বসতবাড়িতে গুলি এসে পড়ায় টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তে আতঙ্ক

- প্রকাশের সময় : ০৪:৪৮:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪
- / ১৭৫ বার পঠিত
টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়ায় একটি বসতবাড়িতে মিয়ানমার বিদ্রোহীদের ছোড়া রাইফেলের গুলি এসে পড়ায় ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) টেকনাফ হোয়াইক্যং উলুবনিয়া এলাকায় নুরুল ইসলামের বাড়িতে গুলিটি এসে পড়ে। টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, শনিবার বিকেলে একটি বাড়িতে রাইফেলের গুলি এসে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রুত সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। এখনো স্থানীয় লোকজনকে সরানো হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে নিরাপদে সরানো হবে।
তথ্য মতে, বিদ্রোহীদের আক্রমণে দিশাহারা মিয়ানমারের জান্তা সরকার। নিয়ন্ত্রণ হারানো এলাকা পুনঃরুদ্ধারে স্থল অভিযানের পাশাপাশি বিদ্রোহীদের দমনে চালানো হচ্ছে বিমান হামলাও। দুই পক্ষের সংঘাতে গোলাগুলির বিকট শব্দে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষা বাংলাদেশি বাসিন্দাদের মনে ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, উখিয়ার পালংখালী এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ও শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে ভারী গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দে এপারের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভয় এবং আতঙ্ক ভর করে। এরমধ্যে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড উলুবনিয়া এলাকার নুরুল ইসলামের বসতবাড়িতে একটি এলএমজির গুলি এসে পড়ে।
গৃহকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকাল থেকে টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়া সীমান্তের মিয়ানমারের ওপারে মর্টারশেল ও ভারী গুলির শব্দ এপারে ভেসে আসে। আমরা ভয়ে নিরাপদে সরে গেছি। বিকেলে একটি গুলি টিনের দরজা ভেদ করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ভাগ্যক্রমে আমরা রক্ষা পেয়েছি। বিজিবির সদস্যরা খবর পেয়ে গুলিটা নিয়ে যায়। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী বলেন, ঘটনার পরপরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি মিয়ানমারে গোলাগুলি চলতে থাকে তাহলে ২০১৭ সালের মতো আবারো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। এছাড়া জান্তা বাহিনীর আক্রমণ সামাল দিতে না পারলে বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মি এবং স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজনও বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। এ অবস্থায় সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গেলো কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে। যদি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মি পেরে উঠতে না পারে সেক্ষেত্রে আমার ধারণা আরাকান আর্মিরা বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তে হবে রোহিঙ্গাদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে।
ঘুমধুমের বাসিন্দা ও সমাজসেবক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘুমধুম সীমান্তে কয়েকদিন ধরে তেমন ভারী গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অন্য এলাকায় থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে। ফলে স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক রয়েই যাচ্ছে। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে মিয়ানমারে থাকা রাখাইন সম্প্রদায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সব সময় সতর্ক রয়েছে জানিয়ে ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সীমান্তের ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ রাখতে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, মিয়ানমারে যা হচ্ছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্তে টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। যাতে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা কিংবা বিদ্রোহী গোষ্ঠি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে গোলাগুলির ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলো রোহিঙ্গাদের মাঝে উত্তেজনা ছড়ানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে এপিবিএন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তেমন কোনো উত্তেজনা কাজ করছে না জানিয়ে ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি আমীর জাফর বলেন, ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থান রয়েছে। ক্যাম্পে উত্তেজনা ছড়ানো কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সূত্র : জাগোনিউজ।