নিউইয়র্ক ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সাধারণ মানুষ বলছেন, এসবই ফাঁকা আওয়াজ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:২০:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ১১০ বার পঠিত

বাজার তদারকি, অভিযান, মোবাইল কোর্টে জরিমানা করেও চালের দাম আগের জায়গায় আনা যাচ্ছে না। সরকার থেকে বলা হয়েছে মিনিকেট নামে কোনো চাল বাজারজাত করা যাবে না। প্রতিটি চালের বস্তায় ধানের জাত লেখা থাকবে। লেখা থাকবে উৎপাদনের তারিখ ও মিলগেটের মূল্য। সরকারের এত সব উদ্যোগের কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। মিনিকেট নামের চাল বাজারে এখনও বিক্রি হচ্ছে। বিগত ১ মাসের বিভিন্ন সময় চালের উচ্চমূল্য ঠেকাতে খাদ্যমন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা উল্লিখিত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, এসব ফাঁকা আওয়াজ। তাদের মতে, খাদ্য বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টার অভাব এবং প্রভাবশালীদের আশকারায় ভরা মৌসুমেও ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়ানোর সাহস পেয়েছেন। খাদ্য বিভাগ চাইলে এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, চালের দাম আগের চেয়ে কমেছে। বস্তার ওপর ধানের জাত, উৎপাদনের তারিখ এবং মিলগেটে মূল্য লেখার কথা আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি। কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ২০-২২ মার্চের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানান তিনি।

প্রজ্ঞাপনে কি থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে কাজ করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তখন আর কেউ বস্তার ওপর ধানের জাত, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ এবং মিলগেটের মূল্য না লিখে পারবেন না। ১৭ জানুয়ারি বুধবার সন্ধায় খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দিন থেকেই চালের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকের আয়োজন করে খাদ্য অধিদপ্তর।

ওই দিন খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমন মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এটা আমার কথা নয় বরং এটা পাইকারি ব্যবসায়ী, মিল মালিক এবং চাল ব্যবসায়ীদের কথা। চালের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। আমরা চালের দাম বৃদ্ধি কোনো ভাবেই মানব না। ৪ দিন সময় দিলাম, চালের দাম আগের জায়গায় নিয়ে আসেন।

এর পরদিন অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় বাজার তদারকি টিম নামানো হয়। ঢাকার বাইরে শুরু হয় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা। ঢাকায় শুধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হলেও জেলায় জেলায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যম অবৈধ মজুত চিহ্নিত করে জরিমানা এবং বাজেয়াপ্ত করা হয় ।

ওই সময় রাজশাহী, কুষ্টিয়া এবং সিলেটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী, সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। বৈঠকগুলোতে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মিনিকেট নামে ধান নেই। সুতরাং এ নামে কোনো চালও বাজারজাত করা যাবে না। বস্তার ওপর ধানের জাত লিখতে হবে। উৎপাদনের তারিখ ও মিলগেটের মূল্য অবশ্যই লেখা থাকতে হবে।

কিন্তু প্রায় ১ মাস অতিবাহিত হলেও সেই নির্দেশ, আদেশ কিংবা পরামর্শ কেউ আমলে নেননি। ৪ দিনের মধ্যে চালের দাম আগের জায়গায় আনার কথা থাকলেও আনেননি। বলা হচ্ছে আগে বেশি দামে কেনা চাল কম দামে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা লোকসান দেবে নাকি। কিন্তু কত পরিমাণ চাল ব্যবসায়ীরা ক্রয় করলেন যা বিক্রি হচ্ছেই না, সে কথা কিন্তু বলা হচ্ছে না।

শুক্রবার রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় মোল্লা ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা গেছে ৬৮ থেকে ৭৮ টাকা দরে বিভিন্ন জাতের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে। মোটা ব্রি-২৮ জাতের চাল প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বস্তার ওপর মিনিকেট লেখা শত শত বস্তা চাল রয়েছে। এছাড়া বস্তার ওপর উৎপাদনের তারিখ, ধানের জাত এবং মূল্য উল্লেখ নেই। জানতে চাইলে মালিক সেলিম মোল্লা বলেন, আগে যেভাবে চালের বস্তা দেওয়া হতো এখনও ঠিক সেভাবেই দেওয়া হচ্ছে।

কোনো চালের বস্তায় মিনিকেট লেখা যাবে না টিভির খবরে দেখেছি। এখনও মোকাম থেকে তেমন কোনো বস্তা আমরা পাইনি। সরকার যখন বস্তার ওপর ধানের জাত, উৎপাদনের তারিখ এবং মিলগেটের মূল্য লিখে দেবে, তখন আমরাও ওই ধরনের বস্তায় চাল পাব। এখন তো সেই রকম কিছু দেখছি না।

দক্ষিণ বনশ্রী বাজারে খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আমরা যখন যে দামে ক্রয় করি তখন সে দামে বিক্রি করি। পাইকারি দোকানের স্লিপ রাখেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান রাখি। তবে বিক্রির কোনো রেকর্ড তারা রাখেন না। ফলে তাদের কেনার রেকর্ড থাকলেও কত টাকা বিক্রি করছে তা অজানা থেকে যাচ্ছে। তারা বলছেন, চালের ব্যবসায় এখন আর লাভ নেই। তারা কেজিতে মোটা চালে ২ এবং সরু চালে ৩-৪ টাকা লাভ করেন।

ভ্যানচালক মো. ফজলু মিয়া বলেন, চালের দাম স্বর্ণের চেয়েও বেশি। তিনি বলেন, খাওয়ার জন্য প্রতিদিন চাল কিনতে হয়। আগের চেয়ে চালের দাম কমছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ফজলু বলেন, প্রথম কয়েক দিন ১-২ টাকা কমছিল। এখন আবার আগের মতোই রাখছেন দোকানিরা।

রং মিস্ত্রি কালাম বলেন, এখন চাল আর আলুর মূল্য সমান। সরকার বলছে, চালের দাম কমবে। কিন্তু কোথায় যে কম সেই জায়গা তো খুঁজে পাই না। চালের বস্তায় তো দাম লেখা থাকে না। তিনি বলেন সবই ফাঁকা বুলি। কোথাও দাম লেখা নেই। আর এগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে দোকানিরা মারতে আসে। সোজা বলে দেয়, তোর কাছে চাল বিক্রি করুম না। সূত্র : যুগান্তর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

সাধারণ মানুষ বলছেন, এসবই ফাঁকা আওয়াজ

প্রকাশের সময় : ০৪:২০:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বাজার তদারকি, অভিযান, মোবাইল কোর্টে জরিমানা করেও চালের দাম আগের জায়গায় আনা যাচ্ছে না। সরকার থেকে বলা হয়েছে মিনিকেট নামে কোনো চাল বাজারজাত করা যাবে না। প্রতিটি চালের বস্তায় ধানের জাত লেখা থাকবে। লেখা থাকবে উৎপাদনের তারিখ ও মিলগেটের মূল্য। সরকারের এত সব উদ্যোগের কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। মিনিকেট নামের চাল বাজারে এখনও বিক্রি হচ্ছে। বিগত ১ মাসের বিভিন্ন সময় চালের উচ্চমূল্য ঠেকাতে খাদ্যমন্ত্রী ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা উল্লিখিত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, এসব ফাঁকা আওয়াজ। তাদের মতে, খাদ্য বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টার অভাব এবং প্রভাবশালীদের আশকারায় ভরা মৌসুমেও ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়ানোর সাহস পেয়েছেন। খাদ্য বিভাগ চাইলে এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, চালের দাম আগের চেয়ে কমেছে। বস্তার ওপর ধানের জাত, উৎপাদনের তারিখ এবং মিলগেটে মূল্য লেখার কথা আমরা ব্যবসায়ীদের বলেছি। কিন্তু এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ২০-২২ মার্চের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানান তিনি।

প্রজ্ঞাপনে কি থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে কাজ করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তখন আর কেউ বস্তার ওপর ধানের জাত, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ এবং মিলগেটের মূল্য না লিখে পারবেন না। ১৭ জানুয়ারি বুধবার সন্ধায় খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দিন থেকেই চালের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বৈঠকের আয়োজন করে খাদ্য অধিদপ্তর।

ওই দিন খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমন মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এটা আমার কথা নয় বরং এটা পাইকারি ব্যবসায়ী, মিল মালিক এবং চাল ব্যবসায়ীদের কথা। চালের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। আমরা চালের দাম বৃদ্ধি কোনো ভাবেই মানব না। ৪ দিন সময় দিলাম, চালের দাম আগের জায়গায় নিয়ে আসেন।

এর পরদিন অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় বাজার তদারকি টিম নামানো হয়। ঢাকার বাইরে শুরু হয় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা। ঢাকায় শুধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হলেও জেলায় জেলায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যম অবৈধ মজুত চিহ্নিত করে জরিমানা এবং বাজেয়াপ্ত করা হয় ।

ওই সময় রাজশাহী, কুষ্টিয়া এবং সিলেটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী, সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। বৈঠকগুলোতে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মিনিকেট নামে ধান নেই। সুতরাং এ নামে কোনো চালও বাজারজাত করা যাবে না। বস্তার ওপর ধানের জাত লিখতে হবে। উৎপাদনের তারিখ ও মিলগেটের মূল্য অবশ্যই লেখা থাকতে হবে।

কিন্তু প্রায় ১ মাস অতিবাহিত হলেও সেই নির্দেশ, আদেশ কিংবা পরামর্শ কেউ আমলে নেননি। ৪ দিনের মধ্যে চালের দাম আগের জায়গায় আনার কথা থাকলেও আনেননি। বলা হচ্ছে আগে বেশি দামে কেনা চাল কম দামে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা লোকসান দেবে নাকি। কিন্তু কত পরিমাণ চাল ব্যবসায়ীরা ক্রয় করলেন যা বিক্রি হচ্ছেই না, সে কথা কিন্তু বলা হচ্ছে না।

শুক্রবার রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় মোল্লা ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা গেছে ৬৮ থেকে ৭৮ টাকা দরে বিভিন্ন জাতের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে। মোটা ব্রি-২৮ জাতের চাল প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বস্তার ওপর মিনিকেট লেখা শত শত বস্তা চাল রয়েছে। এছাড়া বস্তার ওপর উৎপাদনের তারিখ, ধানের জাত এবং মূল্য উল্লেখ নেই। জানতে চাইলে মালিক সেলিম মোল্লা বলেন, আগে যেভাবে চালের বস্তা দেওয়া হতো এখনও ঠিক সেভাবেই দেওয়া হচ্ছে।

কোনো চালের বস্তায় মিনিকেট লেখা যাবে না টিভির খবরে দেখেছি। এখনও মোকাম থেকে তেমন কোনো বস্তা আমরা পাইনি। সরকার যখন বস্তার ওপর ধানের জাত, উৎপাদনের তারিখ এবং মিলগেটের মূল্য লিখে দেবে, তখন আমরাও ওই ধরনের বস্তায় চাল পাব। এখন তো সেই রকম কিছু দেখছি না।

দক্ষিণ বনশ্রী বাজারে খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আমরা যখন যে দামে ক্রয় করি তখন সে দামে বিক্রি করি। পাইকারি দোকানের স্লিপ রাখেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান রাখি। তবে বিক্রির কোনো রেকর্ড তারা রাখেন না। ফলে তাদের কেনার রেকর্ড থাকলেও কত টাকা বিক্রি করছে তা অজানা থেকে যাচ্ছে। তারা বলছেন, চালের ব্যবসায় এখন আর লাভ নেই। তারা কেজিতে মোটা চালে ২ এবং সরু চালে ৩-৪ টাকা লাভ করেন।

ভ্যানচালক মো. ফজলু মিয়া বলেন, চালের দাম স্বর্ণের চেয়েও বেশি। তিনি বলেন, খাওয়ার জন্য প্রতিদিন চাল কিনতে হয়। আগের চেয়ে চালের দাম কমছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ফজলু বলেন, প্রথম কয়েক দিন ১-২ টাকা কমছিল। এখন আবার আগের মতোই রাখছেন দোকানিরা।

রং মিস্ত্রি কালাম বলেন, এখন চাল আর আলুর মূল্য সমান। সরকার বলছে, চালের দাম কমবে। কিন্তু কোথায় যে কম সেই জায়গা তো খুঁজে পাই না। চালের বস্তায় তো দাম লেখা থাকে না। তিনি বলেন সবই ফাঁকা বুলি। কোথাও দাম লেখা নেই। আর এগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে দোকানিরা মারতে আসে। সোজা বলে দেয়, তোর কাছে চাল বিক্রি করুম না। সূত্র : যুগান্তর।