নিউইয়র্ক ০৯:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মতিউরকে রক্ষায় মরিয়া প্রশ্রয়দাতা প্রভাবশালীরা

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৫৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪
  • / ৩১ বার পঠিত

ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমানের সম্পদের ফিরিস্তি দেখলে অবাক হওয়ার মতো। সরকারি চাকরি করে কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ তিনি নিজের নামে, দুই স্ত্রী, পাঁচ সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন। কিন্তু এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী প্রশ্রয়দাতাদের হাত, যারা মতিউর রহমানকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং মতিউর যেসব জায়গায় চাকরি করেছেন, সেই সব বিভাগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির সদস্য, স্বর্ণ চোরাচালানি, বিমানবন্দর দিয়ে যারা কোটি কোটি টাকার অবৈধ মালামাল আনা-নেওয়া করেন তারা মতিউরকে দিয়ে সুবিধা পেয়েছেন। মতিউর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এই অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অনেক ছাত্র বর্তমানে সরকারের অর্থনীতি বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন প্রশাসনে সচিবসহ ঊচ্চপর্যায়ে রয়েছেন। তাদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটও সুবিধাভোগী। মতিউরকে দিয়ে ঐ সিন্ডিকেট বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। এই সিন্ডিকেটের তালিকা করছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এছাড়া যেসব ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও আমলা মতিউরের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন, তাদের তালিকাও করছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এ কারণে ভয় ও আতঙ্কে আছেন সুবিধাভোগীরা।

মতিউরকে রক্ষায় সুবিধাভোগী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মরিয়া হয়ে ওঠার কারণ হলো, মতিউর গ্রেফতার হওয়ার পর সব বলে দিলে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিই ধরা খাবেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে তার ছবি প্রকাশ পেয়েছে। শেয়ার বাজারের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গেও মতিউরের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মতিউরের আদৌ কি বিচার হবে? প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন গতকাল সংসদে। এটা বাস্তবায়িত হলে মতিউরের শাস্তি হতে পারে। এছাড়া মতিউরের বিচার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি ছাড়া তার ব্যাপারে এখনো কিছুই হয়নি। মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজ নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান। অনেকটা আত্ম অহংকার আর দাম্ভিকতা নিয়ে ১৪ দিন পর শুক্রবার জনসম্মুখে আসেন ছাগলকাণ্ডে বিতর্কিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ড. মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী। ঐ সময় অবৈধ টাকার দম্ভ, রাজনৈতিক ক্ষমতার আভাস তার চোখে-মুখে ফুটে ওঠে। শুক্রবার অফিস করার এক দিন আগে ভৈরবের উজান ভাটি রেস্টুরেন্টে রায়পুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়। সেখানে টাকার প্যাকেটও অনেককে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এর পরদিন উনি সশস্ত্র পাহারা নিয়ে অফিসে প্রবেশ করেন। তবে অফিসে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেন। অফিস শেষে গাড়িতে ওঠার সময় অপেক্ষামাণ কয়েক জন সাংবাদিককে বলেন, ‘আপনাদের বড় বড় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে ফেলেছি।’ তার এই কথা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে।

একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অনেক সাংবাদিক মতিউরের কাছ থেকে উপকৃত হয়েছেন। অনেকে হজে গেছেন তার টাকায়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারাও মতিউর থেকে উপকৃত হয়েছেন। ওয়ান ইলেভেনে মতিউর এনবিআরে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মতিউরকে না সরানোর তদ্বির করা হয়। এ থেকে বোঝা যায় মতিউরের হাত কত বড়। এমন কোনো বিভাগ নেই, যেখানকার একশ্রেণির কর্মকর্তারা মতিউরের কাছ থেকে সুবিধা পাননি। তার ব্যাপারে একজন ক্ষমতাধর আমলা রয়েছেন, বর্তমানেও তিনি ক্ষমতায় আছেন। ঐ আমলাও তার দ্বারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। এ ধরনের অনেক আমলা রয়েছেন।

অনেকটা কৌতুকের সুরে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জামাইয়ের কিছু হলে শ্বশুরের গায়ে কাপড় থাকবে না। অর্থাৎ মতিউর সব প্রকাশ করে দিলে অনেকেই রক্ষা পাবেন না।’ তবে মতিউরের দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে সব মহলে আলোচনা চলছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অনেকে এটা প্রত্যাশা করেন। সূত্র: ইত্তেফাক।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

মতিউরকে রক্ষায় মরিয়া প্রশ্রয়দাতা প্রভাবশালীরা

প্রকাশের সময় : ০৫:৫৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪

ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমানের সম্পদের ফিরিস্তি দেখলে অবাক হওয়ার মতো। সরকারি চাকরি করে কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ তিনি নিজের নামে, দুই স্ত্রী, পাঁচ সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন। কিন্তু এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী প্রশ্রয়দাতাদের হাত, যারা মতিউর রহমানকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং মতিউর যেসব জায়গায় চাকরি করেছেন, সেই সব বিভাগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির সদস্য, স্বর্ণ চোরাচালানি, বিমানবন্দর দিয়ে যারা কোটি কোটি টাকার অবৈধ মালামাল আনা-নেওয়া করেন তারা মতিউরকে দিয়ে সুবিধা পেয়েছেন। মতিউর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এই অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অনেক ছাত্র বর্তমানে সরকারের অর্থনীতি বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন প্রশাসনে সচিবসহ ঊচ্চপর্যায়ে রয়েছেন। তাদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটও সুবিধাভোগী। মতিউরকে দিয়ে ঐ সিন্ডিকেট বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। এই সিন্ডিকেটের তালিকা করছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এছাড়া যেসব ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও আমলা মতিউরের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন, তাদের তালিকাও করছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এ কারণে ভয় ও আতঙ্কে আছেন সুবিধাভোগীরা।

মতিউরকে রক্ষায় সুবিধাভোগী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মরিয়া হয়ে ওঠার কারণ হলো, মতিউর গ্রেফতার হওয়ার পর সব বলে দিলে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিই ধরা খাবেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে তার ছবি প্রকাশ পেয়েছে। শেয়ার বাজারের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গেও মতিউরের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মতিউরের আদৌ কি বিচার হবে? প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন গতকাল সংসদে। এটা বাস্তবায়িত হলে মতিউরের শাস্তি হতে পারে। এছাড়া মতিউরের বিচার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি ছাড়া তার ব্যাপারে এখনো কিছুই হয়নি। মতিউরের স্ত্রী লায়লা কানিজ নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান। অনেকটা আত্ম অহংকার আর দাম্ভিকতা নিয়ে ১৪ দিন পর শুক্রবার জনসম্মুখে আসেন ছাগলকাণ্ডে বিতর্কিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ড. মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী। ঐ সময় অবৈধ টাকার দম্ভ, রাজনৈতিক ক্ষমতার আভাস তার চোখে-মুখে ফুটে ওঠে। শুক্রবার অফিস করার এক দিন আগে ভৈরবের উজান ভাটি রেস্টুরেন্টে রায়পুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে তার বৈঠক হয়। সেখানে টাকার প্যাকেটও অনেককে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এর পরদিন উনি সশস্ত্র পাহারা নিয়ে অফিসে প্রবেশ করেন। তবে অফিসে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেন। অফিস শেষে গাড়িতে ওঠার সময় অপেক্ষামাণ কয়েক জন সাংবাদিককে বলেন, ‘আপনাদের বড় বড় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে ফেলেছি।’ তার এই কথা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে।

একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অনেক সাংবাদিক মতিউরের কাছ থেকে উপকৃত হয়েছেন। অনেকে হজে গেছেন তার টাকায়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারাও মতিউর থেকে উপকৃত হয়েছেন। ওয়ান ইলেভেনে মতিউর এনবিআরে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মতিউরকে না সরানোর তদ্বির করা হয়। এ থেকে বোঝা যায় মতিউরের হাত কত বড়। এমন কোনো বিভাগ নেই, যেখানকার একশ্রেণির কর্মকর্তারা মতিউরের কাছ থেকে সুবিধা পাননি। তার ব্যাপারে একজন ক্ষমতাধর আমলা রয়েছেন, বর্তমানেও তিনি ক্ষমতায় আছেন। ঐ আমলাও তার দ্বারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। এ ধরনের অনেক আমলা রয়েছেন।

অনেকটা কৌতুকের সুরে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জামাইয়ের কিছু হলে শ্বশুরের গায়ে কাপড় থাকবে না। অর্থাৎ মতিউর সব প্রকাশ করে দিলে অনেকেই রক্ষা পাবেন না।’ তবে মতিউরের দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে সব মহলে আলোচনা চলছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অনেকে এটা প্রত্যাশা করেন। সূত্র: ইত্তেফাক।