জুলাই বিপ্লব ৪ মাসে পড়লো আজ
- প্রকাশের সময় : ১১:৪৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
- / ২৩ বার পঠিত
ইবরাহীম খলিল: প্রতি বিপ্লবের হুমকি, নানা ষড়যন্ত্র আর গুজবের মধ্যে আজ চার মাসে পা রাখলো জুলাই-বিপ্লব। আজ থেকে তিন মাস আগে এই দিনে অথাৎ ৫ আগস্ট ২০২৪ ইং ছাত্র-জনতার অপ্রতিরোধ্য আক্রমণে প্রাণভয়ে এই দেশ থেকে পাশের দেশে পালিয়ে যায় স্বৈরাচার শেখ হাসিনা; যে কি-না বড়াই করে বলতো শেখ হাসিনা পালায় না। আর তার দাপুটে সঙ্গি সাথীরা চলে যান আত্মগোপনে। অতঃপর গঠিত হয় দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অবশ্য শেখ হাসিনার পালানোর পরও থেমে থাকেনি ষড়যন্ত্র। সীমান্ত দিয়ে আবার টুস করে দেশে ঢুকে পড়া, প্রতি বিপ্লব সৃষ্টি করা, নানাভাবে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করা বন্যার পানিতে ডুবিয়ে মারাসহ নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ছাত্র-জনতার অপ্রিতরোধ্য প্রচেষ্টায় প্রতিটি সংকট সফলভাবে মোকাবেলা করা হয়।
একটু আগে থেকে শুরু করলে বিষয়টি এমন দাঁড়ায় যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে শুরু হয় জুলাই বিপ্লবের সফল এই আন্দোলন। স্্েরফ সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে জুন মাসে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল কেবল ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমতার আন্দোলন। কিন্তু পৃথিবীর আর সব স্বৈরাচারের মতো শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে মেনে নিতে গড়িমসি করে হাসিনার সরকার। কেননা পৃথিবীর সব স্বৈরাচারই যেকোনো আন্দোলন দমন করতে চায় বলপ্রয়োগের মাধ্যমে। ভয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে নিজের ক্ষমতাকে সুসংহত করা যায় সেই গতানুগতিক ধারাতেই ছুটছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল ১৬ বছরে অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য স্বৈরাচারে রূপ নেয়। সবাই শেখ হাসিনা অনেকটাই নিশ্চিত ছিল যে শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ সরকার কিংবা শেখ হাসিনাকে কিছুই করতে পারবে না। বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোও হতাশ হয়ে পড়ে। ফলে আওয়ামী লীগের মধ্যে তৈরি হয়েছিল ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব। ফলে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনে বেছে নেয় পেশিশক্তির ব্যবহার এবং আন্দোলন ভিন্ন দিকে নিতে ব্যবহার করে পুরানো কৌশল ট্যাগিং কালচার। কিন্তু কার্যত আওয়ামী লীগের সব অস্ত্রই ব্যর্থ হয়।
মূলত পুলিশের গুলিতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের শাহাদাত এ আন্দোলনে ক্লাইমেক্স তৈরি করে। যে বুক পেতে অপরাজিতের মতো পুলিশের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল। প্রতিটা আন্দোলনে আবু সাঈদের মতো কিছু ঐতিহাসিক চরিত্র আন্দোলনকে আরো বেগবান করে।
ব্যতিক্রম বিষয় হলো ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিল একদল অরাজনৈতিক তরুণ শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ তথা পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে শুধু একদল শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে এত বড় বিপ্লব আর ঘটেছে বলে জানা নাই।
আন্দোলনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি দেয় আর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্যগত শিশুর মতো সে কর্মসূচিতে সংহতি এবং কিছু ক্ষেত্রে অংশগ্রহণও করে। আন্দোলনে স্থায়িত্বকাল ছিল ৩৫ দিনের মতো, অথচ অনেক বেশি রক্তাক্ত। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত অল্পসময়ে এত রক্তক্ষয়ী বিপ্লব আর দেখা যায়নি, যা এ বিপ্লবকে আর সব বিপ্লব থেকে ইতিহাসে ব্যতিক্রম হিসেবে জায়গা দিয়েছে।
ডবপ্লবটি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে এখানে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব পেশার, সব লিঙ্গের মানুষের অন্তর্ভুক্তি এই বিপ্লবটিকে ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত-এত বড় গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি। এই গণ-অভ্যুত্থান অল্প সময়ের মধ্যে শহর থেকে গ্রাম তথা সারা দেশে ছড়িয়ে গিয়েছিল। এই বিপ্লব ছিল জনক্ষোভের এক বহিঃপ্রকাশ।
আরেকটু বাড়িয়ে বললে আন্দোলনকারীরা শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বেরই পরিবর্তন চাননি। বরং তারা রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরকে ঢেলে সাজাতে হবে। শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনই নয়, এই তরুণরা বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কথা বলছেন। যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারা ও সংস্কৃতির একটি বড় পরিবর্তনের প্রত্যাশা এখন সবার মুখে মুখে। (দৈনিক সংগ্রাম)