নিউইয়র্ক ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

৩১ প্রজাতির বন্য প্রাণী বিলুপ্ত, হারানোর পথে ৩৯০ প্রজাতি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৪১:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
  • / ৪১ বার পঠিত

বাংলাদেশের বন থেকে ৩১ প্রজাতির বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে রয়েছে আরও ৩৯০ প্রজাতির প্রাণী। বিলুপ্তির পথে থাকা প্রাণী রক্ষা এবং বিলুপ্ত হওয়া প্রাণী বনে ফেরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ময়ূর দিয়ে বিলুপ্ত প্রাণী বনে ফেরাতে চায় সরকার। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন ভবনে বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’।

সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রাণীগুলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা ময়ূর পুনঃপ্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি। সাফারি পার্কে ময়ূর অবমুক্ত করা হয়েছে এবং প্রকৃতিতেও তাদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে। আমরা কেবল বন্য প্রাণী ফিরিয়ে আনাই নয়, তাদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থলও নিশ্চিত করতে চাই।’

উপদেষ্টা বলেন, একটি সুসংবাদ দিতে চাই—আমাদের বন অধিদপ্তরের জন্য নতুন ৩৬০টি পদের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এটি আমাদের বন সংরক্ষণ ও বন্য প্রাণী সুরক্ষার প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে। সুন্দরবন ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর অগ্নিকাণ্ডপ্রবণ এলাকা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আগুনের পুনরাবৃত্তি রোধে আমাদের আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বনভূমি ও বন্য প্রাণীর সুরক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।’

চিড়িয়াখানায় গেলে মানুষের মন খারাপ হয়ে যায় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাই চিড়িয়াখানাগুলো প্রাণীদের জন্য আরও উন্নত বাসস্থান হোক। মানুষ ও বন্য প্রাণীর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হাতির করিডর তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী মাস থেকে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।’ বন্য প্রাণী রক্ষায় জনসচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান। তিনি বলেন, ‘বন্য প্রাণীকে সবাই ভালোবাসলেও দেখামাত্রই মেরে ফেলা হয়।’ সামুদ্রিক কাছিম সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো জালে উঠলে ডানা বা গলা কেটে দেওয়া হয়। ব্রাজিলে বিশাল সি-বিচের স্থলে তারা ৫ শতাংশ প্রাণীদের জন্য রেখে দেয়। এতে করে সামুদ্রিক প্রাণীর জন্মহার বেড়ে যায়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্বে) মো. খায়রুল হাসান বলেন, কেনিয়ায় হাতিদের জন্য এতিমখানা রয়েছে। সাফারি পার্কের আয় দিয়ে বন্য প্রাণীর জন্য ব্যয় করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।

অনলাইনে যুক্ত হয়ে বন্য প্রাণী রক্ষায় একগুচ্ছ সুপারিশ তুলে ধরেন বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও দুবাই সাফারি পার্কের সাবেক প্রিন্সিপাল ওয়াইল্ডলাইফ স্পেশালিস্ট ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান। তিনি বলেন, আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। একটি স্বাধীন বন্য প্রাণী উইং গঠন করতে হবে। জাতীয় বন্য প্রাণী নীতি তৈরি করতে হবে। জলবায়ু অভিযোজন প্রয়োজন। আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ বি এম সারোয়ার আলম তাঁর উপস্থাপনায় জানান, গত ৫০ বছরে ৭৩ শতাংশ বন্য প্রাণী হুমকির মুখে রয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরে ফেব্রুয়ারিতে যেখানে ১ লাখ পাখি থাকার কথা, সেখানে পাওয়া গেছে ২২ হাজার ৫৪৭টি। বিভিন্ন চরেও পাখি কমে গেছে।

সভাপতির বক্তব্যে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বন্য প্রাণীসমৃদ্ধ দেশ হলেও অর্থায়নে আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছি। ভারত বাঘ সংরক্ষণে ৫০ বছর যাবৎ কাজ করছে। অথচ আমরা দুই বছর যাবৎ কাজ করছি। হাতি সংরক্ষণে এখনো কোনো অর্থায়ন করা হয়নি। বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটে কাজ করছেন মাত্র ১৭ জন। তাঁদের লজিস্টিক বিষয়ে মনোযোগ নেই। রাতে টহল দিতে গিয়ে একজন সম্প্রতি নিহত হয়েছেন। তাঁদের ঝুঁকি ভাতা নেই।’ এটি অচিরেই চালু করার দাবি জানান তিনি। সূত্র : আজকের পত্রিকা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

৩১ প্রজাতির বন্য প্রাণী বিলুপ্ত, হারানোর পথে ৩৯০ প্রজাতি

প্রকাশের সময় : ০১:৪১:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের বন থেকে ৩১ প্রজাতির বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে রয়েছে আরও ৩৯০ প্রজাতির প্রাণী। বিলুপ্তির পথে থাকা প্রাণী রক্ষা এবং বিলুপ্ত হওয়া প্রাণী বনে ফেরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ময়ূর দিয়ে বিলুপ্ত প্রাণী বনে ফেরাতে চায় সরকার। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বন ভবনে বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’।

সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রাণীগুলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা ময়ূর পুনঃপ্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি। সাফারি পার্কে ময়ূর অবমুক্ত করা হয়েছে এবং প্রকৃতিতেও তাদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে। আমরা কেবল বন্য প্রাণী ফিরিয়ে আনাই নয়, তাদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থলও নিশ্চিত করতে চাই।’

উপদেষ্টা বলেন, একটি সুসংবাদ দিতে চাই—আমাদের বন অধিদপ্তরের জন্য নতুন ৩৬০টি পদের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এটি আমাদের বন সংরক্ষণ ও বন্য প্রাণী সুরক্ষার প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে। সুন্দরবন ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর অগ্নিকাণ্ডপ্রবণ এলাকা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আগুনের পুনরাবৃত্তি রোধে আমাদের আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বনভূমি ও বন্য প্রাণীর সুরক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।’

চিড়িয়াখানায় গেলে মানুষের মন খারাপ হয়ে যায় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাই চিড়িয়াখানাগুলো প্রাণীদের জন্য আরও উন্নত বাসস্থান হোক। মানুষ ও বন্য প্রাণীর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হাতির করিডর তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী মাস থেকে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে।’ বন্য প্রাণী রক্ষায় জনসচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান। তিনি বলেন, ‘বন্য প্রাণীকে সবাই ভালোবাসলেও দেখামাত্রই মেরে ফেলা হয়।’ সামুদ্রিক কাছিম সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো জালে উঠলে ডানা বা গলা কেটে দেওয়া হয়। ব্রাজিলে বিশাল সি-বিচের স্থলে তারা ৫ শতাংশ প্রাণীদের জন্য রেখে দেয়। এতে করে সামুদ্রিক প্রাণীর জন্মহার বেড়ে যায়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্বে) মো. খায়রুল হাসান বলেন, কেনিয়ায় হাতিদের জন্য এতিমখানা রয়েছে। সাফারি পার্কের আয় দিয়ে বন্য প্রাণীর জন্য ব্যয় করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।

অনলাইনে যুক্ত হয়ে বন্য প্রাণী রক্ষায় একগুচ্ছ সুপারিশ তুলে ধরেন বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ও দুবাই সাফারি পার্কের সাবেক প্রিন্সিপাল ওয়াইল্ডলাইফ স্পেশালিস্ট ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান। তিনি বলেন, আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। একটি স্বাধীন বন্য প্রাণী উইং গঠন করতে হবে। জাতীয় বন্য প্রাণী নীতি তৈরি করতে হবে। জলবায়ু অভিযোজন প্রয়োজন। আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ বি এম সারোয়ার আলম তাঁর উপস্থাপনায় জানান, গত ৫০ বছরে ৭৩ শতাংশ বন্য প্রাণী হুমকির মুখে রয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরে ফেব্রুয়ারিতে যেখানে ১ লাখ পাখি থাকার কথা, সেখানে পাওয়া গেছে ২২ হাজার ৫৪৭টি। বিভিন্ন চরেও পাখি কমে গেছে।

সভাপতির বক্তব্যে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বন্য প্রাণীসমৃদ্ধ দেশ হলেও অর্থায়নে আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছি। ভারত বাঘ সংরক্ষণে ৫০ বছর যাবৎ কাজ করছে। অথচ আমরা দুই বছর যাবৎ কাজ করছি। হাতি সংরক্ষণে এখনো কোনো অর্থায়ন করা হয়নি। বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটে কাজ করছেন মাত্র ১৭ জন। তাঁদের লজিস্টিক বিষয়ে মনোযোগ নেই। রাতে টহল দিতে গিয়ে একজন সম্প্রতি নিহত হয়েছেন। তাঁদের ঝুঁকি ভাতা নেই।’ এটি অচিরেই চালু করার দাবি জানান তিনি। সূত্র : আজকের পত্রিকা।