‘অন্য প্যানেলের হয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন’ : দুই সদস্যের প্রার্থীতা ফিরিয়ে দেয়ার দাবী
- প্রকাশের সময় : ০২:১৯:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর ২০১৮
- / ৫৪৭ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের নির্বাচনী সমাবেশে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, সোসাইটির নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বরং নির্বাচন কমিশন তাদের প্রতিপক্ষ প্যানেলের হয়ে কাজ করেছেন। সভায় এই প্যানেলের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া দুই সদস্যের প্রার্থীতা ফিরিয়ে দেয়ারও দাবী জানানো হয়। অন্যথায় অচিরেই সাংবাদিক সমে¥লনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের মখোশ উন্মোচন করা হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়।
বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউস্থ পানসী রেষ্টুরেন্টে গত ৬ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত বিশাল এই নির্বাচনী সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের জ্যামাইকা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আহসান হাবিব। সভায় অতিথি ছিলেন ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবু নাসের, উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াসী চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাষ্টিবোর্ড সদস্য আলী ইমাম শিকদার ও কাজী আজহারুল হক মিলন, সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব বাবুল চৌধুরী, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনক’র সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. আবদুল লতিফ, বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সভাপতি ফিরোজুল ইসলাম পাটোয়ারী, সিনিয়ার সহ সভাপতি খবির উদ্দিন ভূইয়া, মূলধারার রাজনীতিক তৈয়বুর রহমান হারুন, ডা. মাসুদুর রহমান, সেফেস্ট’র প্রতিষ্ঠাতা ও নিউইয়র্ক সিটি ভোটার এসিসটেন্স কমিশনার মাজেদা এ উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন সেলিম, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার খন্দকার তরিকুল ইসলাম প্রমুখ। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের জ্যামাইকা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও ইফজাল চৌধুরী।
সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন গোলাম আজম রকি, পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন ডা. টমাস দুলু রায় এবং পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন মনিকা রায়। এছাড়াও বিশেষ দোয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা বেলাল। সভায় ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম, ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী কাজী আশরাফ হোসেন (নয়ন), সিনিয়র সহ সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুর রহীম হাওলাদার, সহ সভাপতি পদপ্রার্থী মোহাম্মদ রেজাউল করীম (সগীর), সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আলী, সোসাইটির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ এমকে জামান, চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মাকসুদ আহমেদ চৌধুরী, ওজনপার্ক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল মালেক, ওজনপার্ক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কসের সাবেক সভাপতি আবদুল মুহিত, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট নির্মল পাল, শামসুল আলম লিটন, গৌস খান, করিম চৌধুরী, জাহাঙ্গীর সরকার, ইসমাইল হোসেন স্বপন, নাসিম আহমেদ, প্রফেসার শাহাদাত হোসেন, জয় চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, কাজী কামাল, এডভোকেট কামরুজ্জামান বাবু, আলমগীর ভূইয়া, ফারুক হোসেন তালুকদার, মির্জা ফরিদ উদ্দিন, শেখ আনসার আলী, সিরাজুল ইসলাম মোরশেদ, বদিউল আলম, আবু মজিদ আখন্দ, আফরোজা রোজী, ফারহানা আলম, আবু নাসির প্রমুখ।
সভায় ওয়াসী চৌধুরী তার বক্তব্যে ২১ অক্টোবরের নির্বাচনে সকল ভোটারকে ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান এবং এজন্য কারো করো সমস্যা হলে তা নির্বাচন পরিচানার সাথে জড়িতদের জানানোর অনুরোধ করেন।
ডা. মাসুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটিই শেষ নয়। এটি আমাদের প্লাটফর্ম মাত্র। কমিউনিটির জন্য এই প্লাটফর্ম কাজে লাগাতে হবে। আর সোসাইটির ২৭ হাজার ভোটার যদি ঐক্যবদ্ধ হন তাহলে আমরা শুধু সোসাইটি-কে শক্তিশালী নয়, মূলধারার কাউন্সিলম্যান, কংগ্রেসম্যানও নির্বাচিত করতে পারি।
কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন তার বক্তব্যে নিজের কর্মময় জীবনের সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার জীবনের আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি সোসাইটি আর কমিউনিটির সেবার করতেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। আমি প্রবাসের ৫ লাখ বাঙালীর সেবা করতে চাই। এজন্য সবার দোয়া, সহযোগিতা আর ভোট কামনা করছি। তিনি বলেন, সোসাইটির দায়িত্ব পেলে সবাইকে নিয়ে এই সংগঠনকে মূলধারার সাথে সেতুবন্ধনে আবদ্ধ করবো। তিনি বলেন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছি এবং সোসাইটির বর্তমান ভবন ক্রয়ে আমার সহযোগিতা রয়েছে।
মোহাম্মদ আলী তার বক্তব্যে প্রবাসের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটি কমিউটির গুরুত্বপর্ণ সামাজিক সংগঠন। এই সংগঠনকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে নিউইয়র্কের সকল বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা সবাই আপনাদের প্রার্থী। আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হলে আমরা শক্তিশালী সোসাইটি উপহার তিকে পারবো।
আব্দুর রহীম হাওলাদার বলেন, ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল নির্বাচিত হলে মূলধারার সাথে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করাই হবে প্রধান কাজ। তিনি টেক্সাসে আটক বাংলাদেশীদের মুক্ত করার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা কমিউনিটির জন্য আরো কিছু করতে চাই। প্রবাসীদের সেবায় অবতান রাখতে চাই।
রানা ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে শুধু ভোটার বানালেই হবে না। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনা আর ভোট দেয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি বলেন, সভাপতি পদপ্রার্থী কাজী নয়ন কমিউনিটিকে দিতে এসেছেন, তাকে সেই নুযোগ দেয়া উচিৎ। যোগ্য প্যানেল হিসেবে তিনি ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের প্রার্থীদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
বদরুন নাহার খান মিতা তার বক্তব্যে ফোন কল আর ফেসবুকে প্রচার সহ অন্যান্য মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটিকে আরো আলোকিত করতে হবে, সোসাইটিকে আরো উপড়ে তুলতে হবে।
বাবুল চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, এবার নতুন পদ্ধতিতে ভোটারদেরকে ভোট দিতে হবে। কম্পিউটারে টাচ করে ভোট দিতে হবে। তাই ভোট প্রয়োগে ভোটারদের সতর্ক থেকে ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের সকল প্রার্থীকে ‘বি’ লাইনে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
আমজাদ হোসেন বলেন, সোসাইটির বিগত কমিটি তেমন ভালো কজি করেনি। তাই ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলকে বিজয়ী করতে হবে। এই প্যানেলে জ্যামাইকার ৫জন প্রার্থী থাকায় এই প্যানেলকে বিজয়ী করা জ্যামাইকাবাসী হিসেবে সবার দায়িত্ব হয়ে হয়ে পড়েছে।
সভায় বক্তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, সোসাইটির আসন্ন নির্বাচনে সকলের সার্বিক সহযোগিতায় জ্যামাইকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটে নির্বাচিত হয়ে ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল চূড়ান্তভাবে জয়ী হবে। আর ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল নির্বাচিত হলে আমেরিকার মূলধারায় বাংলাদেশকে তুলে ধরা সহ কমিউনিটিকে কাঙ্খিত লক্ষে এগিয়ে নিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এই প্যানেলের সকল প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বক্তারা জ্যামাইকাবাসী বাংলাদেশীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
সভা চলাকালীন সময়ের মঝে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবু নাসের ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেন। ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন: সভাপতি- কাজী আশরাফ হোসেন (নয়ন), সিনিয়র সহ সভাপতি- আব্দুর রহীম হাওলাদার, সহ সভাপতি- মোহাম্মদ রেজাউল করীম (সগীর), সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ আলী, সহ সাধারণ সম্পাদক- মোহাম্মদ দুলাল মিয়া, কোষাধ্যক্ষ- মোহাম্মদ জেড খান (ডিউক), সাংগঠনিক সম্পাদক- আহসান হাবিব, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মনিকা রায়, জন সংযোগ ও প্রচার সম্পাদক- শেখ হায়দার আলী, সমাজকল্যাণ সম্পাদক- আবুল কাশেম চৌধুরী, সাহিত্য সম্পাদক- মোহাম্মদ হাসান (জিলানী), ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- মোহাম্মদ এইচ রশীদ (রানা), স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক- মোহাম্মদ এস মিয়া (সামাদ) এবং কার্যকরী সদস্য- সাঈদুর আর খান (ডিউক), মোহাম্মদ মাহমুদ আলম, মোহাম্মদ এ সিদ্দিক ও আহসান উল্লাহ (মামুন)।
উল্লেখ্য, সভায় ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের সর্বস্তরের কর্মী ও সমর্থক ছাড়াও বিপুল সংখ্যক জ্যামাইকাবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত সভার কার্যক্রম চলে।