নিউইয়র্কে মতবিনিময় সভা : ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ
অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে প্রবাসীদের ১৩ দফা দাবী
- প্রকাশের সময় : ০৩:৪৩:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৭৬ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশী ফোরামের পক্ষ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে ১৩ দফা দাবী উত্থাপন করা হয়েছে। জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে গত ৮ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই দাবী জানানো হয়। ফোরামের আহবায়ক ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঠিকানা নিউজ ও ঠিকানা টেলিভিশনের চিফ ইন এডিটর ও সিইও খালেদ মুহিউদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. মহসীন আর পাটোয়ারী, সোসাইটির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আজহারুল হক মিলন, এটর্নী শেখ সেলিম, মূলধারার রাজনীতিক ও আ্যাসাল-এর ন্যাশনার প্রেসিডেন্ট মাফ মেজবাউদ্দিন কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ এন মজুমদার, আশা হোম কেয়ার সার্র্ভিস-এর প্রেসিডেন্ট আকাশ রহমান, ইঞ্জিনিয়ার রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী। খবর ইউএনএ’র।
সভায় উত্থাপিত দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে: ১. জাতীয় সংসদে ও রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রবাসীদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা। ২. নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু। ৩. নিউইয়র্কসহ সারা বিশ্বের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডি কার্ড) চালু করা, যা ইতিমধ্যে ব্রিটেনে চালু হয়েছে। ৪. নিউইয়র্কসহ সারা বিশ্বের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট প্রদান করার ব্যবস্থা করা। ৫. দেশের ভূমিদস্যুদের হাত থেকে প্রবাসীদের রক্ষা, বিশেষ করে চুক্তি মোতাবেক ক্রয় করা জমি, প্লট, এপার্টমেন্ট সহজে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। ৬. ঢাকাস্থ হজরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা। ৭. দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ করা। ৮. বাংলাদেশের অফিস-আদালতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করা ও প্রবাসীদের জন্য ঢাকায় চালু করা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ কার্যকর করা। ৯. প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থে গড়ে ওঠা অর্থনীতির লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার বন্ধ করাসহ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। ১০. প্রিয় জন্মভূমি সফরকালে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। ১১. বাংলাদেশে প্রবাসীদের ঘর-বাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার ব্যবস্থা করা। ১২. কনস্যুলেট সেবা বৃদ্ধি করে প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, দেশের সম্পত্তি হস্তান্তরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদানের মতো কাজগুলো সহজ করা এবং ১৩. যেকোনো প্রবাসী বাংলাদেশীর মরদেহ বিনা খরচে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
উল্লেখ্য, উল্লেখিত দাবী-দাওয়া নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরেই প্রবাসী বাংলাদেশী ফোরামের-এর পক্ষ থেকে জনমত তৈরী করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবী বাস্তবায়নের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফখরুল আলম। এরপর সকল শহীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় ১৩ দফা দাবী উপস্থাপন করেন কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার আহসান হাবীব। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আশরাফুল হাসান বুলবুল ও শামীম আহমেদ।
সভায় ৮৫ বছর বয়সী প্রবাসী সালেহা কাদির সহ অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি বিশিস্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক সোলায়মান ভুইয়া, অ্যাক্টিভিস্ট আবু নাসের, আব্দুর রহিম হাওলাদার, মোহাম্মদ আলী, বদরুল হক, হাকিকুল ইসলাম খোকন, অ্যাডভোকেট মজিবউর রহমান, হাজী আব্দুর রহমান, এনামুল হায়দার, হানিফ মজুমদার, খুরশীদ চৌধুরী, ডা. নাফিজ, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, আমিন খান জাকির, কামরুজ্জামান বাচ্চু, ইঞ্জিনিয়ার আলতাফ চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন লিটন, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার শাহজাহান শেখ প্রমুখ। সভায় বিভিন সংগঠনের নের্তবৃন্দসহ সর্বস্তুরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোয়া কোটি বাংলাদেশীর বসবাস। এই বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী প্রবাসে বসবাস করলেও দেশে যে ধরনের সেবা তাদের পাওয়া উচিত, সেগুলো তারা যথাযথভাবে পাচ্ছেন না। এর আগে বিভিন্ন সরকারের কাছে প্রবাসীরা নানা দাবিদাওয়া জানালেও তাদের বেশির ভাগ দাবি পূরণ হয়নি। সব সরকারই কেবল আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু দাবি আদায়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রবাসীরা আশার আলো দেখছেন।
সভায় খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের জনগণই ক্ষমতার উৎস। সংবিধান দেখলে দেখবেন, জনগণ ক্ষমতার মালিক। আর যারা দেশ পরিচালনা করেন, তারা সরকারের কর্মচারী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন কর্মচারী হয়েছেন, আমরা জনগণ ক্ষমতার মালিক। যারা দায়িত্ব নেন, তারা কর্মচারী। কর্মচারীরা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, এ জন্য তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। তাদেরকে প্রশ্ন করতে হবে। দাবী-দাওয়া আর চাপ ছাড়া কোন কিছু আদায় হয় না। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কথা বলতে হবে। তবে তিনি বলেন, দাবিদাওয়ার মধ্যে রাষ্ট্রের প্রায়োরিটি কতখানি, তা দেখতে হবে। প্রবাসীদের দাবীগুলো সরকারের পূরণ করা উচিত।
সভায় খালেদ মুহিউদ্দিন বাংলাদেশে তার কিছুদিনের সরকারী চাকরী, সাংবাদিকতা আর অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর সংক্ষেপে আলোকপাত করেন দাবী-তাওয়াগুলো বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় বক্তারা তাদের দেশ আর প্রবাসী জীবনের নানা অভিজ্ঞতার আলোকে বক্তব্য রাখেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে উল্লেখিত দাবীগুলো পূরনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি উদাত্ত আহŸান জানান। সভায় কোন কোন বক্তা সদ্য বিদায়ী ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকান্ডের সমালোচনা করেন এবং দূর্নীতিবাজ অর্থ প্রচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন। বক্তাদের আলোচনায় প্রবাসীদের দৈত্ব নাগরিকত্ব, ভোটাধিকার, এনআইডি কার্ড, দেশে সম্পত্তি আর জানমালের নিরাপত্তার বিষয়গুলো জোরালোভাবে উঠে আসে।
সভাপতির বক্তব্যে ফখরুল আলম বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছেন। স্বাধীনতার পর প্রতিটি সরকারই প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থরক্ষার কথা বলে, নানা ধরনের প্রতিশ্রæতিও দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি তারা প্রবাসীদের কোনো স্বার্থই রক্ষা করেনি। তিনি বলেন, আমরা প্রবাসীদের দাবীদাওয়াগুলো অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের কাছে পাঠাব। আশা করি, তারা আমাদের দাবিদাওয়াগুলো দেখবেন এবং পূরণ করার জন্য যথাযথ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। আশা করি, সরকার আমাদের দাবীগুলো দেখবেন এবং পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।