ মুবিজনগর দিবসের সভায় আমাদেরকে বিএনপি-জামায়াতী বলা হয়, খন্দকার মোস্তাকের লোক বলা হয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ হচ্ছে সকল সংগঠনের অভিবাবক। সকল অঙ্গ আর সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে দণলকে শক্তিশালী করাই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। কিন্তু দলের সভাপতি ড. সিদ্দিক তা না করে তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে মূলত: জননেত্রী শেখ হাসিনা আর দলের সাথেই বিশ্বাস ঘাতকতা করছেন, সংগঠনকে বিভক্ত, দূর্বল করছেন। তিনি বলেন, আমরা নই ড. সিদ্দিকই খন্দকার মোস্তাকের লোক। আর মুবিনগর দিবসের ঘটনা দলের ব্যর্থ নেতৃত্বই দায়ী।
কাজী কয়েস বলেন, বহি:বিশ্বে কোন সংগঠন থাকলে হলে শ্রমিক লীগই থাকার যুক্তিকতা রয়েছে। আমরা শ্রমিক শ্রেনীর পক্ষে। আর শ্রমিকদের নিয়েই দলকে ‘জামায়াত-রাজাকার’ মুক্ত করতে চাই। আমরা সকল অসাংগঠনিক, অগঠনতান্ত্রিক, সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে আজ আমরা নির্যাতিত। আমাদের আন্দোলন চলবেই। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে শোষক আর শোষিত রয়েছে। আমরা শোষিতের পক্ষে। তিনি দলের সুবিধাবাধীদের প্রতিরোধ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা শ্রমিক। শ্রমিক লীগকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
হিন্দাল কাদির বাপ্পা বলেন, আমরা নতুন আওয়ামী লীগার নই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৭ সালে টুঙ্গী পাড়ায় ১৫ আগষ্ট ‘জাতির জনক’-এর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে প্রথম গ্রেফতার হই। তিন তিনবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি, দলের জন্য জেল-জুলুম খেটেছি। তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিকদের নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলবে তাদের জিভ কেটে ফেলবো। প্রয়োজনে শেখ হাসিনার সামনে জুতাপেটা করবো। কেউ মুজিব সৈনিকদের গায়ে আছড় দিলে তার নখ কেটে ফেলবো’। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ তো দূরের কথা যারা ছাত্রলীগ-যুবলীগও করেনি তারা আজ দলের নেতা হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মেয়াদ তিন বছরের জায়গায় ছয় বছর চলছে উল্লেখ করে তিনি অবিলম্বে সম্মেলন দেয়ার জন্য দলের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেকই আওয়ামী লীগ চলবে।
সিরাজউদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, পৃথিবীতে যতদিন উৎপাদন ব্যবস্থ্যা থাকবে, ততদিন শ্রমিক শ্রেনী থাকবে। দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র আন্দোলনের পরই শ্রমিক সংগঠনগুলো মূলদলের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করে চলেছে। তিনি মহান মে দিবসের চেতনায় অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সকল শ্রমিককে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
শাহাদৎ হোসেন দলের পদ-পদবী বিক্রি চলছে। আমাকেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পদেও লোভ দেয়া হয়েছে। এসব বন্ধ করতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক সফরে আসার আগেই আমাদের জয় হবেই।
হোসেন সোহেল রানা বলেন, আমরা দলের গঠনতন্ত্র মেনেই দলের রাজনীতি করতে চাই। দলের মধ্যে কোন অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলবেই। তিনি বলেন, শ্রমিক লীগ সহ দলের সকল অঙ্গ সংগঠন ছাড়া আওয়ামী লীগ ‘সম্পূর্ণ লীগ’ হবে না। তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগকে ‘মাইনাস’ করে নিউজার্সী থেকে নিউইয়র্কে কোন ট্রাক ‘লোড-আনলোড’ করতে পারবে না। দল বা দলের পদ-পদবীকে ব্যবহার করে কাউকে ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা নিতে দেয়া হবে না। তিনিও মেয়াদ উত্তীর্ণ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অবিলম্বে সম্মেলন দাবী করেন।
সেবুল দেবনাথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে। নেতাদের মধ্যে ‘বিচার মানি তাল গাছটা আমার’ আবস্থা বিরাজ করছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মানলে দলের মধ্যে বিভক্তি থাকবে কেনো। তিনি সবাইকে গঠনতন্ত্র মেনে চলার আহ্বান জানান।
সভায় অন্যান্য বক্তা বলেন, ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে গড়া জাতীয় শ্রমিক লীগ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ কারো পকেটের অর্থে চলেনা, কারো তাবেদারী করে না। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শ্রমিক লীগ আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা চাই দলের মধ্যে গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র মোতাবেক দল চলুক।


সভাপতির বক্তব্যে খোকন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আমরা কেন্দ্রীয় জাতীয় শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দের পরামর্শে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শ্রমিক লীগ করছি। কেউ শ্রমিক লীগের রাজনীতি বন্ধ করতে পারবে না। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আমাদের রিুদ্ধে যারা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন তাদের রাজনীতি আর কর্মকান্ডের খবর আমরা জানি। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকায় দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাত সাড়ে ৯টার দিয়ে শুরু হয়ে সভাটি শেষ হয় মধ্য রাত দেড়টায়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতার শুভেচ্ছা ॥ ‘অবিলম্বে আওয়ামী লীগের সম্মেলন দাবী’

প্রকাশের সময় : ০৬:১৯:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মে ২০১৭

নিউইয়র্ক: মহান মে দিবস পালন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা মে দিবসের আলোকে সমাজের সকল স্তরে অধিকার আদায়ের প্রত্যয়ের পাশাপাশি অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দাবী জানিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ হয়ে গেছে। তিন বছরের কমিটি ছয় বছর ধরে চলছে। এটা অগঠনতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিক। বক্তারা দল পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা ব্যর্থতা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, বহি:র্বিশ্বে যদি কোন সংগঠন থাকে তাহলে শ্রমিক লীগই থাকবে। কেননা, প্রবাসে আমরা সবাই শ্রমিক। যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ কোন অনিয়ম বরদাস্ত করবে না। দলের সকল অনিয়ম সাংগঠনিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত মুজিবনগর দিবস পালন অনুষ্ঠানের অপ্রীতিকর ঘটনা এবং দলের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটও বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসায় দৃশ্যত: সভাটি প্রতিবাদ সভায় পরিণত হয়।
এদিকে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ শুকুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ঢাকা থেকে ফোনে শুভেচ্ছা জানান এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তারা সাংগঠনিক নিয়মনীতি মেনে চলার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগকে আরো শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। খবর ইউএনএ’র।
সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ পালকি পার্টি সেন্টারে ১ মে সোমবার রাতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় জাতীয় শ্রমিক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক এবং যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুর রহীম বাদশা। সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সহকারী এটর্নী জেনারেল, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন-এর নব মনোনীত সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কার্যকরী পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য অ্যাডকেট আব্দুর রকীব মন্টু। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া (হাজী এনাম), আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ বখতিয়ার, জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কয়েস, উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী ও হাকিকুল ইসলাম খোকন, কার্যকরী সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা ও যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিরাজউদ্দিন আহমেদ সোহাগ।
যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আব্দুল মমিন। এরপর ১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগোর হে মার্কেটে নিহত শ্রমিকসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মঞ্জুর চৌধুরী। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমেদ।
সভায় সাপ্তাহিক ঠিকানা’র প্রধান সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সহ সভাপতি মুহাম্মদ ফজলুর রহমান ও অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম সহ অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহাদৎ হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য শরীফ কামরুল আলম হিরা, শ্রমিক লীগের সহ সভাপতি হোসেন সোহেল রানা, হাসনাত হাসন, আব্দুর রকিব উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন নান্নু, ইলিয়ার রহমান ইলিয়াস, টি মোল্লা, আশ্রাব উদ্দিন, মওলানা বজলুর রহমান ও এম এ আলম বিপ্লব, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুবল দেবনাথ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইকুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাফিকুর রহমান তোরণ প্রমুখ।
সভায় কেন্দ্রীয় জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আলহাজ শুকুর মাহমুদ তার বক্তব্যের শুরুতেই মে দিবসে নিহতদের স্মরণ আর যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেন। পরবর্তীতে স্বাধীনতা বিরোধীতা চক্র তাকে হত্যা করে। আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হাটি হাটি পা পা করে বাংলাদেশ স্বনির্ভর হচ্ছে। প্রবাসীদের অর্থে দেশ শক্তিশালী হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের শ্রমিকরা ন্যায্য মুজুরী পাচ্ছে, সরকার শ্রমিকদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ রোল মডেল। ফলে জাতিসংঘের নানা পুরষ্কার পাচ্ছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সরকার শ্রমিক বান্ধব সরকার। দেশের শ্রমিকরাও তার পাশে রয়েছেন। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগকে আরো শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সিরাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে হে মার্কেটের ঘটনা স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ যুক্তরাষ্ট্রে মে দিবস পালন করেছে। এজন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শেখ মুজিব আর শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে প্রবাসেও শ্রমিক লীগ করছেন। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, দলের অঙ্গ-সংগঠন সম্পর্কে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সঠিক নয়। জাতীয় শ্রমিক লীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। বিশ্বের যেখানেই বাংলার শ্রমিক থাকবে সেখানেই শ্রমিক লীগ থাকবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ শ্রমিক লীগের দেখার বিষয় নয়। শ্রমিক লীগকে তার স্বকিয়তা আর সাংগঠনিক শালিনতা বজায় রেখেই কাজ করতে হবে।
মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, মে দিবস প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দাবী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিনা জানিনা, তবে শ্রমিকদের অধিকারের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মে দিবসের মধ্য দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিকতা রূপ পেয়েছে। এই দিবসের চেতানা মনে প্রাণে আশ্বস্ত আর ধারণ করতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের নেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকায় দেশে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চেতনাকে ধারণ করেই আমাদেরকে আজীবন বেঁচে থাকবে হবে। তিনি শিকাগোর হে মার্কেটে মহান মে দিবস পালন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের প্রতি প্রস্তাব করেন।
অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম বলেন, অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে নারী শ্রমিকদেরও যথেষ্ট ত্যাগ সহ অবদান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নর-নারীর সমতায় বিশ্বাসী ছিলেন। শ্রমিক লীগে নারী সমাজকে সম মর্যাদা আর অধিকার দেয়া উচিৎ।
আব্দুর রহীম বাদশা বলেন, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে রাজনীতি করি। শ্রমিক লীগ কখনোই কোন অন্যায়, অসাংগঠনিক আর অগঠনতান্ত্রিক কর্মকান্ড মেনে নেবে না। যারা দলবে ব্যবসার স্বার্থে ব্যবহার করেন তাদের ব্যাপারে তিনি সবার প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদয়ের
প্রসঙ্গত তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদী একটি চক্র গত ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস পালন অনুষ্ঠানের ঘটনা ভিন্নঘাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ঐদিন আমরা কোন সভা-সমাবেশ প্রতিহত করতে যাইনি। আমরা ঐ ঘটনার নিন্দা জানাই।
অ্যাডকেট আব্দুর রকীব মন্টু মুজিব সৈনিকদের ঐক্যবদ্ধ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে দল আর দেশের স্বার্থ বড়। ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভের কারণে দল যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দলের গঠনতন্ত্র আর অভিভাবকদের মেনে চলতে হবে। প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে করে নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি না করে কারো প্রতি যদি কারো কনো অভিযোগ থাকে তা লিখিতভাবে দায়িত্বশীলদের জানিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, আমরা সকল প্রবাসীই শ্রমিক। আর আমরা যারা মুজিব সৈনিকরা বুলেট প্রুফ। আমারা লোভ, পদ-পদবীর কাছে বিক্রি হবো না। আমরা সুবিধাবাদী নেই। হুমকী-ধুমকী দিয়ে রাজপথের লড়াকু সৈনিকদের স্তব্ধ করা যাবে না। তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ করে বলেন, তারা সুবিধাবাদী লোক, ষড়যন্ত্রকারী। ড. সিদ্দিক কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ এমনকি মুক্তিযুদ্ধও করেননি। তার কাছে দল নিরাপদ নয়। আর নিজাম চৌধুরী রাজাকার পরিবারের সদস্য। তারা দুজন দলকে ব্যবসায়ীক স্বার্থে ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, দলের কেউ কেউ বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র নেই। তাহলে দলের সভা-সমাবেশ আর আবিষ্কার-বহিষ্কার কিভাবে হয়? তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কারো লীজ দেয়া হয়নি। তিন বছরের কমিটির ছয় বছর হলো। আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে দলের নতুন কমিটি চাই। তিনি দলের ষড়যন্ত্রকারী, সুবিধাবাদীদের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
হাজী এনাম বলেন, আমরা ২৫/৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী করছি। আমরা উড়ে এসে জুড়ে বসিনি। দলের ৪/৫জন সিনিয়র নেতার মধ্যে আমিও একজন। আমরা কি হাসিনা-জয়কে মানি না? তিনি বলেন, আমরা দল বা দলের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিপক্ষে নই, আমরা দলের নেতাদের অন্যায়, অনিয়ম, অবিচার আর সুবিধাবাধীদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক লীগের সরকার না থাকলে সভাপতি শ্রমিক লীগকে ভেঙ্গে দিতে পারেন। তিনি বলেন, যারা বেশীরভাগ সময় দেশে থাকেন তাদের দিয়ে সঠিকভাবে দল পরিচালিত হতে পারে না।
অ্যাডভোকেট শাহ বখতিয়ার বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করিেছ। বিগত ২২ বছর ধরেই আমি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। অথচ মুবিজনগর দিবসের সভায় আমাদেরকে বিএনপি-জামায়াতী বলা হয়, খন্দকার মোস্তাকের লোক বলা হয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ হচ্ছে সকল সংগঠনের অভিবাবক। সকল অঙ্গ আর সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে দণলকে শক্তিশালী করাই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। কিন্তু দলের সভাপতি ড. সিদ্দিক তা না করে তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে মূলত: জননেত্রী শেখ হাসিনা আর দলের সাথেই বিশ্বাস ঘাতকতা করছেন, সংগঠনকে বিভক্ত, দূর্বল করছেন। তিনি বলেন, আমরা নই ড. সিদ্দিকই খন্দকার মোস্তাকের লোক। আর মুবিনগর দিবসের ঘটনা দলের ব্যর্থ নেতৃত্বই দায়ী।
কাজী কয়েস বলেন, বহি:বিশ্বে কোন সংগঠন থাকলে হলে শ্রমিক লীগই থাকার যুক্তিকতা রয়েছে। আমরা শ্রমিক শ্রেনীর পক্ষে। আর শ্রমিকদের নিয়েই দলকে ‘জামায়াত-রাজাকার’ মুক্ত করতে চাই। আমরা সকল অসাংগঠনিক, অগঠনতান্ত্রিক, সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে আজ আমরা নির্যাতিত। আমাদের আন্দোলন চলবেই। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে শোষক আর শোষিত রয়েছে। আমরা শোষিতের পক্ষে। তিনি দলের সুবিধাবাধীদের প্রতিরোধ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা শ্রমিক। শ্রমিক লীগকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
হিন্দাল কাদির বাপ্পা বলেন, আমরা নতুন আওয়ামী লীগার নই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৭ সালে টুঙ্গী পাড়ায় ১৫ আগষ্ট ‘জাতির জনক’-এর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে প্রথম গ্রেফতার হই। তিন তিনবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি, দলের জন্য জেল-জুলুম খেটেছি। তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিকদের নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলবে তাদের জিভ কেটে ফেলবো। প্রয়োজনে শেখ হাসিনার সামনে জুতাপেটা করবো। কেউ মুজিব সৈনিকদের গায়ে আছড় দিলে তার নখ কেটে ফেলবো’। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ তো দূরের কথা যারা ছাত্রলীগ-যুবলীগও করেনি তারা আজ দলের নেতা হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মেয়াদ তিন বছরের জায়গায় ছয় বছর চলছে উল্লেখ করে তিনি অবিলম্বে সম্মেলন দেয়ার জন্য দলের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেকই আওয়ামী লীগ চলবে।
সিরাজউদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, পৃথিবীতে যতদিন উৎপাদন ব্যবস্থ্যা থাকবে, ততদিন শ্রমিক শ্রেনী থাকবে। দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র আন্দোলনের পরই শ্রমিক সংগঠনগুলো মূলদলের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করে চলেছে। তিনি মহান মে দিবসের চেতনায় অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সকল শ্রমিককে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
শাহাদৎ হোসেন দলের পদ-পদবী বিক্রি চলছে। আমাকেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পদেও লোভ দেয়া হয়েছে। এসব বন্ধ করতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক সফরে আসার আগেই আমাদের জয় হবেই।
হোসেন সোহেল রানা বলেন, আমরা দলের গঠনতন্ত্র মেনেই দলের রাজনীতি করতে চাই। দলের মধ্যে কোন অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলবেই। তিনি বলেন, শ্রমিক লীগ সহ দলের সকল অঙ্গ সংগঠন ছাড়া আওয়ামী লীগ ‘সম্পূর্ণ লীগ’ হবে না। তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগকে ‘মাইনাস’ করে নিউজার্সী থেকে নিউইয়র্কে কোন ট্রাক ‘লোড-আনলোড’ করতে পারবে না। দল বা দলের পদ-পদবীকে ব্যবহার করে কাউকে ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা নিতে দেয়া হবে না। তিনিও মেয়াদ উত্তীর্ণ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে অবিলম্বে সম্মেলন দাবী করেন।
সেবুল দেবনাথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে। নেতাদের মধ্যে ‘বিচার মানি তাল গাছটা আমার’ আবস্থা বিরাজ করছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সবাই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মানলে দলের মধ্যে বিভক্তি থাকবে কেনো। তিনি সবাইকে গঠনতন্ত্র মেনে চলার আহ্বান জানান।
সভায় অন্যান্য বক্তা বলেন, ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে গড়া জাতীয় শ্রমিক লীগ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগ কারো পকেটের অর্থে চলেনা, কারো তাবেদারী করে না। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শ্রমিক লীগ আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা চাই দলের মধ্যে গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র মোতাবেক দল চলুক।


সভাপতির বক্তব্যে খোকন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আমরা কেন্দ্রীয় জাতীয় শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দের পরামর্শে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শ্রমিক লীগ করছি। কেউ শ্রমিক লীগের রাজনীতি বন্ধ করতে পারবে না। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আমাদের রিুদ্ধে যারা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন তাদের রাজনীতি আর কর্মকান্ডের খবর আমরা জানি। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকায় দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাত সাড়ে ৯টার দিয়ে শুরু হয়ে সভাটি শেষ হয় মধ্য রাত দেড়টায়।