আইন সবার জন্য সমান, অপরাধী কেউ রেহাই পাবে না, সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় দায়ীরাও শাস্তি পাবে
- প্রকাশের সময় : ০৮:৫৮:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৮
- / ১৪৬৬ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন, আইন সবার জন্য সমান, অপরাধী কেউ রেহাই পাবে না। সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় দায়ীরাও শাস্তি পাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে বাংলাদেশে কোন অপরাধের ঘটনা ঘটলে তার বিচার হয়না এমন কোন নজীর নেই। সাংবাদিক হোক, এমপি হোক, ব্যবসায়ী হোক না কেন, আইন সবার জন্য সমান। তিনি আবারও হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে। সাংবাদিক পেটানোর ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ৩০ টিভি, ৬শ’র বেশী সংবাদপত্র বের হয়। দেশে সকল মিডিয়া পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। কোন মিডিয়ার কন্ঠরোধ করা হয়নি। দেশের ইতিহাসে এখনকার মতো অতীতে কোন মিডিয়াই এতো স্বাধীনতা ভোগ করেনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের নন্দিত নেতা। হাসিনার বিকল্প হাসিনা নিজেই। মন্ত্রী বলেন, সংবিধান মোতাবেকই দেশের আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) রাতে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ঢাকায় সাংবাদিক পুলিশ পেটানোর ঘটনায় প্রবাসী সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রেক্ষিতে উপরোক্ত কথা বলেন। সিটির জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারের চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে এই সভা আয়োজিত হয়। খবর ইউএনএ’র।
সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ। এরপর ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার সহ সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সভার মূল কার্যক্রম শুরু হয়। সভায় যুবলীগ নেতা জামাল-সেবুলের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ ও সাখওয়াত বিশ্বাসের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজাজামান খান কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, দেশব্যাপী তাঁর জনপ্রিয় আকাশচুম্বী। ফলে উন্নয়নের অনেক দুয়ার খুলে গেছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে এখন সময়ের ব্যপার। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আলাদিনের চেরাগ নেই। যে ঘষা দেবেন আর রাতারাতি উন্নত হয়ে যাবে। সততা, দক্ষতা, দেশপ্রেম আর জনগণের সমর্থণ ও শক্তিই প্রধানমন্ত্রীর শক্তি। তিনি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টা কাজ করেন। তিনি পাচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। তাহাজ্জুতের নামাজ পড়েন। সকালে কোরআন তেলওয়াত করে কাজ শুরু করেন। দুর্নীতি তার কেশাগ্র স্পর্শ করেনি। তিনি শুধু নয়, তার পরিবার পরিজন কেউ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। তার দেশে বা বিদেশে কোন গুপ্তধন নেই। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে যতই দেখি ততই বিস্মিত হই। তিনি অসম্ভব স্মৃতি শক্তির অধিকারী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ-খাদ্য, মাছ-সবজি সহ দেশের সকল সেক্টরে সার্বিক উন্নয়নের ফলে এখন আর বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য আনতে হয় না। শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন-আগ্রগতি অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করা ছাড়া কোন উপায় নেই। সরকারের উন্নয়ন ঘরে ঘরে পৌচ্ছে দিতে হবে। তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় আনার জন্য প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়-কে আগামী দিনে বাংলাদেশের নেতা আখ্যায়িত এবং তার প্রশংসা করে বলেন, জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন প্রযুক্তিতে ঈর্ষনীয় উন্নতি করছে। আগামী মাসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উক্ষেপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রযুক্তির এক স্বর্ণযুগে প্রবেশ করছে।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে মায়ানমার সরকার ধু¤্রজাল সৃষ্টি করছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমান সরকার বিছুই করছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের জায়গা দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের কারণে আজ আমাদের ওই অঞ্চলের বনসম্পদ এবং পর্যটন মারাত্মক হুমকির মুখে। নানা সমস্যা মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি বলেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ওপর সন্ত্রাসীদের নজর পড়েছে। আমরা মিয়ানমারের সরকারকে বলেছি তারা যদি ভবিষ্যতে তোমাদের বিরুদ্ধে কিছু করে তাহলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল আরো বলেন, বাংলাদেশ আর বটমলেস বাস্কেট নয়। আজ বাংলাদেশের যেদিকে তাকাবেন, সেদিকেই উন্নয়নের ছোঁয়া দেখতে পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দু:সাহসিক নেতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি বাংলাদেশকে উন্নতির উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে জানেন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত মসজিদ-মন্দির-গীর্জায় হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। তারা দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিলো। আর সরকার শক্ত হাতে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস বন্ধ করেছে। বাংলাদেশকে কেউ রুখতে পারবে না।
মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিভেদ-বিভক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। আমরা একই দল করি। সবাই এক সাথে থাকলে ভালো লাগে, বিভক্তি দেখলে খারাপ লাগে।
সভায় অন্যান্য বক্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের কর্মকান্ডের প্রশংসা করে বলেন, তিনি সন্ত্রাসীদের জন্য আতংক। তিনি যোগ্য ও সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বক্তারা কঠোর হস্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের দমন করার জন্য মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আর যেনো রাষ্ট্র ক্ষতায় আসতে না পারে তার জন্য যা করা দরকার তাই করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় ড. সিদ্দিকুর রহমান বিগত ৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড সংক্ষেপে তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে এখন আইন আছে সাংবাদিক পেটানো হলে তার বিচার হবে। বাংলাদেশে সাংবাদিকদের যে স্বাধীনতা আছে তা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। তিনি বলেন, যখন বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনে যখন পদ্মা সেতু প্রকল্পে টাকা দিতে অস্বীকার করেছিলো তখন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দেড় হাজার নেতা-কর্মী সেদিন বিশ্ব ব্যাংক ঘেরাও করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির জ্বালাও পোড়াও রাজনীতির বিরুদ্ধে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও হোয়াইট হাউসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সন্ত্রাসবাদে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল-কে একজন সফল মন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেন সিদ্দিকুর রহমান।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার আব্দুল মুকিত চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হাসান, যুক্তারাষ্ট্র আওয়ামী লীগের মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, উপ প্রচার সম্পাদক আব্দুল মালেক, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম ও আলমগীর হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ জামাল হোসেন ও সেবুল মিয়া, ব্রুকলীন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম নজরুল, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন, আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াত বিশ্বাস, সাউথ জার্সী মেট্রো আওয়ামী লীগের সভাপতি সামসুল শাহজাহান, নিউইয়র্ক আওয়ামী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হারুন, আওয়ামী লীগ নেতা আকতার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এই সভায় উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবুল কাশেম ও লুৎফর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইরীন পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিন দেওয়ান, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক সোলায়মান আলী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, কার্যকরী সদস্য শামসুল আবেদীন সহ অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন ।
উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ব্যানারে মেজবান রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাউন্সিল দাবীদার নেতা-কর্মীরা টাইম ম্যাগাজিন-এর জরিপে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের শীর্ষ ১০০ নেতার মধ্যে স্থান পাওয়ায় এবং দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত’ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ব্যানারে ‘আনন্দ সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা’র আয়োজন করেন। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল পালকি পার্টি সেন্টারের চাইনিজ হলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।