বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন তার পররাষ্ট্রনীতির জন্য কী অর্থ বহন করে?
- প্রকাশের সময় : ১২:২৭:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৪
- / ১৫২ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : দুটি ভিন্ন কারণে বাংলাদেশ অধিক পরিমাণে আন্তর্জাতিক মনোযোগ পাচ্ছে। আগামী ৭ই জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আভ্যন্তরীণভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠেছে। এ নির্বাচনকে যাচাইবাছাই করছে বিশ্ব। বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে এবং বর্তমানের রাজনৈতিক অচলাবস্থা সমাধানের জন্য সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর জবাবে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। পশ্চিমা চাপকে মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হস্তক্ষেপের’ নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া ও চীন। অন্যদিকে আসন্ন নির্বাচনকে ভারত বলেছে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়।
দেশের ভিতরের পরিস্থিতির বিপরীতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও আন্তরিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ২০২২ সালে তখনকার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বেইগুন বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টস ২০২৩ এর কান্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশকে ভৌগলিকভাবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত গুরত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছে যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে রুল-বেইজড ইন্টারন্যাশনাল সিস্টেমকে সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছে বৃটেনের ২০২৩ সালের ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট।
ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে ২০২২ সালে আখ্যায়িত করেন ঢাকায় তখনকার জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। চীনের নতুন সাম্রাজ্যবাদকে মোকাবিলায় গত বছর বাংলাদেশ সফর করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তিনি এ সময় ফ্রান্সের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিকে বাংলাদেশে সুসংহত করেন।
আঞ্চলিক সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও ভারত ও চীন উভয়েই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতের ‘লুক ইস্ট’ এবং এখনকার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ। এতে জোর দেয়া হয়েছে আঞ্চলিক পরিবহন, ডিজিটাল সংযুক্তি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং বিদ্যুত সহযোগিতা। বাংলাদেশ থেকে উদ্ভূত ইসলামপন্থি উগ্রবাদী এবং আন্তঃসীমান্ত মিলিট্যান্সি নিয়ে উদ্বেগ আছে ভারতের। এসব ইস্যুতে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে মিত্র হিসেবে দেখে ভারত। তাই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের পক্ষ নেয়। অন্যদিকে বাংলাদেশকে একটি কৌশলগত উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেছে চীন। তারা দেখতে পেয়েছে ভারতের কাছে বাংলাদেশের আনুগত্য এবং বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত অবস্থান। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছে। যা মাঝে মাঝেই বাংলাদেশের জন্য পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সতর্কতা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাইরের এসব প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। নির্ভরতা এড়ানোর ক্ষেত্রে বিদেশি বিভিন্ন শক্তির কাছ থেকে ত্রাণ পেয়েছে এবং অংশীদারিত্ব গড়েছে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করা সত্ত্বেও আগামী ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের নাগরিক ও নেতাদের জন্য এ অঞ্চলে এবং বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থানকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাবেন সেটা একটা সুযোগ। তারপরও বাংলাদেশের ভগ্নদশা ও সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বৈদেশিক নীতির পার্থক্য খুব কমই আলোচিত হয়। পুনর্নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রনীতি কি হবে? ২০০৬ সাল থেকে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির উদীয়মান বাংলাদেশের জন্য পররাষ্ট্রনীতি কি হবে?
এসব প্রশ্নের জবাব পেতে ইউএসআইপি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য তাদের দলের পররাষ্ট্রনীতি কি হবে এবং অন্যদিকে সমালোচকদের বিষয়ে কি হবে, তা জানতে চায়। এসব বিষয় খুব কম সম্পাদনা করে উপস্থাপন করা হয়েছে। সূত্র : মানবজমিন
হককথা/নাছরিন