নিউইয়র্ক ০৯:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

পশ্চিমাদের অভিনন্দন : নতুন সরকারের উদ্বেগ কেটে গেছে?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৫৮:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৬৮ বার পঠিত

শপথ গ্রহণের পর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের বৈঠক। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ডেস্ক : বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। অথচ সেই দেশগুলোই দেখা যাচ্ছে এখন নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। তাদের এই ‘অভিনন্দন’ ঠিক কী বার্তা বহন করছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

বিশ্লেষকদের অনেকেই একে নিছক ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ’ হিসেবেই দেখছেন। সরকারকে অভিনন্দন জানানোর ফলে নির্বাচন নিয়ে দেশগুলোর পর্যবেক্ষণ বা অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আসবে বলেও মনে করছেন না তারা। ফলে তারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা এবং শ্রমনীতিকে ঘিরে তৈরি হওয়া উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই বেশ সরব দেখা যাচ্ছিলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে আসছিল তারা। কিন্তু তাদের এই দাবি উপেক্ষা করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোকে বাদ দিয়েই চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপি বিহীন এই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পরের দিনই চীন, রাশিয়া, ভারতসহ অনেক দেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোকে তখন ভিন্ন অবস্থানে দেখা যায়। অভিনন্দন জানানোর বদলে তারা আলাদা বিবৃতি দিয়ে জানায়, নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি’। কিন্তু এর সপ্তাহখানেক পরেই দৃশ্যপটে হঠাৎ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

দেখা যায়, সমালোচনাকারী পশ্চিমা দেশগুলো এমনকি জাতিসংঘও বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানায়। নির্বাচনের পরের দিন ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টেমন্ট বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে জয়ী হয়েছে। তবে হাজারো বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিনে বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।’

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের এই নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না’ বলে অন্য পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র একমত বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। এছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। একই দিনে, যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়।

নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানের বিবৃতির পর টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার ‘বৈধতার সংকটে’ পড়তে পারে বলে অনেকে ধারণা করেন। এমনকি সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বলতে শোনা গেছে ‘নির্বাচন বাতিলের ষড়যন্ত্র চলছে’।

গত কয়েক দিনের মধ্যে হঠাৎ যেন পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। ১৭ জানুয়ারি নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দেখা করতে তার কার্যালয়ে যান বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি সাংবাদিকদের জানান, দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র আগামীতে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রতীক্ষায় আছে।

এর কয়েক দিনের মধ্যেই শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড। এছাড়া নতুন সরকার গঠনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের অভিনন্দন পেয়েছেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

অভিনন্দনের গুরুত্ব কী
নির্বাচনের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরও পশ্চিমা দেশগুলো এখন বাংলাদেশের নতুন সরকারকে যে অভিনন্দন জানাচ্ছে, সেটি কূটনৈতিক শিষ্টাচারেরই অংশ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, আসলে এটি একটি আনুষ্ঠানিকতার অংশ, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ। যখন কোনো দেশে নতুন সরকার গঠিত হয়, তখন সে দেশে থাকা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে থাকেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মোহসিনবলেন, এই অভিনন্দন জানানোর অর্থ এই নয় যে নির্বাচন নিয়ে দেশটি আগে যে পর্যবেক্ষণ বা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটি পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখানে দু’টি ভিন্ন বিষয় রয়েছে। একটি হচ্ছে তারা তাদের পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরেছে। অন্যটি হচ্ছে, তাদের যেসব নিয়মিত কর্মকাণ্ড রয়েছে, সেগুলোও চালিয়ে যেতে হবে।

আমেনা মোহসিনের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির। বলেন, অভিনন্দন জানানো হলেও তারা নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে যে প্রশ্নটা তুলেছে, সেই অবস্থান থেকে কিন্তু পরিবর্তন সব সময় নাও হতে পারে।

অধ্যাপক ড. আমেনা মোহসিন বলেন, আওয়ামী লীগ এর আগে বাংলাদেশে দুই দুইটি বিতর্কিত নির্বাচন করেও ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছে। দেশে-বিদেশে বৈধতার কোনো সংকট সে সময় সেভাবে তৈরি হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, নৈতিক মানদণ্ডে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা গেলেও, সাংবিধানিকভাবে তো প্রশ্ন তোলা যাচ্ছে না।

উদ্বেগ কেটে গেছে?
পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো যে, তারা হয়তো শেখ হাসিনার সরকারকে ‘স্বীকৃতি’ নাও দিতে পারে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথুউ মিলার।

মিলার বলেন, না। আমরা এখন বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার প্রতিবেদনগুলোর বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করতে এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে উৎসাহিত করছি।

তাহলে নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো যে প্রতিক্রিয়া জানালো, সেটির উদ্দেশ্য কী? এ প্রশ্নের জবাবে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়াগত ব্যাপারে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ বা মতামত তারা প্রকাশ করতে পারে। স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়েও অনেক সময় তারা এটি করে থাকেন।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি মনে করি না যে, শঙ্কাটা একেবারে দূর হয়ে গেছে। তবে নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য’ না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কী ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেবে বা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নেবে কি-না, সেটি বুঝতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। সূত্র : বিবিসি

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

পশ্চিমাদের অভিনন্দন : নতুন সরকারের উদ্বেগ কেটে গেছে?

প্রকাশের সময় : ০৫:৫৮:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৪

বাংলাদেশ ডেস্ক : বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। অথচ সেই দেশগুলোই দেখা যাচ্ছে এখন নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। তাদের এই ‘অভিনন্দন’ ঠিক কী বার্তা বহন করছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

বিশ্লেষকদের অনেকেই একে নিছক ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ’ হিসেবেই দেখছেন। সরকারকে অভিনন্দন জানানোর ফলে নির্বাচন নিয়ে দেশগুলোর পর্যবেক্ষণ বা অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আসবে বলেও মনে করছেন না তারা। ফলে তারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা এবং শ্রমনীতিকে ঘিরে তৈরি হওয়া উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই বেশ সরব দেখা যাচ্ছিলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে আসছিল তারা। কিন্তু তাদের এই দাবি উপেক্ষা করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোকে বাদ দিয়েই চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপি বিহীন এই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের পরের দিনই চীন, রাশিয়া, ভারতসহ অনেক দেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোকে তখন ভিন্ন অবস্থানে দেখা যায়। অভিনন্দন জানানোর বদলে তারা আলাদা বিবৃতি দিয়ে জানায়, নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি’। কিন্তু এর সপ্তাহখানেক পরেই দৃশ্যপটে হঠাৎ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

দেখা যায়, সমালোচনাকারী পশ্চিমা দেশগুলো এমনকি জাতিসংঘও বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানায়। নির্বাচনের পরের দিন ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টেমন্ট বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে জয়ী হয়েছে। তবে হাজারো বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিনে বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।’

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের এই নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না’ বলে অন্য পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র একমত বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। এছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। একই দিনে, যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়।

নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানের বিবৃতির পর টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার ‘বৈধতার সংকটে’ পড়তে পারে বলে অনেকে ধারণা করেন। এমনকি সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বলতে শোনা গেছে ‘নির্বাচন বাতিলের ষড়যন্ত্র চলছে’।

গত কয়েক দিনের মধ্যে হঠাৎ যেন পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। ১৭ জানুয়ারি নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দেখা করতে তার কার্যালয়ে যান বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি সাংবাদিকদের জানান, দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র আগামীতে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রতীক্ষায় আছে।

এর কয়েক দিনের মধ্যেই শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড। এছাড়া নতুন সরকার গঠনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের অভিনন্দন পেয়েছেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

অভিনন্দনের গুরুত্ব কী
নির্বাচনের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরও পশ্চিমা দেশগুলো এখন বাংলাদেশের নতুন সরকারকে যে অভিনন্দন জানাচ্ছে, সেটি কূটনৈতিক শিষ্টাচারেরই অংশ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, আসলে এটি একটি আনুষ্ঠানিকতার অংশ, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ। যখন কোনো দেশে নতুন সরকার গঠিত হয়, তখন সে দেশে থাকা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে থাকেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মোহসিনবলেন, এই অভিনন্দন জানানোর অর্থ এই নয় যে নির্বাচন নিয়ে দেশটি আগে যে পর্যবেক্ষণ বা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটি পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখানে দু’টি ভিন্ন বিষয় রয়েছে। একটি হচ্ছে তারা তাদের পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরেছে। অন্যটি হচ্ছে, তাদের যেসব নিয়মিত কর্মকাণ্ড রয়েছে, সেগুলোও চালিয়ে যেতে হবে।

আমেনা মোহসিনের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির। বলেন, অভিনন্দন জানানো হলেও তারা নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে যে প্রশ্নটা তুলেছে, সেই অবস্থান থেকে কিন্তু পরিবর্তন সব সময় নাও হতে পারে।

অধ্যাপক ড. আমেনা মোহসিন বলেন, আওয়ামী লীগ এর আগে বাংলাদেশে দুই দুইটি বিতর্কিত নির্বাচন করেও ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছে। দেশে-বিদেশে বৈধতার কোনো সংকট সে সময় সেভাবে তৈরি হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, নৈতিক মানদণ্ডে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা গেলেও, সাংবিধানিকভাবে তো প্রশ্ন তোলা যাচ্ছে না।

উদ্বেগ কেটে গেছে?
পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো যে, তারা হয়তো শেখ হাসিনার সরকারকে ‘স্বীকৃতি’ নাও দিতে পারে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেন যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথুউ মিলার।

মিলার বলেন, না। আমরা এখন বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতার প্রতিবেদনগুলোর বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করতে এবং অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে উৎসাহিত করছি।

তাহলে নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো যে প্রতিক্রিয়া জানালো, সেটির উদ্দেশ্য কী? এ প্রশ্নের জবাবে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়াগত ব্যাপারে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ বা মতামত তারা প্রকাশ করতে পারে। স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়েও অনেক সময় তারা এটি করে থাকেন।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি মনে করি না যে, শঙ্কাটা একেবারে দূর হয়ে গেছে। তবে নির্বাচন ‘গ্রহণযোগ্য’ না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কী ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেবে বা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নেবে কি-না, সেটি বুঝতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। সূত্র : বিবিসি

হককথা/নাছরিন