স্থায়ী কমিটির বৈঠক : ভারত নিয়ে ভেবেচিন্তে এগোতে চাচ্ছে বিএনপি
- প্রকাশের সময় : ০৪:৫৩:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪
- / ৪৮ বার পঠিত
ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির দলগতভাবে যুক্ত হওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করছে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটি। গত সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে গত কয়েক দিন রাজনৈতিক অঙ্গনে যে তর্ক-বিতর্ক চলছে, সে পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির কৌশল কী হবে তা আরো বিশদ আলোচনার পর ঠিক হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, পণ্য বর্জন নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর বক্তব্য ব্যক্তিগত। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্তে তিনি এই বক্তব্য দেননি। এরই মধ্যে রিজভীও তা পরিষ্কার করেছেন।
বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, জনগণ তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এতে বিএনপির কিছু করার নেই। কিন্তু দল হিসেবে বিএনপি সরাসরি এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তাতে রাজনৈতিক ‘রং’ লেগে যাবে। ফলে সামাজিক যে আন্দোলন গড়ে উঠছে তা সঠিক পথে থাকবে না।
বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক নানা প্রেক্ষাপট নিয়ে ভারতের বিষয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আগের চেয়ে অনেক বেশি ভারতবিরোধী মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বৈঠকে এ বিষয়টিও উঠে আসে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিচার-বিশ্লেষণ করে বিএনপির ভারত বিরোধিতার একটি কৌশল ঠিক করা উচিত বলে পরামর্শ দেন স্থায়ী কমিটির একজন নেতা।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র আরো জানায়, সামগ্রিকভাবে ভারতের বিষয়ে বিএনপির বক্তব্য কী হবে, কোন কৌশলে তারা এগোবেন তা নিয়ে আরো আলোচনা হবে।
আগামী কয়েকটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনার পর বিএনপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারে।
বৈঠকের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হলেও তাঁরা কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
গত ২০ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। সেদিন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিজের ব্যবহার করা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দিলে নেতাকর্মীরা তাতে আগুন ধরিয়ে দেন।
এরপর বিএনপির ভারত বিরোধিতার বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে। রিজভীর পর বিএনপির আরো কয়েকজন নেতাও ভারতীয় পণ্য বর্জনের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবারের বৈঠকে অনির্ধারিত এই আলোচনা তোলেন স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য। বৈঠকে রিজভীর ভারতবিরোধী বক্তব্যের বিষয়ে কেউ সরাসরি বিরোধিতা করেননি। তবে দায়িত্বশীল পদে থেকে তিনি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে যেভাবে চাদর ছুড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তা দৃষ্টিকটূ বলে মনে করেন তাঁরা। দলের অন্যতম মুখপাত্র রিজভীর এই বক্তব্য দলীয় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এ সময় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বলেন, এ বিষয়ে রিজভী পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত বিবেচনাবোধ থেকে চাদর ছুড়ে ফেলেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই বিষয়ে খুব বেশি কিছু আলোচনা হয়নি। আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে। আর রিজভী তো গণমাধ্যমে বলেই দিয়েছেন, এটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত।’
বৈঠক সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিএনপিকে অবশ্যই ভারতের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় সোচ্চার থাকতে হবে। কিন্তু সেটার কৌশল কী হবে তা আগে ঠিক করতে হবে।
কমিটির আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেন, বিএনপি সরকারবিরোধী একটি বড় আন্দোলন করেছে। এখন তার মূল্যায়ন হওয়া উচিত। আন্দোলন ও এর পরবর্তী প্রেক্ষাপট বিচার-বিশ্লেষণ করে কৌশল ঠিক করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বৈঠকে কমিটির আরেকজন নেতা বলেন, দেশের জনগণ যদি ভারতীয় পণ্য বর্জন করে তাহলে দল হিসেবে বিএনপির কিছু করার নেই। জনগণের বিবেচনাবোধকে তারা অগ্রাহ্য করতে পারেন না। কিন্তু ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে তাতে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়া কয়েকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা বিএনপির জন্য মর্যাদাকর নয়। বিএনপিকে ভারতের সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করতে হবে।
উপজেলার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীন
বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির কৌশল কী হওয়া উচিত সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রায় সব সদস্য দলগতভাবে নির্বাচনে না গিয়ে কৌশল গ্রহণ করার পক্ষে মত দেন। নেতারা কেউ কেউ বলেন, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, সেখানে এই সরকারের অধীনে অন্য নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে কেউ নিজ উদ্যোগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাঁকে বাধা দেওয়া উচিত হবে না বলেও মনে করেন তাঁরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা বলেন, যতটুকু আলোচনা হয়েছে তাতে মনে হয়েছে, উপজেলায় প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে দলীয় নেতাদের উত্সাহিত না করা, কেউ নির্বাচনে যেতে চাইলে তাঁকে দলীয়ভাবে বাধা না দেওয়ার বিষয়ে মতামত এসেছে।
কয়েকজন সদস্য বলেছেন, বিএনপি দলগতভাবে যে নির্বাচনে যেতে চায় না তা পরিষ্কার করতে হবে। এরপর কেউ নির্বাচনে আগ্রহী হলে নিজ দায়িত্বে অংশ নিতে পারেন। সূত্র : কালের কণ্ঠ