কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সেন্টমার্টিন

- প্রকাশের সময় : ০২:২৪:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪
- / ১৬৯ বার পঠিত
দেশের সঙ্গে সেন্টমার্টিনের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে কোনো নৌযান সেন্টমার্টিনে যেতে পারছে না। ওদিক থেকে কোনো নৌযান আসতেও পারছে না। নাফ নদীতে বাংলাদেশি নৌযান দেখলেই মিয়ানমার থেকে বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়ছে।
গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা ছয় দিন ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। এরই মধ্যে কেউ কেউ সাহস করে টেকনাফ ঘাট থেকে নৌযান ছেড়ে দেয় সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে। নাফ নদীর মাঝামাঝি অংশে (বাংলাদেশ সীমান্ত) নৌযান লক্ষ্য করে ওপার থেকে মুহুর্মুহু গুলি এসে পড়ছে পানিতে। এ অবস্থায় নৌযান আবার ঘুরিয়ে নিয়ে নিরাপদে ভিড়ছে টেকনাফ ঘাটে। এমন অবস্থায় সেন্টমার্টিনে বসবাস করা ১০ হাজারের মতো মানুষ খাদ্য ও নিত্যপণ্য নিয়ে সংকটে পড়েছেন। তাদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠাও কাজ করছে।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদী পেরিয়ে সাগরের ঘোলচর এলাকায় স্পিডবোটকে নৌযান নিয়ে ধাওয়া করে গুলি করেছে মিয়ানমারের সৈন্যরা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এর মধ্যে তিন দফা গুলির ঘটনা ঘটেছে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদীর মোহনার শেষে নাইক্ষ্যংছড়িয়া এলাকা অতিক্রম করার সময় মিয়ানমারের প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের বোটগুলো লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। গত ৫ জুন টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে ফেরার পথে নির্বাচন কর্মকর্তা ও ৮ জুন সেন্টমার্টিনে ইট-বালু ও খাদ্যসামগ্রী বহনকারী ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি বর্ষণ করা হয়েছিল।
উপকূলীয় জলসীমায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে কোস্ট গার্ড। বিষয়টি নিয়ে কোস্টগার্ড সদর দপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবগত করেছে। এ নিয়ে কোস্টগার্ড কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বিজিবির সেক্টর পর্যায়ে তথ্য আদান প্রদান করেছে। সার্বিক বিষয়টি মনিটরিং করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার উইংয়ের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির একটি বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘প্রথম যেদিন এই ঘটনা ঘটে, সেদিনই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। আজকের ঘটনার পর কূটনৈতিক চ্যানেলে আবারও প্রতিবাদ জানাব। তবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে না, সেটা তো আমরা বুঝতেই পারছি। ওই এলাকা এখন কাদের নিয়ন্ত্রণে সেটিও পরিষ্কার নয়। তবে আমাদের কূটনৈতিক তত্পরতা অব্যাহত আছে।’
টেকনাফ সংবাদদাতা জাহাঙ্গীর আলম জানান, গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে বঙ্গোপসাগরের ঘোলচর নামক স্থানে একটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে মিয়ানমারের দিক থেকে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলির ঘটনা ঘটে। ওই স্পিডবোটে চট্টগ্রাম থেকে চিকিৎসা নিয়ে একজন রোগীকে সেন্টমার্টিনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের পর স্পিডবোটটি কোনো রকম সেন্টমার্টিনে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
কারা এই গুলি করছে? মিয়ানমারের জান্তার সৈন্যরা, নাকি বিদ্রোহীরা? জানতে চাইলে স্পিডবোটটির মালিক সৈয়দ আলম বলেন, আগের গুলির ঘটনার পর গত পাঁচ দিন আমরা নদীতে যাইনি। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে স্পিডবোটটি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয়। আগে আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, কারা গুলি ছুড়ছে। কিন্তু আজকে যখন ছোট ছোট নৌযান নিয়ে আমাদের স্পিডবোটে গুলি করা হয়, তখন সেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাহাজ ছিল। ফলে আমরা ধারণা করছি জান্তার সৈন্যরাই এটা করছে।
ছয় দিন ধরে খাদ্য পণ্য সরবরাহ বন্ধ
বৃহস্পতিবার থেকে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সেখানে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। নিত্যদিনে ব্যবহার্য পণ্য যেমন, চাল, ডাল ও তেলের চরম সংকট চলছে। এ ব্যাপারে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ছয় দিন ধরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে কোনো ধরনের খাদ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে ১০ হাজার দ্বীপবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে স্পিডবোট-ট্রলারে গুলির ঘটনায় নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আপত্কালীন রুট হিসেবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমে জেটি ঘাট চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে নৌযানের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। দুই দিন আগে কক্সবাজারের ডিসি অফিসেও বৈঠক হয়েছে। আমরা নৌযান মালিকদের ডেকে বলেছি, বিকল্প রুট দিয়ে আপাতত খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে। সুত্র: ইত্তেফাক।