নিউইয়র্ক ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বীর বাঙালি মুক্তির শপথে অনড়

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৪৬:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
  • / ৬৩ বার পঠিত

অগ্নিঝরা মার্চের ২১তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকা। ক্ষোভ বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে। মুক্তি অর্জনের শপথে অনড় বীর বাঙালি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সবাই প্রস্তুতি নিতে থাকে চূড়ান্ত লড়াইয়ের। এদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে। ঢাকার মগবাজারে মহিলা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মহিলা সমাবেশে সেনাবাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারা-মিলিটারি গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

১৯৭১ সালের ২১ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের পঞ্চম দফা বৈঠক হয়। ৭০ মিনিটের ওই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত কিছু জানাননি বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, আগের বৈঠকের আলোচনায় উদ্ভূত কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যার জন্য এই বৈঠক। এর আগে ধানমন্ডির বাসভবনে পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌঁসুলি এ কে ব্রোহির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বসেন বঙ্গবন্ধু।

এদিন ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত মিছিল কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার অভিমুখে এগিয়ে চলে। সেখান থেকে মুক্তি অর্জনের শপথ নিয়ে মিছিল যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। বিকালে বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বুলেট-বেয়নেট দ্বারা সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দাবিকে স্তব্ধ করা যাবে না। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। নীতির প্রশ্নে কোনোই আপস নেই এবং আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। গুজব ও বিভেদ সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’

বিকালে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচি থেকে ঢাকায় আসে। ভুট্টোর আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়। সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। ভুট্টোকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে আসার সময় রাস্তার দুপাশের পথচারীরা ভুট্টোবিরোধী স্লোগান দেয়। সন্ধ্যায় ভুট্টো কড়া সেনা প্রহরায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। সেখানে ভুট্টো দুঘণ্টারও বেশি সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন।

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরেই ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এর আগে হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, এ মুহূর্তে আমি এটুকু বলতে পারি যে, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। ভুট্টো সাংবাদিকদের আর কোনো সময় না দিয়ে সরাসরি লিফটে চড়েন। সাংবাদিকরা তার সহগামী হতে চাইলে ভুট্টোর ব্যক্তিগত প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেয়।

এদিন চট্টগ্রামে ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পোলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বলেন, আলোচনায় ফল হবে না। এ দেশের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে চাপরাসি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেওয়া উচিত। ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে জারি করা কারফিউ এদিন দুপুর ১২টায় ৬ ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনরায় কারফিউ বলবৎ করা হয়। সূত্র : যুগান্তর

হককথা/নাছরিন

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

বীর বাঙালি মুক্তির শপথে অনড়

প্রকাশের সময় : ০৪:৪৬:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

অগ্নিঝরা মার্চের ২১তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকা। ক্ষোভ বাড়তে থাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে। মুক্তি অর্জনের শপথে অনড় বীর বাঙালি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সবাই প্রস্তুতি নিতে থাকে চূড়ান্ত লড়াইয়ের। এদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে। ঢাকার মগবাজারে মহিলা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মহিলা সমাবেশে সেনাবাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারা-মিলিটারি গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

১৯৭১ সালের ২১ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের পঞ্চম দফা বৈঠক হয়। ৭০ মিনিটের ওই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত কিছু জানাননি বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, আগের বৈঠকের আলোচনায় উদ্ভূত কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যার জন্য এই বৈঠক। এর আগে ধানমন্ডির বাসভবনে পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌঁসুলি এ কে ব্রোহির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বসেন বঙ্গবন্ধু।

এদিন ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত মিছিল কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার অভিমুখে এগিয়ে চলে। সেখান থেকে মুক্তি অর্জনের শপথ নিয়ে মিছিল যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। বিকালে বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বুলেট-বেয়নেট দ্বারা সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দাবিকে স্তব্ধ করা যাবে না। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। নীতির প্রশ্নে কোনোই আপস নেই এবং আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। গুজব ও বিভেদ সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’

বিকালে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচি থেকে ঢাকায় আসে। ভুট্টোর আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়। সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। ভুট্টোকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে আসার সময় রাস্তার দুপাশের পথচারীরা ভুট্টোবিরোধী স্লোগান দেয়। সন্ধ্যায় ভুট্টো কড়া সেনা প্রহরায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। সেখানে ভুট্টো দুঘণ্টারও বেশি সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন।

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরেই ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এর আগে হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, এ মুহূর্তে আমি এটুকু বলতে পারি যে, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। ভুট্টো সাংবাদিকদের আর কোনো সময় না দিয়ে সরাসরি লিফটে চড়েন। সাংবাদিকরা তার সহগামী হতে চাইলে ভুট্টোর ব্যক্তিগত প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেয়।

এদিন চট্টগ্রামে ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পোলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বলেন, আলোচনায় ফল হবে না। এ দেশের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে চাপরাসি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেওয়া উচিত। ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে জারি করা কারফিউ এদিন দুপুর ১২টায় ৬ ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনরায় কারফিউ বলবৎ করা হয়। সূত্র : যুগান্তর

হককথা/নাছরিন