আন্দোলনেই সমাধান চায় বিএনপি
- প্রকাশের সময় : ০৫:৫৮:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৫৯ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কিছু ছেদ পড়েছে বিএনপির একদফার আন্দোলনে। কালো পতাকা মিছিল ও গণসংযোগের বাইরে এ পর্যন্ত বড় কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। বলা হচ্ছে-সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। দলীয় সূত্রের দাবি-নানা কারণে এবার কর্মসূচি ঘোষণা হবে ভেবেচিন্তে। এসএসসি পরীক্ষা ও রমজানের কারণে শিগগিরই বড় কর্মসূচিতে যেতে পারছে না দলটি। এজন্য নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত ও সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চলছে নানা পরিকল্পনা। সুবিধাজনক সময়ে টানা কর্মসূচিও দেওয়ার চিন্তা রয়েছে নীতিনির্ধারকদের। এর আগে পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সময়ে সময়ে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি দিবে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, কারাবন্দি দলের শীর্ষনেতাদের বেশিরভাগ নেতার মুক্তি মিলেছে। এখন ২৮ অক্টোবরের আগে-পরের বিষয়াদি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও ভূরাজনৈতিক সমীকরণ মিলিয়ে নতুন করে একদফা কর্মসূচির চিন্তা করছে বিএনপি। এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। যাতে কর্মসূচি পালনে কোনো ধরনের দুর্বলতা না থাকে। গত বছরের শেষের দিকে ‘কার্যকরী কর্মসূচি’ না দেওয়া ও শীর্ষ-কেন্দ্রীয় নেতাদের আত্মগোপনে চলে যাওয়ার ঘটনায় বিব্রত খোদ দলটির অনেক নীতিনির্ধারক। এমন পরিস্থিতিতে ‘হাস্যকর’ কোনো কর্মসূচিতে নতুন করে যেতে চাচ্ছেন না বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর নেতারা।
নীতিনির্ধারণী ফোরামের একজন সদস্য জানান, ২৮ অক্টোবর তাণ্ডবে গ্রেফতার হওয়া শীর্ষনেতাদের অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন। বেশ কয়েকজন এখনও কারাবন্দি। এই মুহূর্তে হুট করে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নিবে না বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কারামুক্ত শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি এই সময়ে আন্তর্জাতিক মহলে দলীয় তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে জোর দেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূল মনে হলে কঠোর কর্মসূচির চিন্তা থাকবে। এজন্য সুসময়ের অপেক্ষা করতে হবে নেতাকর্মীদের। এই নীতিনির্ধারক আরও বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। সেই সুযোগ বেশিদিন পাবে না। বিগত সময়ে বিএনপির আন্দোলন যখন চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে, তখন সরকার রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে তা পণ্ড করতে সক্ষম হয়েছে। বিএনপি এবার একাধিক প্ল্যান (পরিকল্পনা) নিয়ে মাঠে নামবে। সরকার ফাঁদ পাতলেও তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি পালটে যাবে। সে অনুযায়ী দল ও অঙ্গসংগঠনকে সাজানো হবে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন চলমান রয়েছে। রুটিন কর্মসূচি চলছে। নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো দেওয়া হয়নি। দলের সিদ্ধান্ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আন্দোলনে রয়েছে। এই একদফার আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। এটা শুধু বিএনপির আন্দোলন নয়, গণমানুষের আন্দোলন। আমরা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ফিরে পাওয়ার যে প্রত্যাশা, সেটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এটা সফল না হওয়া পর্যন্ত অন্তত দল হিসাবে আমাদের যে অগ্রযাত্রা, সেটি অব্যাহত থাকবে। আমরা একদফার আন্দোলনে আছি। যত দিন পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে সফলতা না আসবে, আন্দোলন চলবে। এখানে সরকার গঠন, বিরোধী দল বিষয় না। মূল কথা হচ্ছে-এখানে বাংলাদেশের মানুষ তাদের মালিকানা ফিরে পাবে।’
গত বছরের জুলাই মাসে একদফার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে ছিল বিএনপি। পরবর্তী সময়ে রাজধানীসহ সারা দেশে কঠোর কর্মসূচি পালন করে দলটি। যুগপৎভাবে একই কর্মসূচি পালন করেছে সমমনা ৩৬টি দলও। ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত হরতাল, অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলনও পালন করেছে দলগুলো। ঘোষিত কর্মসূচিগুলোর মূল্যায়ন প্রসঙ্গে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অবশ্যই উপযুক্ত কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে। মূল বিষয়টা হচ্ছে জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়ার। বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য সমমনা দলগুলোর ঐক্যবদ্ধভাবে এসব কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। প্রত্যাশিত কর্মসূচি অনেক দেওয়া হয়েছে। এমন নিপীড়ন-নির্যাতনের মুখেও বিএনপি এখনো তার জায়গা থেকে সরে দাঁড়ায়নি। সেখান থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির দাবি-৭ জানুয়ারির নির্বাচন পশ্চিমাসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। ‘একতরফা’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করলেও জাতিসংঘসহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিষয়ে তাদের নৈতিক অবস্থান থেকে মোটেও সরেনি। বরং ৭ জানুয়ারির পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রহীনতা, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণ এবং সুশাসনের অভাবের বিষয়টি বিদেশিদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অভ্যন্তরীণ ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান কাজে লাগাতে পারলে সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। এতে লক্ষ্য অর্জন ত্বরান্বিত হবে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। পরে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) পিটার হাস ও মঈন খানের ছবি প্রকাশ করে বৈঠকের বিষয়টি জানায় মার্কিন দূতাবাস। সেখানে মার্কিন দূতাবাস লিখে, ‘ঢাকা দূতাবাস গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, সহনশীলতা, সুশাসন ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটে যখন সব কণ্ঠের আওয়াজ শোনা যায়। বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা আনন্দিত।’ যদিও মঈন খান জানিয়েছেন, পিটার হাসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। এ সময় গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, কূটনীতিকরা বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। বিএনপির আন্দোলন ও সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। সম্প্রতি এক-দুটি বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ থেকে উত্তরণের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার কেন প্রয়োজনীয় তার বিস্তারিত কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরে বিএনপি। এছাড়া ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী সময়ের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সরকারের নানা দমনপীড়ন ও ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রের চিত্র, দেশের অর্থনীতি লুটপাটসহ নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার বর্ণনা কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠন করলেও বিএনপির আন্দোলন চলমান রয়েছে। সরকার আগামী ৫ বছর ক্ষমতায় টিকে থাকবে এমনটা ভাবা ঠিক নয়। যে কোনো সময় যে কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনগণের মুক্তিতে একদফা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এছাড়া বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দলের একাধিক নেতা প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেন, সরকারের পদত্যাগের দাবি আরও জোরালো করতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে কার্যকরী কর্মসূচি আসবে। এজন্য ভেবেচিন্তে অনেকটা ধীরগতিতে এগোতে চান নেতারা। সূত্র : যুগান্তর
হককথা/নাছরিন