নিউইয়র্ক ০৭:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
গাজীপুরে দুই বাড়িতে কথিত উগ্রবাদী আস্তানা

৭ জনকে হত্যা করতে ৮৩০ রাউন্ড গুলি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩৪:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫
  • / ৪১ বার পঠিত

এস এম মিন্টু ও নুরুল ইসলাম রইসী : 

  • ক্ষমতার লোভে ৭ তরুণকে উগ্রবাদী সাজিয়ে হত্যার পুরোধা পুলিশ কর্মকর্তা হারুন
  • মামলা, সুরতহাল প্রতিবেদন চার্জশিট সবই সাজানো

২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর। ভোরের কাক তখনো ডাকা শুরু করেনি। তার আগেই গাজীপুরে নোয়াগাঁও আফারখোলা পাতারটেক এলাকায় সোলায়মান সরকারের বাড়িতে উগ্রবাদবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, ডিবি, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিসিটিসি) এবং বিশেষায়িত সোয়াট টিমের সদস্যরা যুদ্ধংদেহী কায়দায় পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। স্থানীয় বাসিন্দারা একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে চার দিকে যুদ্ধ যুদ্ধভাব দেখে ভড়কে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন মহড়ায় পুরো এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় আতঙ্কের। সবার মনেই প্রশ্ন আর কৌতূহল- কী হতে চলেছে? তাদের কেউ কেউ এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি মারতে থাকলে একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন। কেউ অযথা ঘোরাফেরা করবেন না, ভিড় করবেন না। এখানে উগ্রবাদীদের আস্তানা রয়েছে, কেউ আতঙ্কিত হবেন না। উগ্রবাদীরা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে।’

এরপর দিনভর চলে উগ্রবাদী নিধনের নাটক। ‘অপারেশন স্পেট এইট’ নামের ওই অভিযানে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। গোলাগুলির শব্দের পর বিকেলে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, বাড়িটির একটি ফ্ল্যাটে সাতজন ‘জঙ্গি’ রয়েছে। এরপর ঢাকা থেকে ওই এলাকা পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি, সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম ও নানা বিতর্কের জন্ম দেয়া পুলিশ কর্মকর্তা (তখন গাজীপুরের এসপি) হারুন অর রশীদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর বাড়িটির সামনেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখানে দুর্ধর্ষ উগ্রবাদীরা বড় নাশকতার জন্য অবস্থান নিয়েছিল। তাদের কাছে গ্রেনেড, বিস্ফোরক ও অস্ত্র রয়েছে। তিনি সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তাদের লাশ সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় শহীদ তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরের দিন ৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় ডিএমপির পক্ষ থেকে গুলিতে নিহত সাতজনের ক্ষতবিক্ষত ছবি প্রকাশ করে বলা হয় তাদের পরিচয় জানলে পুলিশকে যেন জানানো হয়।‘তখনই এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যাদের নৃসংশভাবে হত্যা করা হলো তারা আসলে কারা? যাদের পরিচয় মিলেছে পুলিশ তাদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কবরস্থানে দাফন করে।

আট বছর আগের সেই অভিযানের অনুসন্ধানে নেমে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে। মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধান আর মামলার নথি ঘেটে মিলেছে অসংখ্য অসামঞ্জস্য। ‘অপারেশন স্পেট এইট’ নামে অভিযানে পুলিশের বরাতে যে বয়ান দেয়া আছে তাতে নিহতদের তিনজনের স্বজন, প্রত্যক্ষদর্শী-সাক্ষী ও স্থানীয়রাও বলছেন ভিন্ন কথা। সেদিন যে সাতজন নিহত হয়েছেন তার মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানতে পেরেছে। তারা হলেন- সাইফুর রহমান বাবুল। পিতা মতিউর রহমান। তার বাড়ি- সুনামগঞ্জের ছাতক থানার দক্ষিণ সুরমা এলাকার মনিরগাথি গ্রামে। নিহত ফরিদুল ইসলাম আকাশের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বড়ইতলা গ্রামে। তার পিতার নাম আবু সাঈদ। নিহত ইব্রাহীম বিন আজিমের বাড়ি রাজধানীর বংশালের ৫৪ নম্বর পুরনো মোগলটুলিতে। পিতার নাম আজিম উদ্দীন। তাদের মধ্যে বর্তমানে সিলেট শহরের একটি বাসায় বসবাস করেন নিহত বাবুলের পরিবার।বাবুলের বাবার সাথে কথা হয়। এ সময় ছেলের মৃত্যুর কথা মনে করে বারবার ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। বলেন, ২০১৬ সাল ছেলেকে নাটকীয় কায়দায় উগ্রবাদী সাজিয়ে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। বৃদ্ধ মতিউর রহমান জানান, তার ছেলে বাবুল সিলেট শহরে ফুফুর বাসায় থেকে পড়ালেখা করত। মায়ের অসুস্থতার খবরে বাসায় ফেরার সময় নিখোঁজ হয় সে। সেই থেকে আর খোঁজ মেলেনি তার।

তিনি বলেন, আমরা পরে জানতে পারি গাজীপুরের পাতারটেকে উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে তার ছেলে মারা গেছে। অথচ তিন মাস আগে নিখোঁজ হয় বাবুল। এই তিন মাস কোথায় ছিলেন? কারা তাকে ধরে নিয়ে গেল? উগ্রবাদী হলো কবে থেকে? কিছুই জানে না কেউ। বরং এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। জানা গেছে, সিলেটের পার্ক ইন্টারন্যাশনাল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন বাবুল। রাজনীতির সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততাও ছিল না। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে অনেক বড় হবে। সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে বাবুলের বাবা-মায়ের। একই ঘটনায় নিহত ইব্রাহিম তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট নিখোঁজ হন। সেদিন ফজরের নামাজ পড়তে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। ছেলের খোঁজে পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞাপন দেন স্বজনরা। রথ্যাব, ডিবি, সিআইডি, সিটিটিসির কাছে খোঁজ নিয়ে ইব্রাহীমের কোনো সন্ধান পাননি তারা।

ইব্রাহীমের বাবা মোহাম্মাদ আজিম উদ্দীন বলেন, সিটিটিসির কাছে গেলে তারা বলেন, তামিরুল মিল্লাত ও যাত্রাবাড়ীর মাদরাসা উগ্রবাদীদের টার্গেট। আপনার আরেক ছেলেও সেখানে পড়ে। তাকে না পড়ানোই ভালো। তিনি বলেন, ইব্রাহীম অনেক ভালো ছিল। ইসলামের পথে মানুষকে আহ্বান করত। ইসলামের পথে মানুষকে ডাকাই কি আমার ছেলের অপরাধ? কোথাও ছেলের সন্ধান না পেয়ে পরের দিন থানায় জিডি করেন আজিম উদ্দীন। পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞাপন দিয়েও কাজ হয়নি। ঠিক দুই মাস পর গাজীপুরের পাতারটেকে উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে ইব্রাহিমের মারা যাওয়ার খবর পান। ইব্রাহীম অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি ও প্রতিবাদী ছিলেন। আজিম উদ্দিন ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি। মা আলেয়া বেগম কুরআনের হাফেজ। ফলে ইব্রাহিমের মৃত্যুর পর আরো বেশি চাপে পড়ে পরিবারটি। ইব্রাহীমের মা জানান, সন্তানের মৃত্যু নিয়ে কোনো কথা বলতে পারেননি, জানতে পারেননি কোনো প্রমাণের ভিত্তিতে উগ্রবাদী অপবাদ দিয়ে খুন করা হলো?

ইব্রাহীমের বড় ভাই আহমেদ আব্দুল্লাহর মনেও ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রশ্ন। তিনি বলেন, উগ্রবাদী ঘটনা সাজানো নাটক ছাড়া অন্য কিছুই ছিল না। তার ভাইয়ের উগ্রবাদীদের সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তিনি পত্রিকায় ছবি দেখে গাজীপুরে ইব্রাহীমের লাশ আনতে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু লাশ ফেরত দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ওই সময় মিডিয়াতে বক্তব্য দেন নিহতরা সবাই উগ্রবাদী ছিলেন। ইব্রাহীমের স্বজনরা বলেন, এত এত প্রমাণ থাকার পর লাশ অজ্ঞাত বলে দাফন করে পুলিশ। অথচ উগ্রবাদী হলেও লাশ ফেরত পাওয়া তো পরিবারগুলোর আইনি অধিকার। অথচ ‘অপারেশন স্পেট এইট’ অভিযানের নামে পরিবারগুলোকে সেই অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।

সেদিনের ঘটনায় পাতারটেকের কথিত উগ্রবাদী আস্তানায় অভিযানের বিষয়ে কাগজপত্রের তথ্য বলছে, অভিযানে অংশ নেয়া সিটিটিসির সোয়াট টিমের অন্তত ২১ সদস্য পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে বিপিএম ও পিপিএম পদক পান। সেই অভিযানে ৮৩০ রাউন্ড গুলি চালায় সোয়াটের ২৬ সদস্য। যদিও অভিযান নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি সোয়াটের তৎকালীন দলনেতা এস এম জাহাঙ্গীর হাসান। নৌ পুলিশে কর্মরত সোয়াট কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ওই সময় একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে, ডান বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবি করেছিলেন। তবে পুলিশ প্রতিবেদনে কিংবা সোয়াটের করা সাধারণ ডাইরিতে গুলির তথ্য নেই। সেদিন গুলিবিদ্ধ দাবি করা আরেকজন হলেন- এএসআই আব্দুল হান্নান। সোয়াটের সাধারণ ডাইরিতে আহত হওয়া এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে দাবি করা হয়।

এসআই হান্নান বর্তমানে গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় কর্মরত। উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, অথচ সেই অভিযান মনেই করতে পারছেন না এসআই হান্নান। বুকে এবং হাতে গুলিবিদ্ধ দাবি করা জাহাঙ্গীর ও এসআই হান্নান মামলার কোথাও চিকিৎসার সনদ দাখিল করেননি। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা বলা হলেও, হান্নান বলছেন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নেয়ার কথা। স্পর্শকাতর এই মামলায় কতটা গোঁজামিল দেয়া হয়েছে, তা পুলিশ সদস্যের কথাতেই স্পষ্ট। যে বাড়ি ঘিরে সিটিটিসির অভিযান চালানো হয়, ৮ বছর পর গত শনিবার এবার সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলে রং মিস্ত্রি মোশাররফ হোসেনের সাথে। তার বাড়িও পাতারটেক-আফারখোলায়। অভিযানের মাস কয়েক পর রঙের কাজ করেন মোশারফ। সরেজমিন ভবনের ফ্ল্যাটটিতে গিয়ে দেখা গেছে, তিন রুমের ফ্ল্যাটটি বর্তমানে দুই রুম করা হয়েছে। সেখানে গুলির কোনো চিহ্ন আর নেই। দেয়ালজুড়ে গুলির অসংখ্য চিহ্ন মোশারফের হাতের ছোঁয়ায় মুছে যায়।

স্থানীয়রা জানান, ডাইনিংয়ের দেয়াল, পাশের রান্নাঘরের দরজাও গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়েছিল। তারা প্রশ্ন করেন, তালাবদ্ধ দরজা ভেদ করে আরেক দরজা গুলিতে ঝাঁঝড়া হতে পারে না। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আলহাজ মো: মনিরুজ্জামানের বাড়ি ঘটনাস্থলের পাশেই। বাসার বাথরুমের জানালা দিয়ে দেখা অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, গুলি-গ্রেনেড মারলেতো আলামত থাকবে। পুলিশ কি দেখাতে পেরেছে কিছু? ভেতর থেকে একটা বটি, পড়ার বই, একটা গ্যাস সিলিন্ডার পাইছে। এইতো? এগুলো সাজানো নাটক। একজন পুলিশের হাতে রক্ত ছিল, আমাদের বাড়িতে এসে পরিষ্কার করে গেছে। অভিযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনিরুজ্জামানের চোখের সামনে হয়েছে। সেদিন কী উদ্ধার দেখেছেন প্রশ্ন ছিল তার কাছে। তিনি বলেন, ভেতর থেকে কোনো গুলি আসেনি। বাইরে থেকেই গুলি মারে। একটি গ্যাসের সিলিন্ডার পুলিশ সাথে করে নিয়ে আসে। ঘটনাস্থলের পাশেই স্থানীয় সোনিয়া আক্তারের বাসা। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হলেও প্রায় ২৪ বছর যাবৎ সেখানে ভাড়া থাকেন। তিনি বলেন, তাদের বাড়িতে অভিযানের সরঞ্জাম রাখা হয় এবং অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। সেদিন তাদের মুখেই কথোপকথন শুনেছেন সোনিয়া। তিনি বলেন, বাইরে থেকে পুলিশ গুলি করছিল, প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিল, গুলিতে জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে। ওপর তলা থেকে কোনো গুলি বা বোমা মারার শব্দ পাইনি, দেখিও নাই।

কাগজপত্রের তথ্য বলছে, হাড়িনালের পাতারটেকে উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে করা মামলার নিরপেক্ষ সাক্ষী ১১ জন। এর মধ্যে দুই সাক্ষী মারা গেছেন, একজনকে পাওয়া যায়নি, বাকি আট সাক্ষীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার তিন-চার দিন পর মালামাল নিয়ে আসার জন্য খানায় ডাকা হয়। একজন বলেন, আমিতো পড়তে জানি না। তখন সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মালপত্র দিয়ে দেয়। আমিতো কিছুই জানি না। জব্দ তালিকার অন্যতম সাক্ষী জহুরুল ইসলাম। অভিযান চালানো বাসার বিপরীত ফ্ল্যাটে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন। উগ্রবাদ অভিযানের খবর পেয়ে সেদিন আর বাসায় ফেরেননি। পরে বাসার জব্দ মালামাল ফেরত দেয়া হবে বলে ডেকে নিয়ে পুলিশ স্বাক্ষর নিয়েছিল। জহুরুলের ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকা আজিয়ার রহমানের বক্তব্যও একই রকম। তিনি বর্তমানে গ্রামের বাড়ি রংপুরের কাউনিয়ায় অবস্থান করছেন। কথা হয় মুঠোফোনে। তিনি বলেন, আমরা কোনো কিছুই উদ্ধার হতে দেখি নাই। মালপত্র আনার সময় সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। আরেক সাক্ষী রমজান আলী চিশতি। লাগালিয়া এলাকায় একটি মাদরাসা-কাম মসজিদ ও এতিমখানার মুতাওয়াল্লি। মাইকে ডেকে নিয়ে সাক্ষী বানানোর বিষয়টিতে এখনো তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কোনো কিছুই ওলট-পালট করে দেখতে দেয় নাই। একজনের পা ভাঙা ছিল। যে পরিমাণ রক্ত থাকার কথা তেমন রক্ত দেখি নাই। সাক্ষী ফজলুল কাদিরের বক্তব্যও একই রকম। তিনিও জানেন না তাকে সাক্ষী করা হয়েছে। স্থানীয় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ফজলুল কাদির এবং হাজী আফাজ উদ্দিন পালোয়ানকেও মাইকে ডেকে নেয়া হয়। তাদের সাক্ষী বানাতে চাইলে তার প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে হুমকি দেয় পুলিশ। আফাজ বলেন, আমি পুলিশকে বলি সেদিনও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিলেন, আজো লিখছেন তা দেখালেন না। পুলিশ বলে স্বাক্ষর দিবেন না মরবেন?

প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য বলছে, সাক্ষীদের চাপে ফেলে সুরতহাল প্রতিবেদন ও জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর নেয়া হয়। তিনজনের স্বাক্ষর নেয়া হয় মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে। পরে তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান নিজের মতো করে সব সাক্ষীর জবানবন্দী লেখেন। বাড়িটিতে অনুসন্ধানে গিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। তার মধ্যে মেঝে থেকে তিন ফুট উঁচুতে জানালা হলে রান্নাঘরের দরজার নিচের অংশ, দেয়ালের নিচের অংশ ও ফ্লোরে গুলি লাগল কিভাবে? নিরাপদ দূরত্ব থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছোড়া গুলি কথিত তিন উগ্রবাদীর হাঁটুর নিচে লাগে কিভাবে?

তদন্ত প্রতিবেদনে, অভিযান শেষে ঘরের ভেতরে প্রবেশের পর সাতজনকে নিহত দেখার কথা বলা হলেও সিটিটিসির নির্বাহী অনুসন্ধানে ঘরের ভেতরে প্রবেশের পর গোলাগুলির পর মারা যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মামলায় কথিত উগ্রবাদীরা ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় বলা হলেও, তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কোনো কথাই বলা হয়নি। মামলা ও তদন্তের ভাষা একইরকম। অর্থাৎ মামলায় যা বলা হয়েছে, ফাইনাল রিপোর্টের ভাষাও একই। তদন্ত কর্মকর্তা আলাদা কিছু বের করতে পারেননি। তদন্তে বাকি চারটি লাশের পরিচয় না মিললেও আদালত লাশের পরিচয় জানতে পুনঃতদন্তের নির্দেশনা দেননি। মামলার তদন্তে সাধারণত নতুন তথ্য পাওয়া গেলে, পুনঃতদন্ত বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এই মামলায় এ নিয়ে একটি শব্দও বলা হয়নি। সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বাইরে থেকে বাসাটি তালাবদ্ধ ছিল। তাদের ডেকে নিয়ে বাসার তালা খোলা হয়। কিন্তু সোয়াট কর্মকর্তা বলছেন, ভেতর থেকেও ছিটকিনি লাগানো ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, ভেতরে ছিটকিনি লাগানো থাকলে তালা খুলে ঢুকানো হলো কিভাবে?

সোয়াটের দু’জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবি করলেও, মামলার এজাহার এমনকি তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা জয়দেবপুর থানার তৎকালীন পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান। যিনি বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। সচরাচর মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা রদবদল হয়ে থাকলেও মাহমুদুল হাসান একাই পুরো তদন্ত শেষ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ওপর মহলের আশীর্বাদ ও নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেদন দিতে তিনি আস্থার পরিচয় দিবেন এই বিশ্বাসে তাকে দিয়েই তদন্তকাজ শেষ করানো হয়। গত সোমবার বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, প্রতিবেদনে যা দেয়া আছে সেটাই আমার বক্তব্য। সাক্ষীদের কথা বলা হলে তিনি বলেন, তারা ভিন্ন কথা বলতেই পারেন। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, তদন্তের বিষয়ে আপনি কী বুঝেন?

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সচরাচর মামলার বাদি হন এসআই। কিন্তু পুরস্কারের লোভে প্রথা ভেঙে জয়দেবপুর থানার তৎকালীন ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান এই মামলার বাদি হয়েছিলেন। তবে তিনি পুরস্কার পাননি। তৎকালীন সরকারের সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে এপিবিএনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। মোবাইল ফোনে কথা বলতে রিং করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। প্রত্যেক্ষদর্শীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গাজীপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এবং তৎকালীন ডিবি প্রধান মনিরুল ইসলামের যৌথ প্রযোজনায় কথিত উগ্রবাদী অভিযানটি সাজানো হয়। একই দিন রথ্যাবও ওই এলাকায় একটি উগ্রবাদী অভিযান পরিচালনা করে। হাড়িনালের উগ্রবাদী অভিযানে নিহত ফরিদুল ইসলাম আকাশের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে। দিনমজুর আবু সাঈদ, নিহত ফরিদুল ইসলাম আকাশের বাবা। ছেলে মারা যাওয়ার পর একদিকে সংসারের ঘানি, অপর দিকে রাষ্ট্রবিরোধী উগ্রবাদী মামলার আসামি পরিবারের চার সদস্য। দিন আনতে পানতা ফুরানো আবু সাঈদ হিমশিম খেয়েছেন; সংসার চালাবেন নাকি আদালতের খরচ চালাবেন? পরিবারটির অভিযোগ- আকাশ মারা যাওয়ার মাস দুয়েক আগে মা ও দুই বোনকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। তখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। প্রায় এক থেকে দেড় মাস গুম রেখে মধ্যরাতে বাড়িতে এনে গ্রেফতার নাটক সাজায় ডিবি। গাজীপুরের পাতারটেক এলাকায় উগ্রবাদী নাটক সাজিয়ে যে সাতজনকে হত্যা করা হয় তাদের একজন ছিলেন এই বরইতলা গ্রামের কৃষক আবু সাঈদের বড় ছেলে ফরিদুল ইসলাম আকাশ। খবর পেয়ে পরিবারের পক্ষে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ কয়েকজন আকাশের লাশ গ্রহণ করতে জয়দেবপুর থানায় গেলেও লাশ না দিয়ে তাদের ফেরত পাঠায় পুলিশ। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গাজীপুরেই লাশ দাফন করে পুলিশ।

পরিবারের একমাত্র শিক্ষিত ছেলে আকাশ চাকরির জন্য ঢাকায় গিয়ে প্রথমে নিখোঁজ পরে উগ্রবাদী সাজিয়ে পুলিশ তাকে হত্যা করে লাশ বাবা-মায়ের কাছে ফেরত না দেয়ার যে কষ্ট তা আজো ভুলতে পারেনি ফুলেরা বেগম। প্রতি রাতেই তাহাজ্জুত নামাজ শেষে নিষ্পাপ ছেলের জন্য আহাজারি করেন এবং হত্যাকারীদের যেন বিচার হয় তার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানান। উগ্রবাদী নাটকে নিহত আকাশের মেজো চাচা জাহাঙ্গীর আলম জানান, গান্দাইল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে আকাশ দরিদ্র বাবার সংসারের হাল ধরতে চাকরির খোঁজে ঢাকায় যান। এরপর হঠাৎ বাড়িতে ডিবি পুলিশ এসে আকাশের খোঁজ নিতে থাকে। একপর্যায়ে ডিবি পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ডিবি হেফাজতে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমাকে ছেড়ে দেয়।

আকাশের মা ফুলেরা বেগম বলেন ‘৫ আগস্ট ২০১৬ সাল। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ আমাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। বাড়ির ভেতরে এসে আকাশের খোঁজ করতে থাকে। হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখায়। পুলিশ জানায়, আকাশ নাকি উগ্রবাদীর খাতায় নাম দিছে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে আমাদের। একপর্যায়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে পড়া দুই মেয়েসহ আমাকে ধরে নিয়ে যায় সিরাজগঞ্জের ডিবি অফিসে। সেখানে মহিলা পুলিশ দিয়ে আমাদের মারধর করে। গোসল করতে পারতাম না। এভাবে ডিবি অফিসে কয়েক দিন নির্যাতন করে এক রাতে জেলখানার গাড়িতে করে আমাদের কোথায় যেন নিয়ে যায়। রাতের বেলা গাড়ি থেকে নামিয়ে হেঁটে নিচের দিকে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে ছোট্ট একটা স্যাঁতসেতে দুর্গন্ধময় চাপা রুমের মধ্যে রাখা হয়। ওই রুমে এক মাস থেকেছি। আমরা নাকি উগ্রবাদী। ওখানে আমাদের সাথে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। একমাস গুম ঘরে থাকার পর কোনো এক মধ্য রাতে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে গাড়িতে করে আমাদেরকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ির আঙিনায় গাড়ি থামিয়ে আমাদের গাড়িতে রেখেই পুলিশ বাড়ির ভেতরে যায়। ঘরবাড়ি তছনছ করে পুলিশ আবার গাড়ির কাছ আসে। এরপর মধ্য রাতে প্রতিবেশী লোকজনকে ঘুম থেকে ডেকে এনে তাদের সামনে আমাদের সাথে নিয়ে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে (ওদের রাখা) জিহাদী বইপত্র আর দেশী অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করে সাদা কাগজে প্রতিবেশীদের স্বাক্ষর নিয়ে আমাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আবার নিয়ে যায়। পরের দিন ডিবি অফিসে সাংবাদিক ডেকে ক্যামেরায় ছবি তোলে এবং আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ছয় দিনের রিমান্ড দেয়। রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন করে। রিমান্ড শেষে জেল হাজতে দেয়। ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া ছোট মেয়ে সালমাকে রাজশাহী সেফহোমে পাঠায়। ফুলেরা বেগম আরো বলেন, জেলহাজতে থাকা অবস্থায় গাজীপুরে আমার ছেলে আকাশকে উগ্রবাদী নাটক সাজিয়ে হত্যা করে সেই খবর পাই। এরপর ১৭ মাস হাজত খেটে জামিনে বের হয়ে আসি। উগ্রবাদী তকমা দিয়ে দুই শিশু মেয়েসহ ফুলেরা বেগমকে যেদিন ধরে নিয়ে যায় সেই দিন মধ্যরাতে একই গ্রামের কাঠমিস্ত্রি রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুনকে এবং আরো এক বাড়ি থেকে আজিজ কর্মকারের স্ত্রী আকলিমা খাতুনকে উগ্রবাদী তকমা দিয়ে ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।

কেন এই জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে জিজ্ঞাসা করা হলে রাজিয়া খাতুন বলেন, কেন যে এই নির্যাতন করা হয়েছে তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে আমরা পর্দা করি, অন্যায় ও অনৈতিক কাজ পছন্দ করি না। আমরা কুরআন-হাদিসের তালিমি বৈঠক করতাম। আমরা ইসলামপন্থী। আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের বিরোধ, আমরা ভোটকেন্দ্রে যেতে চাই নাই। একই রকম কথা জানান বরইতলা গ্রামের আজিজ কর্মকারের মেয়ে আকলিমা খাতুন। প্রতিবেশী মর্জিনা খাতুন সে দিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা উল্লেখ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু দেখলাম বিনা অপরাধে দুই বছরের শিশুর গগণবিদারী কান্না উপেক্ষা করে ফুলেরাদের ধরে নিয়ে গেল। নেয়ার পর কোথায় ওদের রাখল, বাঁচল না মরল কিচ্ছু জানি না। কারো কোনো কথা বলার সাহস নাই। কয়েক মাস পর সন্ধান পাইলাম ওরা জেলখানায় আছে। অনেক কষ্ট করে নানারকম নিয়মকানুন মেনে দেখা করে আসলাম।’ ভুক্তভোগীদের প্রতিবেশী আনছার আলী ও মুকুল হোসেন জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিহিংসাবশত এই পরিবারগুলোকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে উগ্রবাদী সাজিয়ে বর্বর নির্যাতন করেছে। এর পেছনে দায়ীদের আমরা বিচার চাই।

ভুক্তভোগী সবাই জানান ‘সিরাজগঞ্জ ডিবি অফিসার রওশন আলী, ইয়াসির আরাফাত ও নুরু এই তিনজন অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও নির্দয় নির্মম-নির্যাতন চালিয়েছে আমাদের ওপর। এরা আওয়ামী লীগের দোসর। এরা সিরাজগঞ্জে এখন না থাকলেও অন্য কোথাও চাকরি করছেন। গান্দাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম ওরফে নজির মাস্টার, ইসমাইল হোসেন মেম্বর, ইমরুল মোহসীনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কথামত মিথ্যা বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে উপরি উক্ত ডিবি পুলিশ উগ্রবাদী নাটক সাজিয়ে আওয়ামী মতের বিরোধী ইসলামপন্থীদের ওপর বর্বর এই নির্যাতনের হোতাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। নিহত হওয়ার খবর পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে গান্দাইল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আসাদুল ইসলামসহ কয়েকজন আকাশের লাশ গ্রহণ করতে জয়দেবপুর থানায় গেলেও লাশ না দিয়ে তাদের ফেরত পাঠায় পুলিশ। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গাজীপুরেই লাশ দাফন করা হয়। পরিবারের লোকজন লাশের অপেক্ষায় থাকলেও মন গলেনি পাষণ্ডদের।

এই ঘটনার পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছে- জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনি কী জেনেছেন জানতে চাইলে উত্তরে স্থানীয় মেম্বর আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আকাশ ছেলেটা অত্যন্ত নম্রভদ্র ছিল। আমার জানা মতে নির্যাতিতদের কোনো অন্যায় ছিল না। ওপরের নির্দেশে পুলিশ এসব করেছে।’ সূত্র : নয়া দিগন্ত।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

গাজীপুরে দুই বাড়িতে কথিত উগ্রবাদী আস্তানা

৭ জনকে হত্যা করতে ৮৩০ রাউন্ড গুলি

প্রকাশের সময় : ১২:৩৪:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

এস এম মিন্টু ও নুরুল ইসলাম রইসী : 

  • ক্ষমতার লোভে ৭ তরুণকে উগ্রবাদী সাজিয়ে হত্যার পুরোধা পুলিশ কর্মকর্তা হারুন
  • মামলা, সুরতহাল প্রতিবেদন চার্জশিট সবই সাজানো

২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর। ভোরের কাক তখনো ডাকা শুরু করেনি। তার আগেই গাজীপুরে নোয়াগাঁও আফারখোলা পাতারটেক এলাকায় সোলায়মান সরকারের বাড়িতে উগ্রবাদবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, ডিবি, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিসিটিসি) এবং বিশেষায়িত সোয়াট টিমের সদস্যরা যুদ্ধংদেহী কায়দায় পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। স্থানীয় বাসিন্দারা একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে চার দিকে যুদ্ধ যুদ্ধভাব দেখে ভড়কে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন মহড়ায় পুরো এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় আতঙ্কের। সবার মনেই প্রশ্ন আর কৌতূহল- কী হতে চলেছে? তাদের কেউ কেউ এদিক ওদিক উঁকিঝুঁকি মারতে থাকলে একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রামবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকেন। কেউ অযথা ঘোরাফেরা করবেন না, ভিড় করবেন না। এখানে উগ্রবাদীদের আস্তানা রয়েছে, কেউ আতঙ্কিত হবেন না। উগ্রবাদীরা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে।’

এরপর দিনভর চলে উগ্রবাদী নিধনের নাটক। ‘অপারেশন স্পেট এইট’ নামের ওই অভিযানে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। গোলাগুলির শব্দের পর বিকেলে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, বাড়িটির একটি ফ্ল্যাটে সাতজন ‘জঙ্গি’ রয়েছে। এরপর ঢাকা থেকে ওই এলাকা পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি, সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম ও নানা বিতর্কের জন্ম দেয়া পুলিশ কর্মকর্তা (তখন গাজীপুরের এসপি) হারুন অর রশীদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর বাড়িটির সামনেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখানে দুর্ধর্ষ উগ্রবাদীরা বড় নাশকতার জন্য অবস্থান নিয়েছিল। তাদের কাছে গ্রেনেড, বিস্ফোরক ও অস্ত্র রয়েছে। তিনি সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। তাদের লাশ সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় শহীদ তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরের দিন ৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় ডিএমপির পক্ষ থেকে গুলিতে নিহত সাতজনের ক্ষতবিক্ষত ছবি প্রকাশ করে বলা হয় তাদের পরিচয় জানলে পুলিশকে যেন জানানো হয়।‘তখনই এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যাদের নৃসংশভাবে হত্যা করা হলো তারা আসলে কারা? যাদের পরিচয় মিলেছে পুলিশ তাদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কবরস্থানে দাফন করে।

আট বছর আগের সেই অভিযানের অনুসন্ধানে নেমে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে। মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধান আর মামলার নথি ঘেটে মিলেছে অসংখ্য অসামঞ্জস্য। ‘অপারেশন স্পেট এইট’ নামে অভিযানে পুলিশের বরাতে যে বয়ান দেয়া আছে তাতে নিহতদের তিনজনের স্বজন, প্রত্যক্ষদর্শী-সাক্ষী ও স্থানীয়রাও বলছেন ভিন্ন কথা। সেদিন যে সাতজন নিহত হয়েছেন তার মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানতে পেরেছে। তারা হলেন- সাইফুর রহমান বাবুল। পিতা মতিউর রহমান। তার বাড়ি- সুনামগঞ্জের ছাতক থানার দক্ষিণ সুরমা এলাকার মনিরগাথি গ্রামে। নিহত ফরিদুল ইসলাম আকাশের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বড়ইতলা গ্রামে। তার পিতার নাম আবু সাঈদ। নিহত ইব্রাহীম বিন আজিমের বাড়ি রাজধানীর বংশালের ৫৪ নম্বর পুরনো মোগলটুলিতে। পিতার নাম আজিম উদ্দীন। তাদের মধ্যে বর্তমানে সিলেট শহরের একটি বাসায় বসবাস করেন নিহত বাবুলের পরিবার।বাবুলের বাবার সাথে কথা হয়। এ সময় ছেলের মৃত্যুর কথা মনে করে বারবার ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। বলেন, ২০১৬ সাল ছেলেকে নাটকীয় কায়দায় উগ্রবাদী সাজিয়ে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। বৃদ্ধ মতিউর রহমান জানান, তার ছেলে বাবুল সিলেট শহরে ফুফুর বাসায় থেকে পড়ালেখা করত। মায়ের অসুস্থতার খবরে বাসায় ফেরার সময় নিখোঁজ হয় সে। সেই থেকে আর খোঁজ মেলেনি তার।

তিনি বলেন, আমরা পরে জানতে পারি গাজীপুরের পাতারটেকে উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে তার ছেলে মারা গেছে। অথচ তিন মাস আগে নিখোঁজ হয় বাবুল। এই তিন মাস কোথায় ছিলেন? কারা তাকে ধরে নিয়ে গেল? উগ্রবাদী হলো কবে থেকে? কিছুই জানে না কেউ। বরং এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। জানা গেছে, সিলেটের পার্ক ইন্টারন্যাশনাল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন বাবুল। রাজনীতির সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততাও ছিল না। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে অনেক বড় হবে। সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে বাবুলের বাবা-মায়ের। একই ঘটনায় নিহত ইব্রাহিম তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট নিখোঁজ হন। সেদিন ফজরের নামাজ পড়তে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। ছেলের খোঁজে পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞাপন দেন স্বজনরা। রথ্যাব, ডিবি, সিআইডি, সিটিটিসির কাছে খোঁজ নিয়ে ইব্রাহীমের কোনো সন্ধান পাননি তারা।

ইব্রাহীমের বাবা মোহাম্মাদ আজিম উদ্দীন বলেন, সিটিটিসির কাছে গেলে তারা বলেন, তামিরুল মিল্লাত ও যাত্রাবাড়ীর মাদরাসা উগ্রবাদীদের টার্গেট। আপনার আরেক ছেলেও সেখানে পড়ে। তাকে না পড়ানোই ভালো। তিনি বলেন, ইব্রাহীম অনেক ভালো ছিল। ইসলামের পথে মানুষকে আহ্বান করত। ইসলামের পথে মানুষকে ডাকাই কি আমার ছেলের অপরাধ? কোথাও ছেলের সন্ধান না পেয়ে পরের দিন থানায় জিডি করেন আজিম উদ্দীন। পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞাপন দিয়েও কাজ হয়নি। ঠিক দুই মাস পর গাজীপুরের পাতারটেকে উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে ইব্রাহিমের মারা যাওয়ার খবর পান। ইব্রাহীম অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি ও প্রতিবাদী ছিলেন। আজিম উদ্দিন ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক সভাপতি। মা আলেয়া বেগম কুরআনের হাফেজ। ফলে ইব্রাহিমের মৃত্যুর পর আরো বেশি চাপে পড়ে পরিবারটি। ইব্রাহীমের মা জানান, সন্তানের মৃত্যু নিয়ে কোনো কথা বলতে পারেননি, জানতে পারেননি কোনো প্রমাণের ভিত্তিতে উগ্রবাদী অপবাদ দিয়ে খুন করা হলো?

ইব্রাহীমের বড় ভাই আহমেদ আব্দুল্লাহর মনেও ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রশ্ন। তিনি বলেন, উগ্রবাদী ঘটনা সাজানো নাটক ছাড়া অন্য কিছুই ছিল না। তার ভাইয়ের উগ্রবাদীদের সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তিনি পত্রিকায় ছবি দেখে গাজীপুরে ইব্রাহীমের লাশ আনতে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু লাশ ফেরত দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ওই সময় মিডিয়াতে বক্তব্য দেন নিহতরা সবাই উগ্রবাদী ছিলেন। ইব্রাহীমের স্বজনরা বলেন, এত এত প্রমাণ থাকার পর লাশ অজ্ঞাত বলে দাফন করে পুলিশ। অথচ উগ্রবাদী হলেও লাশ ফেরত পাওয়া তো পরিবারগুলোর আইনি অধিকার। অথচ ‘অপারেশন স্পেট এইট’ অভিযানের নামে পরিবারগুলোকে সেই অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।

সেদিনের ঘটনায় পাতারটেকের কথিত উগ্রবাদী আস্তানায় অভিযানের বিষয়ে কাগজপত্রের তথ্য বলছে, অভিযানে অংশ নেয়া সিটিটিসির সোয়াট টিমের অন্তত ২১ সদস্য পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে বিপিএম ও পিপিএম পদক পান। সেই অভিযানে ৮৩০ রাউন্ড গুলি চালায় সোয়াটের ২৬ সদস্য। যদিও অভিযান নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি সোয়াটের তৎকালীন দলনেতা এস এম জাহাঙ্গীর হাসান। নৌ পুলিশে কর্মরত সোয়াট কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ওই সময় একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে, ডান বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবি করেছিলেন। তবে পুলিশ প্রতিবেদনে কিংবা সোয়াটের করা সাধারণ ডাইরিতে গুলির তথ্য নেই। সেদিন গুলিবিদ্ধ দাবি করা আরেকজন হলেন- এএসআই আব্দুল হান্নান। সোয়াটের সাধারণ ডাইরিতে আহত হওয়া এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে দাবি করা হয়।

এসআই হান্নান বর্তমানে গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় কর্মরত। উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, অথচ সেই অভিযান মনেই করতে পারছেন না এসআই হান্নান। বুকে এবং হাতে গুলিবিদ্ধ দাবি করা জাহাঙ্গীর ও এসআই হান্নান মামলার কোথাও চিকিৎসার সনদ দাখিল করেননি। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার কথা বলা হলেও, হান্নান বলছেন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নেয়ার কথা। স্পর্শকাতর এই মামলায় কতটা গোঁজামিল দেয়া হয়েছে, তা পুলিশ সদস্যের কথাতেই স্পষ্ট। যে বাড়ি ঘিরে সিটিটিসির অভিযান চালানো হয়, ৮ বছর পর গত শনিবার এবার সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলে রং মিস্ত্রি মোশাররফ হোসেনের সাথে। তার বাড়িও পাতারটেক-আফারখোলায়। অভিযানের মাস কয়েক পর রঙের কাজ করেন মোশারফ। সরেজমিন ভবনের ফ্ল্যাটটিতে গিয়ে দেখা গেছে, তিন রুমের ফ্ল্যাটটি বর্তমানে দুই রুম করা হয়েছে। সেখানে গুলির কোনো চিহ্ন আর নেই। দেয়ালজুড়ে গুলির অসংখ্য চিহ্ন মোশারফের হাতের ছোঁয়ায় মুছে যায়।

স্থানীয়রা জানান, ডাইনিংয়ের দেয়াল, পাশের রান্নাঘরের দরজাও গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়েছিল। তারা প্রশ্ন করেন, তালাবদ্ধ দরজা ভেদ করে আরেক দরজা গুলিতে ঝাঁঝড়া হতে পারে না। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আলহাজ মো: মনিরুজ্জামানের বাড়ি ঘটনাস্থলের পাশেই। বাসার বাথরুমের জানালা দিয়ে দেখা অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, গুলি-গ্রেনেড মারলেতো আলামত থাকবে। পুলিশ কি দেখাতে পেরেছে কিছু? ভেতর থেকে একটা বটি, পড়ার বই, একটা গ্যাস সিলিন্ডার পাইছে। এইতো? এগুলো সাজানো নাটক। একজন পুলিশের হাতে রক্ত ছিল, আমাদের বাড়িতে এসে পরিষ্কার করে গেছে। অভিযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনিরুজ্জামানের চোখের সামনে হয়েছে। সেদিন কী উদ্ধার দেখেছেন প্রশ্ন ছিল তার কাছে। তিনি বলেন, ভেতর থেকে কোনো গুলি আসেনি। বাইরে থেকেই গুলি মারে। একটি গ্যাসের সিলিন্ডার পুলিশ সাথে করে নিয়ে আসে। ঘটনাস্থলের পাশেই স্থানীয় সোনিয়া আক্তারের বাসা। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হলেও প্রায় ২৪ বছর যাবৎ সেখানে ভাড়া থাকেন। তিনি বলেন, তাদের বাড়িতে অভিযানের সরঞ্জাম রাখা হয় এবং অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। সেদিন তাদের মুখেই কথোপকথন শুনেছেন সোনিয়া। তিনি বলেন, বাইরে থেকে পুলিশ গুলি করছিল, প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিল, গুলিতে জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে। ওপর তলা থেকে কোনো গুলি বা বোমা মারার শব্দ পাইনি, দেখিও নাই।

কাগজপত্রের তথ্য বলছে, হাড়িনালের পাতারটেকে উগ্রবাদবিরোধী অভিযানে করা মামলার নিরপেক্ষ সাক্ষী ১১ জন। এর মধ্যে দুই সাক্ষী মারা গেছেন, একজনকে পাওয়া যায়নি, বাকি আট সাক্ষীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার তিন-চার দিন পর মালামাল নিয়ে আসার জন্য খানায় ডাকা হয়। একজন বলেন, আমিতো পড়তে জানি না। তখন সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মালপত্র দিয়ে দেয়। আমিতো কিছুই জানি না। জব্দ তালিকার অন্যতম সাক্ষী জহুরুল ইসলাম। অভিযান চালানো বাসার বিপরীত ফ্ল্যাটে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন। উগ্রবাদ অভিযানের খবর পেয়ে সেদিন আর বাসায় ফেরেননি। পরে বাসার জব্দ মালামাল ফেরত দেয়া হবে বলে ডেকে নিয়ে পুলিশ স্বাক্ষর নিয়েছিল। জহুরুলের ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকা আজিয়ার রহমানের বক্তব্যও একই রকম। তিনি বর্তমানে গ্রামের বাড়ি রংপুরের কাউনিয়ায় অবস্থান করছেন। কথা হয় মুঠোফোনে। তিনি বলেন, আমরা কোনো কিছুই উদ্ধার হতে দেখি নাই। মালপত্র আনার সময় সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। আরেক সাক্ষী রমজান আলী চিশতি। লাগালিয়া এলাকায় একটি মাদরাসা-কাম মসজিদ ও এতিমখানার মুতাওয়াল্লি। মাইকে ডেকে নিয়ে সাক্ষী বানানোর বিষয়টিতে এখনো তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কোনো কিছুই ওলট-পালট করে দেখতে দেয় নাই। একজনের পা ভাঙা ছিল। যে পরিমাণ রক্ত থাকার কথা তেমন রক্ত দেখি নাই। সাক্ষী ফজলুল কাদিরের বক্তব্যও একই রকম। তিনিও জানেন না তাকে সাক্ষী করা হয়েছে। স্থানীয় ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ফজলুল কাদির এবং হাজী আফাজ উদ্দিন পালোয়ানকেও মাইকে ডেকে নেয়া হয়। তাদের সাক্ষী বানাতে চাইলে তার প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে হুমকি দেয় পুলিশ। আফাজ বলেন, আমি পুলিশকে বলি সেদিনও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিলেন, আজো লিখছেন তা দেখালেন না। পুলিশ বলে স্বাক্ষর দিবেন না মরবেন?

প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য বলছে, সাক্ষীদের চাপে ফেলে সুরতহাল প্রতিবেদন ও জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর নেয়া হয়। তিনজনের স্বাক্ষর নেয়া হয় মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে। পরে তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান নিজের মতো করে সব সাক্ষীর জবানবন্দী লেখেন। বাড়িটিতে অনুসন্ধানে গিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে এসেছে। তার মধ্যে মেঝে থেকে তিন ফুট উঁচুতে জানালা হলে রান্নাঘরের দরজার নিচের অংশ, দেয়ালের নিচের অংশ ও ফ্লোরে গুলি লাগল কিভাবে? নিরাপদ দূরত্ব থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছোড়া গুলি কথিত তিন উগ্রবাদীর হাঁটুর নিচে লাগে কিভাবে?

তদন্ত প্রতিবেদনে, অভিযান শেষে ঘরের ভেতরে প্রবেশের পর সাতজনকে নিহত দেখার কথা বলা হলেও সিটিটিসির নির্বাহী অনুসন্ধানে ঘরের ভেতরে প্রবেশের পর গোলাগুলির পর মারা যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মামলায় কথিত উগ্রবাদীরা ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় বলা হলেও, তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কোনো কথাই বলা হয়নি। মামলা ও তদন্তের ভাষা একইরকম। অর্থাৎ মামলায় যা বলা হয়েছে, ফাইনাল রিপোর্টের ভাষাও একই। তদন্ত কর্মকর্তা আলাদা কিছু বের করতে পারেননি। তদন্তে বাকি চারটি লাশের পরিচয় না মিললেও আদালত লাশের পরিচয় জানতে পুনঃতদন্তের নির্দেশনা দেননি। মামলার তদন্তে সাধারণত নতুন তথ্য পাওয়া গেলে, পুনঃতদন্ত বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এই মামলায় এ নিয়ে একটি শব্দও বলা হয়নি। সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বাইরে থেকে বাসাটি তালাবদ্ধ ছিল। তাদের ডেকে নিয়ে বাসার তালা খোলা হয়। কিন্তু সোয়াট কর্মকর্তা বলছেন, ভেতর থেকেও ছিটকিনি লাগানো ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, ভেতরে ছিটকিনি লাগানো থাকলে তালা খুলে ঢুকানো হলো কিভাবে?

সোয়াটের দু’জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবি করলেও, মামলার এজাহার এমনকি তদন্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা জয়দেবপুর থানার তৎকালীন পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান। যিনি বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন-অর রশিদের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। সচরাচর মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা রদবদল হয়ে থাকলেও মাহমুদুল হাসান একাই পুরো তদন্ত শেষ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ওপর মহলের আশীর্বাদ ও নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেদন দিতে তিনি আস্থার পরিচয় দিবেন এই বিশ্বাসে তাকে দিয়েই তদন্তকাজ শেষ করানো হয়। গত সোমবার বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, প্রতিবেদনে যা দেয়া আছে সেটাই আমার বক্তব্য। সাক্ষীদের কথা বলা হলে তিনি বলেন, তারা ভিন্ন কথা বলতেই পারেন। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, তদন্তের বিষয়ে আপনি কী বুঝেন?

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সচরাচর মামলার বাদি হন এসআই। কিন্তু পুরস্কারের লোভে প্রথা ভেঙে জয়দেবপুর থানার তৎকালীন ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান এই মামলার বাদি হয়েছিলেন। তবে তিনি পুরস্কার পাননি। তৎকালীন সরকারের সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে এপিবিএনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। মোবাইল ফোনে কথা বলতে রিং করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। প্রত্যেক্ষদর্শীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গাজীপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এবং তৎকালীন ডিবি প্রধান মনিরুল ইসলামের যৌথ প্রযোজনায় কথিত উগ্রবাদী অভিযানটি সাজানো হয়। একই দিন রথ্যাবও ওই এলাকায় একটি উগ্রবাদী অভিযান পরিচালনা করে। হাড়িনালের উগ্রবাদী অভিযানে নিহত ফরিদুল ইসলাম আকাশের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে। দিনমজুর আবু সাঈদ, নিহত ফরিদুল ইসলাম আকাশের বাবা। ছেলে মারা যাওয়ার পর একদিকে সংসারের ঘানি, অপর দিকে রাষ্ট্রবিরোধী উগ্রবাদী মামলার আসামি পরিবারের চার সদস্য। দিন আনতে পানতা ফুরানো আবু সাঈদ হিমশিম খেয়েছেন; সংসার চালাবেন নাকি আদালতের খরচ চালাবেন? পরিবারটির অভিযোগ- আকাশ মারা যাওয়ার মাস দুয়েক আগে মা ও দুই বোনকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। তখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। প্রায় এক থেকে দেড় মাস গুম রেখে মধ্যরাতে বাড়িতে এনে গ্রেফতার নাটক সাজায় ডিবি। গাজীপুরের পাতারটেক এলাকায় উগ্রবাদী নাটক সাজিয়ে যে সাতজনকে হত্যা করা হয় তাদের একজন ছিলেন এই বরইতলা গ্রামের কৃষক আবু সাঈদের বড় ছেলে ফরিদুল ইসলাম আকাশ। খবর পেয়ে পরিবারের পক্ষে এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ কয়েকজন আকাশের লাশ গ্রহণ করতে জয়দেবপুর থানায় গেলেও লাশ না দিয়ে তাদের ফেরত পাঠায় পুলিশ। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গাজীপুরেই লাশ দাফন করে পুলিশ।

পরিবারের একমাত্র শিক্ষিত ছেলে আকাশ চাকরির জন্য ঢাকায় গিয়ে প্রথমে নিখোঁজ পরে উগ্রবাদী সাজিয়ে পুলিশ তাকে হত্যা করে লাশ বাবা-মায়ের কাছে ফেরত না দেয়ার যে কষ্ট তা আজো ভুলতে পারেনি ফুলেরা বেগম। প্রতি রাতেই তাহাজ্জুত নামাজ শেষে নিষ্পাপ ছেলের জন্য আহাজারি করেন এবং হত্যাকারীদের যেন বিচার হয় তার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানান। উগ্রবাদী নাটকে নিহত আকাশের মেজো চাচা জাহাঙ্গীর আলম জানান, গান্দাইল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে আকাশ দরিদ্র বাবার সংসারের হাল ধরতে চাকরির খোঁজে ঢাকায় যান। এরপর হঠাৎ বাড়িতে ডিবি পুলিশ এসে আকাশের খোঁজ নিতে থাকে। একপর্যায়ে ডিবি পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। ডিবি হেফাজতে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমাকে ছেড়ে দেয়।

আকাশের মা ফুলেরা বেগম বলেন ‘৫ আগস্ট ২০১৬ সাল। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ আমাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। বাড়ির ভেতরে এসে আকাশের খোঁজ করতে থাকে। হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখায়। পুলিশ জানায়, আকাশ নাকি উগ্রবাদীর খাতায় নাম দিছে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে আমাদের। একপর্যায়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে পড়া দুই মেয়েসহ আমাকে ধরে নিয়ে যায় সিরাজগঞ্জের ডিবি অফিসে। সেখানে মহিলা পুলিশ দিয়ে আমাদের মারধর করে। গোসল করতে পারতাম না। এভাবে ডিবি অফিসে কয়েক দিন নির্যাতন করে এক রাতে জেলখানার গাড়িতে করে আমাদের কোথায় যেন নিয়ে যায়। রাতের বেলা গাড়ি থেকে নামিয়ে হেঁটে নিচের দিকে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে ছোট্ট একটা স্যাঁতসেতে দুর্গন্ধময় চাপা রুমের মধ্যে রাখা হয়। ওই রুমে এক মাস থেকেছি। আমরা নাকি উগ্রবাদী। ওখানে আমাদের সাথে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। একমাস গুম ঘরে থাকার পর কোনো এক মধ্য রাতে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে গাড়িতে করে আমাদেরকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ির আঙিনায় গাড়ি থামিয়ে আমাদের গাড়িতে রেখেই পুলিশ বাড়ির ভেতরে যায়। ঘরবাড়ি তছনছ করে পুলিশ আবার গাড়ির কাছ আসে। এরপর মধ্য রাতে প্রতিবেশী লোকজনকে ঘুম থেকে ডেকে এনে তাদের সামনে আমাদের সাথে নিয়ে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে (ওদের রাখা) জিহাদী বইপত্র আর দেশী অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করে সাদা কাগজে প্রতিবেশীদের স্বাক্ষর নিয়ে আমাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আবার নিয়ে যায়। পরের দিন ডিবি অফিসে সাংবাদিক ডেকে ক্যামেরায় ছবি তোলে এবং আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ছয় দিনের রিমান্ড দেয়। রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন করে। রিমান্ড শেষে জেল হাজতে দেয়। ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া ছোট মেয়ে সালমাকে রাজশাহী সেফহোমে পাঠায়। ফুলেরা বেগম আরো বলেন, জেলহাজতে থাকা অবস্থায় গাজীপুরে আমার ছেলে আকাশকে উগ্রবাদী নাটক সাজিয়ে হত্যা করে সেই খবর পাই। এরপর ১৭ মাস হাজত খেটে জামিনে বের হয়ে আসি। উগ্রবাদী তকমা দিয়ে দুই শিশু মেয়েসহ ফুলেরা বেগমকে যেদিন ধরে নিয়ে যায় সেই দিন মধ্যরাতে একই গ্রামের কাঠমিস্ত্রি রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুনকে এবং আরো এক বাড়ি থেকে আজিজ কর্মকারের স্ত্রী আকলিমা খাতুনকে উগ্রবাদী তকমা দিয়ে ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ।

কেন এই জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে জিজ্ঞাসা করা হলে রাজিয়া খাতুন বলেন, কেন যে এই নির্যাতন করা হয়েছে তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে আমরা পর্দা করি, অন্যায় ও অনৈতিক কাজ পছন্দ করি না। আমরা কুরআন-হাদিসের তালিমি বৈঠক করতাম। আমরা ইসলামপন্থী। আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের বিরোধ, আমরা ভোটকেন্দ্রে যেতে চাই নাই। একই রকম কথা জানান বরইতলা গ্রামের আজিজ কর্মকারের মেয়ে আকলিমা খাতুন। প্রতিবেশী মর্জিনা খাতুন সে দিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা উল্লেখ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু দেখলাম বিনা অপরাধে দুই বছরের শিশুর গগণবিদারী কান্না উপেক্ষা করে ফুলেরাদের ধরে নিয়ে গেল। নেয়ার পর কোথায় ওদের রাখল, বাঁচল না মরল কিচ্ছু জানি না। কারো কোনো কথা বলার সাহস নাই। কয়েক মাস পর সন্ধান পাইলাম ওরা জেলখানায় আছে। অনেক কষ্ট করে নানারকম নিয়মকানুন মেনে দেখা করে আসলাম।’ ভুক্তভোগীদের প্রতিবেশী আনছার আলী ও মুকুল হোসেন জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিহিংসাবশত এই পরিবারগুলোকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে উগ্রবাদী সাজিয়ে বর্বর নির্যাতন করেছে। এর পেছনে দায়ীদের আমরা বিচার চাই।

ভুক্তভোগী সবাই জানান ‘সিরাজগঞ্জ ডিবি অফিসার রওশন আলী, ইয়াসির আরাফাত ও নুরু এই তিনজন অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও নির্দয় নির্মম-নির্যাতন চালিয়েছে আমাদের ওপর। এরা আওয়ামী লীগের দোসর। এরা সিরাজগঞ্জে এখন না থাকলেও অন্য কোথাও চাকরি করছেন। গান্দাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম ওরফে নজির মাস্টার, ইসমাইল হোসেন মেম্বর, ইমরুল মোহসীনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কথামত মিথ্যা বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে উপরি উক্ত ডিবি পুলিশ উগ্রবাদী নাটক সাজিয়ে আওয়ামী মতের বিরোধী ইসলামপন্থীদের ওপর বর্বর এই নির্যাতনের হোতাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। নিহত হওয়ার খবর পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে গান্দাইল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আসাদুল ইসলামসহ কয়েকজন আকাশের লাশ গ্রহণ করতে জয়দেবপুর থানায় গেলেও লাশ না দিয়ে তাদের ফেরত পাঠায় পুলিশ। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গাজীপুরেই লাশ দাফন করা হয়। পরিবারের লোকজন লাশের অপেক্ষায় থাকলেও মন গলেনি পাষণ্ডদের।

এই ঘটনার পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছে- জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনি কী জেনেছেন জানতে চাইলে উত্তরে স্থানীয় মেম্বর আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আকাশ ছেলেটা অত্যন্ত নম্রভদ্র ছিল। আমার জানা মতে নির্যাতিতদের কোনো অন্যায় ছিল না। ওপরের নির্দেশে পুলিশ এসব করেছে।’ সূত্র : নয়া দিগন্ত।