নিউইয়র্ক ০৯:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

জাতীয় পার্টির দুই অংশে রশি টানাটানি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:১১:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪
  • / ৭২ বার পঠিত

দল ভাঙার পর এবার মূল জাতীয় পার্টি কোনটি এবং লাঙ্গল প্রতীক কে পাবে- তা নিয়ে শুরু হয়েছে ‘রশি টানাটানি’। কে পাবে লাঙ্গল প্রতীক। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাপার এক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন তার ছোট ভাই জিএম কাদের। অন্য অংশের নেতৃত্বে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ছেলে শাদ এরশাদ। উভয় অংশই তাদের পার্টিকেই মূল জাতীয় পার্টি বলে দাবি করছে। জিএম কাদেরপন্থিরা বলছেন, তারাই মূল জাতীয় পার্টি।

অন্যদিকে রওশনপন্থিরা বলছেন তাদেরটাই মূল দল। যে অংশ সম্মেলন করে রেজুলেশন নির্বাচন কমিশনে জমা দেবে তারাই হবে মূল দল। আজ বা কালের মধ্যে সম্মেলনের রেজুলেশন নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি সুরাহা করতে না পারলে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে জানা গেছে।

এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপা সপ্তমবারের মতো ভেঙেছে। জাতীয় পার্টি ভাঙার জন্য যাদের নাম আসে তারা হলেন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জু, ডা. এম এ মতিন, কাজী জাফর আহমেদ। সর্বশেষ রওশন এরশাদ। এখন দল ভাঙলেও কোনটি মূল দল তা নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। একটি অংশের দাবি, যারা প্রথমে কাউন্সিল করে রেজুলেশন নির্বাচন কমিশনে জমা দেবে তারাই মূল জাপা। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডিয়াম সদস্য যেই অংশে বেশি সেই অংশকেই স্বীকৃতি দেবে কমিশন। আর সেই বিচার না মানলে ক্ষুব্ধ অংশকে যেতে হবে আদালতে। জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আরেকটি ব্র্যাকেটবন্দী দল হতেই পারে। কিন্তু আমরাই মূল জাতীয় পার্টি। রওশন এরশাদপন্থিদের পৃথক কাউন্সিল করা দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী। তবে আমরা তাদের কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এবং থাকবে।

অন্যদিকে রওশনপন্থি জাপার কো-চেয়ারমান সুনীল শুভ রায় বলেছেন, চুন্নু সাহেব স্বপ্নে বাতাসা খাচ্ছেন। তিনি এসব ভেবে মনে সুখ পাচ্ছেন। দেশের মানুষ জানে, কোনটি মূল জাতীয় পার্টি। যে অংশ সম্মেলন করে রেজুলেশন নির্বাচন কমিশনে জমা দেবে, তারাই মূল অংশ। আমরা সম্মেলন করেছি। আজকালের মধ্যেই রেজুলেশন নির্বাচন কমিশনে জমা দেব। অন্যকিছু করতে গেলে নির্বাচন কমিশনকে নিজ দায়িত্বেই করতে হবে। এর পরও তো আদালত আছে।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত আসবে। কোন কমিটিতে কতজন প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন, সে হিসাব হবে। যাদের পাল্লা ভারি সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। এক্ষেত্রে গণতন্ত্রী পার্টির মতোও পরিস্থিতি গড়াতে পারে। দলটির দুটি অংশই নিজেদের গণতন্ত্রী পার্টি দাবি করায় সম্প্রতি তাদের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল ইসি। এমনকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে তারা আদালতে গেলে এবং ইসিতে প্রার্থীদের প্রার্থিতা বহাল রাখার আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশন। মূল কমিটি কার নেতৃত্বে- এমন বিরোধে ইসির সিদ্ধান্ত না মানলে সেই পথেও এগোতে পারে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে আদালতই হতে পারে জাপার শেষ আশ্রয়স্থল।

এর আগে, ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর ‘দলের দশম জাতীয় সম্মেলন’ ডেকে ৩০ অক্টোবর ওই সম্মেলন থেকে সরে আসেন রওশন অংশের নেতাকর্মীরা। ওই সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ্। তবে আসন্ন কাউন্সিলে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারী ‘জাতীয় পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই দলে ভাঙন এসেছে বহুবার। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই নামেই আরও ভিন্ন ভিন্ন দল রয়েছে, যারা বিভিন্ন সময় এরশাদের জাতীয় পার্টিতে ছিলেন।

১৯৯৬ সালে ‘আওয়ামী লীগ’কে সমর্থন দেওয়াকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টি (নিবন্ধিত) নামে নতুন দল করেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি-বিজেপি (নিবন্ধিত) নামে আরেকটি দল গঠন করেন। এই অংশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার ছেলে আন্দালিভ রহমান পার্থ। পরে এই অংশটির মধ্যেও ভাঙন ধরে। সৃষ্টি হয় এম এ মতিনের নেতৃত্বে নতুন জাতীয় পার্টি-বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (নিবন্ধিত)। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি ভাঙেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এরশাদকে বহিষ্কার করে দলের বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন জাতীয় পার্টির ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে এই অংশটি অনিবন্ধিত ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রয়েছে।

রওশন এরশাদের নেতৃত্বে কার্যত এখন জাতীয় পার্টির ষষ্ঠ ধারাটি সামনে এলো। ৯ মার্চের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে ৬টি ভিন্নভিন্ন ‘জাতীয় পার্টি’ সক্রিয় হলো। এগুলো- জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি-পার্থ), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় পার্টি (মতিন)। এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশাও জাপা পুনর্গঠন নামে রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই জাপায় দ্বন্দ্ব চলছে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের। ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়। জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে ২০২২ সালের আগস্টে কাউন্সিলের ডাক দেন তিনি। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রওশনকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরাতে চেষ্টা করেন জি এম কাদের। তবে সরকারের সমর্থনে টিকে যান রওশন।

২০২৩ সালের জানুয়ারীতে সরকারের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের। তবে কয়েক মাস পর তা ভেঙে যায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রওশনপন্থিদের মনোনয়ন না দিলে সে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। জাপার মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করে নিজ হাতে জাপার কর্তৃত্ব রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন রওশন এরশাদ। তবে তার অংশ আর ভোট করেনি। এর মাঝে মহাজোট ২৬টি আসন ছেড়ে দিলেও ৭ জানুয়ারীর ভোটে জাপা ঘরে মাত্র ১১টি আসন তুলতে পারেন কাদেরপন্থিরা। ২৮ জানুয়ারী জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এবং সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে নিজের কমিটিই আমলে নেওয়ার জন্য ইসিতে চিঠি দেন। তবে নির্বাচন কমিশন গত ১৯ ফেব্রুয়ারী সেই চিঠির আবেদন নামঞ্জুর করে।

এদিকে শনিবার (৯ মার্চ) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল করেন রওশন এরশাদপন্থিরা। কাউন্সিলে রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে আগামী ৩ বছরের জন্য নির্বাচিত করা হয়। কাউন্সিলে আগামী তিন বছরের জন্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা নির্বাচিত। এছাড়া পাঁচজন কো-চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। কো-চেয়ারম্যানরা হলেন, শাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাদ এরশাদ, গোলাম সারওয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়। সুনীল শুভ রায় জাতীয় পার্টির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করবেন।

জাতীয় পার্টির দুই শীর্ষ নেতা রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব অনেক পুরোনো। তবে ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ হন রওশনপন্থিরা। অন্যদিকে, ছেলে সাদ এরশাদকে রংপুরে মনোনয়ন না দেওয়ায় রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন। এর জেরে নতুন করে জাপায় দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিএম কাদের পন্থিরা অংশগ্রহণ করেন। আর নির্বাচনে মাত্র ১১টি আসন লাভ করে। নির্বাচনে রওশনপন্থিরা অংশগ্রহণ করেননি। যার ফলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়। শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের মাধ্যমে দল আবার ভাঙল। (দৈনিক জনকণ্ঠ)

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

জাতীয় পার্টির দুই অংশে রশি টানাটানি

প্রকাশের সময় : ০৩:১১:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪

দল ভাঙার পর এবার মূল জাতীয় পার্টি কোনটি এবং লাঙ্গল প্রতীক কে পাবে- তা নিয়ে শুরু হয়েছে ‘রশি টানাটানি’। কে পাবে লাঙ্গল প্রতীক। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাপার এক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন তার ছোট ভাই জিএম কাদের। অন্য অংশের নেতৃত্বে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ছেলে শাদ এরশাদ। উভয় অংশই তাদের পার্টিকেই মূল জাতীয় পার্টি বলে দাবি করছে। জিএম কাদেরপন্থিরা বলছেন, তারাই মূল জাতীয় পার্টি।

অন্যদিকে রওশনপন্থিরা বলছেন তাদেরটাই মূল দল। যে অংশ সম্মেলন করে রেজুলেশন নির্বাচন কমিশনে জমা দেবে তারাই হবে মূল দল। আজ বা কালের মধ্যে সম্মেলনের রেজুলেশন নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি সুরাহা করতে না পারলে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে জানা গেছে।

এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপা সপ্তমবারের মতো ভেঙেছে। জাতীয় পার্টি ভাঙার জন্য যাদের নাম আসে তারা হলেন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জু, ডা. এম এ মতিন, কাজী জাফর আহমেদ। সর্বশেষ রওশন এরশাদ। এখন দল ভাঙলেও কোনটি মূল দল তা নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। একটি অংশের দাবি, যারা প্রথমে কাউন্সিল করে রেজুলেশন নির্বাচন কমিশনে জমা দেবে তারাই মূল জাপা। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডিয়াম সদস্য যেই অংশে বেশি সেই অংশকেই স্বীকৃতি দেবে কমিশন। আর সেই বিচার না মানলে ক্ষুব্ধ অংশকে যেতে হবে আদালতে। জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আরেকটি ব্র্যাকেটবন্দী দল হতেই পারে। কিন্তু আমরাই মূল জাতীয় পার্টি। রওশন এরশাদপন্থিদের পৃথক কাউন্সিল করা দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী। তবে আমরা তাদের কার্যক্রমকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এবং থাকবে।

অন্যদিকে রওশনপন্থি জাপার কো-চেয়ারমান সুনীল শুভ রায় বলেছেন, চুন্নু সাহেব স্বপ্নে বাতাসা খাচ্ছেন। তিনি এসব ভেবে মনে সুখ পাচ্ছেন। দেশের মানুষ জানে, কোনটি মূল জাতীয় পার্টি। যে অংশ সম্মেলন করে রেজুলেশন নির্বাচন কমিশনে জমা দেবে, তারাই মূল অংশ। আমরা সম্মেলন করেছি। আজকালের মধ্যেই রেজুলেশন নির্বাচন কমিশনে জমা দেব। অন্যকিছু করতে গেলে নির্বাচন কমিশনকে নিজ দায়িত্বেই করতে হবে। এর পরও তো আদালত আছে।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত আসবে। কোন কমিটিতে কতজন প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন, সে হিসাব হবে। যাদের পাল্লা ভারি সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। এক্ষেত্রে গণতন্ত্রী পার্টির মতোও পরিস্থিতি গড়াতে পারে। দলটির দুটি অংশই নিজেদের গণতন্ত্রী পার্টি দাবি করায় সম্প্রতি তাদের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছিল ইসি। এমনকি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে তারা আদালতে গেলে এবং ইসিতে প্রার্থীদের প্রার্থিতা বহাল রাখার আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশন। মূল কমিটি কার নেতৃত্বে- এমন বিরোধে ইসির সিদ্ধান্ত না মানলে সেই পথেও এগোতে পারে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে আদালতই হতে পারে জাপার শেষ আশ্রয়স্থল।

এর আগে, ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর ‘দলের দশম জাতীয় সম্মেলন’ ডেকে ৩০ অক্টোবর ওই সম্মেলন থেকে সরে আসেন রওশন অংশের নেতাকর্মীরা। ওই সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ্। তবে আসন্ন কাউন্সিলে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান সাবেক এই রাষ্ট্রদূত। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারী ‘জাতীয় পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এই দলে ভাঙন এসেছে বহুবার। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই নামেই আরও ভিন্ন ভিন্ন দল রয়েছে, যারা বিভিন্ন সময় এরশাদের জাতীয় পার্টিতে ছিলেন।

১৯৯৬ সালে ‘আওয়ামী লীগ’কে সমর্থন দেওয়াকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টি (নিবন্ধিত) নামে নতুন দল করেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টি-বিজেপি (নিবন্ধিত) নামে আরেকটি দল গঠন করেন। এই অংশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার ছেলে আন্দালিভ রহমান পার্থ। পরে এই অংশটির মধ্যেও ভাঙন ধরে। সৃষ্টি হয় এম এ মতিনের নেতৃত্বে নতুন জাতীয় পার্টি-বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (নিবন্ধিত)। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি ভাঙেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এরশাদকে বহিষ্কার করে দলের বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন জাতীয় পার্টির ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে এই অংশটি অনিবন্ধিত ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রয়েছে।

রওশন এরশাদের নেতৃত্বে কার্যত এখন জাতীয় পার্টির ষষ্ঠ ধারাটি সামনে এলো। ৯ মার্চের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে ৬টি ভিন্নভিন্ন ‘জাতীয় পার্টি’ সক্রিয় হলো। এগুলো- জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি-পার্থ), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাতীয় পার্টি (মতিন)। এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশাও জাপা পুনর্গঠন নামে রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই জাপায় দ্বন্দ্ব চলছে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের। ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়। জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে ২০২২ সালের আগস্টে কাউন্সিলের ডাক দেন তিনি। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রওশনকে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরাতে চেষ্টা করেন জি এম কাদের। তবে সরকারের সমর্থনে টিকে যান রওশন।

২০২৩ সালের জানুয়ারীতে সরকারের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয় জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের। তবে কয়েক মাস পর তা ভেঙে যায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রওশনপন্থিদের মনোনয়ন না দিলে সে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। জাপার মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করে নিজ হাতে জাপার কর্তৃত্ব রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন রওশন এরশাদ। তবে তার অংশ আর ভোট করেনি। এর মাঝে মহাজোট ২৬টি আসন ছেড়ে দিলেও ৭ জানুয়ারীর ভোটে জাপা ঘরে মাত্র ১১টি আসন তুলতে পারেন কাদেরপন্থিরা। ২৮ জানুয়ারী জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এবং সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে নিজের কমিটিই আমলে নেওয়ার জন্য ইসিতে চিঠি দেন। তবে নির্বাচন কমিশন গত ১৯ ফেব্রুয়ারী সেই চিঠির আবেদন নামঞ্জুর করে।

এদিকে শনিবার (৯ মার্চ) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল করেন রওশন এরশাদপন্থিরা। কাউন্সিলে রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে আগামী ৩ বছরের জন্য নির্বাচিত করা হয়। কাউন্সিলে আগামী তিন বছরের জন্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা নির্বাচিত। এছাড়া পাঁচজন কো-চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। কো-চেয়ারম্যানরা হলেন, শাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সাদ এরশাদ, গোলাম সারওয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়। সুনীল শুভ রায় জাতীয় পার্টির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করবেন।

জাতীয় পার্টির দুই শীর্ষ নেতা রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব অনেক পুরোনো। তবে ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ হন রওশনপন্থিরা। অন্যদিকে, ছেলে সাদ এরশাদকে রংপুরে মনোনয়ন না দেওয়ায় রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন। এর জেরে নতুন করে জাপায় দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিএম কাদের পন্থিরা অংশগ্রহণ করেন। আর নির্বাচনে মাত্র ১১টি আসন লাভ করে। নির্বাচনে রওশনপন্থিরা অংশগ্রহণ করেননি। যার ফলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়। শেষ পর্যন্ত সম্মেলনের মাধ্যমে দল আবার ভাঙল। (দৈনিক জনকণ্ঠ)