নিউইয়র্ক ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪, ১১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ছাত্রীদের ওপর হামলা : নারী নেত্রীরা নীরব?

হককথা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০১:১৬:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
  • / ৭৬ বার পঠিত

দৃশ্যটা এমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন ছাত্রী দৌড়াচ্ছেন পেছনে পেটাতে পেটাতে দৌড়াচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পিটুনির মধ্যে রক্তাক্ত ছাত্রীরা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন তারপরও তাকে পেটানো হচ্ছে। ছাত্রলীগের হেমলেট বাহিনীর তাড়া খেয়ে কয়েকজন ছাত্রী ছুটছেন। দৌড়াতে দৌড়াতে পিছনে থাকা ছাত্রীকে বেদম পেটাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

পিটুনি খেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মিডিয়ার সামনে নিজের ওপর বিভৎস নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরছেন একজন ছাত্রী। ভয়াবহ এ দৃশের ছবি গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে এবং ভিডিও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যপিঠে পড়তে আসা ছাত্রীদের ওপর এমন অমানসিক নির্যাতন হয়েছে অথচ পশ্চিমাদের টাকায় হৃষ্টপুষ্ট তথাকথিত নারী নেত্রীরা নীরব। পান থেকে চুন খসলেই যে নেত্রীরা নারীর অধিকার নিয়ে হৈচৈ ফেলে দেন; নারীর প্রতি নির্যাতনের প্রতিবাদ রাস্তায় নামেন সে নারী নেত্রীরা নীরব কেন এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলেছেন।

২০১৮ সালে টিভির এক টকশোতে এক নারী সাংবাদিক ক্ষমতাসীন সরকারের স্তুতি করায় প্রতিবাদ করে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিতর্কিত মন্তব্যের পর ‘নারী অবমাননার’ অভিযোগ তুলে যে ভাবে নারীর অধিকার নিয়ে রাজপথে সোচ্চার হয়েছিলেন সেই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, বা ফৌজিয়া মোসলেম, অ্যাকশন এইড-বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, আইন বিচার ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক প্রধান নির্বাহী সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা মালেকা বেগম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর শাহীন আনাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, এলিনা খান, আইনজীবী তানিয়া আমীরসহ এসব তথাকথিত চেতনাধারী নারী নেত্রীরা কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের ছাত্রীদের নারী মনে করেন না? পশ্চিমা টাকায় এনজিওকে আওয়ামীকরণ করে এখন মধু খেতে ব্যস্ত। এই ‘সিলেকটিভ নারীবাদীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিস্তর মন্তব্য লেখা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শামসুন্নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সানজানা আফিফা বলেন, ‘অন্তত ৫০০ ছাত্রলীগ কর্মী আমাদের ধাওয়া দিলে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই, যে যার মতো দৌড়াচ্ছি। কেউ টিনের ফাঁকে, কেউ বাসের ফাঁকে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাদেরকে খুঁজে খুঁজে মারা হয়েছে।’ তিনি নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি ভিসি চত্বরে গিয়ে দেখি, সেখানে চারদিক থেকে পেটাচ্ছে। ছাত্রীদের ওড়না টেনে ধরে পেটাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মলচত্বরে কমপক্ষে সাতজন মেয়ে হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়ে এবং ছাত্রলীগের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। শামসুন্নাহার হল থেকে আন্দোলনে যাওয়া কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন’।

আরেকজন ছাত্রী বলেন, ‘২০-২৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী আমাকে ঘিরে ধরে। এক ছেলে লাঠি হাতে আমার দিকে আঙুল তুলে চিৎকার করে বলেছে, ‘তোকে আমি টিভিতে দেখছি। তোর কথা শুনছি। তোকে মাইরা ফেলব।’ আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে তাদেরকে বলি আমাকে মারবেন না প্লিজ। যেতে দেন। আমি সেখান থেকে দৌড়াতে থাকি, তারাও আমার পেছনে লাঠি নিয়ে দৌড়াতে থাকে।’ বেগম রাকেয়া হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যারা আমাদের মারছিল তারা বহিরাগত, দেখে শিক্ষার্থী মনে হয় না। ভিসি চত্বরে ইটের আঘাতে আমার বান্ধবী মাথায় আঘাত পায়। তাকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমি মাথায় ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখি। কোনদিকে দৌড়াচ্ছি জানি না। সবাই যেদিক যাচ্ছে সেদিকেই যাচ্ছি। পেছনে একটা মেয়ে পড়ে যায়। ছাত্রলীগের ছেলেরা ওকে মাটিতে ফেলেই মারতে থাকে লাঠি দিয়ে। আমি আরও কয়েকজনের সঙ্গে কোনোমতে এসএম হলে ঢুকে যাই।’ আহত আরেক ছাত্রী জানান, ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়ে এসএম হলের ভেতরে ঢুকে মেয়েরা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে । একজন আপু কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলেন, তার হিজাব টেনে গলায় ফাঁসের মতো করে রেখেছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তাকে আমরা শান্ত করার চেষ্টা করি। ছেলেদের হলের কর্মচারীদের ঘরের পেছনে আমরা চুপ করে লুকিয়ে থাকি। রক্তাক্ত কয়েকজনও সেখানে ছিল। আপুরা মুখ চেপে কাঁদছিল। কারণ কান্নার আওয়াজ বাইরে গেলে আবার মার খেতে হবে।’

ঢাবির রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল ও সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা জানান, হল থেকে যারাই বিক্ষোভ সমাবেশে গিয়েছিল, তাদের অধিকাংশই মার খেয়েছেন, কেউ কেউ রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন। ইডেন কলেজে ছাত্রীদের ওপর হামলা হয়েছে। সূত্র: ইনকিলাব।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

ছাত্রীদের ওপর হামলা : নারী নেত্রীরা নীরব?

প্রকাশের সময় : ০১:১৬:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪

দৃশ্যটা এমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন ছাত্রী দৌড়াচ্ছেন পেছনে পেটাতে পেটাতে দৌড়াচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পিটুনির মধ্যে রক্তাক্ত ছাত্রীরা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন তারপরও তাকে পেটানো হচ্ছে। ছাত্রলীগের হেমলেট বাহিনীর তাড়া খেয়ে কয়েকজন ছাত্রী ছুটছেন। দৌড়াতে দৌড়াতে পিছনে থাকা ছাত্রীকে বেদম পেটাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

পিটুনি খেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মিডিয়ার সামনে নিজের ওপর বিভৎস নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরছেন একজন ছাত্রী। ভয়াবহ এ দৃশের ছবি গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে এবং ভিডিও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যপিঠে পড়তে আসা ছাত্রীদের ওপর এমন অমানসিক নির্যাতন হয়েছে অথচ পশ্চিমাদের টাকায় হৃষ্টপুষ্ট তথাকথিত নারী নেত্রীরা নীরব। পান থেকে চুন খসলেই যে নেত্রীরা নারীর অধিকার নিয়ে হৈচৈ ফেলে দেন; নারীর প্রতি নির্যাতনের প্রতিবাদ রাস্তায় নামেন সে নারী নেত্রীরা নীরব কেন এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলেছেন।

২০১৮ সালে টিভির এক টকশোতে এক নারী সাংবাদিক ক্ষমতাসীন সরকারের স্তুতি করায় প্রতিবাদ করে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিতর্কিত মন্তব্যের পর ‘নারী অবমাননার’ অভিযোগ তুলে যে ভাবে নারীর অধিকার নিয়ে রাজপথে সোচ্চার হয়েছিলেন সেই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, বা ফৌজিয়া মোসলেম, অ্যাকশন এইড-বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, আইন বিচার ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক প্রধান নির্বাহী সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা মালেকা বেগম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর শাহীন আনাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, এলিনা খান, আইনজীবী তানিয়া আমীরসহ এসব তথাকথিত চেতনাধারী নারী নেত্রীরা কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজের ছাত্রীদের নারী মনে করেন না? পশ্চিমা টাকায় এনজিওকে আওয়ামীকরণ করে এখন মধু খেতে ব্যস্ত। এই ‘সিলেকটিভ নারীবাদীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিস্তর মন্তব্য লেখা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শামসুন্নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সানজানা আফিফা বলেন, ‘অন্তত ৫০০ ছাত্রলীগ কর্মী আমাদের ধাওয়া দিলে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই, যে যার মতো দৌড়াচ্ছি। কেউ টিনের ফাঁকে, কেউ বাসের ফাঁকে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাদেরকে খুঁজে খুঁজে মারা হয়েছে।’ তিনি নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি ভিসি চত্বরে গিয়ে দেখি, সেখানে চারদিক থেকে পেটাচ্ছে। ছাত্রীদের ওড়না টেনে ধরে পেটাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মলচত্বরে কমপক্ষে সাতজন মেয়ে হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়ে এবং ছাত্রলীগের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। শামসুন্নাহার হল থেকে আন্দোলনে যাওয়া কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন’।

আরেকজন ছাত্রী বলেন, ‘২০-২৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী আমাকে ঘিরে ধরে। এক ছেলে লাঠি হাতে আমার দিকে আঙুল তুলে চিৎকার করে বলেছে, ‘তোকে আমি টিভিতে দেখছি। তোর কথা শুনছি। তোকে মাইরা ফেলব।’ আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে তাদেরকে বলি আমাকে মারবেন না প্লিজ। যেতে দেন। আমি সেখান থেকে দৌড়াতে থাকি, তারাও আমার পেছনে লাঠি নিয়ে দৌড়াতে থাকে।’ বেগম রাকেয়া হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যারা আমাদের মারছিল তারা বহিরাগত, দেখে শিক্ষার্থী মনে হয় না। ভিসি চত্বরে ইটের আঘাতে আমার বান্ধবী মাথায় আঘাত পায়। তাকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমি মাথায় ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখি। কোনদিকে দৌড়াচ্ছি জানি না। সবাই যেদিক যাচ্ছে সেদিকেই যাচ্ছি। পেছনে একটা মেয়ে পড়ে যায়। ছাত্রলীগের ছেলেরা ওকে মাটিতে ফেলেই মারতে থাকে লাঠি দিয়ে। আমি আরও কয়েকজনের সঙ্গে কোনোমতে এসএম হলে ঢুকে যাই।’ আহত আরেক ছাত্রী জানান, ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়ে এসএম হলের ভেতরে ঢুকে মেয়েরা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে । একজন আপু কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলেন, তার হিজাব টেনে গলায় ফাঁসের মতো করে রেখেছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তাকে আমরা শান্ত করার চেষ্টা করি। ছেলেদের হলের কর্মচারীদের ঘরের পেছনে আমরা চুপ করে লুকিয়ে থাকি। রক্তাক্ত কয়েকজনও সেখানে ছিল। আপুরা মুখ চেপে কাঁদছিল। কারণ কান্নার আওয়াজ বাইরে গেলে আবার মার খেতে হবে।’

ঢাবির রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল ও সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা জানান, হল থেকে যারাই বিক্ষোভ সমাবেশে গিয়েছিল, তাদের অধিকাংশই মার খেয়েছেন, কেউ কেউ রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল থেকে চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন। ইডেন কলেজে ছাত্রীদের ওপর হামলা হয়েছে। সূত্র: ইনকিলাব।