কবে দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান?
- প্রকাশের সময় : ১১:৩৩:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
- / ২২ বার পঠিত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যে। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও শারীরিকভাবে অসুস্থ অনেক দিন ধরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য আগামীকাল রাতে তিনি যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় দলকে নেতৃত্ব নেয়ার জন্য তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা বড় কয়েকটি মামলা এরই মধ্যে খারিজ হয়ে গেছে। যেগুলো বাকি আছে, সেগুলোরও দ্রুত সমাধান মিলবে বলে প্রত্যাশা বিএনপি নেতাকর্মীদের। এ অবস্থায় কবে নাগাদ তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলে।
দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, ফেরার মতো সম্পূর্ণ পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় ঠিক এ মুহূর্তেই দেশে ফিরতে পারছেন না তারেক রহমান। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি দেশে ফিরবেন বলে মনে করছেন তারা।
দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকেই ভেবেছিলেন তারেক রহমান হয়তো দ্রুত দেশে ফিরে আসবেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এখনো তার দেশে ফেরার সম্ভাব্য সময় নিয়ে নিশ্চিতভাবে বলার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
তাদের ভাষ্যমতে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির প্রতি সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তাদের প্রত্যাশা পূরণে নানা ধরনের দলীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে এর মধ্যে নেতাকর্মীদের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অনেক ঘটনাও সামনে আসতে শুরু করেছে। দলের পক্ষ থেকে এসব শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তারেক রহমান দেশে ফিরলে নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে চান। দেশে থাকাকালে দীর্ঘ অত্যাচারে তার স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেটির চিকিৎসা চলছে। তবে এত সবকিছুর মাঝে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারেক রহমান সব সময়ই দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তাদের রাজপথে রেখেছেন। তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করছেন। তার শূন্যতা আমরা টের পাই। এরই মধ্যে তার সিদ্ধান্তগুলো প্রমাণ করেছে যে তিনি দেশের একজন জনপ্রিয় নেতা। তার প্রতিটি কাজের মধ্যে আগামী দিনের বাংলাদেশ বিনির্মাণের চেষ্টা থাকে। আমাদের প্রত্যাশা, তিনি দ্রুত ফিরে এসে দেশে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবেন।’
বিএনপি নেতাদের ভাষ্যমতে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। নানা ধরনের ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এমন অবস্থায় সব মামলা প্রত্যাহারের আগে তিনি দেশে এলে বিষয়টি ইতিবাচক নাও হতে পারে। এজন্য তারেক রহমান দেশে ফেরার আগে মামলাগুলো প্রত্যাহার করানো সম্ভব হলে সেটি তার জন্য রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক হবে। দুই সপ্তাহের যুক্তরাজ্য সফর শেষে গতকালই ঢাকায় ফিরেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকরা তার কাছে তারেক রহমান কবে নাগাদ ফিরতে পারেন বলে প্রশ্ন রাখেন। এ সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তার দেশে ফেরার মতো পরিবেশ এখনো আমরা তৈরি করতে পারিনি। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অল্প কিছুদিনের মধ্যে অবশ্যই দেশে ফিরবেন।’
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা চারটি মামলার কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ‘লিভ টু আপিল’ খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা চার মামলা বাতিলে হাইকোর্টের দেয়া রায়ই বহাল থাকল। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক। এছাড়া ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুল জব্বার ভুঞা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল ইসলাম সুমন। অন্যদিকে তারেক রহমানের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ চারটি বাতিলের পর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চলমান মামলার সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে মোট ২২।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, তারেক রহমান কবে দেশে ফিরে আসবেন, সেটি নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না বিএনপি নেতারা। তাদের মূল লক্ষ্য এখন মামলাগুলো প্রত্যাহার করা। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এরই মধ্যে মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি তুলছেন। এসব মামলা শেষ হলেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমরা এ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। খালেদা জিয়াকে ফ্যাসিবাদী হাসিনা মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে দেন, তখন থেকে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের দুর্গে হানা দিয়েছি। শেখ হাসিনাকে পরাজিত করার জন্য আমরা ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছি। তারপর আমাদের ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছে। তারা এ বিজয় অর্জন করতে জনগণকে সাহায্য করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিজয় সম্ভব হয়েছে। সে সময়ও তিনি তার জায়গা থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা আছে। আমরা আশা করছি মামলাগুলো শেষ হলেই তিনি দেশে ফিরবেন। ’ সূত্র : বণিক বার্তা।