একই মঞ্চে ড. সিদ্দিক-সালু : ঐক্যের পথে বিভক্তির ফোবানা
- প্রকাশের সময় : ০৫:২৩:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুন ২০১৫
- / ৫১১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক : ফেডারেশন অব বাংলাদেশী এসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা-ফোবানার ‘কর্তারা’ ঐক্যের পথে। ফলে বিভক্ত ফোবানা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তবে চলতি বছর নয়, আগামী বছর। এমনি তথ্য জানা গেছে, ফোবানা’র সাথে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের কথা ও কর্মে। সর্বশেষ ওয়াশিংটন ফোবানা’র সাংবাদিক সম্মেলনেও ঐক্যবদ্ধ ফোবানা বাংলাদেশ সম্মেলনের আভাষ দেওয়া হয়েছে। এই সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, দুই ফোবানার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঐক্যের ব্যাপারে একাধিকবার কথা হয়েছে। উত্তর আমেরিকায় এক ফোবানার পক্ষে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আলোচনা চলছে ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের লেবার ডে উইকেন্ডে প্রতিবছর ফোবানা সম্মেলন তথা বাংলাদেশ সম্মেলন হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর ৪-৬ সেপ্টেম্বর ফোবানা সম্মেলন হতে যাচ্ছে।
এদিকে ফোবানার বিভক্তিকে কেন্দ্র করে কমিউনিটির অপর একটি অংশ ফোবানা সম্মেলনের আদলে প্রথমে আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্মেলন (এবিসি) নামে লেবার ডে উইকেন্ডে পাল্টা সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে। পরবর্তীতে গত কয়েক বছর ধরে এবিসি সম্মেলন নর্থ আমেরিকা-বাংলাদেশ কনভেনশন (এনএবিসি) নামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চলতি বছর ৫-৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অর্থাৎ ম্যানহাটানাস্থ পেন প্লাজা প্যাভিলিয়নে এনএবিসি সম্মেলন হওয়ার কথা। প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে ফোবানা আর এনএবিসি সম্মেলনের।
বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবছরও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক আর ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিভক্ত ফোবানা সম্মেলন। এবারের ফোবানা সম্মেলন ২৯তম সম্মেলন। এই সম্মেলন উপলক্ষ্যে আয়োজক সংগঠনগুলোর প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। এবছর নিউইয়র্ক ফোবানা সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা এবং ওয়াশিংটন ডিসি ফোবানা সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে বাংলাদেশ কালচারাল অর্গানাইজেশন অব ওয়াশিংটন ডিসি ।
উল্লেখ্য, ফোবানায় অনৈক্যের জন্য উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশী কমিউনিটিতে যাদের নাম আলোচিত হয় তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য নেতৃবৃন্দ হচ্ছেন ড. নূরান নবী, ড. সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক দেওয়ান শামসুল আরেফীন, ড. জয়নাল আবেদীন, আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু, আওলাদ হোসেন খান, মোহাম্মদ হোসেন খান, ড. শাহজাহান মাহমুদ, আতিকুর রহমান, নার্গিস আহমেদ, লিয়াকত হুসেন, আলী ইমাম শিকদার, ডা. মাসুদুর রহমান, আলী হোসেন, ডিউক খান, কুদরত-ই খোদা এবং কানাডার এজাজ আক্তার তৌফিক ও আবু জুবায়ের দারা প্রমুখ।
এদিকে রোববারের সাংবাদিক সম্মেলনে ফোবানা’র প্রতিষ্ঠাকালীন নেতৃবৃন্দের মধ্যে ফোবানা’র সাবেক কনভেনর ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক কনভেনর আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু, সাবেক কনভের ড. শাহজাহান মাহমুদ, সাবেক কনভেনার ও বর্তমান ফোবানা একাংশের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান এজাজ আক্তার তৌফিক, ফোবানার সাবেক সদস্য সচিব মোহাম্মদ হোসেন খান উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মোহাম্মদ হোসেন খান ছাড়া অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের সময় ঐক্যবদ্ধ সম্মেলন তথা এক ফোবানা সম্মেলনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। ফোবানার ঐক্যের প্রশ্নে এই সাংবাদিক সম্মেলনে টেলি কনফারেনেন্স সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ফোবানা অপরাংশের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান ডিউক খান।
সাংবাদিক সম্মেলনে ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরাই ফোবানা বিভক্ত করেছিলাম, সত্য কথা। তারপর নানা কারণে ফোবানা থেকে দূরে ছিলাম। কিন্তু এখন আর বিভক্ত ফোবানার দরকার নেই। তিনি বলেন, ২/৩টি ফোবানা করে লাভ কি? ফোবানা সম্মেলনের নামে এক/দেড় লাখ ডলার খরচ করে লাভ কি? সবাই ঐক্যবদ্ধ সম্মেলন চাই। এজন্য আমি সহযোগিতা করবো।
ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঐক্যবদ্ধ ফোবানা’র জন্য কাউকে না কাউকে ছাড় দিতে হবে। এজন্য এক পক্ষকে অবশ্যই সারেন্ডার করতে হবে। তা না হলে ঐক্য সম্ভব নয়।
আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু বলেন, ঐক্যের বিকল্প নেই, আমরা ঐক্যের পথে আছি।
ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, দুই ফোবানা এক করার অগ্রগতি এগিয়ে চলছে, ঐক্যের আলোচনা সন্তোষজনক।
ডিউক খান বলেন, আমরা উত্তর আমেরিকায় একটাই ফোবানা চাই। ফোবানা ঐক্যবদ্ধ করতে গত বছর থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই ঐক্যের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
এজাজ আক্তার তৌফিক বলেন, আমেরিকায় বঙ্গ সম্মেলন একটি হতে পারলে, ফোবানা সম্মেলন একটি হবে না কেন।
বেবী নাজনীন বলেন, আমি শিল্পী। আমি সবসময় বাংলাদেশকে ক্যারী করি, দেশ, দেশের সংস্কৃতি ভালোবসি। আমি সবসময় বাংলাদেশীদের সাথে রয়েছি।
শরাফত হোসেন বাবু বলেন, সদিচ্ছা থাকলে ঐক্যবদ্ধভাবে এক ফোবানা সম্মেলন আয়োজন অসম্ভব কিছু না।
ইতিহাস বলে: ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফোবানা সম্মে¥লনের যাত্রা শুরু হয়। উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্য, দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চার মাধ্যমে নির্মল আনন্দ আর মহামিলনই হচ্ছে ফোবানা সম্মেলনের মূল লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্য। সমগ্র উত্তর আমেরিকায় এই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি অর্জন করতেই ফোবানা সম্মেলন বিকশিত হতে থাকে। ক্রমে ক্রমে সম্মেলন ছড়িয়ে পড়ে নিউইয়র্ক, বস্টন, ডালাস, শিকাগোতে। এরপর ১৯৯৩ সালে কানাডার টরেন্টোতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের কর্মকর্তাদের স্ববিরোধী সিদ্ধান্তের ফলে উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘ঐক্য ও সংহতি’র প্রতীক ফোবানা’য় বিভক্তি দেখা দেয়। বিভক্তির সেই বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ে গোটা কমিউনিটিতে। তারই ধারাবাহিকতায় ভাঙ্গনের দামামা বেজে উঠে কমিউনিটির অন্যান্য সামাজিক সংগঠনে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সাধারণ প্রবাসী আর নতুন প্রজন্মের মাঝে। ফলশ্রুতিতে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেয় ফোবানা সম্মেলন থেকে। যার ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান।
পরবর্তীতে কমিউনিটির বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ঐক্যের প্রচেষ্টা শুরু হয়। নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সক্রিয় চেষ্টা ও সহযোগিতায় ১৯৯৮ সালে ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলন আয়োজন সম্ভব হয়। সেই বছর বাংলাদেশ সোসাইটি ইন্্ক নিউইয়র্ক-এর আয়োজনে ঐতিহাসিক মেডিসিন স্কয়ার গার্ডেনে দ্বাদশ ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই ঐক্যের স্থায়িত্ব বেশী দিন ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। দ্বাদশ সম্মেলনের পর ত্রয়োদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জর্জিয়ার আটলান্টায়। এই আটলান্টার সম্মেলন থেকেই আবার শুরু হয় বিভক্তির ফোবানা সম্মেলন।