ফাঁসছেন রাতের ভোটের ডিসিরা

- প্রকাশের সময় : ০৩:৩৫:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৪৫ বার পঠিত
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলটির নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে আরও তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২০১৪ সালে দশম, ২০১৮ সালে একাদশ ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। প্রতিটি নির্বাচনেই অনিয়ম ও বিতর্ক সৃষ্টি করে। তবুও টানা ক্ষমতায় থাকে দলটি। কিন্তু অনিয়মের কোনো অভিযোগই আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট খ্যাতি নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলে অনিয়মের অভিযোগ ওঠা তিনটি নির্বাচন নিয়ে কী কী ব্যত্যয় ঘটেছে, তা তুলে আনতে কাজ শুরু করা হয়। সেখানে উঠে আসে ভোটে অনিয়মের সঙ্গে ঘোরতরভাবে জড়িত মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। অন্তর্বর্তী সরকারের অনুসন্ধানে অনিয়মে ডিসিদের দায় উঠে আসে। এরই আলোকে বিতর্কিত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্বর্তী সরকার তৎপর হয়ে ওঠে।
জানা গেছে, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিটির প্রধান বদিউল আলম মজুমদার কয়েক দফায় বৈঠক করেন তিন নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ডিসিদের নিয়ে। সেখানে ২০১৪ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় সে দুটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের অপরাধ হালকা করে নেওয়া হয়েছে। তবে ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে অনিয়মে জড়িত ডিসিদের শাস্তির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে বৈঠকে থাকা একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের ঘোরতর অপরাধ চিহ্নিত হয়। দিনের ভোট রাতে করা ঠেকানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা বাধ্য হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা বলেন, ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে। পদে পদে আরও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিরা বরখাস্তও হতে পারেন। মূল কথা ফেঁসে যাচ্ছেন তারা। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের অন্য দুটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিরা লঘু দণ্ডে দণ্ডিত হয়ে মূলত বেঁচে যাচ্ছেন বলা চলে।
সেসব কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৪ সালের দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের অনেকেই ইতিমধ্যে অবসরে চলে গেছেন। যারা আছেন তাদের সবার আর কোনো পদায়ন ও পদোন্নতি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ২০২৪ সালের নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও ভালো পদায়ন, পদোন্নতিতে পিছিয়ে থাকবেন। অনেক কর্মকর্তার পদাবনতিও ঘটবে। তাদের শাস্তি এতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিটির প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তিনটি নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা ডিসিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের কাছ থেকে অনিয়মের তথ্য আমার কাছে এসেছে। তবে সেসব অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব নাম প্রকাশে অসম্মতি জানিয়ে বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে মাঠে কাজ করা ডিসিরা বিতর্কিত ভোট অনুষ্ঠান করায় তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এ অপরাধে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিরাই মূলত ফাঁসছেন। কারণ দিনের ভোট রাতে করার অপরাধে তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাকি দুটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার সে দুটিতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের চূড়ান্ত ফল গণমাধ্যম বা অন্যান্য মাধ্যমে আসার আগেই নিজ নিজ আসনের প্রার্থীদের হাতে চলে যায়। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ডিসি ও পুলিশের এসপি। মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ফল প্রকাশ হওয়ার আগেই ভোটে অংশ নেওয়া নির্দিষ্ট প্রার্থীর হাতে চলে যায়। এটি বড় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।
সচিবালয়ে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বে থাকা ডিসিরা পদে পদে আটকে যেতে পারেন। ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছেন। আরও বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের। সেসব কর্মকর্তা আরও বলেন, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের দুটি নির্বাচন অংশগ্রহমূলক ছিল না বলে সেগুলোকে তেমন আমলে নিচ্ছে না অন্তর্বর্তী সরকার।
এ প্রসঙ্গে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে একটি জেলার ডিসির দায়িত্বে থাকা উপসচিব পদের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদায়ন ও পদোন্নতিতে পিছিয়ে থাকতে হবে ২০২৪ সালের বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের। এ ছাড়া আমাদের আর বেশি ঝামেলায় পড়তে হবে না। সূত্র : দেশ রূপান্তর।