ঈদ সমাগত : নিউইয়র্কে দোকানীরা ব্যস্ত : জমতে শুরু করেছে কেনাকাটা
- প্রকাশের সময় : ১০:৪১:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০১৯
- / ৪৪৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত। তাই ঈদের বাজার নিয়ে ব্যস্ত দোকানীরা। পাশাপাশি জমতে শুরু করেছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কেনা কাটা। ঈদুল ফিতরের আর প্রায় দুই সপ্তাহ বাকী। ফলে ধীরে ধীরে ফলে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলীন ও ব্রঙ্কসে চলছে ঈদের নতুন পোষাক আর ঈদ সংশ্লিষ্ট কেনাকাটা।
জ্যমাইকার স্থানীয় হিলসাইডস্থ আল হামরা, তাবাসসুম ফ্যাশন, পরিণীতা প্রভৃতি ফ্যাশন, জ্যাকসন হাইটসের আইএসপি, রুকশানা ফ্যাশন, পারফেকশন ব্রাইডালস, অমিত ফেব্রিকস এন্ড শাড়ী হাউজ, সাওয়ারিয়া, পীড়ান, লিপি ফ্যাশন, ব্রঙ্কসের প্রতিদিন ফ্যাশান, টাঙ্গাইল শাড়ী ঘর প্রভৃতি স্টোরগুলোতে শুরু হয়েছে ঈদের কেনা কাটা। তবে পুরোপুরি জমে উঠেনি। স্টোরগুলো সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, স্টোরগুলোর ফটকে টাঙ্গানো হয়েছে আকর্ষনীয় সেল নোটিশ। কোন কোন স্টোরে ২৫% থেকে ৫০% সেল চলছে। দিনের বেলায় এসব স্টোরগুলোতে তেমন ভীড় পরিলক্ষিত না হলেও ইফতারের পর সন্ধ্যায় গ্রহকদের বেশ ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এসব গ্রাহকদের মধ্যে নারী ও শিশু-কিশোর-কিশোরীরাই বেশী। দোকানীরা জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে ঈদের কেনাকাটা জমবে। এখন কিছু কিছু ক্রেতা আসছেন, দেখছেন, পছন্দ করছেন।
স্টোরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরাবরের মতো এবছরও মেয়েদের প্রথম প্রছন্দ লেহেঙ্গা আর সালোয়ার-কামিজ, ছেলেদের প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবী-পায়জামা। মেয়েদের মধ্যে কারো কারো পছন্দ কাজ করা শাড়ী। আবার কারো পছন্দ জামদানী। তবে এসব পোষক পছন্দ হলেও এসবের মধ্যে চাই নতুনত্ব। গ্রাহকদের কথা-চাহিদা ভেবে ফ্যাশন ডিজাইনাররাও তৈরী করেছেন নতুন নতুন ডিজাইনের পোষাক। স্টোরগুলোতে বাংলাদেশী পোষাকের পাশাপাশি পাকিস্তানী ও ভারতীয় পোশাকের বিপুল সমাহার দেখা যায়। দোকানীরা জানান, ঈদের কেনাকাটায় রয়েছে ফ্যাশানেবল জুতো, জুয়েলারী অলংকার, পারফিউম প্রভৃতি। তুলানামূলকভাবে ঈদ সামগ্রীর দাম গত বছরের চেয়ে খানিকটা বেশী।
বিভিন্ন স্টোরের মালিকগণ জানান ঈদ উপলক্ষ্যে কেনা-কাটা বেশ জমে উঠেছে। এজন্য তাদের প্রস্তুতিও ভালো। তাদের প্রত্যাশা চলতি সপ্তাহেই ঈদের কেনাকাটা তুঙ্গে উঠবে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে স্টোরগুলো। চাঁদ রাতেও স্টোরগুলো খোলা থাকবে বলে জানান তারা।
এদিকে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশ থেকে ঈদের বাজার করেছেন বলে জানা গেছে। এজন্য আগ থেকেই তারা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। অনেকে আতœীয়-স্বজন মারফত, আবার অনেকে ডাক যোগেও ঈদের পোষাক আনিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
গত শনিবার (২৫ মে) জ্যাকসন হাইটসের বিভিন্ন স্টোর ঘুরে দেখা গেছে, অনেক স্টোরে ঈদের শাড়ী-কাপড় থরে থরে সাজানো রাখা হয়েছে। আবার কোন কোন স্টোরে আমদানী করা পোশাক সাজানো-গুছানো হচ্ছে। এরই মধ্যে ক্রেতাদেরও সময় দিচ্ছেন দোকানীরা।
জ্যাকসন হাইটসের সুপরিচিত আইসপি-তে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সর্বোচ্চ ৪০% বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে।
জ্যাকসন হাইটসের ৭৪ স্ট্রীটে প্রতিষ্ঠিত পারফেকশন ব্রাইডালস-এ চলছে ঈদের বিশেষ ছাড়। এই স্টোরে রং বে রং এর জামা, পঞ্জাবী, সেলোয়ার-কামিজ মাত্র ১০ ডলার থেকে ৫০ ডলারে পাওয়া যাচ্ছে।
জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ এভিনিউর উপর প্রতিষ্ঠিত অমিত ফেব্রিকস এন্ড শাড়ী হাউজ একটি বিশাল আকারের স্টোর। এখানে রং বে রং-এর বহু কালেকশন লক্ষ্য করা যায়। সংশ্লিস্টরা জানান, ঈদ আসতে এখনো প্রায় দুই সপ্তাহ দেরী। তাই ঈদের কেনাকাটা বলতে যা বুঝায় তা শুরু হয়নি। তবে গত শনিবার থেকে অল্প অল্প ক্রেতা আসতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, তার স্টোরে ৫৫ ডলার থেকে ৪০০ ডলারের মধ্যে ভালো ভালো কাতান সহ বিভিন্ন নামের শাড়ী, সালোয়ার-কামিজ, লেহেঙ্গা প্রভৃতি রয়েছে। তবে এবার আনারকলি নামের লেহেঙ্গার চাহিদা বেশী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন। শাড়ী পাওয়া যাচ্ছে ১৫ ডলার থেকে ৫০০ ডলারের মধ্যে। রয়েছে বিশেষ সেল।
সাওয়ারিয়া জ্যাকসন হাইটসের অন্যতম পোশাকের এক্সক্লুসিভ ডিজাইন ওয়্যার। ৭৪ স্ট্রীটে রাস্তার এপর-ওপার দুই স্টোর সাওয়ারিয়ার। সাওয়ারিয়ায় পাকিস্তানী সাবারা/গারারা, পাকিস্তানী কোর্ট স্টাইল, ছেলেদের পাকিস্তানী কাবুলী স্যুট সহ নারী-পুরুষের নানা রং ও ডিজাইনের বিপুল পোষাকের স্টক রয়েছে। এছাড়াও শাড়ীর সাথে ম্যাচ করে ইমিটেশনের চুরি-গহনার সমাহারও লক্ষনীয়। এসব পোশাকের মূল্য ১৫ থেকে ৫০০ ডলার। স্টোরটিতে চলছে ২৫% ডিসকাউন্ট।
জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রীটে প্রতিষ্ঠিত পিরান ৫ ইনক-এ গিয়ে দেখা যায়, এই স্টোরে বড়দের (পুরুষ ও নারী) বিশেষ পোষাকের ব্যাপক সমাহার। বিশেষ করে পুরুষের জন্য বাহারী পাঞ্জাবী আর নারীদের জন্য লেহঙ্গা ৯৫ ডলার থেকে ৫০০ ডলার পর্যন্ত পাওয়া যাবে। দোকানীরা জানান অন্যান্যবারের মতো এবারও লেহেঙ্গার চাহিদা একটু বেশীই। এই স্টোরের উপরে রয়েছে শিশু-কিশোর-কিশোরীদের রং বে রং এর নানা পোষাক।
এদিকে জ্যাকসন হাইটসে ঈদের বাজার করতে আসা হারুন অর রশীদ নামের এক প্রবাসী এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, ঈদ আসতে প্রায় দুই সপ্তাহ দেরী থাকলেও চাকুরী করে সময় বের করা কঠিন। তাই একটু আগেভাগেই ঈদের বাজার করতে এসেছি। তাছাড়া বাংলাদেশী স্টোর থেকে বাঙালী পরিবেশে ঈদের কেনাকাটার মজাই আলাদা। এজন্যই বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে বাজার করতে আসা। সেই সাথে পরিবার নিয়ে এক সাথে বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টে বসে ইফতার করার মজাও আলাদা। অপরদিকে জ্যাকসন হাইটসে একাধিক স্টোর থাকায় এখানে দোকানে দোকানে ঘুরে অনেকটা বালাদেশী পরিবেশ অনুভব করা যায় এবং পছন্দের সুযোগও থাকে। যা লং আইল্যান্ডে সেই। সেখানে ভারতীয় দোকান থাকলেও পছন্দ করার বিকল্প সুযোগ কম। আবার একটু দূরে গিয়ে ঈদের বাজার করার আনন্দও রয়েছে। বললেন, ঈদের আগে আগে তাড়াহুড়া করে বাজার করার চেয়ে, সময় নিয়ে আগেভাগেই পছন্দ করে বাজার করাই ভালো।(বাংলা পত্রিকা )