উত্তর আমেরিকায় একসাথে ঈদ করার প্রত্যয় : উৎসবের আমেজে একই দিনে রোজা শুরু
- প্রকাশের সময় : ০৮:০৪:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০১৭
- / ১২৩৭ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: উৎসবের আমেজে ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য্য ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ২৭ মে শনিবার থেকে নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। প্রতিদিন ভোর রাত পৌনে চারটা পর সেহরীর শেষ সময় এবং সন্ধ্যা সোয়া আটটার পর (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) ইফাতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে এবারে প্রায় ১৭ ঘন্টার মত উপোস (রোজা পালন) থাকছেন নিউইয়র্কের ধর্মপ্রাণ মুসলমান অধিবাসীরা। মাহে রমজানের প্রথম রোজা পার হলো শনিবার। দিনের শুরুতে যেখানে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলকাগুলো থাকতো কর্মব্যস্ত; সেখানে দেখা মেলে সুনসান নীরবতা। পুরো দিনটি ছিল প্রায় শান্ত পরিবেশ। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথেই সব নীরবতা ভেঙ্গে সরগরম হয়ে উঠে বাংলাদেশী মালিকানার বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট। আর এ ব্যস্ততা ছিলো প্রথম ইফতার আয়েজানকে ঘিরে। বাংলাদেশী মালিকানার রেস্টুরেন্টগুলোতে রকমারি ইফতার সামগ্রীর সাথে ভূনা খিচুড়ী, কাবাব, জিলেপি ও শাহী হালিমের কদর ছিল বেশ। ফলে রেষ্টুরেন্টগুলোতে দেখা মিলে প্রবাসীদের ব্যাপক ভীড়। এতে বিক্রেতারা যেমন সন্তুষ্টু ছিলেন পরিবেশনে, তেমনী ক্রেতারা তৃপ্ত ছিলেন দেশীয় স্বাদে।
অভিবাসী বান্ধব এই সিটিতে বাংলাদেশী’সহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মুসলমানদের বসবাস। এশিয়ান, আফ্রিকান, অ্যারাবিয়ান ও বাংলাদেশী মুসলমানরা একযোগে রোজা পালন করছেন বলে বিভিন্ন মসজিদ সূত্রে জানা গেছে। বর্ষ পরিক্রমায় মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম পবিত্র মাস মাহে রমজান নিয়ে এসেছে ত্যাগ, সংযোম আর আতœশুদ্ধির নতুন বার্তা। পবিত্র রমজানে ঘিরে জমে উঠেছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলো। মসজিদে মসজিদে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুসল্লিদের সংখ্যা। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিমদের মতো রোজা পূর্ব তারাবি নামায আদায়, সেহরী’সহ পুরো একমাস সিয়াম সাধনায় মশগুল থাকবে প্রবাসী মুসলমানরা।
পবিত্র রমজান মাস জুড়ে সূর্যোদয়ের পূর্ব ও সেহরী পরবর্তী সময় তথা দিনভর পানাহার থেকে বিরত থাকা এবং সুর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতারের মাধ্যমে রোজা ভেঙ্গে সালাত তথা তারাবির নামাজ আদায়’সহ বিভিন্ন ধর্মীয় আচারে ব্যস্ত সময় পার করবেন প্রবাসী মুসল্লিরা। বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারি এসব বাংলাদেশী মুসলমানরা বলছেন, নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও দিনে প্রায় ১৬ ঘন্টা পানাহার (উপোস) থেকে বিরত থেকে রোজা পালনের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায় শুরু করছেন তারা। ২৬ মে শুক্রবার বাংলাদেশী মালিকানার মসজিদগুলাতে অনুষ্ঠেয় প্রথম তারাবিহর নামাযে মুসল্লিদেরও ভীড় ছিল বেশ লক্ষ্যনীয়। একই চিত্র দেখা গেছে শনিবার প্রথম ইফতার আয়োজনে। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের বাসা-বাড়ী, কেউ কেউ অফিস-আদালত (কর্ম ক্ষেত্র) কিংবা মসজিদের ইফতার আয়োজনে প্রবাসীদের মাঝে বাংলাদেশের আমেজই ফুঠে।
বার্তা সংস্থা ইউএনএ জানায়, নিউইয়র্ক সিটিতে অসংখ্য বাংলাদেশীর বসবাস। বাংলাদেশী অধ্যুষিত কুইন্সের জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার, ক্যাসেল হিল, ব্রুকলীনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডস, ওজন পার্ক’সহ ম্যানহাটানের ডাউন টাউন থেকে আপ-টাউন সবখানেই গড়ে উঠা বাংলাদেশীদের মসজিদ রেস্টুরেন্টে চলছে মাহে রমজানের নানা ধর্মীয় আয়োজন। যেসব এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশী মালিকানার অসংখ্য রেস্টুরেন্টে। প্রতিবছেরর মতো এবারো রোজাদারদের জন্য রকমারি ইফতার সামগ্রী তৈরী করেছে রেস্টুরেন্ট মালিকরা। পাশাপাশি থাকছে বেশ কয়েকটি ইফতারির সমম্বয়ে প্যাকেজ ডিল। যাতে থাকছে ৫ থেকে ১০ ডলারের মধ্যে ১০ থেকে ১২টি আইটেম।
এদিকে পবিত্র রমজান মাসে ইফতার আয়োজনকে ঘিরে রোজাদারদের খাদ্যাভাস সহ জীবন-যাত্রায়াও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর তাই বাংলাদেশের মতো এখানেও দেখা মেলে পছন্দের ছোলা, মুড়ি, শাহি হালিম, জিলেপি, টক দই, দই বড়া, কাবাব, পিজা, স্যুপ ও বিভিন্ন ধরণের চপ, বড়া এবং সালাদের মিশেলে ইফতার সামগ্রীর। পাশাপাশি শুরু হয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ইফতার পার্টির আয়োজন।
রমজান উপলক্ষে নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে প্রায় প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হবে নানা ধর্মীয় আচার। তারাবি নামায, ইফতার আয়োজন’সহ বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের নানা কর্মসূচি। বিশেষ করে নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে ফ্রি ইফতার আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রবাসীরা বুকিং দিচ্ছেন কে কবে ইফতার করাবেন।
মাহে রমজানের শুরুতেই গত শনিবার ও রোববার বাংলাদেশী অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এবারের রোজায় প্রথম সেহরীর খাওয়ার পর শনিবার বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ছিল শুনশান নীরবতা আর শান্ত পরিবেশ। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথেই নীরবতা ভেঙ্গে সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করে। ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেন বাংলাদেশী মালিকানার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের কর্মকত-কর্মচারীরা। আর এই ব্যস্ততা ছিলো ইফতার আয়েজানকে ঘিরে।
সিটির এস্টোরিয়ার ঐতিহ্যবাহি ‘আলাদিন’ ছাড়াও ‘বৈশাখী’, জ্যাকসন হাইটসের ‘খাবার বাড়ী’, হাটবাজার, ‘প্রিমিয়াম সুইটস’ ‘ইত্যাদি’ ‘ঢাকা গার্ডেন’, ‘নিউ মেজবান কাবাব এন্ড চাইনিজ’, জ্যামাইকার ‘সাগর’, ‘সাগর চাইনিজ’, ‘ঘরোয়া’, ‘পানসী’, ‘স্টার কাবাব’, ‘কিং কাবাব’, ব্রুকলীনের ‘সুগন্ধা’, ব্রঙ্কসের ‘আল আসকা’,‘নিরব-প্যাকসান’ প্রভৃতি রেষ্টুরেন্টে ইফতার সামগ্রীর পসরাকে ঘিরে প্রবাসীদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কর্মব্যস্ত মানুষগুলোকে দেখা যায় তাদের পছন্দের ইফতার ক্রয়ে। রকমারি ইফতার সামগ্রীর সাথে ভূনা খিচুড়ী, কাবাব, জিলেপি ও শাহী হালিমের কদর ছিল বেশ। বিক্রেতা সন্তুষ্টু ছিলেন পরিবেশনে আর ক্রেতারা তৃপ্ত ছিল দেশীয় স্বাদে।
জ্যাকসন হাইটসের প্রিমিয়াম সুইটস-এর ইফতারী বক্স ৭.৯৯ ডলারে, নিউ মেজবান কাবাব এন্ড চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে ১৫ আইটেমের ষ্পেশাল ইফতারী বক্স ৫.৯৯ ডলারে, ১৭ আইটেমের ডিলাক্স বক্স ৭.৯৯ ডলারে আর সেহরী স্পেশাল বক্স ৬.৯৯ ডলারে, জ্যামাইকার সাগর রেষ্টুরেন্টে ৮ আইটেমের ইফতারী বক্স ৭ ডলারে, ঘরোয়াতে ৮/১০ আইটেমের ইফতারী বক্স ৬ ডলারে, পানসীতে ১০ আইটেমের ইফতারী বক্স ৭ডলারে, স্টার কাবাবে ৭/৮ আইটেমের ইফতারী বক্স ৫ ডলারে, প্রিমিয়াম সুইটসে ৬ আইটেমের ইফতারী বক্স ৬.৯৯ ডলারে, ব্রঙ্কসের প্রিমিয়াম সুইটস-এর ইফতারী বক্স ৬.৯৯ ডলারে, আল আসকায় ১২ আইটেমের ষ্পেশাল ইফতারী বক্স ৬.৯৯ ডলারে, নিরব-প্যাকসান-এ ১২ আইটেমের ইফতারী বক্স ৬ ডলারে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
পবিত্র রমজান ঘিরে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-এর মাসব্যাপী কর্মসূচী সম্পর্কে জেএমসি পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী মনজুর আহমেদ চৌধুরী সকল মুসল্লীকে রমজানের শুভেচ্চা জানিয়ে বলেন, জেএমসিতে রমজান মাসে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ইফতারীর ব্যবস্থা থাকবে। আগ্রহী মুসল্লীদের সহযোগিতায় ইফতারীর ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জানান, জেএমসিতে আগত রোজাদারগণ পানি ও খেজুর খেয়ে ইফতার গ্রহণের পর মাগরিবের নামাজ আদায় শেষে সবার মাঝে প্যাকেট খাবার পরিবেশন করা হবে। স্থান সঙ্কুলান সহ সঙ্গত অন্যান্য কারণে মসজিদ ফ্লোরে বসে ইফতার গ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে না। তবে মসজিদ ভবনের বাইরে টাঙানো তাবুর নীচে চেয়ার-টেবিলের ব্যস্থা থাকবে। যাদের ইচ্ছে তারা ইফতারী বক্স নিয়ে সেখানে বসে খাবার গ্রহণ করতে পারবেন।
মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রতিবছরের মতো এবছরও জেএমসিতে পবিত্র কোরআন খতমে তারাবীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৬ মে শুক্রবার থেকে জামাতে তারাবীর নাজাজ শুরু হয়েছে। এজন্য তিনজন হাফেজ নিয়োগ করা হয়েছে। হাফেজগণ হচ্ছেন- জেএমসি’র হেফজ বিভাগের প্রিন্সিপ্যাল হাফেজ মুজাহিদুল ইসলাম, জেএমসির সহকারী ইমাম হাফেজ সালা মাহমুদ ও জেএমসির হেফজ বিভাগ থেকে পবিত্র কোরআনে হাফেজ সাউথ আফ্রিকায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সোলায়মান।