নিউইয়র্ক ০৬:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি আর সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৫৮:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৯২৯ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: নাসির আলী খান পল। কমিউনিটিতে যিনি পল খান নামেই অধিক পরিচিত। বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠন, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী প্রভৃতি পরিচিতির মধ্যে তার অন্যতম হচ্ছে তিনি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স বরোর জ্যামাইকার ‘বাংলাদেশী কলাম্বাস’। বিগত ৪০ বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করছেন এই নিউইয়র্কে। চলতি জানুয়ারী মাসের ১৫ জানুয়ারী ছিলো তার জন্মদিন। অনেকটা নিরবে-নিভৃতেই চলে গেলো তার জন্মদিন। তার জন্মদিন ঘিরে এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, কমিউনিটির অনেক কিছু দেখলাম। দেখতে দেখতে প্রবাস জীবনের ৪০টি বছর চলে গেলো। আমার প্রত্যাশা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশী কমিউনিটি আর মূলধারায় প্রতিষ্ঠান জন্য সঠিক নেতা-নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা।
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সন্তান নাসির আলী খান পলের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৫ জানুয়ারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসী বিভাগ থেকে ডিগ্রী নেয়ার পর ১৯৭৬ সালের ১৮ মার্চ সহজেই পাড়ি জমান মার্কিন মুল্লুকে, বাংলাদেশীর স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। নোঙ্গর গারেন বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কে। বসবাস শুরু করেন সিটির কুইন্স বরোর জ্যামাইকায়। ধীরে ধীরে পরিচিত পান ‘বাংলাদেশী কলাম্বাস’ হিসেবে। স্ত্রী নিলুফার নাসরিন খান স্বপ্না আর একমাত্র পুত্র স্যামিউল খান নিয়ে বর্তমানে তার বসবাস নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের ডিক্স হিলস-এ।
এই প্রতিনিধির সাথে আলাপাকালে পল খান বলেন, মাত্র ১০ ডলার হাতে নিয়ে প্রথমে একাই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাই। আমার আসার চার মাস পর স্ত্রী স্বপ্নাকে নিয়ে আসি। শুরু হয় আমাদের স্বপ্নের সংসার। পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট থাকলেও ‘ল্যান্ড অব অপরচ্যুনিটির দেশ’ বলে খ্যাত এই আমেরিকার নিউইয়র্কে বেছে নেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা। সফলও হন এই পেশায়। পাশাপাশি মুক্ত চিন্তার মানুষ হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের খুঁজে খুঁজে বের করে গড়ে তোলেন নিজস্ব কমিউনিটি। পরিচিতি পান কমিউনিটি নেতা হিসেবে।
নাসির আলী খান পল কমিউনিটির সুনামধন্য ইসলামিক প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়াও এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঘনিষ্টভাবে জড়িত থেকে কমিউনিটির সেবা করে চলেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশী আমেরিকান ফার্মাসিস্ট এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা, অবিভক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ট্রাষ্টি বোর্ড সদস্য (বর্তমান), নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান উপদেষ্টা, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
পল খান বলেন, অনেকেই জানেন না যে, একজন বাংলাদেশী হিসেবে স্ট্যাচু অব লিবার্টির ইমিগ্র্যান্ট ওয়ালে একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমার নাম রয়েছে। আমার জানা মতে একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে আমার নামটিই সেখানে খোদিত রয়েছে। দ্য স্ট্যাচু অব লিবার্টি-এলিস আইল্যান্ড ফাউন্ডেশন ইনক আমার কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাকে ‘অফিসিয়াল সার্টিফিকেট অব রেজিষ্ট্রেশন’ প্রদান করেছে। সার্টিফিকেটে লেখা রয়েছে ‘পল নাসির আলী খান হু কেইম টু আমেরিকা ফ্রম বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের দিকে ইমিগ্র্যান্ট ওয়াল সংস্কারের সময় তার নামটি খোদিত হয়। সেসময় এই কাজে ৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়।
Pal Khan Birthdayআলাপকালে পল খান বলেন, ঘটা করে জন্ম পালনের পক্ষে নই আমি। কেউ আমার জন্মদিন পালন করুক তাও চাইনি। তবে জন্মদিনের দিন কেউ ‘উইলিংলী উইশ’ করলে ভালো লাগে, আনন্দ লাগে। তবে এবারের জন্মদিনে আমাকে ‘সারপ্রাইজ’ করেছে নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ইউএসএ ইনক। তিনি বলেন, কাকতালিয়ভাবে আমার জন্মদিনের দিন অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারী জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউস্থ পানসী রেষ্টুরেন্টে নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আসছে একুশে ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষ্যে সভা থাকায় ঐ সভায় আমি যোগ দেই। সেখানে আমার সহপাঠি বন্ধু, প্রবাসের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ডা. নার্গিস রহমানের বিশেষ উদ্যোগে ফুল দিয়ে আর কেক কেটে আমার জন্মদিন পালন করা হয়। তিনি বলেন, এই আয়োজনের জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। তবে তাদের আয়োজনে আমি খুশি, আমার ভালো লেগেছে। তাদের আনন্দে আমি আনন্দিত হয়েছি।
দীর্ঘ ৪০ বছরের প্রবাস জীবনে সফলতা কি এমন এক প্রশ্নের উত্তরে পল খান বলেন, বাংলাদেশী হিসেবে কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ইমিগ্যান্ট ওয়ালে আমার নাম খোদিত ছাড়াও সার্টিফিকেট অর্জন, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯৯০ সালে লং আইল্যান্ডস্থ ওয়াশিংটন মেমোরিয়ালে ৫০টি কবর ক্রয়, এপর্যন্ত ৫০ জনের মতো প্রবাসীর মরদেহ বাংলাদেশে প্রেরণে সহায়তা আর প্রবাসে প্রথমবারের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের শীতার্তদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রবাস জীবনের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে পল খান বলেন, আমাদের কমিউনিটির পরিধি দিন দিন বাড়লেও বাড়েনি আমাদের সেবা-সহযোগিতার মনোভাব, সুদৃঢ় হয়নি আমাদের কমিউনিটি, ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি আমরা। সঠিক নেতৃত্ব নেই আমাদের। দ্বিধা-বিভক্তি কমিউনিটির সর্বত্র। যা অত্যন্ত দু:খজনক। তাছাড়া যোগ্য ব্যক্তিদের যথাযত সম্মান বা মর্যাদা না দেয়ার বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশী পীড়া দেয়। তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের নেতৃত্ব দেয়ার মতো বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক সহ কমিউনিটিতে এতো সংগঠন। কিন্তু সংগঠনগুলো সঠিকভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে বলে আমার মনে হয়না। আমাদের জানার খুব অভাব, সামাজিক অ্যাওয়ারনেস না থাকার কারণে কমিউনিটি অনেকেই বিপথগামী হচ্ছে, খুন-খারাবীর মতো ঘটনা ঘটছে, কেউ কেউ আতœহত্যার মতো নির্মম পথ বেছে নিচ্ছে। এসব থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। এজন্য সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কমিউনিটির সবার জন্য কাজ করতে হবে। সামাজিক সংগঠনগুলোকে বনভোজন আর সভা-সমাবেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। চেয়ার দখল আর ফটো তোলার প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে বিরোধীতার জন্য বিরোধীতার আর পরচর্চার। দরকার আতœ সমালোচনা।
পল খান বলেন, বেশী কষ্ট লাগে যখন দেখি কমিউনিটির সম্মানিত ব্যক্তি তার সম্মান পাচ্ছেন না। অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যরাও যোগ্য হয়ে উঠছেন। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানাদির জন্য স্পন্সরের প্রয়োজন রয়েছে, তাই বলে যোগ্য ব্যক্তিকে অসম্মানিত করে অযোগ্যকে যোগ্যতার সার্টিফিকেট দেয়া ঠিক নয়। বিসয়গুলো সংশ্লিস্ট সকলকে ভেবে দেখা দরকার।
আগামী দিনের কমিউনিটি আর প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে পল খান বলেন, এখন বাংলাদেশী কমিউনিটি সকল দিক দিয়েই বলিয়ান, প্রতিষ্ঠিত। নিউইয়র্কের সকল পেশাতেই বাংলাদেশী-আমেরিকানরা নিজস্ব মেধা-যোগ্যতায় সুপ্রতিষ্ঠিত। সময় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় বিশেষ করে নিউইয়র্কের মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে তুলে ধরার। এখন অন্তত একজন বাংলাদেশী-আমেরিকান সিটি কাউন্সিলম্যান থাকা দরকার।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি আর সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা

প্রকাশের সময় : ০৮:৫৮:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০১৭

নিউইয়র্ক: নাসির আলী খান পল। কমিউনিটিতে যিনি পল খান নামেই অধিক পরিচিত। বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠন, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী প্রভৃতি পরিচিতির মধ্যে তার অন্যতম হচ্ছে তিনি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স বরোর জ্যামাইকার ‘বাংলাদেশী কলাম্বাস’। বিগত ৪০ বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করছেন এই নিউইয়র্কে। চলতি জানুয়ারী মাসের ১৫ জানুয়ারী ছিলো তার জন্মদিন। অনেকটা নিরবে-নিভৃতেই চলে গেলো তার জন্মদিন। তার জন্মদিন ঘিরে এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, কমিউনিটির অনেক কিছু দেখলাম। দেখতে দেখতে প্রবাস জীবনের ৪০টি বছর চলে গেলো। আমার প্রত্যাশা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশী কমিউনিটি আর মূলধারায় প্রতিষ্ঠান জন্য সঠিক নেতা-নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা।
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সন্তান নাসির আলী খান পলের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৫ জানুয়ারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসী বিভাগ থেকে ডিগ্রী নেয়ার পর ১৯৭৬ সালের ১৮ মার্চ সহজেই পাড়ি জমান মার্কিন মুল্লুকে, বাংলাদেশীর স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। নোঙ্গর গারেন বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কে। বসবাস শুরু করেন সিটির কুইন্স বরোর জ্যামাইকায়। ধীরে ধীরে পরিচিত পান ‘বাংলাদেশী কলাম্বাস’ হিসেবে। স্ত্রী নিলুফার নাসরিন খান স্বপ্না আর একমাত্র পুত্র স্যামিউল খান নিয়ে বর্তমানে তার বসবাস নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের ডিক্স হিলস-এ।
এই প্রতিনিধির সাথে আলাপাকালে পল খান বলেন, মাত্র ১০ ডলার হাতে নিয়ে প্রথমে একাই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাই। আমার আসার চার মাস পর স্ত্রী স্বপ্নাকে নিয়ে আসি। শুরু হয় আমাদের স্বপ্নের সংসার। পেশায় একজন ফার্মাসিস্ট থাকলেও ‘ল্যান্ড অব অপরচ্যুনিটির দেশ’ বলে খ্যাত এই আমেরিকার নিউইয়র্কে বেছে নেন রিয়েল এস্টেট ব্যবসা। সফলও হন এই পেশায়। পাশাপাশি মুক্ত চিন্তার মানুষ হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের খুঁজে খুঁজে বের করে গড়ে তোলেন নিজস্ব কমিউনিটি। পরিচিতি পান কমিউনিটি নেতা হিসেবে।
নাসির আলী খান পল কমিউনিটির সুনামধন্য ইসলামিক প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন ছাড়াও এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঘনিষ্টভাবে জড়িত থেকে কমিউনিটির সেবা করে চলেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশী আমেরিকান ফার্মাসিস্ট এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা, অবিভক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ট্রাষ্টি বোর্ড সদস্য (বর্তমান), নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান উপদেষ্টা, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
পল খান বলেন, অনেকেই জানেন না যে, একজন বাংলাদেশী হিসেবে স্ট্যাচু অব লিবার্টির ইমিগ্র্যান্ট ওয়ালে একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমার নাম রয়েছে। আমার জানা মতে একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে আমার নামটিই সেখানে খোদিত রয়েছে। দ্য স্ট্যাচু অব লিবার্টি-এলিস আইল্যান্ড ফাউন্ডেশন ইনক আমার কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাকে ‘অফিসিয়াল সার্টিফিকেট অব রেজিষ্ট্রেশন’ প্রদান করেছে। সার্টিফিকেটে লেখা রয়েছে ‘পল নাসির আলী খান হু কেইম টু আমেরিকা ফ্রম বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের দিকে ইমিগ্র্যান্ট ওয়াল সংস্কারের সময় তার নামটি খোদিত হয়। সেসময় এই কাজে ৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়।
Pal Khan Birthdayআলাপকালে পল খান বলেন, ঘটা করে জন্ম পালনের পক্ষে নই আমি। কেউ আমার জন্মদিন পালন করুক তাও চাইনি। তবে জন্মদিনের দিন কেউ ‘উইলিংলী উইশ’ করলে ভালো লাগে, আনন্দ লাগে। তবে এবারের জন্মদিনে আমাকে ‘সারপ্রাইজ’ করেছে নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ইউএসএ ইনক। তিনি বলেন, কাকতালিয়ভাবে আমার জন্মদিনের দিন অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারী জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউস্থ পানসী রেষ্টুরেন্টে নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আসছে একুশে ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষ্যে সভা থাকায় ঐ সভায় আমি যোগ দেই। সেখানে আমার সহপাঠি বন্ধু, প্রবাসের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ডা. নার্গিস রহমানের বিশেষ উদ্যোগে ফুল দিয়ে আর কেক কেটে আমার জন্মদিন পালন করা হয়। তিনি বলেন, এই আয়োজনের জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। তবে তাদের আয়োজনে আমি খুশি, আমার ভালো লেগেছে। তাদের আনন্দে আমি আনন্দিত হয়েছি।
দীর্ঘ ৪০ বছরের প্রবাস জীবনে সফলতা কি এমন এক প্রশ্নের উত্তরে পল খান বলেন, বাংলাদেশী হিসেবে কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ইমিগ্যান্ট ওয়ালে আমার নাম খোদিত ছাড়াও সার্টিফিকেট অর্জন, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯৯০ সালে লং আইল্যান্ডস্থ ওয়াশিংটন মেমোরিয়ালে ৫০টি কবর ক্রয়, এপর্যন্ত ৫০ জনের মতো প্রবাসীর মরদেহ বাংলাদেশে প্রেরণে সহায়তা আর প্রবাসে প্রথমবারের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের শীতার্তদের সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রবাস জীবনের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে পল খান বলেন, আমাদের কমিউনিটির পরিধি দিন দিন বাড়লেও বাড়েনি আমাদের সেবা-সহযোগিতার মনোভাব, সুদৃঢ় হয়নি আমাদের কমিউনিটি, ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি আমরা। সঠিক নেতৃত্ব নেই আমাদের। দ্বিধা-বিভক্তি কমিউনিটির সর্বত্র। যা অত্যন্ত দু:খজনক। তাছাড়া যোগ্য ব্যক্তিদের যথাযত সম্মান বা মর্যাদা না দেয়ার বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশী পীড়া দেয়। তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের নেতৃত্ব দেয়ার মতো বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক সহ কমিউনিটিতে এতো সংগঠন। কিন্তু সংগঠনগুলো সঠিকভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে বলে আমার মনে হয়না। আমাদের জানার খুব অভাব, সামাজিক অ্যাওয়ারনেস না থাকার কারণে কমিউনিটি অনেকেই বিপথগামী হচ্ছে, খুন-খারাবীর মতো ঘটনা ঘটছে, কেউ কেউ আতœহত্যার মতো নির্মম পথ বেছে নিচ্ছে। এসব থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। এজন্য সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কমিউনিটির সবার জন্য কাজ করতে হবে। সামাজিক সংগঠনগুলোকে বনভোজন আর সভা-সমাবেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। চেয়ার দখল আর ফটো তোলার প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে বিরোধীতার জন্য বিরোধীতার আর পরচর্চার। দরকার আতœ সমালোচনা।
পল খান বলেন, বেশী কষ্ট লাগে যখন দেখি কমিউনিটির সম্মানিত ব্যক্তি তার সম্মান পাচ্ছেন না। অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যরাও যোগ্য হয়ে উঠছেন। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানাদির জন্য স্পন্সরের প্রয়োজন রয়েছে, তাই বলে যোগ্য ব্যক্তিকে অসম্মানিত করে অযোগ্যকে যোগ্যতার সার্টিফিকেট দেয়া ঠিক নয়। বিসয়গুলো সংশ্লিস্ট সকলকে ভেবে দেখা দরকার।
আগামী দিনের কমিউনিটি আর প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে পল খান বলেন, এখন বাংলাদেশী কমিউনিটি সকল দিক দিয়েই বলিয়ান, প্রতিষ্ঠিত। নিউইয়র্কের সকল পেশাতেই বাংলাদেশী-আমেরিকানরা নিজস্ব মেধা-যোগ্যতায় সুপ্রতিষ্ঠিত। সময় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় বিশেষ করে নিউইয়র্কের মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে তুলে ধরার। এখন অন্তত একজন বাংলাদেশী-আমেরিকান সিটি কাউন্সিলম্যান থাকা দরকার।