নিউইয়র্ক ০৯:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রধান উপদেষ্টার কাছে চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৩:৪০:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৬৫ বার পঠিত

সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র :: ধর্মনিরপেক্ষতাসহ তিন মূলনীতি বাদ, গণতন্ত্র বহাল রেখে নতুন চার মূলনীতির সুপারিশ :: সংসদের মেয়াদ চার বছর করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখার সুপারিশ :: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট চালুর সুপারিশ :: রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করা যাবে :: দুদক সংস্কারের ৪৭ সুপারিশ :: নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ১৫০ সুপারিশ, ইভিএম বাতিল ও ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে ফের নির্বাচন :: বিচারপ্রক্রিয়ার সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে অপরাধী হিসেবে কউকে উপস্থাপন করা যাবে না স্টাফ রিপোর্টার।

সংবিধানের বিভিন্ন বিষয়ের পরিবর্তন ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনাসহ বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে তৈরি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন চার সংস্কার কমিশনের প্রধানরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন যারা তারা হলেনÑ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফরাজ হোসেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এ আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সংবিধান সংস্কার প্রতিবেদনের সুপারিশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বহাল রেখে তিন মূল নীতিকে বাদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র বহাল রেখে নতুন চার মূলনীতি সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যমান সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি হচ্ছেÑ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাহাত্তরে যে সংবিধান প্রণীত হয় তাতে রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি গৃহীত হয়। প্রস্তাবিত মূল নীতিগুলো হচ্ছেÑ সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন স্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে এই পাঁচটি নীতি প্রস্তাব করা হয়েছে। তিন মূলনীতি বাদ দেয়ার বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ কমিশন সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন দাখিলের সময় সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রফেসর আলী রীয়াজ প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আমরা সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট চালুর সুপারিশ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুবারের সুপারিশ করা হয়েছে। সংসদের মেয়াদ চার বছরÑ একই সাথে প্রেসিডেন্টের মেয়াদও এখনকার পাঁচ বছরের বদলে চার বছর করার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সংসদের মেয়াদ চার বছর করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদের শূন্যতায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে গঠিত হবেÑ সেটির সাংবিধানিক রূপরেখাও প্রস্তাব করেছেন তারা। নির্বাহী বিভাগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল, প্রধানমন্ত্রী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিভিন্ন রূপরেখা প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন। এ কমিশনের সুপারিশ প্রস্তুত করতে গিয়ে প্রায় এক লাখ মানুষের মতামত নেয়ার কথা জানান আলী রীয়াজ। কমিশনের সদস্যদের পাশাপাশি ৩২ জন গবেষক এতে কাজ করেছেন।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়Ñ আইনসভার নি¤œকক্ষে যে সদস্যের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন আছে তিনি সরকার গঠন করবেন। নাগরিকতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা দ্বারা প্রয়োগ করা হবে। কমিশন সুপারিশ করেছে, একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংসদ ভেঙে দেয়ার উপায় হিসেবে বলা হয়Ñ আইনসভার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগে যদি কখনো প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা আস্থাভোটে হেরে যান কিংবা অন্য কোনো কারণে প্রেসিডেন্টকে আইনসভা ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে যদি প্রেসিডেন্টের কাছে এটি স্পষ্ট হয় যে, নি¤œকক্ষের অন্য কোনো সদস্য সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা সমর্থন অর্জন করতে পারছে না, তবেই রাষ্ট্রপতি আইনসভার উভয় কক্ষ ভেঙে দেবেন। প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের পদ্ধতি হিসেবে কমিশন সুপারিশ করেছেÑ রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করা যাবে। নি¤œকক্ষ অভিশংসন প্রস্তাবটি পাস করার পর তা উচ্চকক্ষে যাবে এবং সেখানে শুনানির মাধ্যমে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করাসহ সংস্থাটির সংস্কারে ৪৭ দফা সুপারিশ করেছে ‘দুদক সংস্কার কমিশন’। তিন সদস্যের এ কমিশনকে পাঁচ সদস্যের কমিশনে উন্নীত করতেও বলা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক বর্তমানে একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, তবে এটিকে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন। আমরা চাই দুদক স্বাধীন ও কার্যকর হোক। তবে, এই স্বাধীনতারও সীমা থাকতে হবে। আমরা সংস্কার সুপারিশ করেছি। তিনি উল্লেখ করেন, সংস্কার কমিশন দুদকের সদস্য সংখ্যা তিন থেকে পাঁচে বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। অতিরিক্তভাবে, দুদকের কাজের সাথে সম্পর্কিত বিচারিক ও আর্থিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। মহাপরিচালকের পদের সংখ্যা আট থেকে ১২ তে উন্নীত করে ১২টি অনুবিভাগ গঠনের সুপারিশ দেয়া হয়েছে। নতুন জনবল কাঠামো গঠন করতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় সচিব নিয়োগের বিধানের সুপারিশ করা হয়েছে। মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপ-পরিচালকের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পদের নিয়োগ প্রেষণে বদলির মাধ্যমে হতে পারে, মর্মে সুপারিশ করা হয়। কমিশন আইনের স্থায়ী ‘প্রসিকিউশন ইউনিট’ গঠনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। দুদকের সার্বিক কার্যক্রম বিশেষত অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, তদন্ত, গোপন অনুসন্ধান ও প্রসিকিউশন-সংক্রান্ত কার্যাদি অ্যান্ড টু অ্যান্ড অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে। দুদকের নিজস্ব প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন, আর্থিক, প্রশাসনিক ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। সব শ্রেণির কর্মকর্তাকে নিয়মিত বিরতিতে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটি বিলুপ্ত করে একটি স্বতন্ত্র অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা অনুবিভাগ গঠন করতে হবে। ৩ নম্বর সুপারিশে বলা হয়Ñ বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের যেকোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদককে আরো গতিশীল করার জন্য আমরা স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে ৪৭টি সুপারিশ প্রস্তাব করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নে ছয় মাস সময় লাগবে। মধ্যমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নে ১৮ মাস সময় লাগবে। দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়নে ৪৮ মাস সময় লাগবে।

এদিকে নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ১৫০ সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ ইভিএম বাতিল, কোনো নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে তা পুনরায় আয়োজন করা, না ভোটের ব্যবস্থা রাখা ইত্যাদি। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটি একটি গুরুদায়িত্ব। নির্বাচন ব্যবস্থা ‘ভেঙে’ গেছে, এটিকে জোড়া লাগানোর জন্য এই সংস্কার কমিশনের প্রচেষ্টা। কাজটি করতে গিয়ে তিনি উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ছিলেন এবং সামনের দিনে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হতে পারে তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা কতগুলো প্রস্তাব করেছিÑ যেগুলো পরিস্থিতিটাকে আরো উত্তপ্ত করতে সহায়তা করবে। একই সাথে সব অংশীজনের দায়বদ্ধতা যেন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচনটা যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, ভোটারের ভোট দেয়ার অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করেছি। ১৫০টির মতো ছোট-বড় সুপারিশ রয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর এই প্রচেষ্টার পেছনে অনুপ্রেরণার কথা তুলে ধরেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ১৮টি উল্লেখযোগ্য জায়গায় ১৫০টির মতো সুপারিশ করেছি। এ সুপারিশের অন্যতম লক্ষ্যÑ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। তাদের ক্ষমতায়িত করা। একই সাথে তাদের দায়বদ্ধ করা। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটের কথা উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিশেষত গত তিনটি নির্বাচনে যারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে নির্বাসনে ফেলে দিয়েছে। কর্মকর্তা শুধু নয়, আমাদের কমিশন সদস্যরা, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করার, বিশেষত ২০১৮ সালের মধ্যরাতে অভূতপূর্ব কা- ঘটেছে সে ব্যাপারে তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায়, দায়বদ্ধতার আওতায় আনা হবে বলে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। সংস্কার কাজকে এগিয়ে নিতে আরো কিছু আইনের খসড়া নিয়ে কাজ চলছেÑ বলেছেন কমিশন প্রধান।

অন্যদিকে পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে বলেছে, আটক কিংবা গ্রেফতার কাউকে বিচারপ্রক্রিয়ার সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, আটক বা গ্রেফতার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের সুপারিশমালায় বলা হয়েছেÑ আটক ব্যক্তি বা রিমান্ডে নেয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘোরাটোপ দেয়া একটি আলাদা কক্ষ করা যেতে পারে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে থানা হেফাজত ও কোর্ট হেফাজতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বন্দিদের কোর্ট থেকে আনা-নেয়ার সময় ব্যবহারকারী যানবাহনগুলোতে মানবিক সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। নারী আসামিকে যথেষ্ট শালীনতার সঙ্গে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া তল্লাশির সময় পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে অথবা সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলে জরুরি যোগাযোগের জন্য নাগরিক নিরাপত্তা বিধানে একটি জরুরি কল সার্ভিস চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে।

অভিযানের বিষয়ে বলা হয়েছে, অভিযান পরিচালনার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের কাছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ ভেস্ট/পোশাক পরিধান করতে হবে। রাতের বেলায় বাসাবাড়ি তল্লাশির ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি/স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সুপারিশমালায় আরো বলা হয়েছে, থানায় মামলা রুজু তথা এফআইআর গ্রহণ ও তদন্ত কঠোরভাবে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ সুপার কর্তৃক নিয়মিত তদারকি জারি রাখতে হবে। কেস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশ ছাড়া কোনোক্রমেই এফআইআর-বহির্ভূত আসামি গ্রেফতার করা যাবে না। ভুয়া/গায়েবি মামলায় অনিবাসী/মৃত/নিরপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য করার কথা বলা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামিদের নামে মামলা দেয়ার অপচর্চা পরিহার করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে এ ধরনের মামলায় হয়রানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

প্রধান উপদেষ্টার কাছে চার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন

প্রকাশের সময় : ০৩:৪০:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র :: ধর্মনিরপেক্ষতাসহ তিন মূলনীতি বাদ, গণতন্ত্র বহাল রেখে নতুন চার মূলনীতির সুপারিশ :: সংসদের মেয়াদ চার বছর করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখার সুপারিশ :: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট চালুর সুপারিশ :: রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করা যাবে :: দুদক সংস্কারের ৪৭ সুপারিশ :: নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ১৫০ সুপারিশ, ইভিএম বাতিল ও ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে ফের নির্বাচন :: বিচারপ্রক্রিয়ার সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে অপরাধী হিসেবে কউকে উপস্থাপন করা যাবে না স্টাফ রিপোর্টার।

সংবিধানের বিভিন্ন বিষয়ের পরিবর্তন ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনাসহ বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে তৈরি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন চার সংস্কার কমিশনের প্রধানরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন যারা তারা হলেনÑ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফরাজ হোসেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এ আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সংবিধান সংস্কার প্রতিবেদনের সুপারিশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বহাল রেখে তিন মূল নীতিকে বাদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র বহাল রেখে নতুন চার মূলনীতি সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যমান সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি হচ্ছেÑ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাহাত্তরে যে সংবিধান প্রণীত হয় তাতে রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি গৃহীত হয়। প্রস্তাবিত মূল নীতিগুলো হচ্ছেÑ সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন স্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে এই পাঁচটি নীতি প্রস্তাব করা হয়েছে। তিন মূলনীতি বাদ দেয়ার বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ কমিশন সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদ বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন দাখিলের সময় সংস্কার কমিশনের প্রধান প্রফেসর আলী রীয়াজ প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আমরা সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের সুপারিশ করেছি। এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট চালুর সুপারিশ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুবারের সুপারিশ করা হয়েছে। সংসদের মেয়াদ চার বছরÑ একই সাথে প্রেসিডেন্টের মেয়াদও এখনকার পাঁচ বছরের বদলে চার বছর করার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সংসদের মেয়াদ চার বছর করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদের শূন্যতায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে গঠিত হবেÑ সেটির সাংবিধানিক রূপরেখাও প্রস্তাব করেছেন তারা। নির্বাহী বিভাগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল, প্রধানমন্ত্রী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিভিন্ন রূপরেখা প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন। এ কমিশনের সুপারিশ প্রস্তুত করতে গিয়ে প্রায় এক লাখ মানুষের মতামত নেয়ার কথা জানান আলী রীয়াজ। কমিশনের সদস্যদের পাশাপাশি ৩২ জন গবেষক এতে কাজ করেছেন।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়Ñ আইনসভার নি¤œকক্ষে যে সদস্যের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন আছে তিনি সরকার গঠন করবেন। নাগরিকতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা দ্বারা প্রয়োগ করা হবে। কমিশন সুপারিশ করেছে, একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংসদ ভেঙে দেয়ার উপায় হিসেবে বলা হয়Ñ আইনসভার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগে যদি কখনো প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা আস্থাভোটে হেরে যান কিংবা অন্য কোনো কারণে প্রেসিডেন্টকে আইনসভা ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে যদি প্রেসিডেন্টের কাছে এটি স্পষ্ট হয় যে, নি¤œকক্ষের অন্য কোনো সদস্য সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা সমর্থন অর্জন করতে পারছে না, তবেই রাষ্ট্রপতি আইনসভার উভয় কক্ষ ভেঙে দেবেন। প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের পদ্ধতি হিসেবে কমিশন সুপারিশ করেছেÑ রাষ্ট্রদ্রোহ, গুরুতর অসদাচরণ বা সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করা যাবে। নি¤œকক্ষ অভিশংসন প্রস্তাবটি পাস করার পর তা উচ্চকক্ষে যাবে এবং সেখানে শুনানির মাধ্যমে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করাসহ সংস্থাটির সংস্কারে ৪৭ দফা সুপারিশ করেছে ‘দুদক সংস্কার কমিশন’। তিন সদস্যের এ কমিশনকে পাঁচ সদস্যের কমিশনে উন্নীত করতেও বলা হয়েছে। প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদক বর্তমানে একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, তবে এটিকে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন। আমরা চাই দুদক স্বাধীন ও কার্যকর হোক। তবে, এই স্বাধীনতারও সীমা থাকতে হবে। আমরা সংস্কার সুপারিশ করেছি। তিনি উল্লেখ করেন, সংস্কার কমিশন দুদকের সদস্য সংখ্যা তিন থেকে পাঁচে বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। অতিরিক্তভাবে, দুদকের কাজের সাথে সম্পর্কিত বিচারিক ও আর্থিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। মহাপরিচালকের পদের সংখ্যা আট থেকে ১২ তে উন্নীত করে ১২টি অনুবিভাগ গঠনের সুপারিশ দেয়া হয়েছে। নতুন জনবল কাঠামো গঠন করতে বলা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় সচিব নিয়োগের বিধানের সুপারিশ করা হয়েছে। মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপ-পরিচালকের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পদের নিয়োগ প্রেষণে বদলির মাধ্যমে হতে পারে, মর্মে সুপারিশ করা হয়। কমিশন আইনের স্থায়ী ‘প্রসিকিউশন ইউনিট’ গঠনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। দুদকের সার্বিক কার্যক্রম বিশেষত অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, তদন্ত, গোপন অনুসন্ধান ও প্রসিকিউশন-সংক্রান্ত কার্যাদি অ্যান্ড টু অ্যান্ড অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে। দুদকের নিজস্ব প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন, আর্থিক, প্রশাসনিক ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। সব শ্রেণির কর্মকর্তাকে নিয়মিত বিরতিতে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটি বিলুপ্ত করে একটি স্বতন্ত্র অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা অনুবিভাগ গঠন করতে হবে। ৩ নম্বর সুপারিশে বলা হয়Ñ বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের যেকোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদককে আরো গতিশীল করার জন্য আমরা স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে ৪৭টি সুপারিশ প্রস্তাব করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নে ছয় মাস সময় লাগবে। মধ্যমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নে ১৮ মাস সময় লাগবে। দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়নে ৪৮ মাস সময় লাগবে।

এদিকে নির্বাচন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ১৫০ সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ ইভিএম বাতিল, কোনো নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে তা পুনরায় আয়োজন করা, না ভোটের ব্যবস্থা রাখা ইত্যাদি। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটি একটি গুরুদায়িত্ব। নির্বাচন ব্যবস্থা ‘ভেঙে’ গেছে, এটিকে জোড়া লাগানোর জন্য এই সংস্কার কমিশনের প্রচেষ্টা। কাজটি করতে গিয়ে তিনি উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ছিলেন এবং সামনের দিনে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হতে পারে তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা কতগুলো প্রস্তাব করেছিÑ যেগুলো পরিস্থিতিটাকে আরো উত্তপ্ত করতে সহায়তা করবে। একই সাথে সব অংশীজনের দায়বদ্ধতা যেন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচনটা যেন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, ভোটারের ভোট দেয়ার অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করেছি। ১৫০টির মতো ছোট-বড় সুপারিশ রয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর এই প্রচেষ্টার পেছনে অনুপ্রেরণার কথা তুলে ধরেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ১৮টি উল্লেখযোগ্য জায়গায় ১৫০টির মতো সুপারিশ করেছি। এ সুপারিশের অন্যতম লক্ষ্যÑ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। তাদের ক্ষমতায়িত করা। একই সাথে তাদের দায়বদ্ধ করা। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটের কথা উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিশেষত গত তিনটি নির্বাচনে যারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে নির্বাসনে ফেলে দিয়েছে। কর্মকর্তা শুধু নয়, আমাদের কমিশন সদস্যরা, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করার, বিশেষত ২০১৮ সালের মধ্যরাতে অভূতপূর্ব কা- ঘটেছে সে ব্যাপারে তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায়, দায়বদ্ধতার আওতায় আনা হবে বলে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। সংস্কার কাজকে এগিয়ে নিতে আরো কিছু আইনের খসড়া নিয়ে কাজ চলছেÑ বলেছেন কমিশন প্রধান।

অন্যদিকে পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে বলেছে, আটক কিংবা গ্রেফতার কাউকে বিচারপ্রক্রিয়ার সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত মিডিয়ার সামনে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, আটক বা গ্রেফতার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের সুপারিশমালায় বলা হয়েছেÑ আটক ব্যক্তি বা রিমান্ডে নেয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিটি থানায় স্বচ্ছ কাচের ঘোরাটোপ দেয়া একটি আলাদা কক্ষ করা যেতে পারে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে থানা হেফাজত ও কোর্ট হেফাজতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং বন্দিদের কোর্ট থেকে আনা-নেয়ার সময় ব্যবহারকারী যানবাহনগুলোতে মানবিক সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। নারী আসামিকে যথেষ্ট শালীনতার সঙ্গে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া তল্লাশির সময় পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতে অস্বীকার করলে অথবা সার্চ ওয়ারেন্ট না থাকলে জরুরি যোগাযোগের জন্য নাগরিক নিরাপত্তা বিধানে একটি জরুরি কল সার্ভিস চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে।

অভিযানের বিষয়ে বলা হয়েছে, অভিযান পরিচালনার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের কাছে জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিং ডিভাইসসহ ভেস্ট/পোশাক পরিধান করতে হবে। রাতের বেলায় বাসাবাড়ি তল্লাশির ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট/স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি/স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সুপারিশমালায় আরো বলা হয়েছে, থানায় মামলা রুজু তথা এফআইআর গ্রহণ ও তদন্ত কঠোরভাবে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ সুপার কর্তৃক নিয়মিত তদারকি জারি রাখতে হবে। কেস ডায়েরি আদালতে দাখিল করে আদালতের আদেশ ছাড়া কোনোক্রমেই এফআইআর-বহির্ভূত আসামি গ্রেফতার করা যাবে না। ভুয়া/গায়েবি মামলায় অনিবাসী/মৃত/নিরপরাধ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য করার কথা বলা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামিদের নামে মামলা দেয়ার অপচর্চা পরিহার করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাউকে এ ধরনের মামলায় হয়রানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব।