সংসদের ৯০ শতাংশ এমপি কোটিপতি, ৬৭% ব্যবসায়ী
- প্রকাশের সময় : ০৫:৩১:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৫৮ বার পঠিত
বাংলাদেশ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের প্রায় ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী এবং প্রায় ৯০ শতাংশই কোটিপতি। ২৯৯ নতুন এমপির মধ্যে বার্ষিক শীর্ষ ১০ আয়কারীর তালিকায় রয়েছে আওয়ামী লীগের পাঁচ, স্বতন্ত্র চার এবং জাতীয় পার্টির একজন। একাদশ জাতীয় সংসদের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী ও কোটিপতি সংসদ সদস্যের সংখ্যা বেড়েছে।
সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল মঙ্গলবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন’ করে সংস্থাটি।
সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। একতরফা নির্বাচন, আসন ভাগাভাগির নির্বাচন, অভিযোগের নির্বাচন, সবচেয়ে কম দলের সংসদ, ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে প্রশ্ন, বিপুল সংখ্যক ভোটারের অনুপস্থিতি, কিংস পার্টির ভরাডুবি, হলফনামা বাছাই, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে শিথিলতা, সহিংসতার চিত্র, নির্বাচনে পরিবারতন্ত্রের প্রভাব, সীমিত পর্যবেক্ষণসহ নানা দিক উপস্থাপন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নির্বাচিত ২৯৯ সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০০ জনের পেশা ব্যবসা। অর্থাৎ সংসদ সদস্যদের ৬৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। একাদশ জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৮৫ জন বা মোট সংসদ সদস্যের ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ১ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে ২৬৯ জনের। অর্থাৎ ৮৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ সংসদ সদস্যের সম্পদ কোটি টাকার ওপরে। একাদশ জাতীয় সংসদে ১ কোটি টাকার বেশি সম্পদশালী সংসদ সদস্য ছিলেন ২৪৭ জন বা ৮২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
সুজনের বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্বাচিত এমপিদের মধ্যে শীর্ষ ১০ আয়কারীর তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের গোলাম দস্তগীর গাজী। তাঁর বার্ষিক আয় ৮৩ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার ৩২৩ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র সদস্য এস এ কে একরামুজ্জামান। তাঁর বার্ষিক আয় ৫৪ কোটি ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে কুমিল্লা-৮ আসনের আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন। তাঁর বার্ষিক আয় ৩৫ কোটি ২৯ লাখ ৫১ হাজার ৮২১ টাকা। এর পরে ঢাকা-১ আসনের সালমান ফজলুর রহমানের বার্ষিক আয় ২৫ কোটি ৩১ লাখ ২১ হাজার ২৭৩ টাকা; ঝিনাইদহ-২ আসনের মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর বার্ষিক আয় ১৯ কোটি ৬০ লাখ; লক্ষ্মীপুর-১ আসনের আনোয়ার হোসেন খানের বার্ষিক আয় ১৯ কোটি ৬ লাখ; বরিশাল-৩ আসনের গোলাম কিবরিয়া টিপুর বার্ষিক আয় ১৮ কোটি ৮০ লাখ; নরসিংদী-৩ আসনের মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লার বার্ষিক আয় ১৬ কোটি ৬৮ লাখ; ঢাকা-১৮ আসনের মো. খসরু চৌধুরীর বার্ষিক আয় ১৬ কোটি ৬৬ লাখ এবং যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদের বার্ষিক আয় ১৪ কোটি টাকার ওপরে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একাদশ সংসদের তুলনায় এবার উচ্চশিক্ষিত সংসদ সদস্যের সংখ্যাও কিছুটা বেড়েছে। এবারের সংসদ সদস্যদের ৮২ দশমিক ৬০ শতাংশ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। একাদশে এই হার ছিল ৮১ শতাংশ।
নবনির্বাচিত ২৯৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বার্ষিক ৫ লাখ টাকা বা তার চেয়ে কম আয় করেন মাত্র ১৫ জন। আওয়ামী লীগের গাইবান্ধা-৩ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতির আয়ের ঘর ফাঁকা, ফেনী-১ থেকে নির্বাচিত আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর আয় ও অস্থাবর সম্পত্তির পৃষ্ঠা নেই এবং পাবনা-৪ থেকে নির্বাচিত গালিবুর রহমান শরীফের আয়ের ঘরে লেখা ‘পরামর্শকের নির্ভর সম্ভাব্য আয়।’ হবিগঞ্জ-১ থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরীর আয়ের ঘরও ফাঁকা।
নবনির্বাচিতদের মধ্যে বার্ষিক ১ কোটি টাকার বেশি আয় করেন ১১১ জন। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে এই হার শতকরা ৩৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিতদের মধ্যে এই হার শতকরা ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিতদের মধ্যে এই হার ২৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
বিগত ১৫ বছরে সম্পদ বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ এমপি
এবারের নির্বাচিত এমপিদের মধ্যে বিগত ১৫ বছরে সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক নম্বরে রয়েছেন মাদারীপুর-১ আসনের নূর-ই-আলম চৌধুরী। ২০০৮ থেকে বর্তমানে তাঁর সম্পদ বৃদ্ধির হার ৯৫ গুণ, জামালপুর-৩ আসনের মির্জা আজমের ৯২ গুণ, দিনাজপুর-২ আসনের খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ৯২ গুণ, জয়পুরহাট-২ আসনের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের ৭২ গুণ, নাটোর-৩ আসনের জুনায়েদ আহমেদ পলকের ৬৯ গুণ, নওগাঁ-১ আসনের সাধন চন্দ্র মজুমদারের ৫৪ গুণ, ঢাকা-২ আসনের মো. কামরুল ইসলামের ৪২ গুণ, নরসিংদী-২ আসনের আনোয়ারুল আশরাফ খানের ৩৬ গুণ, দিনাজপুর-৪ আসনের আবুল হাসান মাহমুদ আলীর ৩৪ গুণ এবং সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের মো. শফিকুল ইসলামের সম্পদ বৃদ্ধির হার ৩০ গুণ।
নির্বাচিত ১০ সম্পদশালী
সম্পদশালীর মধ্যে শীর্ষে ১ হাজার ৪৫৭ কোটি ৭০ লাখ ৬৩ হাজার ৩২৫ টাকার সম্পদ রয়েছে গোলাম দস্তগীর গাজীর। ১০ নম্বরে থাকা নোয়খালী-২ আসনের মোরশেদ আলমের সম্পদ রয়েছে ১৭৪ কোটি ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৯৬৬ টাকার। তালিকায় অন্যদের মধ্যে রয়েছেন– এস এ কে একরামুজ্জামান, আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, সালমান ফজলুর রহমান, আব্দুল মমিন মণ্ডল, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও আনোয়ার হোসেন খা
রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ ব্যবসায়ীদের হাতে
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি হলফনামাগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করত, তাহলে হলফনামা আমলনামায় পরিণত হতে পারত এবং এর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়াও পরিচ্ছন্ন হতো। হলফনামায় অনেক ক্ষেত্রে তথ্য গোপন এবং বিভ্রান্তিমূলক। যে উদ্দেশ্যে আদালত প্রার্থীদের হলফনামায় তথ্য দিতে বাধ্যতামূলক করেছিলেন, তার উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনকে একপক্ষীয় মন্তব্য করে সুজন সম্পাদক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে আছে– যথার্থ বিকল্প থাকা, সবার জন্য সমতল ক্ষেত্র, ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ফলাফল কী হবে তা অজানা থাকা, ক্ষমতার রদবদলের সুযোগ ইত্যাদি। এর মধ্যে এবারে নির্বাচনে অনেক বৈশিষ্ট্য ছিল না।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, হলফনামায় সম্পদের যে তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে, তাতে সম্পদের প্রকৃত চিত্র ওঠে আসে না। কেননা, অনেক প্রার্থীই সম্পদের মূল্য উল্লেখ না করায় আর্থিক মূল্যে সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে বর্তমান বাজারমূল্য উল্লেখ না করার কারণেও সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করা যায় না। তিনি জানান, নবনির্বাচিত ২৯৯ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১৩৪ জনের (৪৪ দশমিক ৮১ শতাংশ) ঋণ ও দায়দেনা রয়েছে। তাদের মধ্যে আয়কর দেন ২৩০ জন। ন। সূত্র : সমকাল
হককথা/নাছরিন