যেসব চ্যালেঞ্জ বিরোধী দলগুলোর সামনে
- প্রকাশের সময় : ০৩:২২:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৯৯ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজপথে কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা দল এবং জোটগুলো। এজন্য ইতিমধ্যে তারা ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা, কৌশল এবং কর্মসূচি নির্ধারণ করতে কাজ শুরু করছে। এই কৌশল ও কর্মসূচি নির্ধারণে দলগুলোর সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে আন্দোলনকে পুননির্মাণ, জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা, যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা, আন্দোলনকে আরও জোরদার করা, সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা এবং বিদেশীদের সমর্থন অর্জন করা।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে দলগুলোকে কঠিন পরীক্ষা এবং নেতাকর্মীদের কঠিন ত্যাগ স্বীকার করতে হবে বলে মনে করছেন বিরোধী নেতৃবৃন্দরা। কারণ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখনো কারাবন্দি, অনেকেই আবার আত্মগোপনে রয়েছেন।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ বিএনপির এবং এর অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের অনেক শীর্ষ নেতা এখনোও আত্মগোপনে রয়েছেন। আবার জেলা, উপজেলা, থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন। গ্রেপ্তার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের আতঙ্কে তারা প্রকাশ্যে আসছেন না। ছোট ছোট কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে এসব নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে আনতে এবং আবারও সক্রিয় করতে চাচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যে দলটি শনিবার কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করেছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি একই কর্মসূচি পালন করবে তারা। কারণ বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে না আসলে বিরোধীদের কোন চ্যালেঞ্জই বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করছেন নেতৃবৃন্দরা।
আড়াই মাস পর গত ১১ জানুয়ারি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকের তালা ভেঙে অফিসে ঢোকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই সময়ে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীরা আসলেও ধীরে ধীরে বিএনপি এবং দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আসতে শুরু করে। শনিবার কালো পতাকা মিছিলের মধ্যে দিয়ে জেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীরাও কার্যালয়ে আসতে শুরু করেছেন। এর মধ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নিয়মিত কার্যালয়ে আসেন।
রহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে আমরা আছি এবং থাকবো। লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। সুতরাং কোন অবস্থাতেই এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। আর আমাদের সামনে কি কি চ্যালেঞ্জ এসব বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোর সিনিয়র নেতারাও আমাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। আর আমরা আমাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যেই আছি।
এদিকে সরকার পতনের একদফা দাবিতে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে হরতাল এবং অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এই আন্দোলনের মধ্যে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার কারণে কেউ কেউ বলছেন, এই আন্দোলনে তারা সফল হয়নি। আবার কেউ কেউ দাবি করছেন যে, এই আন্দোলনে তারা সফল হয়েছেন। আন্দোলন সফলের যুক্তি কারণ হিসেবে বিরোধীদলগুলো বলছে, দেশের মানুষ তাদের ডাকের সাড়া দিয়ে ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছে। এজন্য তারা এবার রাজপথের আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাচ্ছেন।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চ্যালেঞ্জের বিষয়ে যুগপৎ আন্দোলনের তিনজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা হয়। নামপ্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলো কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছে। সামনে এই কর্মসূচিকে আরও জোরদার করা হবে। কিন্তু এতে তেমন কোন ভালো ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। এজন্য বিদেশীদের সমর্থনকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা জন্য। ইতিমধ্যে দলগুলো এবিষয়ে কাজও শুরু করেছে। সামনে আরও জোরালোভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হবে। এবিষয়ে শুধু বিএনপি নয়, যুগপৎ আন্দোলনের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও কাজ করবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৭ই জানুয়ারি কোন নির্বাচন হয়নি। নতুন নির্বাচনের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। কারণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে ছাড়া এদেশে কোন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদের আগে যে দাবি ছিলো, সেই দাবিতে এখনো আমরা আন্দোলন করছি এবং সামনেও করবো। আর আন্দোলনকে পুননির্মাণ করাই আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ।
গণতন্ত্র মঞ্চের আরেক শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ৭ই জানুয়ারি বিরোধীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোট বর্জন করেছেন। তারা গণঅবস্থান নিয়েছে। এখন জনগণকে রাজপথে নিয়ে আসাটাই আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের যেসমস্ত রাজনৈতিক দল বাইরে ছিলো তাদেরকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে আন্দোলনে যুক্ত করাটাও আরেকটি চ্যালেঞ্জ। এছাড়া আন্দোলনকে আরো জোরদার করা এবং সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করাটাও চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা যে আন্দোলন করছি, এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জনগণকে সংগঠিত করে আন্দোলনকে গণজাগরণে রূপ দেয়াটাই আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ। আর আমাদের সামনে মূল লক্ষ্য হচ্ছে, নতুন নির্বাচনের দাবি আদায় করে নেয়া
গত ২৮শে অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে চার দফায় ৫ দিন হরতাল এবং ১২ দফায় ২৩ দিন সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে অবরোধ করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এছাড়া অসহযোগের ডাক দিয়ে ৭ই জানুয়ারি ভোট বর্জনের আহ্বানে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে তিন দফায় টানা ৮ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ এবং ৪৮ ঘণ্টা হরতাল পালন করেছে বিরোধীরা। এরপর গত ৯ এবং ১০ জানুয়ারি গণসংযোগ কর্মসূচি করেছে তারা। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব
হককথা/নাছরিন