নিউইয়র্ক ০৬:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ক্যাবীর আতœহত্যা বাড়ছেই : বিলুপ্তির পথে ইয়েলো ক্যাব ইন্ড্রাষ্ট্রি!

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৭:০৯:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই ২০১৮
  • / ৬৩০ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্ক সিটির অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে সুপরিচিত ইয়েলো ক্যাব ইন্ডাষ্ট্রি ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মুখোমুখিতে বিলুপ্তির পথে। এই ইন্ডাষ্ট্রির সাথে জড়িত হাজার হাজার ক্যাবী এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে নিরাশা আর হতাশায় আতœহত্যার মতো মর্মান্তিক পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে এক ক্যাবীর আতœহত্যা নতুন করে সংশ্লিস্টদের ভাবিয়ে তুলেছে। এর আগে গত ৫ মাসে অন্তত আরো ৫জন ক্যাবী আতœহত্যা করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সারা বিশ্বের মতো নিউইয়র্কেও প্রচলিত ক্যাবের পাশাপাশি অ্যাপভিত্তিক ক্যাব-পরিষেবা চালু হওয়ায় ব্যবসায়িক দিক থেকে চরম হুমকির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে এই ইন্ডাষ্ট্রি।
জানা গেছে, ১৯৩০ সালে আমেরিকার মহামন্দার সময় নিউইয়র্ক সিটির একটি বড় অংশের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। কোনোভাবে বাঁচার আশায় তখন তারা ক্যাব চালানোকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও এত বেশি লোক যুক্ত হয়ে পড়ে যে বেশির ভাগের জন্য কাজ জোটানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই চরম সংকটের সময়ে হস্তক্ষেপ করে সিটি প্রশাসন। জন্ম হয় মেডালিয়ান ক্যাব। এক সময় এই ক্যাব ব্যবসা স্বাধীন পেশা হিসেবে হাজারো মানুষের কাছে অর্থ উপার্জনের মূখ্য ব্যবসায় পরিণত হয়।
দীর্ঘ প্রায় ৮ যুগ পর আবার সেই সংকট নিউইয়র্কের ক্যাবচালকদের সামনে নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে। প্রযুক্তির কাছে হেরে যাচ্ছেন তারা। মেডালিয়ান, ব¬্যাক ক্যাব, লিমোজিন সবাই এখন সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত। নিয়মকানুন মেনে, কর দিয়ে তাদের চলতে হয়। কিন্তু অ্যাপভিত্তিক উবার, লিফট, ভিয়া প্রভৃতিতে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। একটি প্রাইভেট কার থাকলেই যে কেউ যোগ দিতে পারে এই পেশায়। এদিকে নিউইয়র্ক সিটিতে চলাচলের জন্য মানুষ সাবওয়ের ওপর বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু তার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ অনেক দিন ধরেই চলছে। আর সে কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সূত্র মতে, নিউইয়র্ক সিটিতে ১৩ হাজার ৫৮৭টি মেডালিয়ান ক্যাবের বিপরীতে উবারে নিবন্ধিত গাড়ি সংখ্যা ন্যূনতম ৬০ হাজার। একে তো সংখ্যাধিক্য, আবার স্মার্টফোননির্ভর প্রযুক্তি সুবিধা সম্বলিত নতুন ধারার এই ব্যবস্থাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আগে অনেক ইয়েলো ক্যাব চালক দিনে হেসেখেলে ৩/৪ শত ডলার আয় করতেন। এখন সেই আয় একশত বা দেড়শ ডলারে এসে ঠেকেছে। ফলে ব্যাংকঋণ দিয়ে বিপুল অর্থ খরচ করে যাঁরা ক্যাবের লাইসেন্স কিনেছিলেন, তাঁদের দ্বিমুখী সমস্যা। না পারছেন সংসার চালাতে, না পারছেন ঋণের কিস্তি শোধ করতে। ফলে হতাশায় অনেকেই আতœার মতো কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিজ্ঞমহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
খবরে প্রকাশ, সর্বশেষ কেনি চো নামের এক ক্যাবী আতœহত্যা করেছেন। কেনি অনেক আশা নিয়ে ২০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। আশা ছিলো ছিল পরিবার নিয়ে একটু ভালো থাকা। কিছুদিন আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। হয়তো উন্নত চিকিৎসা তাঁকে বাঁচার পথ দেখাচ্ছিল। কিন্তু আরেক প্রযুক্তির কাছে তিনি হেরে গেলেন। তার ইয়েলো ক্যাব চালানোয় আর সংসার চলছিলো না। কোন উপায় না পেয়ে অবশেষে কেনি আতœহত্যা করেন।
শুধু কেনি নয়, কেনির মতো আরো একাধিক ক্যাবীর আতœহত্যার ঘটনা সকল মহলকে ভাবিয়ে তুলছে। অনেক ক্যাবী ইয়েলো ছেড়ে উবার, লিফট প্রভৃতি অ্যাপস নির্ভর গাড়ী চালানোয় ঝুঁকে পড়ছেন। কারণ হিসেবে তারা মনে করছে, ইয়েলো ট্যাক্সির চেয়ে এই ব্যবসায় স্বাধীনতাও বেশী, আবার তুলনামূলকভাবে আয়ও বেশী। তবে এ বিষয়ে কোন কোন ক্যাবীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা যায়।(বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

ক্যাবীর আতœহত্যা বাড়ছেই : বিলুপ্তির পথে ইয়েলো ক্যাব ইন্ড্রাষ্ট্রি!

প্রকাশের সময় : ০৭:০৯:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই ২০১৮

হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্ক সিটির অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে সুপরিচিত ইয়েলো ক্যাব ইন্ডাষ্ট্রি ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মুখোমুখিতে বিলুপ্তির পথে। এই ইন্ডাষ্ট্রির সাথে জড়িত হাজার হাজার ক্যাবী এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে নিরাশা আর হতাশায় আতœহত্যার মতো মর্মান্তিক পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে এক ক্যাবীর আতœহত্যা নতুন করে সংশ্লিস্টদের ভাবিয়ে তুলেছে। এর আগে গত ৫ মাসে অন্তত আরো ৫জন ক্যাবী আতœহত্যা করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সারা বিশ্বের মতো নিউইয়র্কেও প্রচলিত ক্যাবের পাশাপাশি অ্যাপভিত্তিক ক্যাব-পরিষেবা চালু হওয়ায় ব্যবসায়িক দিক থেকে চরম হুমকির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে এই ইন্ডাষ্ট্রি।
জানা গেছে, ১৯৩০ সালে আমেরিকার মহামন্দার সময় নিউইয়র্ক সিটির একটি বড় অংশের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। কোনোভাবে বাঁচার আশায় তখন তারা ক্যাব চালানোকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও এত বেশি লোক যুক্ত হয়ে পড়ে যে বেশির ভাগের জন্য কাজ জোটানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই চরম সংকটের সময়ে হস্তক্ষেপ করে সিটি প্রশাসন। জন্ম হয় মেডালিয়ান ক্যাব। এক সময় এই ক্যাব ব্যবসা স্বাধীন পেশা হিসেবে হাজারো মানুষের কাছে অর্থ উপার্জনের মূখ্য ব্যবসায় পরিণত হয়।
দীর্ঘ প্রায় ৮ যুগ পর আবার সেই সংকট নিউইয়র্কের ক্যাবচালকদের সামনে নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে। প্রযুক্তির কাছে হেরে যাচ্ছেন তারা। মেডালিয়ান, ব¬্যাক ক্যাব, লিমোজিন সবাই এখন সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত। নিয়মকানুন মেনে, কর দিয়ে তাদের চলতে হয়। কিন্তু অ্যাপভিত্তিক উবার, লিফট, ভিয়া প্রভৃতিতে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। একটি প্রাইভেট কার থাকলেই যে কেউ যোগ দিতে পারে এই পেশায়। এদিকে নিউইয়র্ক সিটিতে চলাচলের জন্য মানুষ সাবওয়ের ওপর বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু তার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ অনেক দিন ধরেই চলছে। আর সে কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সূত্র মতে, নিউইয়র্ক সিটিতে ১৩ হাজার ৫৮৭টি মেডালিয়ান ক্যাবের বিপরীতে উবারে নিবন্ধিত গাড়ি সংখ্যা ন্যূনতম ৬০ হাজার। একে তো সংখ্যাধিক্য, আবার স্মার্টফোননির্ভর প্রযুক্তি সুবিধা সম্বলিত নতুন ধারার এই ব্যবস্থাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আগে অনেক ইয়েলো ক্যাব চালক দিনে হেসেখেলে ৩/৪ শত ডলার আয় করতেন। এখন সেই আয় একশত বা দেড়শ ডলারে এসে ঠেকেছে। ফলে ব্যাংকঋণ দিয়ে বিপুল অর্থ খরচ করে যাঁরা ক্যাবের লাইসেন্স কিনেছিলেন, তাঁদের দ্বিমুখী সমস্যা। না পারছেন সংসার চালাতে, না পারছেন ঋণের কিস্তি শোধ করতে। ফলে হতাশায় অনেকেই আতœার মতো কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিজ্ঞমহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
খবরে প্রকাশ, সর্বশেষ কেনি চো নামের এক ক্যাবী আতœহত্যা করেছেন। কেনি অনেক আশা নিয়ে ২০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। আশা ছিলো ছিল পরিবার নিয়ে একটু ভালো থাকা। কিছুদিন আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। হয়তো উন্নত চিকিৎসা তাঁকে বাঁচার পথ দেখাচ্ছিল। কিন্তু আরেক প্রযুক্তির কাছে তিনি হেরে গেলেন। তার ইয়েলো ক্যাব চালানোয় আর সংসার চলছিলো না। কোন উপায় না পেয়ে অবশেষে কেনি আতœহত্যা করেন।
শুধু কেনি নয়, কেনির মতো আরো একাধিক ক্যাবীর আতœহত্যার ঘটনা সকল মহলকে ভাবিয়ে তুলছে। অনেক ক্যাবী ইয়েলো ছেড়ে উবার, লিফট প্রভৃতি অ্যাপস নির্ভর গাড়ী চালানোয় ঝুঁকে পড়ছেন। কারণ হিসেবে তারা মনে করছে, ইয়েলো ট্যাক্সির চেয়ে এই ব্যবসায় স্বাধীনতাও বেশী, আবার তুলনামূলকভাবে আয়ও বেশী। তবে এ বিষয়ে কোন কোন ক্যাবীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা যায়।(বাংলা পত্রিকা)