আ.লীগ নিষিদ্ধ ইস্যু
সরকারের কোর্টে বল রাখতে চায় বিএনপি

- প্রকাশের সময় : ০২:১০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
- / ৩৪ বার পঠিত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুতে নতুন করে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলটি নিষিদ্ধ হবে কি হবে না, আগামীতে রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না, সে ব্যাপারে সরকারের কোর্টেই বল রাখতে চায় বিএনপি। দলটি এ ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো অংশ (পার্ট) হতে চায় না। বিএনপি মনে করে, আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল। এই দলটি ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। সুতরাং তাদের এই গণহত্যার বিচার হতে হবে।
বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, আদালতে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচার চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, সেটা আদালত এবং সরকারই নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা নিয়ে কোনো আপত্তি জানাবে না বিএনপি। আদালতের মাধ্যমেও কোনো সিদ্ধান্ত এলে সে ব্যাপারেও কোনো পর্যবেক্ষণ দেবে না দলটি। তবে বিএনপি মনে করে, নিষিদ্ধের বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে হলে ভালো হয়। তাহলে এটার আইনি ভিত্তি তৈরি হয়। সরকারের নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হলে, আখেরে তেমন লাভ হয় না। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান গতকাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি হবে না, সেটা তো বিএনপির বক্তব্যের বিষয় নয়। এটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিএনপি হিসেবে তো আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক নই। আমাদের মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম) ইতিমধ্যে বলেছেন, জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয় এটা। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে, কারা নির্বাচন করবে কি-না করবে। এটা হচ্ছে আমাদের বক্তব্য।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অভিযোগ ছিল, গণঅভ্যুত্থানে ঠেকাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালানো হয়। তাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো এবং ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠতে থাকে; কিন্তু গত নয় মাসেও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তমূলক কিছু হয়নি।
এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ছাত্র-জনতা গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকে আন্দোলন শুরু করেছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাগপাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে দেখা গেলেও এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত বিএনপিকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। জানা গেছে, দলটি এই আন্দোলনে সরাসরি উপস্থিত থাকবে না। কারণ, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়টি সরকার ও আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয় বলে মনে করছে বিএনপি।
‘বিএনপি আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চায় না’, রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন সময় এমন কথাও উঠে এসেছে। তবে বিএনপি বরাবরই বলেছে, কোনো দল নিষিদ্ধ করার তারা কেউ নয়। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক দেশের জনগণ। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা যখনই এই ধরনের (আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ) প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন, তখন তারা আরও বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করে আখেরে লাভ হয় না। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের বিষয়ে তারা বলেছিল, গত স্বৈরাচার সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল; কিন্তু কিছুদিন পরে সেই সরকারই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। পতনের মাত্র তিন দিন আগে গত ১ আগস্ট নির্বাহী আদেশে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী সংগঠনটিকে তখন নিষিদ্ধ করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত বছরের ২৮ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্র-জনতার অব্যাহত দাবির মুখে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও গত বছরের ২৩ অক্টোবর দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছিল। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হলেও বিএনপি তখন কোনো আপত্তি জানায়নি। বরং সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে দলটি বলেছিল, এটা সরকারের একটা সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিটি এবার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গতকাল বিকেলে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। সে পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছে।