নিউইয়র্ক ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

৩ লাখ কোটির মেগা প্রকল্প এখন সরকারের বোঝা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৫৮:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১৭০ বার পঠিত

শেখ হারুন : অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য আটটি মেগা প্রকল্পকে ফাস্টট্র্যাক তালিকাভুক্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সর্বমোট ৩ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অর্থ সংকটের কারণে আড়াই বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিলেও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগা প্রকল্পে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই আটটি প্রকল্প শেষ করতে আরও ৭৭ হাজার কোটি টাকার অধিক ব্যয় করতে হবে। তবে অর্থনীতির চলমান সংকটে বিশাল অঙ্কের এ অর্থ সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অনেকে।

জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে শুরু হওয়া ফাস্টট্র্যাকভুক্ত আট প্রকল্পের আওতায় ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫২০ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ২ লাখ ৮ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন কাজ শুরু থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এসব প্রকল্পের পেছনে খরচ করা হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে আট ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প শেষ করতে লাগবে আরও ৭৭ হাজার ৩১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ১৮ শতাংশ অর্থ খরচ করা বাকি রয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের অগ্রগতি সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে। আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের তালিকায় থাকা আটটি প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশই চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্প ছাড়া কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। যদিও পদ্মা সেতুর কাজ শতভাগ শেষ হলেও অর্থ পরিশোধের কাজ এখনো বাকি আছে। বাকিগুলোও বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। তবে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত এসব প্রকল্পের গড় ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

আর্থিক অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। গড় অগ্রগতি ৯১ শতাংশের ওপরে হলেও সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬৯ শতাংশ। অথচ এ প্রকল্পেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে। বাকিগুলোর ভৌত অগ্রগতি ৮৭ থেকে ৯৯ শতাংশের মধ্যে। একটি বাদে অন্য প্রকল্পগুলোর মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়ে গেছে।

শেষ হওয়ার পরও পদ্মা সেতুতে লাগবে আরও ১ হাজার ৮৩৫ কোটি : ২০০৯ সালে শুরু হওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েক দফা খরচ বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সেই হিসেবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পুরো টাকা শেষ করতে লাগবে আরও ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বাস্তব অগ্রগতি শতভাগ হলেও আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ ৯৮.৬৮ ভাগ, লাগবে আরও ৭৬৮ কোটি টাকা : রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালে। শেষ করার কথা ছিল চলতি বছরের মার্চ মাসে। কিন্তু মেয়াদ শেষে সাত বছরেও প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ করতে এখনো ৭৬৮ কোটি টাকা লাগবে। এখন পর্যন্ত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ হয়েছে ৯৯ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ২০ শতাংশ।

৯৮ ভাগ শেষ দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথের, আরও খরচ লাগবে ৮ হাজার ৯৮৩ : ২০১০ সালে নেওয়া দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। কিন্তু ১৪ বছর ধরে চলতে থাকা প্রকল্পটি এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৫০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এ প্রকল্পের পেছনে আরও ৮ হাজার ৯৮৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৯৮ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ শেষ ৯২.৭৫ ভাগ, খরচ লাগবে ৫৭০ কোটি : ২০১৬ সালে শুরু হয় পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন আলোচ্য প্রকল্পে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৮০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে কাজ শেষ করতে আরও ৫৭০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দরকার। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৯২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের কাজ হয়েছে প্রায় ৯৪ ভাগ, লাগবে আর ৫ হাজার ৭৭৭ কোটি : ২০১৬ সালে শুরু হওয়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটিও চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৬৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এ প্রকল্পের পেছনে খরচ করতে হবে আরও ৫ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৯৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।

মেট্রোরেলের কাজ শেষ ৯০ ভাগ, শেষ করতে লাগবে আরও ৮ হাজার ৭৫৫ কোটি : ২০১২ সালে শুরু হওয়া মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পটি চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ হয়নি। তবে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ হলে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এরপর গত ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্তও খুলে দেওয়া হয়। ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের পেছনে শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৪ হাজার ৭১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এখনো খরচ বাকি আছে ৮ হাজার ৭৫৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। জুলাই পর্যন্ত ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

মহেশখালী-মাতারবাড়ীর কাজ এগিয়েছে সাড়ে ৮৭.৫০ ভাগ; লাগবে আরও ১২ হাজার ২২৯ কোটি : মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। ৫৬ হাজার ৬৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিতে শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শেষ করতে আরও লাগবে ১২ হাজার ২২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ভৌত কাজ হয়েছে ৮৮ দশমিক ২০ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মেয়াদ রয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি সাড়ে ৬৯.০১ ভাগ, লাগবে আরও ৩৮ হাজার ১১১ কোটি : ২০১৬ সালে শুরু হওয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির শুরু থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ০১ শতাংশ। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প। ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭৪ হাজার ৯৮১ কোটি ২২ লাখ টাকা। শেষ করতে লাগবে আরও ৩৮ হাজার ১১১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ভৌত অগ্রগতিতে ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৬ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে গুরুত্ব পাওয়া মেগা প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পে ১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পে ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থায়নের কারণে দেশের অর্থনীতিতেও এর একটি প্রভাব পড়েছে। কারণ এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় এসব প্রকল্পের পেছনে বারবার খরচও বাড়ানো হয়েছে, এতে অর্থের অপচয়ও হয়েছে। এমনিতেই বর্তমানে বাংলাদেশের ঋণ রয়েছে ১৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে নেওয়া এসব ঋণ সুদ আসলসহ পরিশোধের চাপও রয়েছে। এমন অবস্থায় প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সংকট বিবেচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এসব প্রকল্প নিয়ে দেখা দিতে পারে অনিশ্চয়তা, কমতে পারে গুরুত্ব। তবে যে প্রকল্পগুলো একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং কিছু অর্থায়ন করলে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে, সেগুলো বন্ধ না করে চালিয়ে যাওয়া উচিত বলেও মনে করেন অনেকে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মেগা প্রকল্পের কাজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পলিসির ওপর নির্ভর করছে। আওয়ামী লীগ সরকার এসব প্রকল্প তার দৃশ্যমান উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। এজন্য তারা বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে আসছিল। এতে এসব প্রকল্প একাধিকবার সংশোধনের ফলে একদিকে সময় বেড়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে খরচও। অর্থনীতিবিদরা বারবার এসব প্রকল্পে গুরুত্ব কম দেওয়ার পরামর্শ দিলেও সরকার কর্ণপাত করেনি। বরং অগ্রাধিকারভিত্তিতে এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করে গেছে। কিন্তু বর্তমানে অর্থনীতিতে একটি বিশেষ পরিস্থিতি চলছে। এমন অবস্থায় বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও এক হবে না। রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি ও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলে সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বর্তমান সরকার। সেক্ষেত্রে আগের সরকারের আমলে নেওয়া অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোর বিষয়ে গুরুত্ব কম পেতে পারে। প্রত্যাশা থাকবে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা।

ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের ভবিষ্যৎ জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কোন প্রকল্প কী অবস্থায় আছে, সেগুলো দেখা হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনো প্রকল্প আপাতত বাদ দেওয়া হবে কি না—এসব বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রকল্পগুলোর সার্বিক অবস্থা উপদেষ্টাকে জানানো হবে। উনি যেভাবে কাজ করতে বলবেন, আমরা সেভাবে করব। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্রুত সময়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে এবং জনগণ উপকার পাবে—এমন প্রকল্পই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। সূত্র : কালবেলা।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

৩ লাখ কোটির মেগা প্রকল্প এখন সরকারের বোঝা

প্রকাশের সময় : ১০:৫৮:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শেখ হারুন : অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য আটটি মেগা প্রকল্পকে ফাস্টট্র্যাক তালিকাভুক্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সর্বমোট ৩ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অর্থ সংকটের কারণে আড়াই বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিলেও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগা প্রকল্পে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এই আটটি প্রকল্প শেষ করতে আরও ৭৭ হাজার কোটি টাকার অধিক ব্যয় করতে হবে। তবে অর্থনীতির চলমান সংকটে বিশাল অঙ্কের এ অর্থ সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অনেকে।

জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে শুরু হওয়া ফাস্টট্র্যাকভুক্ত আট প্রকল্পের আওতায় ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫২০ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ২ লাখ ৮ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন কাজ শুরু থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এসব প্রকল্পের পেছনে খরচ করা হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে আট ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প শেষ করতে লাগবে আরও ৭৭ হাজার ৩১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ১৮ শতাংশ অর্থ খরচ করা বাকি রয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের অগ্রগতি সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে। আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের তালিকায় থাকা আটটি প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশই চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্প ছাড়া কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। যদিও পদ্মা সেতুর কাজ শতভাগ শেষ হলেও অর্থ পরিশোধের কাজ এখনো বাকি আছে। বাকিগুলোও বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। তবে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত এসব প্রকল্পের গড় ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

আর্থিক অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। গড় অগ্রগতি ৯১ শতাংশের ওপরে হলেও সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬৯ শতাংশ। অথচ এ প্রকল্পেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে। বাকিগুলোর ভৌত অগ্রগতি ৮৭ থেকে ৯৯ শতাংশের মধ্যে। একটি বাদে অন্য প্রকল্পগুলোর মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়ে গেছে।

শেষ হওয়ার পরও পদ্মা সেতুতে লাগবে আরও ১ হাজার ৮৩৫ কোটি : ২০০৯ সালে শুরু হওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েক দফা খরচ বাড়িয়ে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সেই হিসেবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পুরো টাকা শেষ করতে লাগবে আরও ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বাস্তব অগ্রগতি শতভাগ হলেও আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু।

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ ৯৮.৬৮ ভাগ, লাগবে আরও ৭৬৮ কোটি টাকা : রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালে। শেষ করার কথা ছিল চলতি বছরের মার্চ মাসে। কিন্তু মেয়াদ শেষে সাত বছরেও প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ করতে এখনো ৭৬৮ কোটি টাকা লাগবে। এখন পর্যন্ত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ হয়েছে ৯৯ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ২০ শতাংশ।

৯৮ ভাগ শেষ দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথের, আরও খরচ লাগবে ৮ হাজার ৯৮৩ : ২০১০ সালে নেওয়া দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। কিন্তু ১৪ বছর ধরে চলতে থাকা প্রকল্পটি এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৫০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এ প্রকল্পের পেছনে আরও ৮ হাজার ৯৮৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৯৮ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ শেষ ৯২.৭৫ ভাগ, খরচ লাগবে ৫৭০ কোটি : ২০১৬ সালে শুরু হয় পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন আলোচ্য প্রকল্পে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৮০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে কাজ শেষ করতে আরও ৫৭০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দরকার। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৯২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের কাজ হয়েছে প্রায় ৯৪ ভাগ, লাগবে আর ৫ হাজার ৭৭৭ কোটি : ২০১৬ সালে শুরু হওয়া পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটিও চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৬৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এ প্রকল্পের পেছনে খরচ করতে হবে আরও ৫ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৯৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।

মেট্রোরেলের কাজ শেষ ৯০ ভাগ, শেষ করতে লাগবে আরও ৮ হাজার ৭৫৫ কোটি : ২০১২ সালে শুরু হওয়া মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পটি চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ হয়নি। তবে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ হলে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এরপর গত ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্তও খুলে দেওয়া হয়। ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের পেছনে শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৪ হাজার ৭১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এখনো খরচ বাকি আছে ৮ হাজার ৭৫৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। জুলাই পর্যন্ত ভৌত কাজ শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

মহেশখালী-মাতারবাড়ীর কাজ এগিয়েছে সাড়ে ৮৭.৫০ ভাগ; লাগবে আরও ১২ হাজার ২২৯ কোটি : মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। ৫৬ হাজার ৬৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিতে শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শেষ করতে আরও লাগবে ১২ হাজার ২২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ভৌত কাজ হয়েছে ৮৮ দশমিক ২০ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মেয়াদ রয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি সাড়ে ৬৯.০১ ভাগ, লাগবে আরও ৩৮ হাজার ১১১ কোটি : ২০১৬ সালে শুরু হওয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির শুরু থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ দশমিক ০১ শতাংশ। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প। ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭৪ হাজার ৯৮১ কোটি ২২ লাখ টাকা। শেষ করতে লাগবে আরও ৩৮ হাজার ১১১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ভৌত অগ্রগতিতে ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৬ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এদিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে গুরুত্ব পাওয়া মেগা প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পে ১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পে ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থায়নের কারণে দেশের অর্থনীতিতেও এর একটি প্রভাব পড়েছে। কারণ এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় এসব প্রকল্পের পেছনে বারবার খরচও বাড়ানো হয়েছে, এতে অর্থের অপচয়ও হয়েছে। এমনিতেই বর্তমানে বাংলাদেশের ঋণ রয়েছে ১৮ লাখ কোটি টাকারও বেশি। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে নেওয়া এসব ঋণ সুদ আসলসহ পরিশোধের চাপও রয়েছে। এমন অবস্থায় প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সংকট বিবেচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এসব প্রকল্প নিয়ে দেখা দিতে পারে অনিশ্চয়তা, কমতে পারে গুরুত্ব। তবে যে প্রকল্পগুলো একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং কিছু অর্থায়ন করলে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে, সেগুলো বন্ধ না করে চালিয়ে যাওয়া উচিত বলেও মনে করেন অনেকে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মেগা প্রকল্পের কাজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পলিসির ওপর নির্ভর করছে। আওয়ামী লীগ সরকার এসব প্রকল্প তার দৃশ্যমান উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। এজন্য তারা বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে আসছিল। এতে এসব প্রকল্প একাধিকবার সংশোধনের ফলে একদিকে সময় বেড়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে খরচও। অর্থনীতিবিদরা বারবার এসব প্রকল্পে গুরুত্ব কম দেওয়ার পরামর্শ দিলেও সরকার কর্ণপাত করেনি। বরং অগ্রাধিকারভিত্তিতে এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করে গেছে। কিন্তু বর্তমানে অর্থনীতিতে একটি বিশেষ পরিস্থিতি চলছে। এমন অবস্থায় বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী কালবেলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী প্রকল্পে অগ্রাধিকার দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও এক হবে না। রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি ও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলে সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বর্তমান সরকার। সেক্ষেত্রে আগের সরকারের আমলে নেওয়া অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোর বিষয়ে গুরুত্ব কম পেতে পারে। প্রত্যাশা থাকবে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা।

ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের ভবিষ্যৎ জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কোন প্রকল্প কী অবস্থায় আছে, সেগুলো দেখা হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনো প্রকল্প আপাতত বাদ দেওয়া হবে কি না—এসব বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রকল্পগুলোর সার্বিক অবস্থা উপদেষ্টাকে জানানো হবে। উনি যেভাবে কাজ করতে বলবেন, আমরা সেভাবে করব। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্রুত সময়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে এবং জনগণ উপকার পাবে—এমন প্রকল্পই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। সূত্র : কালবেলা।