নিউইয়র্ক ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টের রায়ে অস্কার মুরালকে সর্বোচ্চ শাস্তি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মার্চ ২০১৮
  • / ১০১৬ বার পঠিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্কের ওজনপার্কে বাংলাদেশী ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি ও তার সহযোগী তারা মিয়া হত্যার ঘটনায় অস্কার মুরাল (৩৭) নামের এক যুবককে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে রায় ঘোষনা করেছে আদালত। শুক্রবার (২৩ মার্চ) দুপুরে নিউইয়র্কের কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে বারো সদস্যের জুরি বোর্ড ও এক বিচারক চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষনা করেন। রায়ে আসামী মুরাল খুনী প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাস্ট, সেকেন্ড, থার্ড ও ফোর্থ ডিগ্রি মার্ডারার হিসাবে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।  আলোচিত ঐ জোড়া খুনের ঘটনায় আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তির রায় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশী কমিউনিটি। খবর ইউএনএ’র।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৩ আগষ্ট নিউইয়র্কের ওজন পার্কে দুর্বৃত্তের গুলিত নিহত হন নিউইয়র্কের ওজনপার্কের ওজোনপার্কের আলফোরকান মসজিদের ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি (৫৫) ও তার সহযোগী মুসল্লী তারা মিয়া (৬৪)। স্থানীয় লিবার্টি এভিনিউর ৮০ স্ট্রিটে এই হত্যাকান্ড ঘটে। নিউইর্য়কের অন্যতম বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা ওজন পার্ক। প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশীর বসবাস এই এলাকায়। এখানেই বাস করতেন আল ফোরকান মসজিদের নিহত ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি এবং বৃদ্ধ তাঁরা মিয়া। তাঁরা মিঞা, ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজির প্রতিবেশী ছিলেন এবং প্রতিদিন তারা দু’জনে একসঙ্গে মসজিদে যেতেন এবং নামাজ পড়তেন। ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকুনজির বাড়ী বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে আর মসুল্লী মরহুম  মুহাম্মদ তারা মিয়ার বাড়ী সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গাহাটা গ্রামে। চার বছর ধরে ইমাম আকুনজি আল ফোরকান মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোন মুসলিম ইমাম হত্যার ঘটনা এটিই প্রথম।
ঘটনার দিন দুপুরে জোহরের নামাজ আদায় শেষে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথেই নির্বিচারে গুলিবিদ্ধ করা হয় তাদের। ইমাম আকুনজি ঘটনাস্থলেই আর তারা মিয়া হাসপাতালে মারা যান। ঘটনার পর অস্কার মুরাল নামে একজনকে আটক করে নিউইয়র্ক পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের পর থেকেই হত্যাকারীর দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবীতে বাংলাদেশী কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষ সোচ্চার ছিলেন।
গত কয়েক সপ্তহ ধরে গুঞ্জন ছিল যে কোনো সময় হতে পারে চাঞ্চল্যকর বাংলাদেশী ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি ও তার সহযোগি তারা মিয়া হত্যা মামলার রায় ঘিরে। বিশেষ করে গত তিন দিন ধরে নিউইয়র্কের কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে টানা শুনানী চলছিল মামলাটির। ঘটনার বিবরণ, মামলার তদন্ত, আশেপাশের ভিডিও ফুটেজসহ সব কিছুই প্রমাণ করে অস্কার মুরালই ইমাম আকুনজি ও তারা মিয়াকে গুলি করে পলিয়ে যায়। ঘটনার পরপর স্থানীয়রা আটকও করে অস্কার মরালকে। কিন্তু আদালতে নিজে নিদোর্ষ দাবী করায় মামলাটির দীর্ঘ শুনানী হয় কোর্টে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা বিচার কাজ শুক্রবারের রায় ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়। ঐ ঘটনায় প্রতিটি ধাপে আদালত স্প্যানিস যুবক অস্কার মুরালকে দোষী বলে রায় দেয়।
রায়ে আদালত জানায়, মুরাল ফাস্ট, সেকেন্ড, থার্ড ও ফোর্থ ডিগ্রি মার্ডারার। আর তার শাস্তিও হবে সর্বোচ্চ। আদালত আসামীকে গিল্টি হিসাবে ঘোষনা করলেও আগামী ১৮ এপ্রিল শাস্তি কি হবে তা ঘোষনার জন্য তারিখ ধার্য করেন। অত্যন্ত মর্মান্তিক ঐ হত্যান্ডের ঘটনায় নিহতের পরিবারের সাথে সব সময় ছিল বাংলাদেশী কমিউনিটি। বিচারে সন্তোষ প্রকাশ করে, ন্যায় বিচার পাওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইমাম আকুনজি ও তারা মিয়ার পরিবার।
এদিকে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অত্যন্ত আলোচিত ঐ জোড়া খুনের ঘটনা ব্যাপক সারা ফেলে। ঘটনার পর থেকেই নিহতের পরিবারের পাশে ছিল বাংলাদেশী কমিউনিটি। প্রতিটি শুনানীর দিন আদালতে তাদের অংশগ্রহন ছিল স্বতস্ফুর্ত।
আকুনজি ও তারা মিয়া হত্যার ঘটনায় কমিউনিটি’র পাশাপাশি ঐ ঘটনার বিচার ও দোষীকে খুজে বের করতে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সাথেও ছিল প্রবাসের বাংলাদেশী মিডিয়া। এ জন্য মিডিয়াকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন কমিউনিটি নেতারা।
ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি ও তারা মিয়া হত্যা মামলার রায় ও দোষীকে গিল্টি ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটি। তারা জানান, হৃদয় বিদারক ঐ হত্যার ঘটনায় সব সময় সোচ্চার ছিলেন তারা। এমন রায় হওয়ায় সবাইকে সাধুবাদ জানিয়ে রায় কার্যকরের অপেক্ষার কথাও জানান তারা।
ইমাম আকুনজি ও তারা মিয়া হত্যা মামলায় রায় ঘিরে গত ৪/৫দিন কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। কোর্টে শুনানী চলাকালে কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দে মধ্যে মজলিসে শূরার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, ইকনার ইমাম জফির আলী, কেয়ারের সিস্টার আফাফা নাশীর, বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে মসজিদ আল আমানের সভাপতি কবীর চৌধুরী, মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, আল ফুরকান মসজিদের ফারুক আহমদ, ফুলতলী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সুন্নাতুর রহমান, আলহাজ্ব আবদুল বারী, আলহাজ্ব গৌছ উদ্দীন, আনোয়ার খান সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী এবং মরহুমদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টের রায়ে অস্কার মুরালকে সর্বোচ্চ শাস্তি

প্রকাশের সময় : ১২:৩৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মার্চ ২০১৮

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্কের ওজনপার্কে বাংলাদেশী ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি ও তার সহযোগী তারা মিয়া হত্যার ঘটনায় অস্কার মুরাল (৩৭) নামের এক যুবককে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে রায় ঘোষনা করেছে আদালত। শুক্রবার (২৩ মার্চ) দুপুরে নিউইয়র্কের কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে বারো সদস্যের জুরি বোর্ড ও এক বিচারক চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষনা করেন। রায়ে আসামী মুরাল খুনী প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাস্ট, সেকেন্ড, থার্ড ও ফোর্থ ডিগ্রি মার্ডারার হিসাবে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।  আলোচিত ঐ জোড়া খুনের ঘটনায় আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তির রায় হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশী কমিউনিটি। খবর ইউএনএ’র।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৩ আগষ্ট নিউইয়র্কের ওজন পার্কে দুর্বৃত্তের গুলিত নিহত হন নিউইয়র্কের ওজনপার্কের ওজোনপার্কের আলফোরকান মসজিদের ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি (৫৫) ও তার সহযোগী মুসল্লী তারা মিয়া (৬৪)। স্থানীয় লিবার্টি এভিনিউর ৮০ স্ট্রিটে এই হত্যাকান্ড ঘটে। নিউইর্য়কের অন্যতম বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা ওজন পার্ক। প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশীর বসবাস এই এলাকায়। এখানেই বাস করতেন আল ফোরকান মসজিদের নিহত ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি এবং বৃদ্ধ তাঁরা মিয়া। তাঁরা মিঞা, ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজির প্রতিবেশী ছিলেন এবং প্রতিদিন তারা দু’জনে একসঙ্গে মসজিদে যেতেন এবং নামাজ পড়তেন। ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকুনজির বাড়ী বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে আর মসুল্লী মরহুম  মুহাম্মদ তারা মিয়ার বাড়ী সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গাহাটা গ্রামে। চার বছর ধরে ইমাম আকুনজি আল ফোরকান মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোন মুসলিম ইমাম হত্যার ঘটনা এটিই প্রথম।
ঘটনার দিন দুপুরে জোহরের নামাজ আদায় শেষে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথেই নির্বিচারে গুলিবিদ্ধ করা হয় তাদের। ইমাম আকুনজি ঘটনাস্থলেই আর তারা মিয়া হাসপাতালে মারা যান। ঘটনার পর অস্কার মুরাল নামে একজনকে আটক করে নিউইয়র্ক পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের পর থেকেই হত্যাকারীর দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবীতে বাংলাদেশী কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষ সোচ্চার ছিলেন।
গত কয়েক সপ্তহ ধরে গুঞ্জন ছিল যে কোনো সময় হতে পারে চাঞ্চল্যকর বাংলাদেশী ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি ও তার সহযোগি তারা মিয়া হত্যা মামলার রায় ঘিরে। বিশেষ করে গত তিন দিন ধরে নিউইয়র্কের কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে টানা শুনানী চলছিল মামলাটির। ঘটনার বিবরণ, মামলার তদন্ত, আশেপাশের ভিডিও ফুটেজসহ সব কিছুই প্রমাণ করে অস্কার মুরালই ইমাম আকুনজি ও তারা মিয়াকে গুলি করে পলিয়ে যায়। ঘটনার পরপর স্থানীয়রা আটকও করে অস্কার মরালকে। কিন্তু আদালতে নিজে নিদোর্ষ দাবী করায় মামলাটির দীর্ঘ শুনানী হয় কোর্টে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা বিচার কাজ শুক্রবারের রায় ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়। ঐ ঘটনায় প্রতিটি ধাপে আদালত স্প্যানিস যুবক অস্কার মুরালকে দোষী বলে রায় দেয়।
রায়ে আদালত জানায়, মুরাল ফাস্ট, সেকেন্ড, থার্ড ও ফোর্থ ডিগ্রি মার্ডারার। আর তার শাস্তিও হবে সর্বোচ্চ। আদালত আসামীকে গিল্টি হিসাবে ঘোষনা করলেও আগামী ১৮ এপ্রিল শাস্তি কি হবে তা ঘোষনার জন্য তারিখ ধার্য করেন। অত্যন্ত মর্মান্তিক ঐ হত্যান্ডের ঘটনায় নিহতের পরিবারের সাথে সব সময় ছিল বাংলাদেশী কমিউনিটি। বিচারে সন্তোষ প্রকাশ করে, ন্যায় বিচার পাওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইমাম আকুনজি ও তারা মিয়ার পরিবার।
এদিকে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অত্যন্ত আলোচিত ঐ জোড়া খুনের ঘটনা ব্যাপক সারা ফেলে। ঘটনার পর থেকেই নিহতের পরিবারের পাশে ছিল বাংলাদেশী কমিউনিটি। প্রতিটি শুনানীর দিন আদালতে তাদের অংশগ্রহন ছিল স্বতস্ফুর্ত।
আকুনজি ও তারা মিয়া হত্যার ঘটনায় কমিউনিটি’র পাশাপাশি ঐ ঘটনার বিচার ও দোষীকে খুজে বের করতে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সাথেও ছিল প্রবাসের বাংলাদেশী মিডিয়া। এ জন্য মিডিয়াকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন কমিউনিটি নেতারা।
ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি ও তারা মিয়া হত্যা মামলার রায় ও দোষীকে গিল্টি ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটি। তারা জানান, হৃদয় বিদারক ঐ হত্যার ঘটনায় সব সময় সোচ্চার ছিলেন তারা। এমন রায় হওয়ায় সবাইকে সাধুবাদ জানিয়ে রায় কার্যকরের অপেক্ষার কথাও জানান তারা।
ইমাম আকুনজি ও তারা মিয়া হত্যা মামলায় রায় ঘিরে গত ৪/৫দিন কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। কোর্টে শুনানী চলাকালে কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দে মধ্যে মজলিসে শূরার মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, ইকনার ইমাম জফির আলী, কেয়ারের সিস্টার আফাফা নাশীর, বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে মসজিদ আল আমানের সভাপতি কবীর চৌধুরী, মুফতী লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, আল ফুরকান মসজিদের ফারুক আহমদ, ফুলতলী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সুন্নাতুর রহমান, আলহাজ্ব আবদুল বারী, আলহাজ্ব গৌছ উদ্দীন, আনোয়ার খান সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী এবং মরহুমদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।