পাকিস্তানের সঙ্গে হাসিনা-পরবর্তী সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশে সতর্ক আশাবাদ
- প্রকাশের সময় : ১২:০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৩১ বার পঠিত
আগস্টে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের তিক্ত সম্পর্কের পর ঢাকা ও ইসলামাবাদ একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব জোরদার করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনীতির ‘নতুন দিগন্ত’ উন্মোচিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষক, রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে দুইবার সাক্ষাৎ করেছেন।
হাসিনার সরকার পাকিস্তানের প্রতি বৈরী ছিল। তবে তিনি ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন, যেখানে নির্বাসিত রয়েছেন। তাকে ক্ষমতাচ্যুতর পর ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্কের শীতল হওয়ায় ইসলামাবাদের সঙ্গে বিনিময় বাড়তে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি প্রক্রিয়া। নানা কারণে গত ১৫ বছরে সম্পর্ক স্বাভাবিক মাত্রার নিচে ছিল। এখন সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা দুই রাষ্ট্রের মধ্যে স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, ভারত চাইলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবে দেখতে পারে। ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এটিকে নেতিবাচকভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। আমরা চাই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক পাকিস্তানের সঙ্গে ইস্যু দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিবেচনা করা হোক। একইভাবে ভারতের সঙ্গে যে কোনো ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাধীনভাবে চলবে। আমি মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কের ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনবে। যেসব রাজনৈতিক দল হাসিনার আওয়ামী লীগের বিরোধী ছিল – চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবং বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যাদের হাসিনার শাসনামলে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল – উভয়ই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে আশাবাদী। হুমায়ুন কবির বলেন, বিগত সরকারের সময় শেখ হাসিনা কেবল একটি দেশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তার নিজের ভাষায়, ‘বাংলাদেশ ভারতকে যা দিয়েছে, ভারত তা চিরদিন মনে রাখবে।’
জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, এই পররাষ্ট্রনীতি সঠিক পদক্ষেপ ছিল না। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমিরও বাংলাদেশ-পাকিসান্তের মধ্যে ‘আগের মতো স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু করার’ বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি এখনো জীবন্ত। জামায়াতে ইসলামী তখন একটি সক্রিয় রাজনৈতিক দল ছিল এবং যুদ্ধের সময় স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করে পাকিস্তানের সঙ্গে জোটবদ্ধ ছিল।
অন্যদিকে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান, যিনি বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একজন বিশিষ্ট কমান্ডার এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা উভয় পক্ষের জন্য একটি স্বাগত অগ্রগতি হলেও সাধারণ বাংলাদেশিরা এটিকে সতর্কতার সঙ্গে দেখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুস্তাফা মুশফিক তালুকদার বলেন, আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং আমি মনে করি এটি একটি আঞ্চলিক শক্তি হওয়ার সুযোগ। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, পাকিস্তানকে আগে ১৯৭১ সালের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তবে এটি আনুষ্ঠানিক কিছু ছিল না। তাই আমরা পাকিস্তান ১৯৭১ সালে যা কিছু করেছিল, তার জন্য তাদের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা দাবি করছি। ঢাকার গবেষক তামিম মুনতাসীরের কাছেও সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া জরুরি বলে মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি পাকিস্তানের সঙ্গে সুযোগের নতুন দিগন্ত তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সমর্থন করা উচিত। আঞ্চলিক অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একই সারিতে…মানুষে-মানুষে সম্পর্কের বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
কয়েক মাস ধরেই এ ধরনের কথা-বার্তা চলছে। ডিসেম্বর থেকে ঢাকায় পাকিস্তানের সিনেমা এবং বাংলাদেশের সিনেমা দেখানো হচ্ছে পাকিস্তানের হলে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজও বাংলাদেশের প্রধান চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে শুরু করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি বেশ ইতিবাচক। আমি বলছি না যে, সবাইকে ক্ষমা করে দিতে হবে। তারপরও আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে পারি।
তিনি বলেন, ক্রিকেটে আমরা সেটা দেখেছি: বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থন করছে, পাকিস্তানের জনগণও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সমর্থন করছে। আমরা এই সাদৃশ্যগুলো উদযাপন করতে পারি এবং এটি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জনগণকে একত্রিত করতে পারে। সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক।