নিউইয়র্ক ০৬:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

শস্যচিত্রে শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৪২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৫৭ বার পঠিত

গাজীপুরের শ্রীপুরে ফসলি মাঠে ধানগাছ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। উপজেলার টেংরা বাজার পাড় হলেই বেকাসাহারা গ্রামে মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়কের দক্ষিণ পাশের বিস্তীর্ণ ধানখেতে সবুজ ও বেগুনি রঙের ধানগাছ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা শহীদ আবু সাঈদের অবয়ব চিত্র দেখে অনেকে থমকে যান। সড়ক থেকে বিস্তীর্ণ মাঠে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ ধানের জমিতে যেন দুই হাত প্রসারিত করে বিভিন্ন দাবি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুকে বুলেট পেতে নেওয়ার দৃশ্য দেখতে পেয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা।

শস্যচিত্রটি বানিয়েছেন মো. এনামুল হক (৪১)। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেকাসাহারা গ্রামের বাসিন্দা। কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল একই গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে। এর আগে, গত বছর একই জমিতে শস্যচিত্রে ‘জাতীয় পতাকা’ ও ২০২২ সালে ‘মা’ শব্দটি ফুটিয়ে তোলায় তিনি বেশ আলোচনায় আসেন। এনামুলের বাবা মারা গেছেন। মা জোহরা বেগম (৬৫) ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসার। তার শস্যচিত্র দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন, প্রশংসাও করছেন কেউ কেউ।

শস্যচিত্রের নির্মাতা এনামুল হক বলেন, ২০২১ সালে প্রথম তার এক বিঘা জমিতে বেগুনি ধান রোপণ করেন। পরের বছর মাকে ভালোবেসে ব্যতিক্রম কিছু করার পরিকল্পনা করেন। সেই চিন্তা থেকে এক বিঘা জমিতে বাংলায় ‘মা’ শব্দটি শস্যচিত্রে রূপ দেন। তখন তার মা অনেক খুশি হয়েছিলেন। অনেক দর্শনার্থী সেই শস্যচিত্র দেখে প্রশংসা করেছিলেন। সেই উৎসাহ থেকে পরের বছর জাতীয় পতাকার শস্যচিত্র তৈরি করেন, আর এবার আঁকেন শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। এনামুল হক বলেন, প্রথমে সুতা দিয়ে আবু সাঈদের অবয়ব তৈরি করেন। এরপর সেই গঠন অনুযায়ী, রোপণ করেন দুই জাতের ধান গাছ। তার সঙ্গে ধান রোপণে সহযোগিতা করেছেন আরও কয়েকজন। শহীদ আবু সাইদের উৎসর্গ স্মরণীয় করতেই তিনি এবার শস্যচিত্রে তা ফুঁটিয়ে তুলেছেন।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সড়ক থেকে আবু সাঈদের ছবি তুলছিলেন মো. মোবারক হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বন্ধুর কাছে খবর পেয়ে শস্যচিত্র দেখতে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও অনেকেই এসেছেন। চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন এনামুল হক। আরেক দর্শনার্থী জিয়াউল ইসলাম বলেন, ধান রোপণের সময় তিনি এ সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে ধান গাছ রোপণের দৃশ্য দেখেছেন। এরপর ধান গাছ বড় হওয়া অবস্থায় এই দৃশ্য আবারও দেখতে এসেছেন।

সন্তানের এমন উদ্যোগের বিষয়ে এনামুল হকের মা জোহরা বেগম বলেন, আমার ছেলে শখ করে এগুলো করেছে। মা হিসেবে বিষয়গুলো আমার ভালো লাগে। খারাপ তো কিছু করছে না। মানুষ তার প্রশংসা করে। আমিও তাকে উৎসাহ দিই। এ উদ্যোগ সম্পর্কে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, কৃষক এনামুল হকের শস্যচিত্রের কথা শুনেছি। এটি সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কৃষি শুধু খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যম নয়, সৃজনশীলতারও একটি ক্ষেত্র। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

শস্যচিত্রে শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি

প্রকাশের সময় : ১১:৪২:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

গাজীপুরের শ্রীপুরে ফসলি মাঠে ধানগাছ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। উপজেলার টেংরা বাজার পাড় হলেই বেকাসাহারা গ্রামে মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়কের দক্ষিণ পাশের বিস্তীর্ণ ধানখেতে সবুজ ও বেগুনি রঙের ধানগাছ দিয়ে ফুটিয়ে তোলা শহীদ আবু সাঈদের অবয়ব চিত্র দেখে অনেকে থমকে যান। সড়ক থেকে বিস্তীর্ণ মাঠে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ ধানের জমিতে যেন দুই হাত প্রসারিত করে বিভিন্ন দাবি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুকে বুলেট পেতে নেওয়ার দৃশ্য দেখতে পেয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা।

শস্যচিত্রটি বানিয়েছেন মো. এনামুল হক (৪১)। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেকাসাহারা গ্রামের বাসিন্দা। কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এনামুল একই গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে। এর আগে, গত বছর একই জমিতে শস্যচিত্রে ‘জাতীয় পতাকা’ ও ২০২২ সালে ‘মা’ শব্দটি ফুটিয়ে তোলায় তিনি বেশ আলোচনায় আসেন। এনামুলের বাবা মারা গেছেন। মা জোহরা বেগম (৬৫) ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসার। তার শস্যচিত্র দেখতে অনেকেই ভিড় করছেন, প্রশংসাও করছেন কেউ কেউ।

শস্যচিত্রের নির্মাতা এনামুল হক বলেন, ২০২১ সালে প্রথম তার এক বিঘা জমিতে বেগুনি ধান রোপণ করেন। পরের বছর মাকে ভালোবেসে ব্যতিক্রম কিছু করার পরিকল্পনা করেন। সেই চিন্তা থেকে এক বিঘা জমিতে বাংলায় ‘মা’ শব্দটি শস্যচিত্রে রূপ দেন। তখন তার মা অনেক খুশি হয়েছিলেন। অনেক দর্শনার্থী সেই শস্যচিত্র দেখে প্রশংসা করেছিলেন। সেই উৎসাহ থেকে পরের বছর জাতীয় পতাকার শস্যচিত্র তৈরি করেন, আর এবার আঁকেন শহীদ আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। এনামুল হক বলেন, প্রথমে সুতা দিয়ে আবু সাঈদের অবয়ব তৈরি করেন। এরপর সেই গঠন অনুযায়ী, রোপণ করেন দুই জাতের ধান গাছ। তার সঙ্গে ধান রোপণে সহযোগিতা করেছেন আরও কয়েকজন। শহীদ আবু সাইদের উৎসর্গ স্মরণীয় করতেই তিনি এবার শস্যচিত্রে তা ফুঁটিয়ে তুলেছেন।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সড়ক থেকে আবু সাঈদের ছবি তুলছিলেন মো. মোবারক হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বন্ধুর কাছে খবর পেয়ে শস্যচিত্র দেখতে এসেছি। আমার সঙ্গে আরও অনেকেই এসেছেন। চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন এনামুল হক। আরেক দর্শনার্থী জিয়াউল ইসলাম বলেন, ধান রোপণের সময় তিনি এ সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে ধান গাছ রোপণের দৃশ্য দেখেছেন। এরপর ধান গাছ বড় হওয়া অবস্থায় এই দৃশ্য আবারও দেখতে এসেছেন।

সন্তানের এমন উদ্যোগের বিষয়ে এনামুল হকের মা জোহরা বেগম বলেন, আমার ছেলে শখ করে এগুলো করেছে। মা হিসেবে বিষয়গুলো আমার ভালো লাগে। খারাপ তো কিছু করছে না। মানুষ তার প্রশংসা করে। আমিও তাকে উৎসাহ দিই। এ উদ্যোগ সম্পর্কে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, কৃষক এনামুল হকের শস্যচিত্রের কথা শুনেছি। এটি সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কৃষি শুধু খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যম নয়, সৃজনশীলতারও একটি ক্ষেত্র। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব।