নিউইয়র্ক ০৬:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

কমান্ডার নবীকে যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগে অবাঞ্চিত ঘোষণা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:২৬:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • / ৮৪৫ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে নিউইয়র্কে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বানচাল করতে ভীতি ছড়ানোর চক্রান্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর নবী কমান্ডারের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নাশকতার অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্তের হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নুর নবীকে। এর সাথে সম্পৃক্ত কতিপয় সাংবাদিক নামধারীদের যারা নুর নবীর চর হিসেবে কাজ করছে তাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এক অনির্ধারিত সাংবাদিক সম্মেলনে কথিত নুর নবী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অশোভন বক্তব্য প্রদান করে। এর প্রতিবাদে পরদিন শনিবার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভায় নুর নবীকে চক্রান্তকারী হিসেবে আখ্যা দিয়ে নাশকতার বিস্তারিত ব্যাখা না দেয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।
নবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে নিজ দল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফর ঘিরে গেলো সপ্তাহে আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে তার বক্তব্যে ফুঁসে উঠেছেন দলীয় নেতা-কর্মী আর কমিউনিটির সচেতন মানুষ ছাড়াও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা। ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিুকর রহমানকে আক্রমন করতে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা বানচালের চক্রান্ত করেন বলে আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখা দাবী করেছে। ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় নাশকতার আশংকা!’র কথা তিনি উল্লেখ করেন তার সাংবাদিক সম্মেলনে।
প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা বাতিলে প্রবাসীদের মধ্যে ভীতি ও উদ্বেগ সৃষ্টিই তার সাংবাদিক সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ ও সংবর্ধিত করতে যখন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ব্যাপক প্রস্ততি নিচ্ছেন তখন নুরু নবী কমান্ডার কতিপয় চক্রান্তকারীকে নিয়ে নাশকতার নামে সাবোট্যাজ করতে চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা। একই সাংবাদিক সম্মেলনে নুরু নবী আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য ও বিশোধগার করে।
এদিকে শনিবার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক টাউন হল সভায় নুর নবীর এই চক্রান্ত ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নাশকতার কথা বলেছে নুর নবী আর যারা এটা বিভিন্ন পত্রিকায় হেডলাইন করে প্রকাশ করেছে তারাও চক্রান্তের অংশ। তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। নাশকতার অভিয্গো প্রমাণ বা এটা স্পষ্ট না করা পর্যন্ত তাকে আওয়ামী লীগে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হলো। তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্বার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ব্রীফ করা হবে। যাতে এধরনের চক্রান্তকারীদের কেউ প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় কোন ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা না করে।
অনুষ্ঠানে নজরুল ইসলাম বলেন, নুরু নবী কমান্ডারের এটা আসল নাম নয়। ভিন্ন নামে তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পদ পদবীর নামে অর্থ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
এদিন নুর নবীর চক্রান্তের বিরুদ্ধে আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সৈয়দ বসারত আলী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, সাংগঠীনক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম, মিসবাহ আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দরুদ মিয়া রনেল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত বছর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ-এর নিইয়র্ক সফরকালীন সময়ে তাঁর সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সম্বর্ধনার আয়োজন করার উদ্যোগ নেয়া হলে কমান্ডার নবী সহ কতিপয় লোকের অপৎপরতায় রাষ্ট্রপতির সম্বর্ধনা শেষ পর্যন্ত হয়নি।
কে এই নবী?
নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে তার পরিচিতি কমান্ডার নূরুন্নবী। নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। তার আসল নাম জামাল খান বলে জানা গেছে। নুর নবীর বসবাস নিউইয়র্কের ব্রুকলীন। দেশের বাড়ী নোয়াখালী। বছরের পর বছর ধরে তিনি নিউইয়র্ক প্রবাসী। দেশে যাতায়াতের নাম-গন্ধও নেই। কিন্তু কেন? এমন প্রশ্ন কমিউনিটির সর্বত্রই। সম্প্রতি নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির ভবনের ভাড়া পরিশোধ না করে অর্থ আতœসাৎসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত নুর নবী।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, প্রায় দুই যুগ ধরে নিউইয়র্কে বসবাসকারী কমান্ডার নবী ‘পলাতক’ আসামী থাকায় দেশে ফিরতে পারছেন না। মুক্তিযোদ্ধা আর আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে দলীয় লোকজনের কাছ থেকে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা আদায়, চাঁদাবাজীরও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
‘নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ’-এর সভাপতির পরিচয় ও দোয়াই দিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা আদায় ছাড়াও নানা প্রভাব-প্রতিপত্তি খাঁটিয়ে চলেছেন। যার ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাউকে ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব দেখিয়েই ক্ষান্ত হননি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সম্পর্কে লাগাতার বিশোদগার করে চলেছেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মধ্যকার নেতা-কর্মীদের দ্বিধা-বিভক্ত রাখার ক্ষেত্রেও কমান্ডার নবী গংদের ভূমিকা সর্বস্বীকৃত।
কমান্ডার নবীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ হচ্ছে বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির ভবনের ভাড়া আদায় করে তা আত্মাসাৎ। সূত্র মতে তার বিরুদ্ধে সমিতির ২৪ হাজার ডলার আতœসাতের অভিযোগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত মামলা-মোকদ্দমার মধ্যদিয়ে তাকে সমিতি ভবন ছাড়া করা হয়। তার কর্মকান্ডের জন্য এই সপ্তাহে সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকা শিরোনাম করেছে ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা বানচালের অপচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের কলঙ্ক, ষড়যন্ত্রের ক্যান্সার ‘খুনের মামলার আসামী’ নবী কমান্ডার’।
ব্রুকলীনে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের মতে কমান্ডার নবীর ব্যক্তিগত প্রবাস জীবন ‘বাউন্ডলে আর হোমলেস টাইপের মানুষ’। কথিত রয়েছে দেশী-বিদেশী একাধিক স্ত্রী রয়েছে তার।
নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পরিচয় ছাড়া তার আর কোন পরিচয় নেই। তার শিক্ষার দৌড় নিয়েও নানা প্রশ্ন কমিউনিটিতে। কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধা আর আওয়ামী লীগের পরিচয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মঞ্চে আসন গ্রহণ আর সুযোগ-সুবিধা আদায় করাই তার কাজ।
আরো জানা গেছে, কমান্ডার নবীর কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে দলের হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ। ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আসার দিন দলীয় নেতা-কর্মীদের রোষারোল থেকে বাঁচতে তিনি নাকি অন্যান্য নেতা-কর্মীদের মতো লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরে যাননি। দলের হাইকমান্ডও কমান্ডার নবীকে নাকি সভানেত্রী শেখ হাসিনার আশপাশ যেতেও বারণ করেছেন। নবীর কর্মকান্ডের খবর পেয়ে বিশেষ করে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় নাশকতার আশংকা!’র খবরটিও আমলে নিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে কমান্ডার নবী নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, টাইম টেলিভিশন ও পরিচয় পত্রিকার বিরুদ্ধে বিষোধগার ও মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করেন। যানিয়ে কমিউনিটির সাংবাদিকরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে যে সাংবাদিক সম্মেলনে ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় নাশকতার আশংকা!’র অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সেই সম্মেলন মঞ্চে কমান্ডার নবীর সাথে উপস্থিত অন্তত দুইজন তার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাছাড়া ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাসিব মামুন ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম ইতিমধ্যেই যুক্ত বিবৃতির মাধ্যমে দলীয় সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্ব ও দলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
অপরদিকে বিভিন্ন মিডিয়া বিরুদ্ধে অহেতুক অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকার পক্ষ থেকে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

কমান্ডার নবীকে যুক্তরাষ্ট্র আ. লীগে অবাঞ্চিত ঘোষণা

প্রকাশের সময় : ০৭:২৬:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নিউইয়র্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে নিউইয়র্কে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বানচাল করতে ভীতি ছড়ানোর চক্রান্তকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর নবী কমান্ডারের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নাশকতার অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্তের হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নুর নবীকে। এর সাথে সম্পৃক্ত কতিপয় সাংবাদিক নামধারীদের যারা নুর নবীর চর হিসেবে কাজ করছে তাদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এক অনির্ধারিত সাংবাদিক সম্মেলনে কথিত নুর নবী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অশোভন বক্তব্য প্রদান করে। এর প্রতিবাদে পরদিন শনিবার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভায় নুর নবীকে চক্রান্তকারী হিসেবে আখ্যা দিয়ে নাশকতার বিস্তারিত ব্যাখা না দেয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।
নবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে নিজ দল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফর ঘিরে গেলো সপ্তাহে আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে তার বক্তব্যে ফুঁসে উঠেছেন দলীয় নেতা-কর্মী আর কমিউনিটির সচেতন মানুষ ছাড়াও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা। ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিুকর রহমানকে আক্রমন করতে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা বানচালের চক্রান্ত করেন বলে আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখা দাবী করেছে। ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় নাশকতার আশংকা!’র কথা তিনি উল্লেখ করেন তার সাংবাদিক সম্মেলনে।
প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা বাতিলে প্রবাসীদের মধ্যে ভীতি ও উদ্বেগ সৃষ্টিই তার সাংবাদিক সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ ও সংবর্ধিত করতে যখন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ব্যাপক প্রস্ততি নিচ্ছেন তখন নুরু নবী কমান্ডার কতিপয় চক্রান্তকারীকে নিয়ে নাশকতার নামে সাবোট্যাজ করতে চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা। একই সাংবাদিক সম্মেলনে নুরু নবী আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য ও বিশোধগার করে।
এদিকে শনিবার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক টাউন হল সভায় নুর নবীর এই চক্রান্ত ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নাশকতার কথা বলেছে নুর নবী আর যারা এটা বিভিন্ন পত্রিকায় হেডলাইন করে প্রকাশ করেছে তারাও চক্রান্তের অংশ। তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। নাশকতার অভিয্গো প্রমাণ বা এটা স্পষ্ট না করা পর্যন্ত তাকে আওয়ামী লীগে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হলো। তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্বার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ব্রীফ করা হবে। যাতে এধরনের চক্রান্তকারীদের কেউ প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় কোন ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা না করে।
অনুষ্ঠানে নজরুল ইসলাম বলেন, নুরু নবী কমান্ডারের এটা আসল নাম নয়। ভিন্ন নামে তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পদ পদবীর নামে অর্থ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
এদিন নুর নবীর চক্রান্তের বিরুদ্ধে আরো বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সৈয়দ বসারত আলী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, সাংগঠীনক সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম, মিসবাহ আহমদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দরুদ মিয়া রনেল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত বছর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ-এর নিইয়র্ক সফরকালীন সময়ে তাঁর সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সম্বর্ধনার আয়োজন করার উদ্যোগ নেয়া হলে কমান্ডার নবী সহ কতিপয় লোকের অপৎপরতায় রাষ্ট্রপতির সম্বর্ধনা শেষ পর্যন্ত হয়নি।
কে এই নবী?
নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে তার পরিচিতি কমান্ডার নূরুন্নবী। নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। তার আসল নাম জামাল খান বলে জানা গেছে। নুর নবীর বসবাস নিউইয়র্কের ব্রুকলীন। দেশের বাড়ী নোয়াখালী। বছরের পর বছর ধরে তিনি নিউইয়র্ক প্রবাসী। দেশে যাতায়াতের নাম-গন্ধও নেই। কিন্তু কেন? এমন প্রশ্ন কমিউনিটির সর্বত্রই। সম্প্রতি নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির ভবনের ভাড়া পরিশোধ না করে অর্থ আতœসাৎসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত নুর নবী।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, প্রায় দুই যুগ ধরে নিউইয়র্কে বসবাসকারী কমান্ডার নবী ‘পলাতক’ আসামী থাকায় দেশে ফিরতে পারছেন না। মুক্তিযোদ্ধা আর আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে দলীয় লোকজনের কাছ থেকে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা আদায়, চাঁদাবাজীরও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
‘নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ’-এর সভাপতির পরিচয় ও দোয়াই দিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা আদায় ছাড়াও নানা প্রভাব-প্রতিপত্তি খাঁটিয়ে চলেছেন। যার ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাউকে ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব দেখিয়েই ক্ষান্ত হননি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সম্পর্কে লাগাতার বিশোদগার করে চলেছেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মধ্যকার নেতা-কর্মীদের দ্বিধা-বিভক্ত রাখার ক্ষেত্রেও কমান্ডার নবী গংদের ভূমিকা সর্বস্বীকৃত।
কমান্ডার নবীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ হচ্ছে বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির ভবনের ভাড়া আদায় করে তা আত্মাসাৎ। সূত্র মতে তার বিরুদ্ধে সমিতির ২৪ হাজার ডলার আতœসাতের অভিযোগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত মামলা-মোকদ্দমার মধ্যদিয়ে তাকে সমিতি ভবন ছাড়া করা হয়। তার কর্মকান্ডের জন্য এই সপ্তাহে সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকা শিরোনাম করেছে ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা বানচালের অপচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের কলঙ্ক, ষড়যন্ত্রের ক্যান্সার ‘খুনের মামলার আসামী’ নবী কমান্ডার’।
ব্রুকলীনে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের মতে কমান্ডার নবীর ব্যক্তিগত প্রবাস জীবন ‘বাউন্ডলে আর হোমলেস টাইপের মানুষ’। কথিত রয়েছে দেশী-বিদেশী একাধিক স্ত্রী রয়েছে তার।
নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পরিচয় ছাড়া তার আর কোন পরিচয় নেই। তার শিক্ষার দৌড় নিয়েও নানা প্রশ্ন কমিউনিটিতে। কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধা আর আওয়ামী লীগের পরিচয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মঞ্চে আসন গ্রহণ আর সুযোগ-সুবিধা আদায় করাই তার কাজ।
আরো জানা গেছে, কমান্ডার নবীর কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে দলের হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ। ১৮ সেপ্টেম্বর রোববার প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে আসার দিন দলীয় নেতা-কর্মীদের রোষারোল থেকে বাঁচতে তিনি নাকি অন্যান্য নেতা-কর্মীদের মতো লাগোর্ডিয়া বিমানবন্দরে যাননি। দলের হাইকমান্ডও কমান্ডার নবীকে নাকি সভানেত্রী শেখ হাসিনার আশপাশ যেতেও বারণ করেছেন। নবীর কর্মকান্ডের খবর পেয়ে বিশেষ করে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় নাশকতার আশংকা!’র খবরটিও আমলে নিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে কমান্ডার নবী নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা, টাইম টেলিভিশন ও পরিচয় পত্রিকার বিরুদ্ধে বিষোধগার ও মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করেন। যানিয়ে কমিউনিটির সাংবাদিকরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে যে সাংবাদিক সম্মেলনে ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় নাশকতার আশংকা!’র অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সেই সম্মেলন মঞ্চে কমান্ডার নবীর সাথে উপস্থিত অন্তত দুইজন তার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাছাড়া ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাসিব মামুন ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম ইতিমধ্যেই যুক্ত বিবৃতির মাধ্যমে দলীয় সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্ব ও দলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
অপরদিকে বিভিন্ন মিডিয়া বিরুদ্ধে অহেতুক অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকার পক্ষ থেকে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)