চুক্তির এক দশকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কিছুই পায়নি ওএনজিসি
- প্রকাশের সময় : ০২:২৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ২৮ বার পঠিত
বঙ্গোপসাগরে অগভীর অংশে এসএস-৪ ও এসএস-৯ ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ করছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন (ওএনজিসি)। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ওএনজিসি কোনো কিছুই আবিষ্কার করতে পারেনি। এখন কোম্পানিটি দুটি ব্লকে আরো দুই বছর অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চায়। এরই মধ্যে কোম্পানিটি পেট্রোবাংলায় ২০২৬ সাল পর্যন্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের মেয়াদ বাড়াতে প্রস্তাব জমা দিয়েছে। বাংলাদেশের অগভীর সমুদ্রে ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানে ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি করে ভারতীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠানটি। সেই সময় যৌথ অংশীদারত্বে ছিল ভারতের অয়েল ইন্ডিয়া কোম্পানি লিমিটেড (ওআইএল) ও বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, ওএনজিসি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দিয়েছে। তাদের প্রস্তাব যৌক্তিক কিনা কিংবা অনুসন্ধান কার্যক্রমে সম্ভাবনাময় কিছু থাকলে সেটি যথাযথ মূল্যায়ন করে জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হবে। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী কোম্পানির চুক্তিসংক্রান্ত বিষয় দেখে পেট্রোবাংলার উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) বিভাগ। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের মেয়াদ বাড়াতে একটা প্রস্তাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাবে তারা দুই বছর সময় বৃদ্ধি চেয়েছে। বিষয়টি যৌক্তিক হলে যথাযথ মূল্যায়ন করে আমরা জ্বালানি বিভাগে পাঠাব। এরপর সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ বাংলাদেশে সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানে ২০১৪ সালে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি ও ওআইএল চুক্তিবদ্ধ হলেও মূলত তারা সাগর ব্লকে কূপ খননে রিগ বসানোর কার্যক্রম শুরু করে ২০১৯ সালে। ২০২০ সালের শুরুতে খনন কার্যক্রমে যেতে চাইলেও কভিড-১৯ মহামারীর কারণে তা বিলম্বিত হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ কক্সবাজারের মহেশখালীর অদূরে ৪ নম্বর ব্লকে খনন কার্যক্রম শুরু করে। এরই মধ্যে কূপ খননে সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আশাব্যঞ্জক কোনো খবর দিতে পারেনি কোম্পানিটি। এখন নতুন করে ২০২৬ সাল পর্যন্ত আরো দুই বছর ব্লক দুটিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সময় বৃদ্ধির জন্য পেট্রোবাংলাকে প্রস্তাব দিয়েছে।
পেট্রোবাংলার দুজন কর্মকর্তা নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে জানান, অগভীর সমুদ্রের দুটি গ্যাস ব্লকে মোট দুটি কূপ খনন করে ওএনজিসি। কিন্তু এ দুই কূপে তারা কোনো গ্যাস পায়নি। পরে ওএনজিসি সময় বাড়ানোর জন্য পেট্রোবাংলার কাছে আবেদন করে। তাদের আবেদনের পর সময় বৃদ্ধি করে অনুমোদন দেয়া হলেও করোনার কারণে তারা কাজ করতে পারেনি। কূপ খনন করে কোনো গ্যাস না পাওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়ে ওএনজিসি। বিষয়টি তারা পেট্রোবাংলাকে আনঅফিশিয়ালি জানিয়েছে।বাংলাদেশ সমুদ্রসীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গত বছরের মার্চে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। ওএনজিসি ভেবেছিল গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বৈশ্বিক কোম্পানিগুলো চুক্তিবদ্ধ হলে তাদের সহযোগিতা নিয়ে আরো দুটি কূপ খনন করবে তারা। কিন্তু গভীর সমুদ্রের জন্য আহ্বান করা দরপত্রে কোনো কোম্পানি অংশ না নেয়ায় এখন তারা সময় বাড়ানোর জন্য পেট্রোবাংলার কাছে আবেদন জমা দিয়েছে।
ভারতীয় অর্থবছরের (এপ্রিল-মার্চ) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ব্লক-৪ ও ৯ খননকাজ এক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। সেই হিসেবে আগামী মার্চ নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৩০ মিলিয়ন রুপি। এর মধ্যে ব্লক এসএস-৪-এ খরচ হবে ১০৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ও ব্লক এসএস-৯-এ খরচ হবে ১২৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন রুপি।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, দুটি ব্লকে তারা আরো দুটি কূপ খনন করতে চায়। যেখানে তাদের ব্যয়ের প্রাক্কলন ১৬০ মিলিয়ন ডলার। ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ওএনজিসি ও ওআইএলের ৪৫ শতাংশ করে মালিকানা রয়েছে। বাকি ১০ শতাংশ বাপেক্সের। বাণিজ্যিকভাবে তেল-গ্যাস আবিষ্কার ও উত্তোলনযোগ্য হওয়ার আগ পর্যন্ত সব ধরনের খরচ সমানভাবে বহন করবে ভারতীয় কোম্পানি দুটি।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শোয়েব বলেন, ‘তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পেট্রোবাংলা ও ওএনজিসির মধ্যে যৌথ চুক্তি রয়েছে। সেখানে বাপেক্সের ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তবে কোনো বিনিয়োগ নেই। গ্যাস পাওয়া সাপেক্ষে সেখানে ১০ শতাংশ তেল-গ্যাসের মালিকানা পাবে বাপেক্স।’ ১৯৯৬ সালে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু হয়। গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বঙ্গোপসাগরের অফশোর ও অনশোরে (গভীর ও অগভীর) মোট ২৬টি ব্লক রয়েছে। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি। অগভীর সমুদ্রের ৯ নম্বর ব্লকে সে সময় নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে কেয়ার্নস এনার্জি। ১৯৯৮ সালে সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হলেও দ্রুত মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালে গ্যাসক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সূত্র : বণিক বার্তা।