অবশিষ্ট অস্তিত্বও হারানোর পথে মোঘল আমলের মতিঝিল
- প্রকাশের সময় : ০৪:২৫:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৫০ বার পঠিত
শুনতে অবাক লাগলেও রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে চলছে নৌকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পিছনে মাত্র ৫ টাকায়, সে নৌকায় পারাপার হচ্ছেন যাত্রীরা। মতিঝিলের নামকরণ যেই ঝিল থেকে, দখলদারদের আগ্রাসনের কারণে সেই ঝিলটিও এখন অস্তিত্ব সংকটে। ময়লার স্তূপে ঘিরে থাকা সামান্য একটি ডোবা। পানির কোনো রং না থাকলেও এখানকার পানি কুচকুচে কালো। যেন কোনো কারখানার নর্দমা সংযুক্ত হয়েছে। তার উপরেই বেশ কয়েকটি ডিঙি নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় মাঝিরা। কেউ যাত্রী তুলছেন, কেউবা পাড়ে ভিড়াচ্ছেন ডিঙি। বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা নয়, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে চলছে খেয়া নৌকা পারাপার।
মতিঝিল থেকে দক্ষিণ মুগদা, টিটিপাড়া এবং সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন এলাকায় রাস্তা ধরে রিকশায় গেলে খরচ হয় অন্তত ৩০-৪০ টাকা। নৌকায় যাতায়াতে যার খরচ মাত্র ৫ টাকা। সময়ও কমে আসে অনেকট। বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষিণ পাশে রাস্তার শেষ মাথায় আসতেই চোখে পড়বে খেয়াঘাট। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ পারাপার হয় এই ডোবা দিয়ে। ভোর ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত যাত্রী পারাপার করেন মাঝিরা।
মতিঝিলের এলাকাজুড়ে এক সময় ছিল থই থই পানি, বিস্তর এলাকার পুরোটা অংশ জোরেই ছিল ডোবা। দূরের পথও পাড়ি দিতে হতো এই নৌকা দিয়ে। মোগল আমলের সেই ঝিল আর নেই। দখলদারদের আগ্রাসনে চারপাশ ছোট হতে হতে এখন পরিণত হয়েছে ছোট্ট কূপে। ডোবা ভরাট হওয়ার ফলে কমেছে যাত্রী, যার কারণে ভাটা পড়েছে মাঝিদের আয় রোজগারেও। নৌকা চলাচল করা অংশটুকুর মালিকানা দাবি একাধিক লোকের। তাদেরই একজন ছমির উদ্দিন। ওয়ারিশ সূত্রে জায়গাটি নিজের দাবি তার। চতুর্থ আদালতে মামলার কাজও চলমান। মীমাংসা হয়ে গেলে ভরাট হয়ে যেতে পারে অস্তিত্ব ঝিইয়ে রাখা ঝিলের সর্বশেষ এই অংশটুকুও। নদী এবং ডোবাগুলোকে রক্ষা করতে পারলেই অনেকটা স্বস্তি ফিরবে পরিবেশে। দখলদারদের হাত থেকে নদী এবং ডোবা রক্ষায় বিগত সরকারকে গাফিলতি এবং ব্যর্থতার দায় দিয়ে নগরীর পরিবেশ রক্ষায় সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার পরামর্শ এই নগর পরিকল্পনাবিদের।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমাদের কোর্ট বলেছে যেকোনো জলপ্রবাহ জীবন্ত স্বত্তা। রাজউকের মতো প্রতিষ্ঠান যদি এত কাছের একটা ঝিল সংরক্ষণ করতে না পারে সেখানে দখলদারিত্ব ঠেকানোর পদ্ধতিটা কী হবে? কমিউনিটি এনগেজমেন্ট দরকার, যাতে এই ঝিলটা আর পুনর্দখল না হয়।’ প্রকৃতি অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে এসব উন্নয়নের কাছে। তবুও বেঁচে থাকার তাগিদে প্রকৃতির কাছেই আত্মসমর্পণ মানুষের। সূত্র : এখন টিভি।