নিউইয়র্ক ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

শহীদ সেনা দিবস করার দাবি আমলে নেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:০০:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১০৯ বার পঠিত

বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহীদ মেজর কাজী মোছাদ্দেক হোসেনের স্ত্রী কোহিনূর হোসেন বলেছেন, ‘জাতীয় শহীদ সেনাদিবস ঘোষণা’ করা একটা বড় অর্জন। এবার জড়িতদের বিচারের পালা। সূর্যের আলো যখন দেখেছি, পুরো সূর্যটাও দেখতে পাব, ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, আমাদের চাওয়া ছিল শহীদ সেনা দিবস। সেই দাবি নিয়ে গেলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, এত দিবসের মধ্যে আর শহীদ সেনা দিবস করা যাবে না।

এরপর যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হলো তখন মনে হলো এটা আমাদের জন্যই হচ্ছে, আল্লাহ মনে হয় আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছেন। আমি আমার মেয়ে মহাখালী ডিওএইচএস হতে আন্দোলনে যুক্ত হই। হাসিনা সরকারের পতন হয়—এখন আমরা বিচার চাই। যে যে ব্যক্তি, যারা যারা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অবিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে আলাপকালে বুধবার কোহিনূর হোসেন জানান, ৭ম শ্রেণি ও ২য় শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে স্বামী হারানোর প্রতিবন্ধকতার কথা। বড় মেয়ে কাজী নাজিফা তাবাস্সুম ইলমিকা বাবা বেঁচে থাকতেই তার ক্যাডেটে পড়ার ইচ্ছার কথা জানায়। তবে বাবা চাইতেন মেয়েকে সামনে রেখেই মানুষ করবেন। কিন্তু সব চাওয়া-পাওয়ার অবসান ঘটে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায়।

কোহিনূর হোসেন বলেন, তখন শহীদ কাজী মোসাদ্দেক হোসেন (৪২) র্যাবে ছিলেন। সাহসিকতার ট্রফি আনতেই পৌনে ৮টায় বারিধারার বাসা থেকে নাস্তা করে বেড়িয়ে যান। স্কুল বন্ধ, দুই মেয়ে ঘুমাচ্ছিল। এরই মধ্যে আমার স্বামী বেশ কয়েক বার ফোন করেন। আমিতো তখন জানতাম না এমন ঘটনা ঘটছে। আমি বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছিলাম, ফোনে না পেয়ে উনি আমাকে খুদেবার্তা পাঠাতে থাকেন। তবে যখন ওকে গুলি করা হচ্ছিল তখন ও ফোনেই ছিল, আমি একটা গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু তখনো তো বুঝতে পারিনি। এই গুলিই মেজর মোসাদ্দেককেই করা হয়েছে। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি ফজরের নামাজ পড়ে আমি দুই মেয়েকে নিয়ে পিলখানায় যাই।

যখন আমাকে সবাই টেনে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন, আমি কাঁদতে লাগলাম-মুহূর্তেই আমার মনে হলে পুরো পৃথিবীর মাটি আমার পায়ের নিচে থেকে সরে যাচ্ছে। আমি আমার মেয়েদের নিয়ে গাড়ির উপর উঠে আমার স্বামীকে দেখলাম। ওদেরও ওদের বাবাকে দেখালাম- কী বীভৎস চেহারা, লাশগুলো পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। গায়ের রঙ বিদঘুটে কালো হয়ে গিয়েছিল। তাদের শুধু গুলি করেনি, গান পাউডারও দিয়েছিল। চোখের পাতা ছিল না, বড় বড় চোখ করে মনে হচ্ছিল আমাকে দেখছিল আর বলছিল, কেউ আমাদের বাঁচাতে আসেনি! শহীদ মেজর কাজী মোছাদ্দেক হোসেন ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর আর্টিলারি রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। সর্বশেষে তিনি ৩৩ রাইফেল ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

কোহিনূর বলেন, আমার স্বামী পরিবারের প্রতি খুবই যত্নশীল ছিলেন। সেই মানুষটি শহীদ হয়ে আমাদের বড় একটা যুদ্ধের মধ্যে ফেলে গিয়েছেন। আমার স্বামীর জন্য মিলাদ পড়ানোর মতো টাকা তখন আমার হাতে ছিল না। প্রথমে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয় আর্টিলারি সেন্টার থেকে। সেই টাকায় মিলাদ হয়। তারপর সেনাবাহিনী থেকে নিয়ম অনুযায়ী তার প্রাপ্যটা আসে। আমি আমার কষ্টকে পেছনে ফেলে দুই মেয়েকে এগিয়ে নেওয়ার যুদ্ধে নামি। কখনো গাড়িতে কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চাদের স্কুলে আনতে গেছি, কখনো তাদের সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করিনি। আমি আমার স্বামীর আমানতকে সঠিকভাবে রক্ষা করতে পেরেছি-আমার বড় মেয়ে মার্কেটিংয়ে পড়াশুনা করে এখন ইউকেতে ২য় মাস্টার্স করছে—একটি চাকরিও করছে। ছোট মেয়েও বিইউপিতে মার্কেটিংয়ে পড়ছে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

শহীদ সেনা দিবস করার দাবি আমলে নেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১১:০০:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শহীদ মেজর কাজী মোছাদ্দেক হোসেনের স্ত্রী কোহিনূর হোসেন বলেছেন, ‘জাতীয় শহীদ সেনাদিবস ঘোষণা’ করা একটা বড় অর্জন। এবার জড়িতদের বিচারের পালা। সূর্যের আলো যখন দেখেছি, পুরো সূর্যটাও দেখতে পাব, ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, আমাদের চাওয়া ছিল শহীদ সেনা দিবস। সেই দাবি নিয়ে গেলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, এত দিবসের মধ্যে আর শহীদ সেনা দিবস করা যাবে না।

এরপর যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হলো তখন মনে হলো এটা আমাদের জন্যই হচ্ছে, আল্লাহ মনে হয় আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছেন। আমি আমার মেয়ে মহাখালী ডিওএইচএস হতে আন্দোলনে যুক্ত হই। হাসিনা সরকারের পতন হয়—এখন আমরা বিচার চাই। যে যে ব্যক্তি, যারা যারা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অবিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২৫ ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে আলাপকালে বুধবার কোহিনূর হোসেন জানান, ৭ম শ্রেণি ও ২য় শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে স্বামী হারানোর প্রতিবন্ধকতার কথা। বড় মেয়ে কাজী নাজিফা তাবাস্সুম ইলমিকা বাবা বেঁচে থাকতেই তার ক্যাডেটে পড়ার ইচ্ছার কথা জানায়। তবে বাবা চাইতেন মেয়েকে সামনে রেখেই মানুষ করবেন। কিন্তু সব চাওয়া-পাওয়ার অবসান ঘটে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায়।

কোহিনূর হোসেন বলেন, তখন শহীদ কাজী মোসাদ্দেক হোসেন (৪২) র্যাবে ছিলেন। সাহসিকতার ট্রফি আনতেই পৌনে ৮টায় বারিধারার বাসা থেকে নাস্তা করে বেড়িয়ে যান। স্কুল বন্ধ, দুই মেয়ে ঘুমাচ্ছিল। এরই মধ্যে আমার স্বামী বেশ কয়েক বার ফোন করেন। আমিতো তখন জানতাম না এমন ঘটনা ঘটছে। আমি বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছিলাম, ফোনে না পেয়ে উনি আমাকে খুদেবার্তা পাঠাতে থাকেন। তবে যখন ওকে গুলি করা হচ্ছিল তখন ও ফোনেই ছিল, আমি একটা গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু তখনো তো বুঝতে পারিনি। এই গুলিই মেজর মোসাদ্দেককেই করা হয়েছে। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি ফজরের নামাজ পড়ে আমি দুই মেয়েকে নিয়ে পিলখানায় যাই।

যখন আমাকে সবাই টেনে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন, আমি কাঁদতে লাগলাম-মুহূর্তেই আমার মনে হলে পুরো পৃথিবীর মাটি আমার পায়ের নিচে থেকে সরে যাচ্ছে। আমি আমার মেয়েদের নিয়ে গাড়ির উপর উঠে আমার স্বামীকে দেখলাম। ওদেরও ওদের বাবাকে দেখালাম- কী বীভৎস চেহারা, লাশগুলো পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। গায়ের রঙ বিদঘুটে কালো হয়ে গিয়েছিল। তাদের শুধু গুলি করেনি, গান পাউডারও দিয়েছিল। চোখের পাতা ছিল না, বড় বড় চোখ করে মনে হচ্ছিল আমাকে দেখছিল আর বলছিল, কেউ আমাদের বাঁচাতে আসেনি! শহীদ মেজর কাজী মোছাদ্দেক হোসেন ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর আর্টিলারি রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। সর্বশেষে তিনি ৩৩ রাইফেল ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

কোহিনূর বলেন, আমার স্বামী পরিবারের প্রতি খুবই যত্নশীল ছিলেন। সেই মানুষটি শহীদ হয়ে আমাদের বড় একটা যুদ্ধের মধ্যে ফেলে গিয়েছেন। আমার স্বামীর জন্য মিলাদ পড়ানোর মতো টাকা তখন আমার হাতে ছিল না। প্রথমে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয় আর্টিলারি সেন্টার থেকে। সেই টাকায় মিলাদ হয়। তারপর সেনাবাহিনী থেকে নিয়ম অনুযায়ী তার প্রাপ্যটা আসে। আমি আমার কষ্টকে পেছনে ফেলে দুই মেয়েকে এগিয়ে নেওয়ার যুদ্ধে নামি। কখনো গাড়িতে কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চাদের স্কুলে আনতে গেছি, কখনো তাদের সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করিনি। আমি আমার স্বামীর আমানতকে সঠিকভাবে রক্ষা করতে পেরেছি-আমার বড় মেয়ে মার্কেটিংয়ে পড়াশুনা করে এখন ইউকেতে ২য় মাস্টার্স করছে—একটি চাকরিও করছে। ছোট মেয়েও বিইউপিতে মার্কেটিংয়ে পড়ছে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক।