নির্বাচনে অংশ না নেওয়া ছিল বিএনপির আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- প্রকাশের সময় : ০৩:১২:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ১৫০ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : বিএনপির এখন কোনো রাজনীতি নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে প্রচণ্ড ভুল করেছে। এটি যে তাদের সিদ্ধান্ত ছিল, সেজন্য তাদের নেতারা এখন কর্মীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের কর্মীরা এখন প্রচণ্ডভাবে হতাশ। সেই হতাশা কাটানোর জন্য নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে তারা যে এখনও টিকে আছে সেটিই প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। নানা ধরনের কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে তারা।’
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট-বন্দর সড়কসংলগ্ন ডিসি পার্কে মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির দুই-তিনজন নেতা টেলিভিশনে কথা বলেন, সেখানেই শুধু তারা আছেন, অন্য কোথাও বিএনপির অবস্থান নেই। আর এ সমস্ত কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। কারাগারে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু অনেকেরই হয়। কারাগারে থাকা আমাদের দলেরও অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। এই সমস্ত কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই।’
মিয়ানমারে চলমান সংঘাত নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমরা রাখি না। যেটি ঘটছে সেটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ গন্ডগোল। সেখানে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান বাহিনীসহ অন্যদের সংঘাত চলছে। সে সংঘাতের কারণে মাঝেমধ্যে দুয়েকটি গোলা আমাদের দেশে এসে পড়েছে। দুজন মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে, এটা সঠিক। সম্প্রতি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে তাদের সীমান্ত বাহিনী ও সেনাবাহিনীসহ পরিবারের বেশ কিছু সদস্য আমাদের দেশে পালিয়ে এসেছে। তাদেরকে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য মিয়ানমার সম্মতি প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় তাদেরকে ফেরত নিয়ে যাবে, সেটি চূড়ান্ত করার বিষয়, এখানে পররাষ্ট্রনীতির কোনো বিষয় নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমাদের দেশে মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে তা নয়, ভারতেও ডুকেছে কয়েকশ লোক। তাদেরকেও মিয়ানমার ফেরত নিয়ে গেছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। ন্যাম সামিটে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছে, সেখানে আমি তাকে বলেছি যে, অন্তত প্রত্যাবাসনটা শুরু করার জন্য। তার কথাবার্তায় আমার যেটি মনে হয়েছে– মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে একমত। কিন্তু তাদের এখনকার অভ্যন্তরীণ যে সংকট চলছে, সেই কারণে এ মুহূর্তে তারা পারছে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত যেসব মানুষ আমাদের দেশে আছে, তাদেরকে সসম্মানে নাগরিক অধিকার দিয়ে ফেরত পাঠানোই একমাত্র সমাধান। সেই সমাধানের লক্ষ্যেই কাজ করছি।’
মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য গত ১৫ বছরে বহু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে নদীর তলদেশ দিয়ে প্রথম টানেল হয়েছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে। এখানে বে-টার্মিনাল নির্মিত হতে যাচ্ছে। সেটি নির্মিত হলে এটি আরেকটি চট্টগ্রাম বন্দর হবে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরের সব মিলিয়ে দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৬ কিলোমিটার। আর বে-টার্মিনাল হবে ১০ কিলোমিটার। বে-টার্মিনালের ড্রাফট হবে ১২ মিটার। সেটির কার্যক্রম শিগগির শুরু হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। এরপর এখানে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে সেটি অভাবনীয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল ভারত সফর করে এসেছি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও আমার এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের উত্তর-পূর্ব প্রদেশগুলো যাতে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া করতে পারে, সেটির জন্য তারা উদগ্রীব হয়ে বসে আছে। একইভাবে আমরাও উদগ্রীব হয়ে বসে আছি। আশা করি সেটিও খুব দ্রুত শুরু হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর লিঙ্ক রোড ফোর লেন করা হবে। কারণ যানবাহন বেড়ে যাচ্ছে। এই রাস্তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সংযোগ ঘটানো হবে। যখন টানেলের পূর্ণ ব্যবহার হবে, তখন অনেক বেশি যানবাহন থাকবে। যখন বে-টার্মিলন নির্মিত হবে তখন আরও বাড়বে।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মাল্টি কালচারাল ফেস্টিভ্যাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত লিও টিটল আউসান জুনিয়র, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি-এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম ও ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ড. রাজীব রঞ্জন। স্বাগত বক্তব্য দেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম। সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ
হককথা/নাছরিন