বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে পর্ষদ পুনর্গঠিত ব্যাংকগুলোর এমডিদের
- প্রকাশের সময় : ১১:১৩:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩০ বার পঠিত
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বহুল আলোচিত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে ছয় ব্যাংকের এমডিকে। ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। মূলত ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি নিরূপণে ‘ফরেনসিক অডিট’ চালানোর জন্যই এমডিদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রমতে, চলতি সপ্তাহ থেকেই এ ছয়টি ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউর (একিউআর বা সম্পদমান নিরীক্ষা) জন্য ফরেনসিক অডিট শুরু হবে। এজন্য বিশ্বখ্যাত দুটি প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি ও আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ংকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠান তিনটি করে ব্যাংকে নিরীক্ষা চালাবে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই এ নিরীক্ষা প্রতিবেদন চূড়ান্ত হবে। বিশেষ এ নিরীক্ষা পরিচালনায় অর্থায়ন করবে এডিবি। ছয়টি ব্যাংকের নিরীক্ষা শেষ হলে বাকি ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা শুরু হবে। তখন ওই ব্যাংকগুলোর এমডিদেরও ছুটিতে পাঠানো হবে।
পরবর্তী ধাপে যেসব ব্যাংকে ফরেনসিক অডিট হবে, সেগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ ১২টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ওই ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন পর্ষদ গঠন করে দেয়া হয়। পর্ষদ ভেঙে দেয়া ব্যাংকগুলো ছাড়াও ধারাবাহিকভাবে আরো অন্তত ডজনখানেক সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা হবে।
বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো ছয় এমডির মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ শফিক বিন আব্দুল্লাহর মেয়াদ আগেই শেষ হয়েছে। গত অক্টোবরে তার পুনর্নিয়োগের অনুমোদন আটকে দিয়ে ব্যাংকটিতে প্রশাসক বসায় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমানকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ছুটিতে যাওয়া অন্য পাঁচ ব্যাংকের এমডিরা হলেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী, এক্সিম ব্যাংকের মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদ ফোরকানউল্লাহ, ইউনিয়ন ব্যাংকের এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরী এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সৈয়দ হাবিব হাসনাত। এ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটিই এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
ইউনিয়ন ব্যাংকের এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরী অক্টোবর থেকেই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত রয়েছেন। এজন্য ব্যাংকটির পর্ষদ উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউদ্দিন আহমেদকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দিয়েছে। এমডিকে ছুটিতে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ব্যাংকের পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. ফরিদউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা আগেই এমডি পদে পরিবর্তন এনেছি। এ কারণে আমাদের ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমডি পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।’
এ বিষয়ে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ছয়টি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে নিরপেক্ষ অডিটের স্বার্থে এমডিদের ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত এমডি নিযুক্ত করা হয়েছে। এমডিরা আগামী তিন মাস ছুটিতে থাকবেন। ফরেনসিক অডিটে যদি এমডির কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা না পাওয়া যায়, তাহলে ফিরে আসবেন। অন্যথায় চাকরিচ্যুত হবেন।’
নুরুল আমিন বলেন, ‘বিশ্বের খ্যাতিমান দুটি অডিট ফার্মকে ফরেনসিক অডিট করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নিরীক্ষাকালে অডিট ফার্মের লোকেরা নিজ নিজ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বসবেন। গভর্নর পক্ষ থেকে অডিট ফার্মকে সহযোগিতার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করছি, ফরেনসিক অডিটে ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা উঠে আসবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্ষদ ভেঙে দেয়া ব্যাংকগুলোয় সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এসব অপকর্মের প্রমাণ লোপাট করতে কম্পিউটার কিংবা সার্ভার থেকে তথ্য মুছে ফেলা হতে পারে। ফরেনসিক অডিট হলে মুছে ফেলা তথ্যও উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এতে ব্যাংকে সংঘটিত অনিয়ম ধরা পড়ার পাশাপাশি লোপাটকৃত অর্থের গন্তব্যও জানা যাবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা জানান, ‘ছয়টি ব্যাংকের এমডি তিন মাসের ছুটিতে থাকবেন, এটা ওই ব্যাংকগুলোর পর্ষদের সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউর আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। নিরীক্ষায় যাতে কোনো রকমের অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে না পারেন, অর্থাৎ প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ রাখার জন্য তাদের সাময়িকভাবে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে।’
হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘নিরীক্ষায় যদি অন্যায়ের সঙ্গে এমডিদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া না যায়, তাহলে তারা আবার চাকরিতে এসে যোগদান করতে পারবেন। যদি কোনো কিছু পাওয়া যায় তখন অন্য রকম চিন্তা করতে হবে। এটা আন্তর্জাতিক রীতি মেনে করা হয়েছে।’ সূত্র : বণিক বার্তা।