মন্ত্রিসভায় অনুমোদন : ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড

- প্রকাশের সময় : ১১:৩০:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০২০
- / ৫৬ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: বাংলাদেশে ক্রমাগত যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আইনের একটি সংশোধনী প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার (১২ অক্টোবর) ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন, সাধারণ জখম হলে আপসের বিধান রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’-এর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতি একমত পোষণ করলে মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভায় এ আইনের আরো দুটি ধারায় পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে বিদ্যমান আইনটির সংশোধিত খসড়া অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ চালু না থাকায় এটি রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ আকারে জারি করতে পারবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে সংসদের অধিবেশন নেই, অন্যদিকে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতির কাছে বিষয়টি যদি সন্তোষজনক মনে হয়, তাহলে তিনি সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করতে পারবেন।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) উপধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদ্যমান আইনের ১১(গ) ধারায় রয়েছে, ‘সাধারণ জখম করার জন্য অনধিক তিন বছর বা অন্যূন এক বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন, এই দন্ডের অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন।’ এ ধারাটির শাস্তির বদলে সাধারণ জখমের ক্ষেত্রে আপস করার বিধান রাখা হচ্ছে।”
গত ৪ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মধ্যবয়সী এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জড়িতদের বেশির ভাগকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশজুড়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় বর্বর ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। সেসব খবর প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’ অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থদন্ডের বিধান আছে। এ আইনে মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সাত দিন থেকে এক মাস এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য ১৮০ দিন, অর্থাৎ ছয় মাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও বাস্তবে এ সময়ের মধ্যে রায় দেওয়া সম্ভব হয় না।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি বিচারক বদলি হন বা অন্য কোনো কারণে সংশ্লিষ্ট ঘটনার বিচারককে মাঝখানে অন্যত্র চলে যেতে হয়, তাহলে তিনি যেখানে বিচারকাজ রেখে যাবেন, নতুন বিচারক ঠিক সেই জায়গা থেকে কাজ শুরু করবেন। এতে সময় কম লাগবে।’
এদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনের সংশোধন অনুযায়ী ধর্ষণের শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার সুযোগ থাকায় ধর্ষণের মতো অপরাধ কমে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ মন্ত্রী বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ৯(১)-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় ৯(৪) ধারাতেও সংশোধন আনা হয়েছে। কিছুদিন আগে হাইকোর্ট বিভাগের একটি দ্বৈত বেঞ্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ) ধারা সংশোধন করে সাধারণ জখমের জন্য আপসের বিধান রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ১১(গ) ধারা সংশোধন করে আপসের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের শিশু আইনের একটি সংশোধনী আনা হয়েছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রিসভার বৈঠকে উল্লিখিত সংশোধনীগুলো ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সংসদ অধিবেশন চলমান না থাকায় এটা অধ্যাদেশ আকারে জারি করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির আদেশবলে এটাকে অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিশ্বে মৃত্যুদন্ডের ব্যাপারে অনেক বিতর্ক আছে। তার পরও বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সাজা বাড়ানো উচিত বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যুদন্ডের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি পুরনো ধর্ষণ মামলাগুলো আগে এবং নতুন মামলাগুলো যত দ্রæত সম্ভব আইনি প্রক্রিয়ায় শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অবশ্যই রক্ষা করা হবে। প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করা হবে, তিনি যেন একটি প্র্যাকটিস ডিরেকশন দেন, যাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্ট বিচারকরা যথাযথ পদক্ষেপ নেন। অন্যদিকে আইন মন্ত্রণালয় থেকেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপিদের নির্দেশনা দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা ধর্ষণ মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন।’
মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আগে সাক্ষীদের আদালতে আসার বিষয়ে কিছু সমস্যা ছিল। এখন সরকার ডিজিটাইজেশনের সাহায্যে সাক্ষীদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মেসেজ দেওয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করছে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ধর্ষণ মামলাসহ অন্যান্য মামলার দ্রæত নিষ্পত্তিতে গতি বাড়বে। সাক্ষী সুরক্ষা আইন নিয়েও সরকার কাজ করছে।’ (দৈনিক কালের কন্ঠ)