নির্বাচনে আ. লীগের মূল চ্যালেঞ্জ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
- প্রকাশের সময় : ০৩:৪৩:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ১৫০ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২২১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অন্তত ৩৮২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের বড় অংশই আওয়ামী লীগের নেতা, যারা ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শক্তি ও সামর্থ্য আছে বলেই নির্বাচনে নেমেছেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাই ও ইসির আপিলে বাদ পড়াদের অনেকে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। ভোটের আগ পর্যন্ত আরও কেউ কেউ প্রার্থিতা ফিরে পেতে পারেন।
জানা গেছে, এবার তুলনামূলক স্বতন্ত্র প্রার্থী বেশি বগুড়ায়। এই জেলার সাতটি আসনের ছয়টিতে স্বতন্ত্র আছেন মোট ১৮ জন। এর মধ্যে বগুড়া-১ ও ৩ আসনে চার জন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। এবারের নির্বাচনে প্রায় ৪০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীর রেকর্ড হয়নি। এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ছিল ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ঐ নির্বাচনে ৪৮৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত দল আছে ৪৪টি। এর মধ্যে ভোটে ২৭টি দলের প্রার্থী আছে। সবচেয়ে বেশি ২৬৬টি আসনে প্রার্থী আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থী আছে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাপার। ২৬৫টি আসনে প্রার্থী আছে দলটির। এর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে ২৬টি আসনে তাদের সমর্থনে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ। সমঝোতার বাইরের আসনগুলোতে অন্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে জাপাকে। একই অবস্থা ১৪ দলীয় জোট শরিক ও নির্বাচন অংশ নেওয়া অন্য দলগুলোর। এবারের নির্বাচনে এই জোটের শরিকদের আওয়ামী লীগ যে ছয়টি আসন দিয়েছে, সেগুলোতে তারা ভোট করবে নৌকা প্রতীকে।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থী দিয়েছে হঠাৎ করে নিবন্ধন পেয়ে আলোচনায় আসা তৃণমূল বিএনপি। ১৩৩টি আসনে দলটির প্রার্থী আছে। এর বাইরে ১০০টির বেশি আসনে প্রার্থী আছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি)। তারা ১২২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে রাজনীতি বা ভোটের মাঠে এই দলের তেমন কোনো প্রভাব নেই।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে জাতীয় পার্টি-জেপি ১৩ আসনে, জাসদ ৬৪ আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬ আসনে, তরীকত ফেডারেশন ৩৮ আসনে, সাম্যবাদী দল চারটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এর বাইরে অন্য দলগুলোর মধ্যে ইসলামী ফ্রন্ট ৩৯ আসনে, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ আসনে, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২৯ আসনে, গণফোরাম ৯ আসনে, গণফ্রন্ট ২১ আসনে, জাকের পার্টি ২১ আসনে, বিকল্পধারা ১০ আসনে, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭ আসনে, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৯৫ আসনে, কল্যাণ পার্টি ১৬ আসনে, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১১ আসনে, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি পাঁচ আসনে, বিএনএম ৫৪ আসনে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি পাঁচ আসনে, বিএনএফ ৪৫ আসনে, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ চার আসনে, সুপ্রিম পার্টি ৭৯ আসনে, সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট ৬৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
ইসি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই দলগুলোর কোনোটিই আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার সামর্থ্য রাখে না। তবে এবারে নির্বাচনের নতুনত্ব হচ্ছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। অন্তত ১২৭টি আসনে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজ দলের নৌকার প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন।
ব্যালট পেপার মুদ্রণের কাজ শুরু
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য ব্যালট পেপার মুদ্রণের কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যে সব আসন থেকে বাদ পড়া প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন, সেসব প্রায় ৪০টি আসন বাদ রেখে ব্যালট পেপার মুদ্রণ শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, গত সোমবার প্রতীক বরাদ্দ কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর আমরা ৩০০ আসনের প্রার্থীদের তালিকা পেয়েছি। সে অনুযায়ী প্রতীকসহ আমাদের ব্যালট পেপার ছাপার কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। তিনটি সরকারি ছাপাখানায় এ কাজ শুরু হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা ব্যালট পেপার ছাপার কাজ শেষ করতে চাই।
সোস্যাল মিডিয়ায় ‘না’
ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত নিরাপত্তার স্বার্থে আউটসোর্সিং ও দৈনিক ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইউটিউব, টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার না করাসহ আট দফা নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। এতে বলা হয়, নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
৯ লাখ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ শুরু :
নির্বাচন উপলক্ষে ৯ লাখ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ভোটের আগেই এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করতে চায় ইসি। নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল
নাছরিন/হককথা