বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে চায় পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো
- প্রকাশের সময় : ০৪:৩৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৯৫ বার পঠিত
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চায় পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো। এ বিষয়ে তাদের পছন্দের জায়গা হলো, বৃহত্তর নিরাপত্তা সহযোগিতা। ওই দেশগুলোর সঙ্গে প্রথাগত সহযোগিতা সবসময়ই ছিল। তবে প্রায় ১০ বছর ধরে নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে দুই পক্ষের। ইতোমধ্যে ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়ে গেছে। এছাড়া ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তি করা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলোর সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় চলে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার দৃশ্যমান ক্রমাগত উন্নতি সবার কাছে পরিষ্কার। ফলে অনেক দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথাগত সম্পর্কের পাশাপাশি নিরাপত্তা সেবা (সিকিউরিটি সার্ভিস) আদান-প্রদানের সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে।’
বাংলাদেশের ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর অধীনে জাতীয় নিরাপত্তা সেবা কেনার ক্ষেত্রে বহুমুখিকরণের একটি তাগিদ আছে। এজন্য সরকারও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করছে বলে তিনি জানান। চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ বলেন, ‘সম্পর্ক ভালো না হলে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা হয় না। এ ধরনের সহযোগিতা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।’
ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা নতুন নয়। তবে এখন নতুন আগ্রহের কারণে নতুন মাত্রা পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশে পণ্য বিক্রি করতে চায়। অন্যদিকে আমরা এইসব পণ্যের বহুমুখি উৎস থেকে কিনতে চাই।’
বাংলাদেশ কী চায়
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মূলত আত্মরক্ষা করার জন্য। অর্থাৎ অন্যকে আক্রমণ করা নয়, বরং নিজেকে বহিঃশক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই ব্যবস্থা। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন চীনের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনেছে। তবে বর্তমানে এটি বহুমুখিকরণের করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘বৃহত্তর নিরাপত্তা সম্পর্ক তৈরি করতে সময়ের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়ে জোরালো আলোচনা চলছে প্রায় ১০ বছর ধরে।’ ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথমবারের মতো মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে অংশ নেন। ওই সময়ই বাংলাদেশ তার আগ্রহের বিষয়টি পরিষ্কার করেছিল বলে তিনি জানান।
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি বৃহত্তর নিরাপত্তা বলয়ে কীভাবে কাজ করা যায় সেটি নিয়েও আলোচনা করা সম্ভব। ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বাংলাদেশ তার কৌশল ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের কৌশলের সঙ্গে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অনেক মিল রয়েছে বলে শহীদুল হক জানান। তিনি বলেন, ‘যেসব ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মিল রয়েছে সেখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।’
ইউরোপিয়ানদের আগ্রহ
অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সেবা বিষয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর আগ্রহ দেখাচ্ছে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো। এ বিষয়ে দুই পক্ষের আগ্রহ আছে জানিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ বলেন, ‘তবে সুবিধাজনক শর্তে আমরা কিনতে চাই।’ কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে আমেরিকা বা ইউরোপের কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ তারা ছাড়া আর কেউ ওই ধরনের উন্নতমানের পণ্য বানায় না, যুক্ত করেন তিনি।
সময় প্রয়োজন
নিরাপত্তা সেবার ক্ষেত্রে বড় ধরনের লেনদেন সময়সাপেক্ষ বিষয়। এ বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘এ ধরনের লেনদেনের আগে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ সেবার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। এগুলো আলোচনা করে ঠিক করতে সময় লাগে। তবে ২০১৫ এর পর থেকে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো থেকে অল্প আকারে বেশ কিছু পণ্য কেনা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, সুইটজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশ ২৯২ মিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা সরঞ্জাম কিনেছে। এরমধ্যে ২০১৫ এর আগে কেনা হয়েছে ৭৫ মিলিয়ন ডলারের। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।