নিউইয়র্ক ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশে কোন পদ্ধতিতে কতটা সংস্কার হবে?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:১৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৮৫ বার পঠিত

১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে প্রথম দফায় গঠিত ছয় সংস্কার কমিশন৷ প্রস্তাবনা পাওয়ার পর সংস্কারের রূপরেখা কীভাবে চূড়ান্ত হবে বা কোন পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা৷

সংস্কার কমিশনের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বল জানা গেছে, সরকারের গঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ সংস্কারের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে ভূমিকা রাখবে৷ এরজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ক্রমান্বয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে ওই কমিশন৷ চূড়ান্ত রূপরেখা বাস্তবায়নের কীভাবে হতে পারে সে বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করবে কমিশন৷

প্রসঙ্গত, ছয় সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার৷ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে৷

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ সদস্য হিসেবে থাকছেন৷ আমাদের জানানো হয়েছে৷”

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ওই কমিশনটা (জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন) মূলত প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যমতের কমিশন৷ ওখানেই কী কী সংস্কার হবে, তা চূড়ান্ত হবে৷”

আর বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সেটা কীভাবে হবে তাও জাতীয় কমিশন ঠিক করবে৷ তবে নির্বাচিত সংসদ ছাড়াতো আর সংবিধান সংস্কার বা আইনগত সংস্কার করা যাবে না৷”

সংস্কারের রূপরেখা তৈরিতে সংলাপ
বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় কমিশনের সংলাপে যেসব বিষয়ে সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্য বা একমত হওয়া যাবে সেই সংস্কারগুলো করা হবে৷ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ছয়টি কমিশন প্রতিবেদন দেয়ার পরই জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের কাজ শুরু হবে৷ এই কমিশন আলাদাভাবে প্রত্যেক কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সংলাপ করবে৷ আর সেখানে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে এবং তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে৷

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘আসলে মূল সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে নির্বাচিত সংসদকে৷ শুধুমাত্র নির্বাচন বা একান্ত না করলেই নয়, এমন সংস্কারগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারে৷ সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তন তো এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়৷ তাই ঐকমত্য হলে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে৷ এজন্য জাতীয় ঐকমত্যের কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চুক্তি হতে পারে৷ কীভাবে সেটা হবে তা ওই সংলাপেই ঠিক হবে৷’’

অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যেও সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয়টি উঠে এসেছে৷ ইংরেজি দৈনিক নিউ এজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এখন সাবজেক্ট ওয়াইজ কনসালটেশনের জন্য আবার আলাদা একটা কমিশন করা হয়েছে৷ ওই কমিশনের চেয়ারম্যান আমি নিজে৷ এবং প্রফেসর আলী রীয়াজ সহ-সভাপতি৷ এখন আমরা মিলে আরেকটা কনসেনসান ডেভেলপের চেষ্টা করছি৷ সেটা কীভাবে হবে৷ সমাজের আদানপ্রদান কীভাবে হবে৷ যাতে সর্ববসম্মত কিছু এটা বের করা যায়৷ সব বিষয়ে একমত না হলেও যেন অন্তত কিছু বিষয়ে একমত হওয়া যায়৷ তখন সেটাই আমাদের সংস্কার৷ সবার যেহেতু সম্মতি থাকবে তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে৷ আশা করছি জানুয়রিতেই এটা শুরু করতে পারব৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই সংস্কার আমাদের একজনের মাথা থেকেতো আসবে না৷ সবার কাছ থেকে নিয়েই এটা হবে৷ ১০ জনের মাথা থেকে নিয়ে নির্যাস হয়ে এটা আসল৷ বাইরে সরকারের নিজস্ব কোনো প্রোগ্রাম নাই৷ আমরা তো কোনো রাজনৈতিক দল না যে আমাদের নিজস্ব থাকবে৷ আমাদের একেক জনের একেক মত৷ একেক জন একেক রাজনীতিতে বিশ্বাসী৷ কাজেই সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই৷”

বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ
এদিকে সংস্কারের বিষয়ে নিজেদের সুপারিশমালা প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিভিন্ন কমিশন৷ এ বিষয়ে তিনটি কমিশন থেকে তাদের প্রস্তাবনার বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সুপারিশের মূলে রয়েছে একটা স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক দুর্নীতি দমন কমিশন৷ আমরা চাইছি যাতে যে কারুর দুর্নীতি তারা তদন্ত করতে পারে৷ আবার তাদের জবাবদিহিতাও যাতে থাকে৷ তারা যাতে কাউকে ছাড় না দেয়৷ আবার কাউকে অযথা হয়রানি না করে৷ এজন্য আমাদের প্রস্তাবে কাঠামোগত দিকও থাকছে৷ আবার তারা জবাবদিহিতা কোথায় করবেন, নিয়োগ কীভাবে হবে তারও প্রস্তাব থাকছে৷’’ ‘‘আর টিআইবির একজন হিসাবে বলছি যে, আমরা ওয়াচডগ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করব৷ আমাদের প্রস্তাবগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয় সেটাও আমরা দেখব,’’ বলেন তিনি৷

এদিকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, ‘‘আমাদের প্রস্তবগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা জাতীয় কমিশন ঠিক করবে৷ আমাদের কমিশনের প্রধান ওই কমিশনেরও সদস্য৷ সেখানে তিনি নিশ্চয়ই আমাদের অবস্থান তুলে ধরবেন৷’’

তিনি জানান, ‘‘আমরা একটি জনবান্ধব পুলিশি ব্যবস্থার সুপারিশ করছি৷ মানবাধিকারের বিষয়গুলোকে আমরা প্রধান্য দিয়েছি৷ আর পুলিশের বিশেষ করে কনস্টেবল বা নিম্নপদে যারা আছেন তাদের ওয়ালফেয়ারের ব্যাপারেও সুপারিশ আছে৷’’ ‘‘আমরা চিন্তা করছি পুলিশের বাইরে একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থার প্রস্তাব দেয়ার৷ যেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত হবে,’’ বলেন তিনি৷

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘আমরা নতুন করে সংবিধান লেখা বা পরিবর্তনের কোনো সুপারিশ করছি না৷ এগুলো জনগণই ঠিক করবে৷ আমরা কিছু জায়গায় সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করছি৷ যেমন ৭০ অনুচ্ছেদ এখন যেভাবে আছে সেভাবে থাকা উচিত কী না৷ প্রধানমন্ত্রীর হাতে এখন অনেক বেশি ক্ষমতা আছে, সেটা থাকা উচিত কী না৷ সেটা কীভাবে ভারসাম্য অবস্থায় আনা যায়৷ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরো কীভাবে র‌্যাশনালাইজ করা যায়৷ নির্বাচন কমিশন আরো কীভাবে স্বাধীন করা যায়৷ আমরা পদ্ধতিগত দিকগুলো বলেছি৷”

উল্লেখ্য, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়৷ এই সরকার সংস্কার এবং নির্বাচন দুইটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে৷ প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে৷ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের জুন মাসে নির্বাচন হবে৷

সংস্কারের জন্য ৩ অক্টোবর পাঁচটি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ গেজেট প্রকাশ করা হয়৷ সেগুলো হলো: বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, নির্বাচন ও দুর্নীতি দমন কমিশন৷ ৭ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ হয় সংবিধান সংস্কার কমিশনের৷ প্রথম ধাপের এই ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে৷ পরে আরো পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়েছে তারাও নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিলে তা নিয়েও জাতীয় সংস্কার কমিশনে সংলাপ হবে৷ প্রতিটি কমিশনের নির্ধারিত মেয়াদ ৯০ দিন৷

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশে কোন পদ্ধতিতে কতটা সংস্কার হবে?

প্রকাশের সময় : ০৪:১৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫

১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে প্রথম দফায় গঠিত ছয় সংস্কার কমিশন৷ প্রস্তাবনা পাওয়ার পর সংস্কারের রূপরেখা কীভাবে চূড়ান্ত হবে বা কোন পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা৷

সংস্কার কমিশনের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বল জানা গেছে, সরকারের গঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ সংস্কারের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে ভূমিকা রাখবে৷ এরজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ক্রমান্বয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে ওই কমিশন৷ চূড়ান্ত রূপরেখা বাস্তবায়নের কীভাবে হতে পারে সে বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করবে কমিশন৷

প্রসঙ্গত, ছয় সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার৷ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে৷

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ সদস্য হিসেবে থাকছেন৷ আমাদের জানানো হয়েছে৷”

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ওই কমিশনটা (জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন) মূলত প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যমতের কমিশন৷ ওখানেই কী কী সংস্কার হবে, তা চূড়ান্ত হবে৷”

আর বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সেটা কীভাবে হবে তাও জাতীয় কমিশন ঠিক করবে৷ তবে নির্বাচিত সংসদ ছাড়াতো আর সংবিধান সংস্কার বা আইনগত সংস্কার করা যাবে না৷”

সংস্কারের রূপরেখা তৈরিতে সংলাপ
বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় কমিশনের সংলাপে যেসব বিষয়ে সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্য বা একমত হওয়া যাবে সেই সংস্কারগুলো করা হবে৷ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ছয়টি কমিশন প্রতিবেদন দেয়ার পরই জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের কাজ শুরু হবে৷ এই কমিশন আলাদাভাবে প্রত্যেক কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সংলাপ করবে৷ আর সেখানে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে এবং তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে৷

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘আসলে মূল সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে নির্বাচিত সংসদকে৷ শুধুমাত্র নির্বাচন বা একান্ত না করলেই নয়, এমন সংস্কারগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারে৷ সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তন তো এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়৷ তাই ঐকমত্য হলে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করবে৷ এজন্য জাতীয় ঐকমত্যের কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চুক্তি হতে পারে৷ কীভাবে সেটা হবে তা ওই সংলাপেই ঠিক হবে৷’’

অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যেও সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের বিষয়টি উঠে এসেছে৷ ইংরেজি দৈনিক নিউ এজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এখন সাবজেক্ট ওয়াইজ কনসালটেশনের জন্য আবার আলাদা একটা কমিশন করা হয়েছে৷ ওই কমিশনের চেয়ারম্যান আমি নিজে৷ এবং প্রফেসর আলী রীয়াজ সহ-সভাপতি৷ এখন আমরা মিলে আরেকটা কনসেনসান ডেভেলপের চেষ্টা করছি৷ সেটা কীভাবে হবে৷ সমাজের আদানপ্রদান কীভাবে হবে৷ যাতে সর্ববসম্মত কিছু এটা বের করা যায়৷ সব বিষয়ে একমত না হলেও যেন অন্তত কিছু বিষয়ে একমত হওয়া যায়৷ তখন সেটাই আমাদের সংস্কার৷ সবার যেহেতু সম্মতি থাকবে তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করা সহজ হবে৷ আশা করছি জানুয়রিতেই এটা শুরু করতে পারব৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই সংস্কার আমাদের একজনের মাথা থেকেতো আসবে না৷ সবার কাছ থেকে নিয়েই এটা হবে৷ ১০ জনের মাথা থেকে নিয়ে নির্যাস হয়ে এটা আসল৷ বাইরে সরকারের নিজস্ব কোনো প্রোগ্রাম নাই৷ আমরা তো কোনো রাজনৈতিক দল না যে আমাদের নিজস্ব থাকবে৷ আমাদের একেক জনের একেক মত৷ একেক জন একেক রাজনীতিতে বিশ্বাসী৷ কাজেই সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই৷”

বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ
এদিকে সংস্কারের বিষয়ে নিজেদের সুপারিশমালা প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিভিন্ন কমিশন৷ এ বিষয়ে তিনটি কমিশন থেকে তাদের প্রস্তাবনার বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সুপারিশের মূলে রয়েছে একটা স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক দুর্নীতি দমন কমিশন৷ আমরা চাইছি যাতে যে কারুর দুর্নীতি তারা তদন্ত করতে পারে৷ আবার তাদের জবাবদিহিতাও যাতে থাকে৷ তারা যাতে কাউকে ছাড় না দেয়৷ আবার কাউকে অযথা হয়রানি না করে৷ এজন্য আমাদের প্রস্তাবে কাঠামোগত দিকও থাকছে৷ আবার তারা জবাবদিহিতা কোথায় করবেন, নিয়োগ কীভাবে হবে তারও প্রস্তাব থাকছে৷’’ ‘‘আর টিআইবির একজন হিসাবে বলছি যে, আমরা ওয়াচডগ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করব৷ আমাদের প্রস্তাবগুলো কতটা বাস্তবায়ন হয় সেটাও আমরা দেখব,’’ বলেন তিনি৷

এদিকে পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, ‘‘আমাদের প্রস্তবগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা জাতীয় কমিশন ঠিক করবে৷ আমাদের কমিশনের প্রধান ওই কমিশনেরও সদস্য৷ সেখানে তিনি নিশ্চয়ই আমাদের অবস্থান তুলে ধরবেন৷’’

তিনি জানান, ‘‘আমরা একটি জনবান্ধব পুলিশি ব্যবস্থার সুপারিশ করছি৷ মানবাধিকারের বিষয়গুলোকে আমরা প্রধান্য দিয়েছি৷ আর পুলিশের বিশেষ করে কনস্টেবল বা নিম্নপদে যারা আছেন তাদের ওয়ালফেয়ারের ব্যাপারেও সুপারিশ আছে৷’’ ‘‘আমরা চিন্তা করছি পুলিশের বাইরে একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থার প্রস্তাব দেয়ার৷ যেখানে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত হবে,’’ বলেন তিনি৷

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘‘আমরা নতুন করে সংবিধান লেখা বা পরিবর্তনের কোনো সুপারিশ করছি না৷ এগুলো জনগণই ঠিক করবে৷ আমরা কিছু জায়গায় সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করছি৷ যেমন ৭০ অনুচ্ছেদ এখন যেভাবে আছে সেভাবে থাকা উচিত কী না৷ প্রধানমন্ত্রীর হাতে এখন অনেক বেশি ক্ষমতা আছে, সেটা থাকা উচিত কী না৷ সেটা কীভাবে ভারসাম্য অবস্থায় আনা যায়৷ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরো কীভাবে র‌্যাশনালাইজ করা যায়৷ নির্বাচন কমিশন আরো কীভাবে স্বাধীন করা যায়৷ আমরা পদ্ধতিগত দিকগুলো বলেছি৷”

উল্লেখ্য, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়৷ এই সরকার সংস্কার এবং নির্বাচন দুইটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে৷ প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে৷ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের জুন মাসে নির্বাচন হবে৷

সংস্কারের জন্য ৩ অক্টোবর পাঁচটি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ গেজেট প্রকাশ করা হয়৷ সেগুলো হলো: বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, নির্বাচন ও দুর্নীতি দমন কমিশন৷ ৭ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ হয় সংবিধান সংস্কার কমিশনের৷ প্রথম ধাপের এই ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে৷ পরে আরো পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়েছে তারাও নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিলে তা নিয়েও জাতীয় সংস্কার কমিশনে সংলাপ হবে৷ প্রতিটি কমিশনের নির্ধারিত মেয়াদ ৯০ দিন৷