ঢাকায় ফেরার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কানাডায় গেছেন রাষ্ট্রদূত হারুন রশিদ

- প্রকাশের সময় : ০২:৫২:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
- / ৩৫ বার পঠিত
মরক্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদকে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর দেশে ফিরে ‘অনতিবিলম্বে’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নানা অজুহাতে দেশে ফেরা বিলম্বিত করে তিনি চলে যান কানাডায়। সেখান থেকে আজ শুক্রবার ফেসবুকে এক পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন তিনি। মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ড. ইউনূসের অধীনে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত বাংলাদেশ—বিশ্বের নীরবতা বেদনাদায়ক’।
ঢাকায় না এসে কানাডায় চলে যাওয়া বাংলাদেশের এই পেশাদার কূটনীতিক বলছেন, ‘৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈধ সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।’ প্রায় তিন মাস আগে সরকারের দাপ্তরিক আদেশ অগ্রাহ্য করে অন্য দেশে চলে গিয়ে নিজেকে ‘নির্বাসিত’ দাবি করা এই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে সরকার। শুক্রবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অন্য দেশে চলে যাওয়া কূটনীতিক এবং তাঁর পরিবারের পাসপোর্ট বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়। সাবেক কয়েকজন কূটনীতিক মরক্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হারুন আল রশিদের মন্ত্রণালয়ের আদেশ অগ্রাহ্য করে অন্য দেশে চলে যাওয়া এবং সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি বিষোদ্গারকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন। কারণ, চাকরিতে থাকা অবস্থায় কোনো কূটনীতিকের এমন ভূমিকা অকল্পনীয় বলে তাঁদের মত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির প্রসঙ্গ টেনে সাবেক একাধিক কূটনীতিক মন্তব্য করেছেন, ডিসেম্বরে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দিয়ে এই তিন মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো হাত গুটিয়ে বসে ছিল। তা ছাড়া ঢাকায় না এসে প্রায় আড়াই মাস মরক্কোর দায়িত্ব ছেড়ে তিনি কোথায় গেলেন, সেই খোঁজ কি মন্ত্রণালয় নিয়েছিল? আর তিনি যে কানাডায় গেলেন, এটা কি ছুটি নিয়ে গেলেন? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তো এ বিষয়ে দায় এড়াতে পারে না। কাজেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে, সেটা অনেক অনেক দেরিতে নেওয়া হলো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মরক্কোতে বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ হারুন আল রশিদ তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে একটি লেখা পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি পূর্ববর্তী নিপীড়ক ফ্যাসিবাদী সরকারের গুণকীর্তনের পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে গত ৫ আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশে পরিস্থিতি ক্রমে নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে চিত্রিত করার অপচেষ্টা করেছেন। পোস্টে হারুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ, প্রচেষ্টাসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এবং বাস্তবতাকে সম্পূর্ণরূপে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ফেসবুকে এ ধরনের লেখা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এর বিষয়বস্তু গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এরূপ রচনা লেখকের গোপন উদ্দেশ্য বা অসৎ অভিসন্ধির ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পরিবর্তে তিনি কানাডায় চলে যান এবং সেখান থেকে ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করেন। তিনি তাঁর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে নিজেকে ‘নির্যাতিত কূটনীতিক’, ‘নির্বাসিত ঔপন্যাসিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা মূলত বিদেশে সহানুভূতি অর্জনের অভিপ্রায়ে করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের পাসপোর্টগুলো বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। মন্ত্রণালয় মোহাম্মদ হারুন আল রশিদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, মন্ত্রণালয় তার কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবে প্রশ্রয় দেয় না এবং ভবিষ্যতেও যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।