চীনা কোম্পানির সঙ্গে এমওইউ নবায়ন
‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন আলোর পথে

- প্রকাশের সময় : ১১:০৭:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৫০ বার পঠিত
অবশেষে তিস্তা মহাপরিকল্পনার নিয়ে চায়না পাওয়ারের সাথে পারস্পারিক সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দিল্লির তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলার মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার ৬ মাসের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনার চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে তিস্তা মহাপ্রকল্পের এমওইউ নবায়ন করেছে। এ চুক্তির সাথে সাথে তিস্তা মহাপরিকল্পনা ফিজিবিলিটি দুই বছরের মধ্যে প্রাক্কলন ও নকশা করে সরকারকে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ও চীনা কোম্পানি যৌথভাবে তিস্তা এলাকা সরেজরিমন পরির্দশন পূর্বক নতুন নকশা সংশোধন এবং পরিমার্জন করে দ্রæত কাজ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এর আগে চীনা কোম্পানীর সঙ্গে সরকারের করা নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (চুক্তি) টির মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে স্মারক ১, ২ ও ৩ মোতাবেক বর্ণিত নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারকটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পতি সাপেক্ষে তিন দফায় যথাক্রমে ২০২০-২২ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ সরকার। পারস্পারিক সমঝোতা চুক্তিটি নবায়ন করা হয়েছে। সুত্রের দাবি চীনা কোম্পানি মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সম্পর্কিত একটি নন-বাইডিং সমঝোতা স্মারক আগামী ২০২৬ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। চিঠিতে আরো বলা হয়, গত ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার ইআরডির মাধ্যমে তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তবানা চীনা সরকারের কাছে পাঠানো হয়। উল্লেখ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও দিল্লির বাঁধার কারণে তা চাপা পড়ে গিয়েছিল।
এর আগে ১০ ফেব্রæয়ারি কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা সেতুর পাড়ে ‘তিস্তা নিয়ে করণীয়’ শীর্ষক গণশুনানি করেন। এই গণশুনানিতে সরকারের দুই উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভ‚ঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পাওয়ার চায়না প্রস্তাব ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে চুক্তি অনুমোদ দেয়া হয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে এবং চীনা প্রতিষ্ঠাকে তিস্তা পাড়ের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে কাজ করতে বলেছি। এছাড়া নতুন নতুন পরিকল্পনা যুক্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন নতুন কিছু দিক নিদেশনা দেয়া হয়েছে।
ভারতের দিল্লির মোদি ও মমতার বাধায় তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে পারছে না সরকার। চীনের ঋণ নিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বিশদ সমীক্ষা শুরু করে বাংলাদেশ ও চীন। ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে তিস্তা মহাপ্রকল্পের কিছু অগ্রগতি হলেও গত ২৪ জুন তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও ভারত আন্তরিক বলে আটকে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। চীনকে নিয়ে তিস্তায় মহাবিপদে ভারত। তিস্তা প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কৌশলে বাংলাদেশ। তিস্তা নদী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ মহাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করা হয় প্রথমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি দিয়ে। গত ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল এবং ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল এবং চলতি বছরের গত ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন সরকারে সাথে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি চুক্তি ছিল তা যথাযথভাবে কাজ করেছে চীন। তবে এ চুক্তি আগামী ২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব করা হয়। তিস্তা মহাপ্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে গত ৯ বছর উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলার কোটি কোটি মানুষের সাথে প্রতারনা করেছে বিগত সরকার। এবার ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাসের মাথায় অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর নির্দেশনায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চীনের সাথে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। তবে দিল্লির মোদি এবং পানিসম্পাদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু ফ্যাসিবাদ কর্মকর্তার কারণে তিস্তা মহাপ্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি’র ফাইলটি দীঘ দিন ধওে ফেলে রাখেন। পওে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নির্দেশনায় ফাইলটি দ্রত জেগে তোলা হয়। তা এক মাসের মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
জানা গেছে,পাওয়ার চায়না প্রস্তাব ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে কিছু মতামত ও সুপারিশ দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দফতরে পাঠানো হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনা কোম্পানি মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সম্পর্কিত একটি নন-বাইডিং সমঝোতা স্মারক আগামী ২০২৬ সালে স্বাক্ষরিত হবে। নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (চুক্তি) টির মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে স্মারক ১, ২ ও ৩ মোতাবেক বর্ণিত নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারকটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পতি সাপেক্ষে তিন দফায় যথাক্রমে ২০২০-২২ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ সরকার। চিঠিতে আরো বলা হয়, গত ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার ইআরডির মাধ্যমে তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তবানা চীনা সরকারের কাছে পাঠানো হয়। চীন সরকার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করার পরে বাংলাদেশের চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে কিছু মতামত ও সুপারিশ প্রদান করা হয়। পাওয়ার চায়না সেই মোতাবেক ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সমৃদ্ধ করে পুনরায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তিস্তা নদীকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে চীন। গত ২০২০ সালের আগস্টে আট হাজার ২১০ কোটি টাকার পিডিপিপি (প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে জমা দেয়া হয়েছিল। পিডিপিপির ব্যাপারে চীন সরকার গত বছরের ৫ মার্চ একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিবেদনে বড় আকারের ভ‚মি উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ না থাকা এবং বড় আকারের বিনিয়োগ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এবার যেকোনো দিন পরিকল্পনা বিভাবে বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হবে। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব।