যুদ্ধ বন্ধে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী
- প্রকাশের সময় : ০৬:১১:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ১২৫ বার পঠিত
জার্মানির মিউনিখ শহরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক হবে। বৈঠকে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা গুরুত্ব পাবে। তবে এ বৈঠক ঢাকার সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর জার্মানি সফর ঘিরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
জার্মানির মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা থেকে মিউনিখের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের সভাপতির আমন্ত্রণে সেখানে যাচ্ছেন তিনি। সংলাপের মাধ্যমে বিশ্বশান্তির মূলমন্ত্র নিয়ে ১৯৬৩ সাল থেকে মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক বার্ষিক সভা মিউনিখ কনফারেন্স। ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের ৬০তম সভা অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে অংশ নেন। বাংলাদেশ বিমানে তিনি বৃহস্পতিবার মিউনিখের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি মিউনিখ ত্যাগ করবেন এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকায় পৌঁছাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এ বছর বিশ্বের ৬০টি দেশের সরকারপ্রধান এই কনফারেন্সে অংশ নিতে যাচ্ছেন। জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাবশালী দেশ। একই সঙ্গে একক দেশ হিসেবে জার্মানি বিশ্বে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ইউরোপের সবচেয়ে বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। এ ছাড়াও জার্মানি বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং মানবিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মিউনিখ কনফারেন্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইউরোপীয় নেতাদের পাশাপাশি জার্মান নেতাদের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী সফরকালে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের উদ্বোধনী আয়োজনে অংশ নেবেন এবং ক্লাইমেট ফাইন্যান্স সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিতে ফ্রেডিরিকসেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এ ছাড়াও, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী সেভেনজা সুলজ, বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ এবং মেটার গ্লোবাল এফেয়ার্স প্রেসিডেন্ট স্যার নিক ক্লেগ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা যায়।
এ সফরে প্রধানমন্ত্রী জার্মানিতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনায়ও অংশ নেবেন। এর বাইরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের ক্লাইমেট সিকিউরিটি সংক্রান্ত একটি প্যানেলে এবং পররাষ্ট্র সচিব পিস অপারেশনস বিষয়ক অন্য একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন বিষয়ে আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন আসছে কি না—এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের অবস্থান সবসময় পরিষ্কার। আমরা সবসময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে। আমরা চাই পৃথিবীতে শান্তি এবং স্থিতি বিরাজ করুক। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের জন্য সময় চেয়েছেন। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে সময় দিয়েছেন। সেখানে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনাই হবে।
জেলেনস্কির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের ফলে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো দূরত্ব তৈরি হবে কি না—জানতে চাইলে ড. হাছান বলেন, জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে হেরফের হওয়ার প্রশ্নই আসে না। রাশিয়া আমাদের অত্যন্ত বন্ধুপ্রতীম দেশ। রাশিয়া মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের দেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এমনকি চট্টগ্রামে মাইন অপসারণের সময় রাশিয়ার একজন নাগরিক মারাও যান। সুতরাং মস্কোর সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ এবং ঐতিহাসিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সম্পর্কের বন্ধনে আমরা আবদ্ধ হয়েছি সেই বন্ধন অনেক দৃঢ়। এখানে সম্পর্ক হেরফের হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
তিনি বলেন, আমরা বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করবো। বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাতগুলো বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকিতে পড়লে বৈশ্বিক স্থিতি, অগ্রগতি ও উন্নতিও হুমকির মুখে পড়ে। এ বিষয়গুলো মিউনিখের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।
মিউনিখ কনফারেন্সে অস্ত্র কেনাবেচার বিষয়ে কোনো আলোচনা হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিডিউলে এমন কিছু নেই। কেউ উপস্থাপন করবে কি না আমরা এখনো জানি না। সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ।