নিউইয়র্ক ০১:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানো উচিত’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪৮ বার পঠিত

আইএমএফের কাছে বিদ্যুৎখাতের ভর্তুকি কমাতে দাম সমন্বয় ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়নের সময় ক্যাপাসিটি চার্জ অন্তর্ভুক্ত না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। মার্চেই বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম। তবে দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ফ্যাকাল্টি অব কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন এবং পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই অধ্যাপক দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে উৎপাদন খরচ কমানোর একটা চেষ্টা করা উচিত।’ দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি।

ম তামিম বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম নিয়ে আমাদের সবারই একটা চিন্তা আছে। বর্তমান ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ প্রায় ১১ টাকা বা সাড়ে ১১ টাকার মতো হয়েছে। বর্তমানে তা সাড়ে ৭ টাকা বা ৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎখাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সরকারের জন্য খুবই কঠিন একটা অবস্থা।’

‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে বারবার দাম বাড়িয়ে এই ভর্তুকি যদি কমানো যায়। বর্তমানে দুটি প্রধান সমস্যা আছে। বিদ্যুৎখাতে বিরাট বড় দেনা (ঋণ) হয়ে আছে সরকার। সব মিলিয়ে সরকারের দেনা প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের মতো। এ দেনা মূলত ডলারের অভাবে। টাকার অভাবেও কিছুটা আছে। এখন রেভিনিউ বাড়িয়ে ডলার কিছুটা বাড়াতে পারবো। কথা হচ্ছে ভোক্তা পর্যায়ের দাম বাড়ালে আমাদের খুব চিন্তা-ভাবনা করে এটি করতে হবে। বিদ্যুৎ এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান যেমন একটা অধিকার, তেমনি বিদ্যুৎ একটা অধিকারের পর্যায়ে চলে গেছে। বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবনযাপন করা সম্ভব নয়।’

এই অধ্যাপক বলেন, ‘এসব পরিপ্রেক্ষিতে বলি, বিদ্যুতের দাম যদি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখন যারা সৎ জীবনযাপন করতে চায় তারা বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়ে খরচটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করবে। অন্যদিকে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ চুরি বাড়বে। এতে বৈধ চাহিদা কমে যাবে এবং অবৈধ চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন দেখা যাবে সরকার রেভিনিউ পাবে না। এসব চিন্তা করে আমি মনে করি কস্ট (মূল্য) কমানোর অপশনটা বেশি করে চিন্তা করা উচিত। দাম না বাড়িয়ে কস্ট কমিয়ে ভর্তুকিটা কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সেটি ভাবতে হবে।’

বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, ‘বিদ্যুতের কস্ট (দাম) কমানোর বেশ কিছু ব্যাপার আছে। আমরা অতীতে দেখেছি ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ সারাক্ষণ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকে। এখানে সর্বনিম্ন দুই হাজার মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হবে। আমাদের প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা আছে। সেটা যদি আমরা ২৪ ঘণ্টা চালাতে পারি তাহলে উৎপাদন খরচ আরও অনেক কমে আসবে।’

‘তারপরে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমি যদি সার্বক্ষণিক চালাতে পারি আবার কিছু ইন্টারমিডিয়েট লোড যেটাকে আমরা বলি ১২ বা ১৪ ঘণ্টা চালাতে পারি। সর্বোচ্চ পিকলোডে গিয়ে আমি কিছু তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারি। এই কম্বিনেশন করে এবং সর্বনিম্ন বিদ্যুৎকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে দাম কমিয়ে আনতে পারি। আগে বিইআরসির শুনানির মাধ্যমে আমরা এগুলো দেখতে পারতাম। বিদ্যুৎ কোম্পানির উৎপাদন দক্ষতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারতাম এবং সেগুলো আমরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারতাম।’

‘খরচ না কমিয়ে ভোক্তাদের ওপর মূল্য চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আগে আমাদের খরচ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। ইভিনিংয়ে আমাদের যে পিক লোড হয় সেটি যদি আমরা শিফট করতে পারি, সেই উচ্চ চাহিদাকে যদি আমরা কমিয়ে আনতে পারি তাহলে উৎপাদন খরচ কমে আসবে।’

বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ আমাদের দরকার। কারণ এটা আমাদের রেগুলার স্টাডিতে আসছে। অন্তত ১১শ ৬০ মেগাওয়াট আমরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিনে আনছি সেটার মূল্য এখন সবচেয়ে কম। আদানির থেকে আমরা যে বিদ্যুৎ আনছি সেটা সরকার একটি চুক্তি করেছে ওয়ান টু ওয়ান। সেই বিদ্যুতের মূল্য মোটামুটি রামপাল বা মাতারবাড়িতে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের চেয়ে কম। এজন্য সেটাকে নিজস্ব একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বলা যেতে পারে।’

‘আমি জানি না এই মুহূর্তে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম কেন ১৩-১৪ টাকা বলা হচ্ছে। কয়লার মূল্য অনেক কমে এসেছে, ৮০ ডলারের নিচে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফুয়েল কস্ট ৬-৭ টাকা হতে পারে। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আট-দশ টাকা হতে পারে। কেন এটা বেশি দেখানো হচ্ছে আমার জানা নেই।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারের সঙ্গে যে সম্পর্ক করে বাংলাদেশে দাম নির্ধারণ করা হয় সেটা বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের যে মার্কেট স্ট্রাকচার তাতে ফর্মুলার মাধ্যমে এটার বাস্তবায়ন করতে গেলে রিফ্লেকশন তো অন্য জায়গায় পড়তে হবে। যারা তেল কিনে গাড়িতে ব্যবহার করছেন এটা বিদ্যুতের মতো। বিদ্যুতের দাম যদি বেশি হয় তাহলে সরাসরি ভোক্তার কাছ থেকে বেশি টাকা যাচ্ছে। আবার দাম কমলে ভোক্তা কম টাকা দিচ্ছে এবং সেই সুবিধাটা পাচ্ছে।’

‘গাড়ির তেলের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার, দাম বেশি হলে ভোক্তারা বেশি দাম দিচ্ছেন আবার দাম কম হলে কম দাম দিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আমদানি হয় ডিজেল। আমরা ৬০ থেকে ৭০ লাখ টন তেল আমদানি করি, এর ৪৫ লাখ টন ডিজেল। অর্থাৎ আমাদের তেল আমদানির সর্বোচ্চ জায়গাটা হলো ডিজেল। এই ডিজেলের ৬৫ শতাংশ ব্যবহার হয় পরিবহন খাতে। মালামাল ও যাত্রী পরিবহন- এ দুটো মিলিয়ে। ডিজেলের দাম যদি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বেড়ে যায় তাহলে আমরা দেখি যে পরিবহন খরচটা বেড়ে যায়। পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু যদি কমে যায় তাহলে তাদের কমানোর কোনো লক্ষণ নেই। এটি কমানোর ক্ষমতা সরকারের নেই।’

‘দাম কমলে ট্রাকভাড়া কমবে, যাত্রীভাড়া কমবে বা পরিবহন খরচ কমবে সেটি কমাতে দেখা যায় না। তাহলে আমরা যে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের মূল্যের ওঠানামার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি তাতে জনগণের কী লাভ হবে। ২০২২ সালের আগস্টে যখন হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো, সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির ঘটনা ঘটলো। পরিবহন ব্যয় বাড়ায় সবকিছুর দাম বেড়ে গেলো। যদি সত্যিকার অর্থে দাম ২ টাকা বেড়ে থাকে তাহলে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এটি আমরা অতীতেও দেখেছি তেলের দাম সামান্য বেড়ে গেলে জিনিসের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এজন্য তেলের দামট খুব সতর্কতার সঙ্গে আমাদের দেখতে হবে।’

এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এখন উল্টো দিকে যদি বলি ডিজেলের দাম ২০ টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়, তবে কি ট্রাকভাড়া, বাসভাড়া কমবে? যদি না কমে তাহলে ২০ টাকার যে অতিরিক্ত লাভ সেটি কার পকেটে যাচ্ছে। সেটা তো মালিকদের পকেটে যাবে। তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের দাম ওঠানামা করে কী লাভ হবে যদি ভোক্তারা তার সুবিধাটা করতে না পারে।’

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় এই দাম ব্যবস্থা জনগণের কতটা উপকারে আসবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দাম ঠিক করার অনেক রকমের পদ্ধতি আছে, সেটা করা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু এটা কার্যকরের পর পরিবহন খাতে যে অটো রিফ্লেকশন সেটা যদি কার্যকর না হয় বা অটো ফেয়ার কন্ট্রোল যদি না হয়! যেমন ৫ টাকা দাম কমলে এত টাকা ভাড়া কমবে। ভাড়া কমার ম্যাকানিজমটা যদি বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে এটা করে লাভ নেই। তার চেয়ে বরং অতিরিক্ত যে লাভ হচ্ছে, সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে সেটিই ভালো। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ীর হাতে টাকা না গিয়ে সরকারের রাজস্ব খাতে টাকা যাওয়াই ভালো।’ সূত্র : জাগো নিউজ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

‘বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানো উচিত’

প্রকাশের সময় : ০৪:০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আইএমএফের কাছে বিদ্যুৎখাতের ভর্তুকি কমাতে দাম সমন্বয় ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়নের সময় ক্যাপাসিটি চার্জ অন্তর্ভুক্ত না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। মার্চেই বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম। তবে দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ফ্যাকাল্টি অব কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন এবং পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই অধ্যাপক দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে উৎপাদন খরচ কমানোর একটা চেষ্টা করা উচিত।’ দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি।

ম তামিম বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম নিয়ে আমাদের সবারই একটা চিন্তা আছে। বর্তমান ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ প্রায় ১১ টাকা বা সাড়ে ১১ টাকার মতো হয়েছে। বর্তমানে তা সাড়ে ৭ টাকা বা ৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎখাতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সরকারের জন্য খুবই কঠিন একটা অবস্থা।’

‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে বারবার দাম বাড়িয়ে এই ভর্তুকি যদি কমানো যায়। বর্তমানে দুটি প্রধান সমস্যা আছে। বিদ্যুৎখাতে বিরাট বড় দেনা (ঋণ) হয়ে আছে সরকার। সব মিলিয়ে সরকারের দেনা প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের মতো। এ দেনা মূলত ডলারের অভাবে। টাকার অভাবেও কিছুটা আছে। এখন রেভিনিউ বাড়িয়ে ডলার কিছুটা বাড়াতে পারবো। কথা হচ্ছে ভোক্তা পর্যায়ের দাম বাড়ালে আমাদের খুব চিন্তা-ভাবনা করে এটি করতে হবে। বিদ্যুৎ এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান যেমন একটা অধিকার, তেমনি বিদ্যুৎ একটা অধিকারের পর্যায়ে চলে গেছে। বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবনযাপন করা সম্ভব নয়।’

এই অধ্যাপক বলেন, ‘এসব পরিপ্রেক্ষিতে বলি, বিদ্যুতের দাম যদি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখন যারা সৎ জীবনযাপন করতে চায় তারা বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়ে খরচটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করবে। অন্যদিকে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ চুরি বাড়বে। এতে বৈধ চাহিদা কমে যাবে এবং অবৈধ চাহিদা বেড়ে যাবে। তখন দেখা যাবে সরকার রেভিনিউ পাবে না। এসব চিন্তা করে আমি মনে করি কস্ট (মূল্য) কমানোর অপশনটা বেশি করে চিন্তা করা উচিত। দাম না বাড়িয়ে কস্ট কমিয়ে ভর্তুকিটা কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সেটি ভাবতে হবে।’

বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, ‘বিদ্যুতের কস্ট (দাম) কমানোর বেশ কিছু ব্যাপার আছে। আমরা অতীতে দেখেছি ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ সারাক্ষণ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকে। এখানে সর্বনিম্ন দুই হাজার মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হবে। আমাদের প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা আছে। সেটা যদি আমরা ২৪ ঘণ্টা চালাতে পারি তাহলে উৎপাদন খরচ আরও অনেক কমে আসবে।’

‘তারপরে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমি যদি সার্বক্ষণিক চালাতে পারি আবার কিছু ইন্টারমিডিয়েট লোড যেটাকে আমরা বলি ১২ বা ১৪ ঘণ্টা চালাতে পারি। সর্বোচ্চ পিকলোডে গিয়ে আমি কিছু তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারি। এই কম্বিনেশন করে এবং সর্বনিম্ন বিদ্যুৎকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে দাম কমিয়ে আনতে পারি। আগে বিইআরসির শুনানির মাধ্যমে আমরা এগুলো দেখতে পারতাম। বিদ্যুৎ কোম্পানির উৎপাদন দক্ষতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারতাম এবং সেগুলো আমরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারতাম।’

‘খরচ না কমিয়ে ভোক্তাদের ওপর মূল্য চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আগে আমাদের খরচ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। ইভিনিংয়ে আমাদের যে পিক লোড হয় সেটি যদি আমরা শিফট করতে পারি, সেই উচ্চ চাহিদাকে যদি আমরা কমিয়ে আনতে পারি তাহলে উৎপাদন খরচ কমে আসবে।’

বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ আমাদের দরকার। কারণ এটা আমাদের রেগুলার স্টাডিতে আসছে। অন্তত ১১শ ৬০ মেগাওয়াট আমরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিনে আনছি সেটার মূল্য এখন সবচেয়ে কম। আদানির থেকে আমরা যে বিদ্যুৎ আনছি সেটা সরকার একটি চুক্তি করেছে ওয়ান টু ওয়ান। সেই বিদ্যুতের মূল্য মোটামুটি রামপাল বা মাতারবাড়িতে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের চেয়ে কম। এজন্য সেটাকে নিজস্ব একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বলা যেতে পারে।’

‘আমি জানি না এই মুহূর্তে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম কেন ১৩-১৪ টাকা বলা হচ্ছে। কয়লার মূল্য অনেক কমে এসেছে, ৮০ ডলারের নিচে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফুয়েল কস্ট ৬-৭ টাকা হতে পারে। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আট-দশ টাকা হতে পারে। কেন এটা বেশি দেখানো হচ্ছে আমার জানা নেই।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারের সঙ্গে যে সম্পর্ক করে বাংলাদেশে দাম নির্ধারণ করা হয় সেটা বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের যে মার্কেট স্ট্রাকচার তাতে ফর্মুলার মাধ্যমে এটার বাস্তবায়ন করতে গেলে রিফ্লেকশন তো অন্য জায়গায় পড়তে হবে। যারা তেল কিনে গাড়িতে ব্যবহার করছেন এটা বিদ্যুতের মতো। বিদ্যুতের দাম যদি বেশি হয় তাহলে সরাসরি ভোক্তার কাছ থেকে বেশি টাকা যাচ্ছে। আবার দাম কমলে ভোক্তা কম টাকা দিচ্ছে এবং সেই সুবিধাটা পাচ্ছে।’

‘গাড়ির তেলের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার, দাম বেশি হলে ভোক্তারা বেশি দাম দিচ্ছেন আবার দাম কম হলে কম দাম দিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আমদানি হয় ডিজেল। আমরা ৬০ থেকে ৭০ লাখ টন তেল আমদানি করি, এর ৪৫ লাখ টন ডিজেল। অর্থাৎ আমাদের তেল আমদানির সর্বোচ্চ জায়গাটা হলো ডিজেল। এই ডিজেলের ৬৫ শতাংশ ব্যবহার হয় পরিবহন খাতে। মালামাল ও যাত্রী পরিবহন- এ দুটো মিলিয়ে। ডিজেলের দাম যদি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বেড়ে যায় তাহলে আমরা দেখি যে পরিবহন খরচটা বেড়ে যায়। পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু যদি কমে যায় তাহলে তাদের কমানোর কোনো লক্ষণ নেই। এটি কমানোর ক্ষমতা সরকারের নেই।’

‘দাম কমলে ট্রাকভাড়া কমবে, যাত্রীভাড়া কমবে বা পরিবহন খরচ কমবে সেটি কমাতে দেখা যায় না। তাহলে আমরা যে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের মূল্যের ওঠানামার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি তাতে জনগণের কী লাভ হবে। ২০২২ সালের আগস্টে যখন হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো, সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির ঘটনা ঘটলো। পরিবহন ব্যয় বাড়ায় সবকিছুর দাম বেড়ে গেলো। যদি সত্যিকার অর্থে দাম ২ টাকা বেড়ে থাকে তাহলে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এটি আমরা অতীতেও দেখেছি তেলের দাম সামান্য বেড়ে গেলে জিনিসের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এজন্য তেলের দামট খুব সতর্কতার সঙ্গে আমাদের দেখতে হবে।’

এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এখন উল্টো দিকে যদি বলি ডিজেলের দাম ২০ টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়, তবে কি ট্রাকভাড়া, বাসভাড়া কমবে? যদি না কমে তাহলে ২০ টাকার যে অতিরিক্ত লাভ সেটি কার পকেটে যাচ্ছে। সেটা তো মালিকদের পকেটে যাবে। তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের দাম ওঠানামা করে কী লাভ হবে যদি ভোক্তারা তার সুবিধাটা করতে না পারে।’

জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় এই দাম ব্যবস্থা জনগণের কতটা উপকারে আসবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দাম ঠিক করার অনেক রকমের পদ্ধতি আছে, সেটা করা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু এটা কার্যকরের পর পরিবহন খাতে যে অটো রিফ্লেকশন সেটা যদি কার্যকর না হয় বা অটো ফেয়ার কন্ট্রোল যদি না হয়! যেমন ৫ টাকা দাম কমলে এত টাকা ভাড়া কমবে। ভাড়া কমার ম্যাকানিজমটা যদি বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে এটা করে লাভ নেই। তার চেয়ে বরং অতিরিক্ত যে লাভ হচ্ছে, সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে সেটিই ভালো। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ীর হাতে টাকা না গিয়ে সরকারের রাজস্ব খাতে টাকা যাওয়াই ভালো।’ সূত্র : জাগো নিউজ।